বাদুড়ের কথা
লিখেছেন লিখেছেন নাবিক ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:০৯:১১ সন্ধ্যা
বাদুড় নামক প্রাণীটাকে তো কমবেশি আমরা সবাই চিনি। এটিই পৃথিবীর একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যে উড়তে পারে। এরা নিশাচর প্রাণী। তাই অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা, গুহা বা জঙ্গলেই বেশি দেখা মেলে বাদুড়ের।
তবে রাতে বা সন্ধ্যার দিকে আমাদের আশেপাশেও অনেক সময় দেখা মেলে উড়ন্ত বাদুড়ের। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এই বাদুড় নিয়ে আমাদের অনেকেরই রয়েছে বিভিন্ন ভুল ধারণা।
যেমন বাদুড় চোখে দেখতে পারে না, বাদুড় মানুষের রক্ত খায়, বাদুড় ঘরে ঢোকা হচ্ছে অমঙ্গলের লক্ষণ আরো কতো কী। কিন্তু এবার খোদ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকই বাদুড় নিয়ে এসব ভুল ধারণার ব্যাখ্যা দিয়েছে।
বাদুড় চোখে দেখে না
বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা বাদুড় চোখে দেখে না। এরা চলার সময় শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে এবং সেই শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসলে সে অনুযায়ী বাদুড় পথ চলে। এমনকি তারা শিকারও করে এভাবেই।
তবে সত্যি কথাটা হচ্ছে এ ব্যাপারটা শুধুমাত্র খুব ছোট বাদুড়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে তাদেরও দৃষ্টিক্ষমতা রয়েছে, যদিও সেটা খুবই ক্ষীণ। কিন্তু বড় আকৃতির বাদুড় চোখে দেখে এবং বেশ ভালোভাবেই দেখে।
এমনকি তারা চোখে দেখে এবং গন্ধ শুকে ফলমূল সংগ্রহ করে খায়।
বাদুড় ঘরে ঢোকা অশুভ লক্ষণ
বাদুড় ঘরে ঢোকা নাকি অশুভ লক্ষণ কেননা বাদুড়দের সাথে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারদের একটা নাকি যোগসাজশ রয়েছে। কিন্তু এটি নিতান্তই একটি ভ্রান্ত ধারণা। বরং ছোট ছোট বাদুড়েরা হাজার হাজার মশা আর কীটপতঙ্গ খেয়ে সাবাড় করতে পারে।
কিন্তু তাই বলে কেউ যেন আবার ঘরের মধ্যে বাদুড়কে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বসে। কেননা বাদুড় থেকে ছড়াতে পারে নানাবিধ অসুখ-বিসুখ।
বাদুড় থেকে হয় জলাতঙ্ক
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৫-৬ শতাংশ বাদুড় থকে ছড়াতে পারে এই রোগ, তাই বলে সব বাদুড় থেকে নয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া বাদুড়ের ধারে কাছে না ঘেঁষাই ভালো।
বাদুড় চুলে বাসা বানায়
বাদুড় সাধারণত দুই পা দিয়ে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। তাই অনেকের ধারণা মানুষ যখন বাদুড়ের নিচ দিয়ে যায় তখন তারা মানুষের উপর লাফিয়ে পড়ে চুলে জট বানিয়ে বাসা তৈরি করে। অনেক সময় তারা নাকি উড়ে এসেও জট পাকানো চুলে বাসা বানিয়ে থাকে। ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর, কেননা বাদুড় বাসাই বানায় না।
বাদুড়েরা মানুষের রক্ত পান করে
বাদুড়েরা নাকি মানুষের রক্ত চুষে খায়। রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের আত্মীয় বলে অনেকেই ধারণা করেন বাদুড়কে। কিন্তু বাদুড় মানুষের রক্ত খাওয়া তো দূরের কথা, কোনোদিন কাউকে কামড় দিয়েছে বলেও শোনা যায়নি।
তবে হ্যাঁ, বাদুড় গবাদি পশুর রক্ত খায় মাঝে মাঝে, তাও কয়েক ফোঁটা। বরং মজার বিষয় হচ্ছে বাদুড়ের লালা থেকে ড্রাকুলিন নামের একটি ওষুধ তৈরি করা হয়।
বাদুড় তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়
অনেকেরই ধারণা প্রাণী হিসেবে বাদুড় প্রকৃতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। কিন্তু কথাটা একদমই সত্যি নয়। বরং পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে বাদুড় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, কলা আর অ্যাভোকাডোসহ প্রায় ৩০০ রকমের গাছের বীজ ছড়াতে সাহায্য করে বাদুড়। এছাড়া বাদুড় কীটপতঙ্গ খেয়ে এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফসল রক্ষা করে।
বাদুড়েরা নাকি পরস্পরের শত্রু
মানুষ ভাবে যে বাদুড়েরা হচ্ছে একে অন্যের শত্রু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা একদমই নয়। স্বার্থপর ভাবটা বাদুড়দের মধ্যে একদমই নেই। তারা বরং একে অন্যের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খায়। এমনকি রক্তচোষা বাদুড়েরা নিজেদের পেট থেকে রক্ত বের করেও অন্য বাদুড়দের খাওয়ায়।
*তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
বিষয়: বিবিধ
১২৮০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেশি বাদুরগুলি বেশিরভাগ ফল খেকো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন