অর্থ-অনর্থ
লিখেছেন লিখেছেন তৈয়েবুর রহমান গালিব ১২ আগস্ট, ২০১৫, ১১:১০:০৫ সকাল
আমি অতি সাধারন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান । ঢাকা শহরে এসেছি কিঞ্চিত পড়াশুনা করে বড়োলোক হবার আশায় ।
ছোটবেলায় দুইটাকার আইসক্রিম খেতে মন চাইলে বাসায় এসে চিনি আর পানি গুলে খেয়েছি । বাবা টাকা দিতেন না । বরং রাগ করতেন । সেই দিনগুলোতে খোদার কাছে বড্ড অভিমান হতো । আমি কেনো গরীব ? আমাদের কেনো এতো টাকা নেই ?
ঢাকায় আসার পর বাবা মাসে তিনহাজার টাকা দিতেন । মাস চলতো না । খুব বিরক্ত লাগতো । মাসের শেষ ক'টা দিন খালার বাসায় চলে যেতাম । কি করবো ! আর একবেলা খাবারই টাকা থাকতোনা পকেটে । মাসের শুরুতে টাকা আসলে তারপর হলে ফিরতাম । খুব কান্না আসতো । কবে আমার অনেক টাকা হবে ? বাবাকে ফোন করে মাঝে মাঝে খুব রাগারাগি করতাম । কিন্তু বাবা নিশ্চুপ । টাকা দিতেন না । বলতেন , যার দশ টাকা লাগে , তাকে পনেরো টাকা দিতে নেই । আট টাকা দিতে হয় । নইলে সে অবশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে ।
আমার জীবনে আমি শেরাটন হোটেলে ঢুকেছি একবারই । খেতে ঢুকিনি অবশ্য । কি একটা fair ছিলো যেনো । ভেতরে বিরাট কারবার । ভয় পেয়েছিলাম । ভেবেছিলাম , না জানি এখানে আসতে গেলে কতো বড়লোক হতে হয় !
ঢাকায় প্রথম এসেই গুলশান ঘুরতে গিয়েছিলাম । বিশাল সব প্রাসাদ । থমকে দাড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে বন্ধুকে বলেছিলাম , দেখিস ! একদিন আমারো হবে । আমি জানি , আমার হবেই ।
বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছি ঢাকায় আসার দুইবছর পরে । কিন্তু শপিং করতে যাই নি । দেখতে গিয়েছিলাম । যারা ঘুরে ঘুরে শপিং করছিলো , তাদের চেহারাগুলো ঠিক আমার মতো ছিলো না । তবে আমি চেয়েছিলাম , একদিন এই দোকানগুলির সবচেয়ে দামি জিনিসটা আমি কিনে নিয়ে যাবো ।
ঢাকায় ছ'বছর হতে চললো । এখনো কিছুই হয়নি । বেশ হতাশ ছিলাম ।
যাই হোক । কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়লাম , ঐশি নামের এক ধনীর দুলালি অনৈতিক কাজে পরিবারের বাধা পেয়ে মা-বাবাকে করেছে খুন । প্রথমবারের মতো বড়লোক হবার ইচ্ছায় ভাটা পড়লো । একটু ভীত হলাম ।
মাঝে এক পরিচিত ধনী বন্ধুর খোজ নিতে গিয়ে জানলাম , ইয়াবার বিজনেস জমিয়ে শেষপর্যন্ত বাসার সাথে গ্যাঞ্জাম করে এখন লিভ টুগেদার আর পার্টি নিয়ে ব্যস্ত । মায়ের খোজ নেবার তার সময় নাই । বাড়িতে বড়লোক বাবা কান্দে । ঘেন্না লাগলো ।
চার-পাঁচদিন আগের মানবজমিনের খবর , ধনীর দুলাল নেশা করে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে রাস্তায় করেছে এক্সিডেন্ট । বাবার নামের আগে আলহাজ্ব দিয়ে খবরে এসেছে । ধনী হবার লক্ষ্যে আরেকটা আঘাত ।
কিন্তু গতকাল রাতে যখন পেট বাধাঁয়ে এক ধনী বান্ধবী ফোন করলো রাত বারোটায় , মাথাটা আসলেই ঘুরে গেলো । কি করতে হবে জানতে চায় । সামনে নাকি মেয়ের আবার বিয়ে !! আমি কায়দা মত ঝেড়ে যখন বললাম , দুরে গিয়া মর ! আমাকে বলে , প্রথমবারই তো ! এরকম করিস কেনো ? সারাজীবনের জন্য হতাশ হলাম ।
আর গতকাল সমস্ত রাত ধরে জেগে জেগে একবার এপাশ , আরেকবার ওপাশ করে আল্লাহকে বললাম , খোদা , অনেক প্রার্থনাই তো তুমি শুনলে । এই প্রার্থনাটাও তুমি রেখো । বড়লোক হবার অভিশাপে আমাকে অভিশপ্ত করো না । আমাকে যেনো একটা গরীব ছেলে দিয়ো , একটা গরীব মেয়ে দিয়ো আর একটা গরীব বধু ।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৬ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে সবার থেকে আলাদা ও ভাল মানুষ বলে মনে হয়েছে বলেই সে নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিতে চেয়েছিল । বুঝেনই তো , চারপাশে সব ভেজাল মালে ভরপুর।
কিন্তু ... আপনি না করে দিলেন । ভাল করেছেন । হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের ছায়ায় যে সাত টি বিশেষগুনের মানুষদের রাখা হবে , আপনি তার একটা ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে পড়ে গেলেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন