পুলিশি বাংলাদেশ এবং আমজনতার জীবন

লিখেছেন লিখেছেন তৈয়েবুর রহমান গালিব ১১ আগস্ট, ২০১৫, ০৭:৪৬:০২ সকাল

গতকাল আমাকে এক পুলিশ ফোন দিয়েছেন । তার বক্তব্য , তারা জানতে পেরেছেন , আমি একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে জড়িত । তার সাথে আমি যেন দেখা করি । বুঝলাম , টাকা চায় । টাকা দিলেই মামলা জিরো । মুখ থেকে গালাগালি বের হলো , চুতমারানির দল !

গতমাসের কাহিনী । চিটাগং থেকে ঢাকা আসছি । কুমিল্লায় বাস থামিয়ে পুলিশ চেকিং চলছে । পাশে রিফাত ভাই । আমি বাসে উঠছি ঘুমের ঔষধ খেয়ে । বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম । হঠাৎ বাসের ভেতরে চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে । সামনের ভদ্রলোককে ঘুম থেকে জাগায়েই জিজ্ঞেস করলো , কোথা থেকে এসেছেন ?

লোকটা থতমত খেয়ে বলে , ঢাকা থেকে ।

- যাবেন কই ?

- চিটাগং ।

আমি শুনেই হেসে ফেললাম । লোক ঘুমের থেকে উঠেই পুলিশ দেখে উল্টা বকছে । শেষ পর্যন্ত সারাবাস উলটপালট করে পুলিশ নেমে গেলো । সকালে পত্রিকায় দেখলাম , ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস ডাকাতি । পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার দেখাতে পারেনি । বুঝলাম রাতের কাহিনীর অর্থ ।

প্রায় বছরখানেক আগের কথা । আমি এক ছোট্ট মত রুমে বসে আছি । রুমে ফ্যান আছে দুইটা । আমি তাও ঘামছি ।

- ভাই ভালো আছেন ?

যে লোক আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করলেন , আর যেখানে বসে আমি কথাটা শুনছিলাম , বলতেই হবে লোকটির রসভাব প্রবল ।

- জি আছি , আলহামদুলিল্লাহ ।

আমিও আমার রসভাব কমাতে চাইলাম না । আমার কন্ঠ শুনে ভদ্রলোক আমার দিকে একবার দৃষ্টিপাত করলেন ।

- আচ্ছা । কাজের কথায় আসি । ভাই , কেস তো খুবই কঠিন । আপনার ভাইয়ের মুক্তি তো মুক্তি , লাইফটাই শেষ হয়ে যাবে ।

আমি শুনলাম । নির্বিকার গলায় বললাম , ও আচ্ছা । তাহলে আর কি করার ! বাসায় যাই ।

এবার আর পুলিশ সাহেবের গলায় কিছু আসছেনা । উনি বোধহয় বুঝে ফেলেছেন ভয় দেখায় আমার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যাবে না । কিছুক্ষনের মধ্যেই যথাসম্ভব আরো মোলায়েম হয়ে গেলেন ।

- দেখেন আপনারা বড় বড় ভার্সিটির স্টুডেন্ট । আপনাদের ক্ষতি করে আমাদের লাভ কি ? কিন্তু উপরের প্রেশার আছে । কিছু খরচাপাতি করলেই কাজ হয়ে যাবে ।

আমি আর বেশিক্ষন বসলাম না । পকেটে পনেরো টাকা আছে । মাথা ঝিমঝিম করতেছে । এককাপ চা খেয়ে লাইনের বাসে কোর্ট পর্যন্ত যাওয়া যাবে ।

প্রথমবার আমার পুলিশের মুখোমুখি হবার স্মৃতি ছিলো এটা ।

দ্বিতীয়বারের ঘটনাটা একটু রসালো । যে লোকটির সাথে দেখা হলো , তিনি আসছেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে । আমি গেছি ওয়ার্ডে সার্জারি পরীক্ষার আগেরদিন প্যাশেন্ট দেখতে । দেখি ওয়ার্ডে বিরাট ক্যাচাল । ওয়ার্ডবয়কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম , ঘটনা কি ? শোনা গেলো , পুলিশের এক এস.আই. আসছেন এনাল ফিস্টুলার ট্রিটমেন্ট নিতে । তার মোবাইল গায়েব হয়ে গেছে । তাই নিয়ে উনি ওয়ার্ড মাথায় তুলেছেন । আমি একটু এগিয়ে গেলাম ।

- ভাই , কি সমস্যা ?

- আপনি কে ?

- আমি এখানকার ডাক্তার ।

এবার উনি একটু ঠান্ডা হলেন । দাড়ানো থেকে আধাশোয়া হলেন । বললেন , আরে , বইলেন না ভাই , একটু খালি সকালে মোবাইলটা রেখে টয়লেটে গেছি । এসে দেখি মুবাইল গায়েব !

আমি হেসে ফেললাম । বললাম , আর কি বলবেন ভাই ! সমস্যা তো এখানে না । সমস্যা তো অন্যখানে ।

উনি অবাক , সমস্যা কোনখানে ?

আমি লোকটাকে একটু ঠেস দিয়ে দিলাম , সমস্যা তো পুলিশের । আমরা অনেকবার জানিয়েছি । সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের সমস্যা হয় । কিন্তু থানা কিছুই করেনা । এদের সকলের কাছ থেকেই থানায় টাকা যায় । এমনকি চোর ধরিয়ে দিলেও মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় । দেশের আসল চোর হচ্ছে পুলিশ ।

আমার জোর গলার কথা শুনে উনি একটু থমকে গেছেন । ভেবেছেন , আমি উনাকে না চিনেই কথাগুলো বলেছি । পাশে দেখি ওয়ার্ডবয় মুচকি মুচকি হাসছে ।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে সাইন্স অফ স্টুপিড নামে একটা অনুষ্ঠান হয় । খুব আগ্রহভরে দেখি । হঠাৎ হঠাৎ সামনে পড়ে যায় ।

ইদানীং এই অনুষ্ঠানটা সামনে আসলেই আমার পুলিশের কথা মনে হয় । স্টুপিডদের কাজকারবারও সাইন্সের খাতায় ফেলা যায় , পুলিশ পড়ে না কোন ব্যাখ্যায় । পুরাই উথালপাথাল ।

আমাদের একজন অর্থমন্ত্রী আছেন । আমার খুবই ভাল লাগে তাকে । বিভিন্ন জটিল কথা সহজভাবে বলে দেন । লোকটি জীবনে আমলা থেকে শুরু করে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হওয়ায় বিশাল জ্ঞানের অধিকারি । এইতো কিছুদিন আগেও কাকে যেন বাস্টার্ড বলে দিলেন । তার সাহিত্য বিষয়ক , নাট্য এবং মঞ্চ বিষয়ক বিভিন্ন লেকচার আমি শিল্পকলা একাডেমিতে শুনেছি । শেষ ছিলো ঘুষ বিষয়ক তিক্ত কথন । অনেকের খুব খারাপ লেগেছে । আমার লাগেনি । সমানে অন্যায় করে যাবেন , আর কেউ কথা বললেই খারাপ লেগে যাবে , তা তো হবেনা ।

যাউজ্ঞা , স্যারের কাছে আমার আকুল আবেদন , পুলিশ নিয়ে আপনার একটা তিক্তকথন শুনার আমার বহুতদিনের ইচ্ছা । টুক করে একটা রাবিশ টাইপ সত্যকথা বলে দিন তো !

আর দেশীয় টেলিভিশনে একটা সাইন্স অফ পুলিশ চালু করতেও বলে দেন না ! এদের মনটা আমাদের সাধারনের সাথে স্যার মিলেনা । একেবারেই মিলেনা । বাংলাদেশে এই প্রজাতিটা একেবারেই আলাদা । এদের সাইকোলজিটা জানা সাধারন পাবলিকের খুবই দরকার ।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335066
১১ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৮:৫৮
নাবিক লিখেছেন : এরা পুলিশ না ফুলিশ
335067
১১ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:০৫
হতভাগা লিখেছেন : পুলিশ চেকিং করে নিরীহ লোকদের , তাদের হয়রানী করে । আসল ক্রিমিনালকে তারা ভালই চেনে ।

ঢাবিতে অস্ত্র ধরার জন্য রেইড করতে গেলে দেখা যায় যে কিছুই পাওয়া যায় না । কারণ আগে থেকেই ইনফর্মড করা থাকে ।

ইদানিং যে জিনিসটা পুলিশ করাচ্ছে সেটা হল তাদের সোর্সদের দিয়ে ডাকাতি করাচ্ছে নিরীহ মানুষদের পথে ঘাটে সবার সামনে ।

এদের ব্যাপারে থানায় জানালে পুলিশ বরং ওদেরকে ইনফর্ম করে দেয় । যেখানে পুলিশের উচিত ছিল আপনার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার সেখানে সে তাদের সেই সোর্স (যারা আদতেই উঠতি , পাতি সন্ত্রাসী)কে আপনার নালিশের ব্যাপারে জানিয়ে আপনার জীবনটাকে ফানা ফানা করে দেয়।

সাধারণ মানুষ পারতে পুলিশের কাছে যায় না । পুলিশের ইনকামের একটা বড় সোর্সই হল ''বিশেষ অভিযান'' এর সময় । এটা তাদের কাছে একসাথে ১০ টা ঈদের সমান । এই সময় তাদের নিরীহ লোকদের ধরে ধরে বড় বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেবার উৎসব।

৫৪ ধারা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের হয়রানী করার জন্য পুলিশের কাছে সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র।
335080
১১ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : চুতমারানির দল! My favourite... Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
335101
১১ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:২৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সত্য কথাই কইছেন ভাই ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
335217
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৮:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আসলেই বাংলাদেশের পুলিশ কি প্রানি সেটা নিয়ে গবেষনা হওয়া দরকার!!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File