আমর ইবনুল আস এবং আগাচৌ

লিখেছেন লিখেছেন তৈয়েবুর রহমান গালিব ০৬ জুলাই, ২০১৫, ০৪:০৪:২৮ বিকাল

আমর ইবনুল আস । ইতিহাসের একজন শক্তিমান সেনাপতি । মুতার যুদ্ধের সাহসী মুখ । ইয়ারমুকের প্রান্তরের বীর সেনানি । সিফফীন যুদ্ধের ধূর্ত কুটনীতিক । আর মুসলিম আরবের সেই মহাযোদ্ধা , যাকে মক্কা বিজয় থেকে শুরু করে আর কোন যুদ্ধের অভিযানে কেউ কখনো অনুপস্থিত দেখেনি । কিন্তু এর পূর্বের ইতিহাস !

আমর ইবনুল আস ছিলেন মক্কার খুব সম্ভ্রান্ত একটি পরিবারের সন্তান । তার পিতা ছিলেন ইতিহাসের একজন বিখ্যাত কুরাইশ সরদার । আস নিজেও তার সমসাময়িকদের মাঝে অত্যন্ত প্রভাবশালি ছিলেন । আরবের পরবর্তী নেতাদের একজন বলে তাকে ভাবা হতো । যখন টানা দশ বছরের বেশ কয়েকটি সম্মুখ সমরের পরে মক্কার পতন অবশ্যম্ভাবি হয়ে এলো , ইবনুল আস প্রতিজ্ঞা করলেন , আরবের সকল লোক ইমান আনলেও তিনি আনবেন না । হুদায়বিয়া সন্ধি হবার পরই আস হিজরত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন ।

আবিসিনিয়ায় তখন নাজ্জাসির শাসন । নাজ্জাসিকে তখনকার আরবের অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান একজন শাসক বলে মনে করা হতো । তিনি অসহায়দের আশ্রয় দিতেন । নাজ্জাসির কাছে আস আগেও গিয়েছেন । জ্ঞানী ব্যাক্তি হিসেবে তার দরবারে আসের সম্মান আগে থেকেই ছিলো ।

কাউকে কিছু না জানিয়ে একদিন আমর নাজ্জাসির দরবারে উপস্থিত হলেন । নাজ্জাসি আমরকে দেখে অবাক হলেন । আমর নাজ্জাসিকে জানালেন , মক্কায় তার পক্ষে থাকা আর সম্ভব নয় । তিনি হিজরত করেছেন । নাজ্জাসি কারন জিজ্ঞেস করলে বুদ্ধিমান আমর ঘুরিয়ে তাকে মুহাম্মদের বিষয়ে অভিযোগ করে ফেললেন । মুহাম্মদের বিরুদ্ধে তার সাহায্য চাইলেন ।

কিন্তু নাজ্জাসি মুহাম্মদ এবং তার অনুসারিদের সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন । তিনি আমরকে ধমক দিলেন , তুমি কি আমাকে তার বিরুদ্ধে নালিশ করছো যার কাছে জিব্রিল আসেন ?

আমর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো , আপনি এ কথা জানেন ?

নাজ্জাসি জবাব দিয়েছিলেন , শুধু এটুকুই বিশ্বাস করি না । আরো বিশ্বাস করি এই মানুষটি তার প্রভাব সমস্ত আরব থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবেন এবং সকল শত্রুদের উপর বিজয়ী হবেন , যেমন হয়েছিলেন হযরত মুসা ফেরাউন এবং তার বংশধরদের বিরুদ্ধে ।

আমর জিজ্ঞেস করলেন , আপনি আমাকে কি বলবেন ?

নাজ্জাসি বলেন , একজন মহাপুরুষের সান্নিধ্য সবার কপালে জুটে না ।

আমর আর নাজ্জাসির দিকে আরেকবার ফিরে তাকান নি । সোজা ইয়াসরিবের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন । এবং পথিমধ্যে পেয়ে যান খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং ওসমান ইবনে তালহাকে । সেই সময়ের কুরাইশদের নতুন নেতৃত্বের উত্তরাধিকার হিসেবে তালহা এবং খালিদ বিন ওয়ালিদকে সবাই প্রচন্ড সম্মান করতো । তারাও একই উদ্দেশ্যে ইয়াসরিব যাচ্ছিলেন । তিনজন একত্রে এসে মদিনাতুন্নবীতে প্রবেশ করেন । নবীর কাছে উপস্থিত হয়ে সরাসরি ইসলাম গ্রহন করেন ।

তারা যখন মসজিদে নববীতে শপথ নিচ্ছিলেন , এক নারী দুর থেকে মন্তব্য করেন , হে নবী ! কুরাইশরা আজ মক্কাকে আপনার কাছে পুরোপুরিই তুলে দিলো ।

এখানে খুব মজার একটা ব্যাপার আছে । যে আমর রাসুলের(সাঃ) বিরুদ্ধে বদরের প্রান্তরে দাড়িয়েছেন , ওহোদে দাড়িয়েছেন , খন্দকে দাড়িয়েছেন , সেই আমরের বিশ্বাসের পাথর নড়েছিলো একজন বিদেশি মানুষের কথায় ! যেই আমর নবীকে তের বছর মক্কায় কাছ থেকে দেখে বিশ্বাস করতে পারেননি , তিনি সবকিছু বিশ্বাস করে ফেললেন দুই মিনিটের আলোচনায় ! যেই আমর টানা বিশ বছর জীবন মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন , তিনি এক নাজ্জাসির কথায় ভরসা করে ইয়াসরিবে চলে আসলেন !

আসলেই মানুষের বিশ্বাস এবং হেদায়েত এমনই । আল্লাহ যাকে চান হেদায়েত দেন , যাকে ইচ্ছা উঠিয়ে নেন ।

আমর ইবনুল আস তার সমস্ত কিছু হারিয়ে , আত্মীয়দের লাশের উপর পাড়া দিয়ে , নেতৃত্বকে বিসর্জন দিয়ে এক বিদেশির কথায় দুর বিদেশে বসে হেদায়েত লাভ করেছেন আর আমাদের এক বড় বুদ্ধিজীবী সম্প্রতি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেও , মুসলিম দেশে জীবনের সকল কিছু পেয়ে দুর বিদেশে গিয়ে হেলায় হেদায়েতটুকু খুইয়ে এসেছেন ।

আফসোস !

বিষয়: বিবিধ

১৫১৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

328875
০৬ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
শেখের পোলা লিখেছেন : ঐ যে বললেন, 'আর আল্লাহ যাকে খুশী গোমরাহ করেন'৷ইনি ঐ দলে কিনা তাই৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File