প্রসঙ্গ সন্ত্রাসী তালিকা প্রকাশ: মার্কিন-পশ্চিমা ও ইসরাইলের গেম পার্টনার সৌদি জোট
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১০ জুন, ২০১৭, ০৮:২৮:২৫ রাত
কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী চারটি আরব দেশ ৯জুন সন্ত্রাসবাদীদের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সে তালিকায় দুনিয়াখ্যাত ইসলামী পন্ডিত ও মনীষী ইউসুফ আল-কারজাভির নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ তালিকায় তিনি ছাড়া আরো রয়েছেন ৫৮ ব্যক্তি এবং ১২টি প্রতিষ্ঠানের নাম। কাতার এই তালিকাকে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে নাকচ দিয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর এ তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে চলমান টানাপড়েন আরো জোরদার হবে। কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-জাবের আস-সাবাহ যখন চলমান বিবাদ নিরসনে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন তখন এ তালিকা প্রকাশ করা হলো। তালিকায় সন্ত্রাসবাদী হিসেবে কাতারের ১৮ নাগরিকের নাম রয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদীদের তহবিল জোগানোর অভিযোগে এতে ঠাঁই পেয়েছে কাতারের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, রাজপরিবারের প্রবীণ সদস্য এবং সাবেক এক মন্ত্রীর নাম। আরব দুনিয়ার ৫৯জন ব্যক্তি এবং ১২টি প্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে এ তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে। এসব ব্যক্তির মধ্যে কাতার, সৌদিআরব, আরব আমিরাত, মিশর, লিবিয়া, কুয়েত এবং বাহরাইনের নাগরিক রয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন কাতারে বসবাসরত মিশরীয় বংশোদ্ভুত প্রখ্যাত আলেম ও ইসলামী পন্ডিত আল্লামা ইউসুফ আল-কারজাভি। তার নাম রয়েছে তালিকার ১৯ নম্বরে। বাকিদের কেউ আলেম, কেউ লেখক, কেউ বিশ্লেষক, কেউ সমাজকর্মী এবং অন্যান্য পেশায় জড়িত। আর যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে কাতারের তিনটি সেবাসংস্থা রয়েছে। সংস্থাগুলো হলো: কাতার চ্যারিটি, ঈদ চ্যারিটি এবং রাফ। আরো আছে কাতার স্বেচ্ছাসেবক কেন্দ্র, কাতারের একটি প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ বাহরাইন ও লিবিয়ার কয়েকটি সংগঠন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জঙ্গিবাদের কোন সংজ্ঞা সামনে রেখে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা শক্তি ও ইসরাইল যে ভাষায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা প্রবর্তন করেছে-সৌদি আরবসহ ৪টি আরব দেশের সন্ত্রাসী তালিকার সংজ্ঞা একই রকম। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, মার্কিন-পশ্চিমা ও ইসরাইলের ওপর প্রভাবিত হয়েই এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু প্রভাবিত বললে ভুল হবে। মার্কিন-পশ্চিমা ও ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করাই এ সন্ত্রাসী তালিকা প্রকাশের একমাত্র উদ্দেশ্য। এর আগে কাতার-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় মিশরের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলিমিন ও প্যালেস্টাইনের জনপ্রতিনিধিত্ব সংগঠন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে কাতারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান-এর সাহসী ভূমিকা:
এদিকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারকে বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে দেশগুলোকে অবিলম্বে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। কাতারে বাড়তি সেনা মোতায়েনের বিল পাস হওয়ারি একদিন পরই রিয়াদকে বিদ্বেষ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ারও আহবান জানিয়েছেন তিনি। এরদোগান বলেন, কাতারকে বয়কট করে এ অঞ্চলের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। রিপোর্ট: আল-জাজিরা। ৯জুন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে সদস্যদের উদ্দেশ্যে এরদোগান বলেন, আমরা আমাদের কাতারি ভাইদের পরিত্যাগ করবো না। তিনি আরো বলেন, সৌদি প্রশাসনের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, উপসাগরীয় অঞ্চলে আপনারা বৃহৎ এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। ভ্রাতৃত্বের জন্য আপনাদের কাজ করা উচিত-বিদ্বেষ ছড়ানো নয়। সবাই মিলে থাকার জন্য আপনাদের কাজ করা উচিত। এটা সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদগুলোর রক্ষণাবেক্ষণকারীদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা। কাতারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে এরদোগান বলেন, আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিৎ। এ পর্যন্ত সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া, ইয়েমেন ও মালদ্বীপ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সর্বশেষ সে তালিকায় নাম লিখিয়েছে জর্ডান। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কাতারকে ইসলামপন্থী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রশাসন। তবে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি বলছেন, নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি বাদ দিয়ে কাতার অন্যদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করবে না। তবে কাতারের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে তুরস্ক। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ও প্যালেস্টাইনের হামাস-এর প্রতি উভয় দেশই সমর্থন জানিয়ে আসছে। প্রসঙ্গত, কাতারের সহায়তায় সেখানে সেনা মোতায়েন করছে তুরস্ক। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। 8জুন এ প্রস্তাবের ওপর ভোট হয় তুরস্কের পার্লামেন্টে। এর পক্ষে দুইশ ৪০ ভোট পড়ে। এতে সমর্থন দেয় ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী জাতীয়তাবাদী এমএইচপি। তুরস্ক ২০১৪ সালে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য কাতারের সাথে চুক্তি করেছিল। ২০১৫ সালে কাতারে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত আহমদ দেমিরক বলেছিলেন, তুরস্কে তিন হাজার সৈন্য মোতায়েন করতে চান তিনি। এর ফলে সৌদি আরবের নেতৃত্বে যেসব দেশ কাতারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তাদের পিছু হটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কাতার-এর সাখে সম্পর্ক ছিন্ন করার নেপথ্যে:
কাতার-এর সাথে সৌদি আরবসহ ৬টি আরব দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করার বহু কারণ আছে। তবে এতে বড় ভূমিকা পালন করছে মার্কিন-পশ্চিমা ও ইসরাইল কানেকশন। আরো একটি বড় কারণ হলো: গত ২৪ মে বুধবার কাতারের সরকারি বার্তা সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয় দেশটির নেতারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন। ইসরায়েলের সাথে কাজ করে যাওয়ার অভিপ্রায়ে এবং একই সাথে ইরান ও হামাসকে সমর্থন অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন। আসলে এ ধরণের কোনো বক্তব্য-বিবৃতি তারা দেননি। হ্যাক করে কাতার নেতাদের নামে এ ধরণের ভুয়া বিবৃতি দেয়া হয়। কিন্তু আমিরাতের টিভি চ্যানেল আল-আরাবিয়া ও স্কাই নিউজ আরাবিয়া এ ধরণের ভুয়া বিবৃতির অব্যাহত সমালোচনা করতে থাকে এবং কাতারের জনগণকে তাদের আমিরের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করার আহবান জানায়। একই সাথে আমিরাত ও মিশরের বেশকিছু টুইটার এ্যাকাউন্টের আইপি ঠিকানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়-যেখান থেকে কাতার বিরোধী জোটের অংশীদারিত্ব দাবি করা হয় এবং কাতারের সেনাবাহিনীকেও দোষারোপ করা হয়। এসব বিবেচনায় দোহা’র নেতাদের বুঝতে কষ্ট হয় না কেন এধরণের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়টি ষড়যন্ত্রকে আরো পরিস্কার করে দেয়। কাতারের আমির শেখ তামিমের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির ব্যর্থ চেষ্টার পরও অসত্য তথ্যের যুদ্ধ চলতে থাকে। দিনের পর দিন সংবাদ প্রতিবেদন, প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, কাতার সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আরো বলা হয়, দেশটি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলকে অস্তিতিশীল করে তুলছে। কায়রো, রিয়াদ ও আবুধাবি থেকে একযোগে এ প্রপাগান্ডা চলতে থাকে। এরপর ৬জুন সৌদি আরবসহ ৬টি দেশ কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য কাতারের ওপর বেশকিছু শর্তারোপ করে। আরো একটি বড় কারণ হলো আরব গণজাগরণে কাতার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার ব্যাপক প্রচারণা। ২০১১ মিশরে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হয়। ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ৩২ বছর ধরে মিশর শাসন করা স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট হোসনী সাইদ মোবারকের পতন হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৯০ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয় দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজেনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড। একই বছরের ২৩ মে ১ম ও ২য় পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড-এর মনোনীত প্রার্থী ড. মোহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও অল্পদিনের মধ্যে মিশরে আবার বিক্ষোভ শুরু হয়। অনেক অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে বেদায়দায় ফেলে ক্ষমতাচ্যূত করার জন্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্ধন আছে। কারণ মিশরে গণতন্ত্রের বিকাশ হলে এর রেশ গিয়ে পড়বে প্রতিবেশী সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহ ও আমির শাসিত অন্যান্য দেশগুলোতে। এ জন্যই সৌদি ও আমিরাত মিশরের গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতে ব্যাপক অর্থ ঢালতে থাকে। মূলত সৌদি ও আমিরাতের অর্থে বলিয়ান হয়ে সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ২০১৩ সালের ৩ জুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। এরপর সাজানো ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হন তিনি। প্রেসিডেন্ট হয়েই হোসনী মোবারকের স্টাইলে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেন। তিনি মিশরের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের ব্যাপক মাত্রায় নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করেন। যা এখনো অব্যাহত আছে।
সন্ত্রাসের সংজ্ঞা এবং আসল সন্ত্রাসী কারা?
হামাস প্যালেস্টাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন। একই ভাবে মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন। মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে অন্যায় ভাবে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছেন আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি। মিশরে অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচন হলে স্বৈরশাসক সিসি বাতাসে ভেসে চলা ধুলোর মতোই উড়ে যাবে। একদিকে মার্কিন-পশ্চিমা এবং অন্যদিকে সৌদি-আমিরাত মদদে আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতায় টিকে আছে। এখানে সন্ত্রাসী আসলে কে বা কারা? যারা সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে তারা না যারা সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে তারা? সৌদি জোট দুটি দেশের দুটি জনপ্রিয় ও্ জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং কাতারকে এসব সংগঠনকে সহায়তা বন্ধ করার শর্ত দিয়েছে। এটা একটা ভয়ঙ্কর গেম ছাড়া আর কিছু নয়। এখানে স্পষ্ট যে, সৌদি আরবসহ সহযোগী আরব দেশগুলো মূলত মার্কিন-পশ্চিমা ও ইসরাইলের ফাঁদেই পা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে এক বিপজ্জনক খেলায় মেতে উঠেছে। এ ফাঁদ ও ষড়যন্ত্র সফল হলে মুসলিম উম্মাহ আরো একবার বড় রকমের সঙ্কটে পড়বে।
মনোক্ষুণ্ন সৌদি সামরিক জোটের প্রধান রাহিল শরীফ:
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সৌদি জোটকে অন্যায় ভাবে ইরান ও অন্য কোন মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার প্রচেষ্টা নিয়ে রাহিল শরীফ খুবই মনোক্ষুণ্ন। তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলেও কানাঘুষা চলছে। সম্প্রতি সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি-ইসলামী সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শীতল ব্যবহার করে স্বাগতিক সৌদি আরব। তাকে এমনভাবে ট্রিট করা হয় যেন তিনি অখ্যাত এক দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ সম্মেলনে তাকে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে পাকিস্তানী মিডিয়াগুলো সৌদি আরব সম্পর্কে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরব-এর এমন অভ্রাতৃ সূলভ আচরণের অন্যতম কারণ হলো: সৌদি আরব কর্তৃক ইয়েমেনে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানের সেনা সহায়তা চেয়ে না পাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েমেনে হামলা চালানোর জন্য সৌদি আরবকে সেনা সহায়তা না দেয়া পাকিস্তান সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
মুখোশ খসে পড়ছে সৌদি রাজ পরিবারের:
সৌদি রাজ পরিবারের মুখোশ খসে পড়তে শুরু করেছে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ সবসময় নিজেকে ইসলামের খাদেম বলে পরিচয় দেন। এ পরিচয় দিতেই তিনি বেশি গর্বরোধ করেন। বাস্তবে ইসলাম-মুসলিম তথা মুসলিম উম্মার উন্নয়ন ও কল্যাণে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবে সফর করেন। এ সফরের সময় সৌদি সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর মেয়ে ইভাঙ্কার মহিলা উদ্যোক্তা ফান্ডে ১শ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার অসহায় রিফিউজি ও ইসরাইলের হাতে নির্যাতিত প্যালেস্টাইনের জনগণের জন্য সৌদি আরবের কোনো সহায়তা ফান্ড নেই। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর নির্বাহী পরিচালক Kenneth Roth (কেনেথ রুথ) তার টুইটার স্ট্যাটাসে লিখেছেন: Saudi Arabia gave $100M to Ivanka's "female entrepreneurs fund" but hasn't given refugee status to a single Syrian. অর্থাৎ সৌদি আরব ইভাঙ্কার মহিলা উদ্যোক্তা ফান্ডে ১শ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু একজন সিরীয় নাগরিককে শরণার্থি মর্যাদা দেয়নি। ইসলামের নাম নিয়ে সৌদি রাজ পরিবারের চরম অনৈসিলামিক কান্ডকীর্তির মুখোশ খসে পড়ছে।
চরম ভুল পথে সৌদি জোট:
কাতার-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডসহ কতিপয় ব্যক্তি-সংগঠনকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে সৌদি রাজ পরিবার মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় বাদশাহ-আমির এখনো গোঁড়ামী ও মধ্যযুগীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা থেকে বের হতে পারেননি। তারা সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় বাছ-বিচার করতে জানেন না। মুসলিম উম্মাহ’র ভাল-মন্দ, উন্নতি-সমৃদ্ধি তাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো শুধু বাদশাহী টিকিয়ে রাখা এবং বাদশাহীর বিন্দুমাত্র হুমকি তৈরী হলে পৈশাষিক কায়দায় তা দমন করা। মুসলিম উম্মাহকে দূর্বল করার জন্য মার্কিন-পশ্চিমা ও ইসরাইলের গেম পার্টনার হয়েছে সৌদি জোট। মুসলিম দুনিয়ার বুদ্ধিজীবী মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের উচিত হবে এ ভয়ঙ্কর পথ থেকে সরে আসা। তা না হলে সৌদি আরব যে ভয়ঙ্কর গেম প্লানের পার্টনার হয়েছেন-তা থেকে দেশটি নিজেও রক্ষা পাবে না।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১২৯৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সারা দুনিয়াই সন্ত্রাসি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন