কাতার-এর সাথে সম্পর্কছিন্ন: মার্কিন ও পশ্চিমাদের দাবার ঘুটি সৌদি আরব
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ০৬ জুন, ২০১৭, ০৫:৩৫:৫৫ বিকাল
কাতারের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কাতারের বিরুদ্ধে চারটি দেশ অভিযোগ করে আসছিলো কাতার সন্ত্রাসে প্রণোদনা দেয়। এর আগে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর। পরে একই পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরবে অবস্থানরত ইয়েমেনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও লিবিয়া সরকার। সৌদি আহবানে সাড়া দিয়ে মালদ্বীপও কাতার-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তবে এ আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। কাতারের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশের সম্পর্কচ্ছেদের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ইরানের সঙ্গে সম্পৃক্ত গণমাধ্যম, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সমর্থন ও অর্থায়নে কাতারের উসকানি। সৌদি আরব, আমিরাত, বাহরাইন ও কাতার প্রভাবশালী আঞ্চলিক সংগঠন গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)’র সদস্য। জিসিসি’র মধ্যে শুধুমাত্র কুয়েত ও ওমানই কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
সন্ত্রাসবাদে কাতারের মদদ দেয়ার অভিযোগ করা হলেও মূল ঘটনা কিন্তু অন্য জায়গায়। সৌদি আরব চলে নামকাওয়াস্তে শরীয়া আইনে। যদিওবা দেশটির বাদশাদের মধ্যে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ কিছুটা ইসলামী মনোভাবাপন্ন ছিলেন। মুসলিম দুনিয়ার প্রতি তার দরদ ছিলো অগাধ ও অতুলনীয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ সৎ ভাইয়ের ছেলে ফয়সাল বিন মুসাইদ-এর হাতে হত্যাকান্ডের শিকার হন বাদশা ফয়সাল। এরপর থেকে আবদুল আজিজ আল সৌদ-এর পরিবারই পর্যায়ক্রমে সৌদি আরবে বাদশাহী করছেন। বর্তমানের সৌদি বাদশারা মুখে ইসলামের কথা বললেও তাদের জীবন-যাপন, চালচলন ও শাসন ব্যবস্থায় ইসলামের ছিটাফোঁটাও লক্ষ্য করা যায় না। তারা মুথে ইসলামের কথা বলেন-কিন্তু স্বার্থ রক্ষা করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের। এসব বাদশা নিজেদের বাদশাহীর বিন্দুমাত্র হুমকি মনে করলে তারা ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যেতে এমনকি হামলা চালাতেও দ্বিধা করেন না। এ ক্ষেত্রে ইয়েমেন-এর কথা উল্লেখ করা যায়। রাসূল (সা.) জন্মভূমি ও মুসলিম দুনিয়ার নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে সৌদি আরবের উচিত হলো: যেকোনো মুসলিম দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা। কিন্তু সৌদি আরব সেটা না করে নিজেদের সুবিধাজনক পক্ষকে সমর্থন করে সমস্যাকে জটিল করে তোলেন। বর্তমানে ইয়েমেন-এর রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার জলন্ত প্রমাণ। ইয়েমেন-এর একটি পক্ষকে সমর্থন দেয়ার কারণে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। ইয়েমেন-এ ব্যাপক হামলা চালানোর জন্য সৌদি আরব সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছিলো। পাকিস্তান সরকার সৌদি আরবকে স্পষ্ট ভাবেই বলে দিয়েছে যে, পাকিস্তান দুটি পবিত্র স্থানের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী পাঠাবে প্রস্তুত কিন্তু কোনো মুসলিম দেশে হামলা চালানোর জন্য নয়। এ রকম স্পষ্ট ঘোষণার পর পাকিস্তানের সাথে সৌ্দি আরবের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাতের পেছনেও কলকাঠি নাড়া ও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে সৌদি আরব। যা একাধিক নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রকাশিত হয়েছে। সৌদি আরব সম্পর্কে লেখার আগ্রহ থাকলে দুটি পবিত্র স্থানের কথা চিন্তা করে কখনো লেখা হয়ে উঠেনি। সাম্প্রতিক কালের মধ্যপ্রাচ্যের ছোট দেশ কাতার-এর সাথে সৌদি আরবসহ বাদশা ও আমির শাসিত কয়েকটি আরব দেশের বিরোধ চরম আকার ধারণ করায় সৌদি আরব সম্পর্কে লিখতেই হলো। দেখা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দুনিয়ার সব দেশের সঙ্কট নিরসনে নিরপেক্ষ ভূমিকার পরিবর্তে সবসময় বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে চলেছে সৌদি আরব। সিরিয়া সমস্যার ব্যাপারেও সৌদি আরবের ভূমিকা ছিল চরম বিতর্কিত। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাতের ব্যাপারে দেশটি ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করেছে।
কাতার সম্পর্কে বলতে হয় যে, মাত্র ২৭ লক্ষ মানুষের বসবাস আরব উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এ ছোট দেশটিতে। তবে দেশ হিসেবে ছোট হলেও কয়েকটি বিষয় কাতারকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাতার-এর জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজ। আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল-জাজিরা। ক্রীড়া জগতেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। ২০২২ সালের ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল আয়োজনের অধিকার অর্জন করেছে কাতার। রাজধানী দোহার ব্যাপক আধুনিক উন্নয়নের মাধ্যমে অনেক বহুজাতিক কোম্পানিকে সেখানে অফিস খুলতে আকৃষ্ট করেছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর আবুধাবির এতিহাদ এয়ারওয়েজ এবং দুবাই-ভিত্তিক এমিরেটস ০৬ জুন থেকে তাদের দোহাগামী বা দোহা থেকে সকল ফ্লাইট স্থগিত করেছে। বর্তমানে এ দুই বিমান সংস্থা দোহাতে দিনে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। কম ব্যয়ের বিমান সংস্থা ফ্লাইদুবাই এবং এয়ার অ্যারাবিয়াও তাদের দোহা ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে। ধারণা করা হচ্ছে অন্যান্য বিমান সংস্থা যেমন বাহরাইনের গালফ এয়ার এবং মিশরের ইজিপ্টএয়ারও তাদের দোহা ফ্লাইট বাতিল করবে। এর আগে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশর ঘোষণা করেছে যে, তারা কাতার-এর সাথে বিমান যোগাযোগ ছিন্ন করবে এবং নিজেদের আকাশপথ কাতার এয়ারওয়েজের জন্য বন্ধ করে দেবে। এ ক্ষেত্রে কাতারের জাতীয় বিমান সংস্থা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দুবাই, আবুধাবি, রিয়াদ এবং কায়রোর মত জায়গায় তাদের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। তার মানে, দিনে কয়েক ডজন ফ্লাইট বন্ধ হবে। ইতিমধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ সৌদি আরবে সব ধরণের বিমান যোগাযোগ বাতিল করেছে। খবর রয়টার্সের। মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় কাতার এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে এয়ার এরাবিয়া শারজাহ ও দোহাতে পরবর্তী নোটিশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিমানের সকল ফ্লাইট বাতিল করেছে। সোমবার ৫জুন স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সর্বশেষ ফ্লাইটটি যায়।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কাতারের সকল কূটনীতিকদের এবং আগামী ১৪ দিনের মধ্যে কাতারের সব নাগরিককে সেসব দেশত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ অঞ্চলের আকাশ পথের একটি বড় অংশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রাপথ বদলাতে হবে। এর কারণে স্বাভাবিক ভাবেই সময় বেশি লাগবে। সময় বাড়লে জালানি খরচ বাড়বে। যাত্রীদের মন-মেজাজও খারাপ হতে পারে। কাতার এয়ারওয়েজ তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে নিজেকে একটি 'হাব এয়ারলাইন' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। দোহার মাধ্যমে ইউরোপ এবং এশিয়াকে যুক্ত করে।
''ইউরোপ যাত্রার ছয় ঘণ্টার জায়গায় লাগবে আট-নয় ঘণ্টা। এটা যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক হবে না এবং তারা বিকল্প খুঁজতে পারে,'' বলছেন করনারস্টোন গ্লোবাল নামে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির পরিচালক ঘানেম নুসেইবেহ।
মরুভূমির দেশগুলোর স্বাভাবিক কারণেই খাদ্য ফলন কম হয়। খাদ্য নিরাপত্তা কাতারের জন্য বড় একটি বিষয়। স্থলপথে দেশে প্রবেশ করার একটিই পথ। সেটা সৌদি আরব সীমান্ত। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এই সীমান্ত দিয়ে আসে এবং খাদ্যদ্রব্য তাদের মালামালের একটি বড় অংশ। ধারণা করা হয় কাতারের খাদ্য আমদানির ৪০ শতাংশই এ পথে আসে। সৌদি আরব বলেছে তারা এই সীমান্ত বন্ধ করে দেবে এবং ট্রাক আসা বন্ধ হলে কাতার বিমান এবং সমুদ্রপথে মালামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরবে। ''এর কারণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে। এটা সাধারণ মানুষকে সরাসরি আঘাত করবে,'' বলছেন মি: নুসেইবেহ। ''যদি জিনিসপত্রে দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে-তাহলে আপনি দেখবেন সরকার বদলের দাবিতে বা দেশের নীতি পরিবর্তনের জন্য রাজকীয় পরিবারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়তে থাকবে।''
কাতারে এ মুহূর্তে কয়েকটি বড় নির্মাণ প্রকল্প চলছে। যার মধ্যে রয়েছে একটি নতুন বন্দর, মেডিকেল এলাকা, মেট্রো প্রকল্প এবং ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য আটটি স্টেডিয়াম।
নির্মাণ শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন কনক্রিট এবং ইস্পাত জাহাজে আসলেও, স্থলপথ দিয়ে সৌদি আরব হয়েও আসে। সীমান্ত বন্ধ হলে খাদ্যদ্রব্যের মতো নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং কাজ সময়মত শেষ করা কঠিন হয়ে যাবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য আকাশপথ এবং স্থলপথ বন্ধ হলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সময়সীমা হুমকির মুখে পরতে পারে। সৌদি সরকার বলেছে সম্পর্ক ছিন্ন করার অংশ হিসেবে, সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন, আরব আমিরাত, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের কাতারে যাওয়া, সেখানে বসবাস করা বা কাতার হয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদেরকে ১৪ দিনের মধ্যে কাতার ছাড়তে বলা হয়েছে।
একই সাথে, সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং বাহরাইনে বসবাসরত কাতারিদেরও একই সময়ের মধ্যে চলে যেতে বলা হয়েছে। তবে মিশর যদি একই রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাহলে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাতারে এক লক্ষ আশি হাজার মিশরীয় নাগরিক বাস করছে। যাদের বেশিরভাগ নির্মাণ শিল্পের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি এবং আইন পেশায় কর্মরত। এ বিশাল কর্মী বাহিনী কাতার ছেড়ে চলে গেলে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো কঠিন সমস্যায় পড়বে।
প্রশ্ন হলো: সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ হঠাৎ কেন কাতার-এর প্রতি এমন খড়গ হস্ত হলো? এর নেপথ্যে অনেক গুলো কারণ আছে। অন্যতম ফ্যাক্টর হলো সৌদি-মার্কিন কানেকশন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার কৃতিত্ব তার।
কাতার মুসলিম ব্রাদারহুডসহ অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে কাতার উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে তাকে জানানো হয়েছিল যে কাতার 'জঙ্গিদের সমর্থন করছে ও অর্থের যোগান দিচ্ছে'। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরটি ছিল খুব্ গুরুত্বপূর্ণ।
সৌদি আরবের রিয়াদ সফরের সময় ট্রাম্প তার এক ভাষণে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকে দায়ী করেন। পাশাপাশি তিনি এটাও বলেন ইসলামি চরমপন্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬জুন তাঁর টুইটার বার্তায় লিখেছেন, "মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় আমি বলেছিলাম জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে হবে। এটাকে কোনভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। দেখেন-নেতারা কাতারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন"। এরপর আরেকটি টুইট বার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, "সৌদি আরবসহ পঞ্চাশটি দেশ বলেছে তারা চরমপন্থা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। এটা দেখে খুব ভালো লাগছে। কাতারকে উদ্ধৃত করে তারা তাদের সিদ্ধান্তও জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ শেষ করার লক্ষ্যে সম্ভবত এটাই শুভ সূচনা"। সূত্র: বিবিসি।
তবে দৃশ্যমান কয়েকটি কারণ স্পষ্ট। ১. ছোট দেশ হলেও কাতারের উন্নয়ন উল্লেখ করার মতো। ২. গড় উন্নয়ন প্রবৃদ্ধিতে কাতার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার: সৌদি আরব ৪.৭৪, আরব আমিরাত ৩.৫, এবং কাতার ২.৯৬। ৩. আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল-জাজিরা। এ মিডিয়াটির নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বৃটিশ মিডিয়া বিবিসি ও মার্কিন মিডিয়া সিএনএন-এর জনপ্রিয়তাকেও অতিক্রম করেছে বহু আগে। ৪. মিশরের স্বৈরশাসক আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি’র ঘোর বিরোধী প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা ইউসুফ আল-কারজাভির অবস্থান। উল্লেখ করা যেতে পারে আল-জাজিরার জনপ্রিয়তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা দারুণ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে মিডিয়াটি মিশরের স্বৈরশাসনসহ অবৈধ ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধী। কাতারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত-এর শর্তের দিকে তাকালে সহজেই বুঝা যায় মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসক বাদশা ও আমিররা আল-জাজিরার ওপর কতোটা ক্ষুব্ধ।
এদিকে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কাতারকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে কাতার চালিত আরব দুনিয়াব্যাপী সুপরিচিত আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে হবে। এসব শর্তের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসকে কাতারের সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা দেখতে চাই কাতার উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগী প্রচার মাধ্যমগুলোর সমর্থন এবং অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের বিষয়ে কয়েক বছর আগে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়ন করছে।’ ‘কেউ কাতারকে আঘাত করতে চায় না। এ পদক্ষেপ এ জন্য নিতে হয়েছে যে, হয় এদিক হবে না হয় ওদিক। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে এ পদক্ষেপটি নিয়েছি যাতে এটি বোঝা যায় যে এ নীতিগুলি টেকসই নয় এবং পরিবর্তন করতে হবে’। জুবেইর আরও বলেন, কাতার হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও মিসর সরকারকে পতনে সাহায্য করছে। ‘আমরা মনে করি না এ নীতিগুলো সঠিক। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য কাতারকে অবশ্যই এ নীতি থেকে সরে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, কাতারের উচিত অবিলম্বে কাজ শুরু করা। তবে তিনি বলেন, সমুদ্র, ভূমি এবং আকাশ অবরোধসহ আরব রাজ্যের গৃহীত পদক্ষেপ দেশটির জন্য যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে, বুধবার এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের গাজা শাসনকারী দল হামাস জানিয়েছে, তারা সৌদি আরবের এ ধরনের বক্তব্যে মর্মাহত। বিবৃতিতে বলা হয়, জুবেইরের এ ধরনের বক্তব্য ফিলিস্তিনী জনগণ, আরব ও ইসলামী জাতিগুলোর জন্য পীড়াদায়ক। সূত্র: আল-জাজিরা
আজ-জাজিরাসহ বেশ কিছু বিদেশী সাংবাদিক টুইটার বার্তায় লিখেছে সৌদি আরব ইতিমধ্যে কাতারকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। শর্ত গুলোর মধ্যে ১. আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা ২. কাতারে বসবাসরত প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা ইউসুফ আল-কারদাবী বহিস্কার করা। উল্লেখ্য কারজাভিকে মধ্যপ্রাচ্যের মূলধারার ইসলামি আন্দোলন গুলোর সমর্থক হিসেবে ধরা হয় ৩. আরব আমিরাতের বিরোধী এক নেতার স্ত্রীকে কাতার থেকে বহিস্কার করা ইত্যাদি।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা করার জন্য ৬জুন মঙ্গলবার সৌদি আরব সফরে গেছেন কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল সাবাহ। শুরু থেকেই দু’পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানিয়ে আসছিলেন তিনি। চলমান সংকট নিয়ে ৬জুন মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির। কিন্তু কুয়েতের আমিরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সে ভাষণ স্থগিত করেছেন তিনি।
কাতার ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। পুতিন-এরদোগান আলাপে দুই নেতা কাতারের কূটনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এর আগে, তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্যা সমাধানে কাতার ও অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতায় প্রস্তুত আঙ্কারা। উল্লেখ্য, সোমবার কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় ছয়টি আরব দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেনের একাংশ। দেশগুলোর পক্ষ থেকে কাতারের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে কাতার বলছে, ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য পরিষ্কার। তারা আমাদের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং খবরদারি করতে চায়। এটা কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত’।
দেখা যাচ্ছে কাতার-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পেছনে মৌলিক কোনো স্বার্থ নেই। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসকদের ব্যক্তি স্বার্থ ও তাদের অপকর্ম কায়েম রাখতেই কাতার-এর সাথে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করছেন তারা। এর মাধ্যমে এসব বাদশা, আমির ও স্বৈরশাসকরা মূলত তাদের মসনদকে আরো দূর্বল করে তুলছেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ব্যাপক ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। কাতার-এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মাধ্যমে সৌদি আরবসহ মদ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো মুসলিম উম্মাহকে দূর্বল করার পথকেই প্রশস্ত করলো। অথচ রাসূল (সা.) জন্মভূমি হিসেবে সৌদি আরবের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মুসলিম উম্মাহকে মজবুত করা। কিন্তু সৌদি বাদশা করছেন এর ঠিক বিপরিত কাজ। মার্কিন ও পশ্চিমা মদদে সৌদি আরবসহ ৬টি আরব দেশ কর্তৃক কাতার-এর সাথে নিষ্ঠুর আচরণে মুসলিম দুনিয়ার বুদ্ধিজীবীরা দারুণ ভাবে ক্ষুব্ধ। তারা কাতার-এর প্রতি সহানুভূতিশীল। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এটাও বলছেন, ২০২২সালের ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল ভেনু সরানোসহ কাতারকে নানা ভাবে কাবু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা সৌদি আরবকে দিয়েই কলকাঠি নাড়াচ্ছে। অর্থাৎ মুসলিম দেশ দিয়ে মুসলিম দেশকে শায়েস্তা করে পুরো মুসলিম উম্মাহকে দূর্বল করার পুরনো মার্কিন-পশ্চিমা গেম। তবে কাতার-এর উচিত হবে সৌদি আরবসহ ৬টি দেশের অন্যায় শর্তের কাছে নতি স্বীকার না করা। আল-জাজিরাকে কোনো মতেই বন্ধ করা যাবে না। গণতন্ত্র পিপাসু মানুষের অধিকার সুরক্ষায় জনপ্রিয় এ মিডিয়াকে অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৫৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন