বিএনপি সমর্থিত সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মনজুর আবার আওয়ামী লীগে ফিরছেন: শুধু সময়ের অপেক্ষা!!!
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১৯ মে, ২০১৭, ১১:১২:৫২ রাত
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরতে ‘উপযুক্ত’ সময়ের অপেক্ষায় আছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম।
চট্টগ্রামে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন রাজনীতি ‘ছাড়ার’ ঘোষণা দিলেও এখন তার মনে হচ্ছে, রাজনীতি তাকে “নাও ছাড়তে পারে।” সেদিন তিনি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে মনজুর আলম বলেছিলেন, এরকম ভোট আমি জীবনে দেখিনি।
এর পর বিগত ২ বছর তাকে সরাসরি রাজনীতিতে দেখা যায়নি। সামাজিক কর্মকান্ড এবং শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গত বছর ১৫ অগাস্ট বঙ্গমাতা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান করার পর থেকেই মনজুরের আওয়ামী লীগে ফেরা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন মনজুরকে দলে ফেরাতে নিজের আগ্রহের কথাও জানিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর কিছুদিন এ নিয়ে আলোচনা ছিল না। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরুর পর আবারও মনজুরের নাম সামনে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মনজুর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে আছি। রাজনীতিতে আমি এখন কোথাও নেই।”
দুই বছরে খাগড়াছড়িতে একটি স্কুল, সীতাকুণ্ডে একটি কলেজ, ছলিমপুরে একটি মসজিদ, উত্তর পাহাড়তলিতে একটি কবরস্থান এবং মোস্তফা-হাকিম কলেজের কাছে একটি মাদ্রাসা করার কথা জানান সাবেক এই মেয়র। মনজুর বলেন, কাজ না করে তিনি বসে থাকতে পারেন না। মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে ‘খুব আনন্দ’ হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও শেখ মুজিবকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা বলেছেন মহিউদ্দিনের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা মনজুর।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পেোরেশনের সাবেক কমিশনার মনজুর আলম ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দেন। রাজনীতি বোদ্ধা মহল বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়েই তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিএনপিতে যোগ দিয়েই তিনি দলটি থেকে চট্টগ্রাম-৯ আসনে দলীয় প্রার্থী হন।তবে তিনি এমপি নির্বাচিত হতে পারেননি। এরপর ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ হেভিওয়েট প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম. মনজুর আলম।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনজুর ঢাকায় এসে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।
মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে যোগ দেননি মহিউদ্দিন চৌধুরী। ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধা-ভালবাসায় আপ্লুত শোনা গেছে সব সময়।
তাদের দু’জনের পারিবারিক সখ্যতার কথাও চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার জানা। মেয়র থাকাকালে মহিউদ্দিনের নামে নগরীর একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন মনজুর।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় নজীর বিহীন ভোট ডাকাতি ও ‘কারচুপির’ কারণে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সে সাথে রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন তিনি।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, মনজুর আলম একজন সমাজ দরদী ও সজ্জন ব্যক্তি। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত এবং নিজে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
তিনি শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন-একজন দক্ষ সংগঠকও। সুযোগের সদব্যবহার করে তিনি বিএনপি দলীয় মনোনয়ন নিয়েছিলেন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে তার রাজনৈতিক গুরু এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ধরাশায়ী করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেলে তার মেয়র হবার স্বপ্ন কখনো পুরণ হতো না। মেয়র নির্বাচিত হবার পর তিনি বিএনপি দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচীতে তেমন একটা অংশ নিতেন না। এ নিয়ে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নালিশের অন্ত নেই। যে কোন রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠানকে সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করে সবাই আত্ম প্রতিষ্ঠিত হতে চায়বেন। এ ব্যাপারে শুধু মনজুর আলম কে দোষারোপ করে লাভ হবে না।
বিএনপিই বা কেন ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফাউন্ডেশনের মতো আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গ সংগঠনের প্রধানকে চট্টগ্রাম-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলো? চট্টগ্রামে কি বিএনপি’র আর কোনো যোগ্য প্রার্থী ছিল না? না বিএনপি’র কমিটেট ও আদর্শবান প্রার্থীর সঙ্কটে পড়েছিলো?
মনজুর আলমরা সবসময় এ রকমই হয়। তারা গাছেরটাও খায়-আবার তলারটাও কুড়ায়! মনজুর আলমের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে বিএনপি এখানে ভিকটিম। মনজুর আলম-এর মাধ্যমে দলীয় ভাবে বিএনপি বিন্দুমাত্র লাভবান হয়নি। শুধু তার লাইবিলিটি বহন করেছে। শুধু মনজুর আলম নয়-এ রকম আরো বহু সুবিধাবাদী লোকের লাইবিলিটি বহন করেছে বিএনপি। ১৯৯১ সালের পর এ পর্যন্ত বিএনপি ২ মেয়াদে ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলো। এ ১০ বছরেই দেখা গেছে বহু লোক বিএনপিতে যোগ দিয়েছে। বিএনপি’র রাজনৈতিক প্রভাবে এম.পি, মেয়রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছে এবং নিজেদের আখের গুছিয়েছে। কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের। কিন্তু দলীয় ভাবে বিএনপি মোটেও লাভবান হয়নি। মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দলটির কমিটেট, আদর্শবান ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
বিএনপি’র রাজনৈতিক প্রভাবে প্রতিষ্ঠিত বহু ব্যক্তির কথা এখানে উল্লেখ করা যায়।এরা শুধু নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিএনপি ও দলটির জনপ্রিয়তাকে শুধু সিঁড়ি হিসেবেই ব্যবহার করেছে। দুঃসময়ে দলটির কোনো কাজ বা বিন্দুমাত্র উপকারে আসেনি। অনায়াসেই বলা যেতে পারে এসব সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগীরাই বিএনপিকে পিছন দিক থেকে লাথি মেরেছে।
খুবই দুঃখের বিষয় যে, এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলটি কোনো শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হয় না।।ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন-এর ২ বছর ও আওয়ামী লীগের ৮ বছর মিলিয়ে বিগত ১০ বছর যাবৎ এসব উদাসীনতার মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটি।
বিষয়: রাজনীতি
১১৯৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লেখা
মন্তব্য করতে লগইন করুন