প্রসঙ্গ বিচারকদের ইন্ডিয়ায় প্রশিক্ষণ: দেশ কি এগোচ্ছে না ভূঁতের মতো পিছন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১১ মে, ২০১৭, ০২:১৪:০৯ দুপুর
বাংলাদেশের বিচারকরা ইন্ডিয়া থেকে বিচারিক প্রশিক্ষণ নেবে বলে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের দেড় হাজার বিচারক ইন্ডিয়া থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। ৩ মে বুধবার সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ইন্ডিয়ার বিচার বিভাগের সাথে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ সমঝোতা স্মারক দুটির অধীনে উভয় দেশ পরস্পরকে বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা প্রদান করতে পারবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের দেড় হাজার বিচারক ভুপালে অবস্থিত ইন্ডিয়ান 'ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি ইন্ডিয়া, থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জনগণের দ্রুত ও সঠিক বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসামর্থ্য বিচার প্রার্থী জনগণকে আইনি সেবা প্রদানের জন্য বর্তমান সরকার ৬৪টি জেলায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্প লাইন উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ১৬৪৩০ নম্বরে টোল ফ্রি কল করে আইনি সহায়তা পেতে পারেন। তিনি বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে মামলার জট কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপিত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ইন্ডিয়া সফরে গিয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে বাংলাদেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণ দানের অনুরোধ করে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর কাকরাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ২০ তলা আবাসিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি ইন্ডিয়া সফরকালে সে দেশের প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণের অনুরোধ করেছিলাম। এ অনুরোধে ইন্ডিয়া সরকার সাড়া দিয়েছে। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সম্প্রতি ইন্ডিয়া সফরকালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি’র সাথে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য যে প্রশিক্ষণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে সে জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় এ দেশের নিম্ন আদালতের ১৫০০ বিচারক ইন্ডিয়ায় প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে। এ অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ইন্ডিয়াসহ সব কমনওয়েলথ্ সদস্যভুক্ত দেশসমূহ বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী এবং প্রাদেশিক মুখ্য মন্ত্রী ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও প্রাদেশিক আইন মন্ত্রীগণের উপস্থিতিতে বিচার বিভাগের সমস্যাসমূহ বিস্তারিত আলোচিত হয় এবং বিচার বিভাগের সমস্যা দূরীকরণে বাস্তব ভিত্তিক সমাধান খুঁজে বের করার আন্তরিক প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দুই বছর সফলভাবে সম্মেলন হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশে এ রেওয়াজ চালু হয়নি এবং এতে বিচার বিভাগ ও সরকার একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে নানা অন্তরায় থেকে যায়। আমরা পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো এবারও জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন আয়োজন করবো। আশা করি-আপনি প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাঝে উপস্থিত থেকে আমাদের কথা শুনবেন, বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ দেখাবেন এবং দেশের সকল বিচারককে অনুপ্রাণিত করবেন। দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ এপ্রিল, ২০১৭ই।
ইন্ডিয়ার বিচার বিভাগই নানা সঙ্কটে জর্জরিত:
বাংলাদেশের বিচারকরা প্রশিক্ষণ নেবে ইন্ডিয়া থেকে! অথচ ইন্ডিয়ার নিজের বিচার ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে নানা সঙ্কট ও জটিলতা। এ ব্যাপারে বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন বিবিসি’তে প্রচারিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে:
The Supreme Court of India, after questioning the mental health of a judge, has created unprecedented unrest in the world's largest democratic country's judiciary.
In the last seven months of the conflict with the Supreme Court, the Calcutta High Court Judge Chinnaswamy Swaranathan Karanan ordered the arrest warrant against seven judges of the highest court including Chief Justice of the country. In a BBC report, a warrant was issued against Justice Karanah recently in the Supreme Court's contempt of court case. In the fight, the seven-member Bench headed by India's Chief Justice JS Mehar ordered the court to look into the mental health of Justice Kannan on Monday. According to the order, the state police of West Bengal is said to have a mental health examination of Justice Karnar by a medical board in a government hospital in Kolkata. The report will be submitted to the Court in 8th May. Furious Justice Karna ordered the special court to return to his home and then issued a counter-rule. It is said, The Bench headed by the Chief Justice, who gave the order, all of them have to undergo mental health checks. Then, in the new order, he ordered the issuing warrant for arrest of seven judges including Chief Justice. The Supreme Court has already taken Grab of the judicial and administrative powers of Justice Karnay early this conflict.
BBC
বাংলা তরজমা:
ইন্ডিয়ার সর্বোচ্চ আদালত এক বিচারকের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর নজিরবিহীন জটিলতায় জড়িয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এ গণতান্ত্রিক দেশের বিচার বিভাগ।
সুপ্রিম কোর্টের সাথে গত সাত মাস ধরে চলা দ্বন্দ্বের মধ্যেই গতকাল (৩ মে) কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান দেশের প্রধান বিচারপতিসহ সর্বোচ্চ আদালতের সাত বিচারকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন। বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত এক আদালত অবমাননার মামলায় সম্প্রতি বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়। এরপর কথার লড়াইয়ের মধ্যে ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহারের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ গত সোমবার বিচারপতি কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। এ আদেশে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশকে বলা হয়, কলকাতার কোনো সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল বোর্ড করে বিচারপতি কারনানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। সুপ্রিম কোর্টে সেই প্রতিবেদন দিতে হবে ৮ মের মধ্যে। ক্ষিপ্ত বিচারপতি কারনান এরপর নিজের বাসায় বিশেষ আদালত বসিয়ে পাল্টা আদেশ জারি করেন। সেখানে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের সবার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর গতকাল নতুন আদেশে তিনি প্রধান বিচারপতিসহ সাত বিচারককে গ্রেফতারের জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। অবশ্য এ দ্বন্দ্বের মধ্যে বিচারপতি কারনানের বিচারিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আগেই কেড়ে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ইন্ডিয়ান আদালত তাদের বিচারকদের মানসিক সুস্থতা পরীক্ষার নির্দেশ নিয়ে রায় প্রদান করছে। যে বিচারপতির মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়েছে তিনি উল্টো নিজের বাসায় বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে প্রধান বিচারপতি সহ ৭ বিচারপতির জামিন অযোগ্য গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন। কি কান্ড দেখুন! এ দেখি পাগলা গারদের অবস্থা! এ হলো আমাদের দেশের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশ ইন্ডিয়ার বিচার ব্যবস্থার হাল-হকিকত।
বিলকিস বানু-নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়: ইন্ডিয়ার আদালতের সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক চরিত্র উন্মোচিত:
সাম্প্রতিক কালের দুটি মামলার রায় পর্যালোচনা করলে খুব সহেজেই অনুমান করা যায় ইন্ডিয়ার আদালত গুলো কতোটা বৈষম্যপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক। মামলা দু’টি হলো দিল্লীর নির্ভয়া ও গুজরাটের বিলকিস বানু ধর্ষণ ও হত্যা মামলা। দু’টি ঘটনাই মর্মান্তিক। সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও হৃদয় বিদারক হলো ৫ মাসের গর্ভবতি বিলকিস বানু ধর্ষণ, তার শিশু কন্যা ও পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা। বিলকিস বানু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার ১১ আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। অথচ দিল্লীর নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার ৪ আসামীকে ফাঁসি দন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হয়ে ইন্ডিয়ার মজলিশ ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন এর প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন,
Why the two-dimensional criteria in India for execution of death penalty: Owaisi. India's Majlish-e-Ittehadul Muslemin (MIM) Chief Barrister Asaduddin Owaisi questioned the double standards of the convicts in the gang-rape-killing case during the Gujarat riots. In the case, he called on the central government to appeal against the High Court verdict in the Supreme Court.
In 5 May (Friday), India's Supreme Court would verdict four accused were hanged to death for most highly discussed Nirbhaya gang rape and murder case. Earlier, the lower court and the High Court also sentenced the death penalty against the accused. On the other hand, the incident on 5 May, a day before the devastating Gujarat HC Bilquis Banu rape and murder case sentence of 11 accused to life imprisonment.
Hyderabad MP Barrister Asadauddina Owaisi said, "The accused Gujarat riot has not only raped pregnant Bilkis Banu, her innocent child was killed smashed with stones. Bilquis Banu sister, mother and other family members were killed. I think the accused should have been given death sentence.
'Owaisi said, he would respect the verdict of the High Court, but would like to know why the death penalty in the case of dual standards?
Owaisi said, he did not support the decision of the Court of Yakub Memon to death. But everyone knows that the 1993 Mumbai blasts case, was not the direct or indirect involvement. Despite this, the court found evidence against him.
Owaisi said, Bilkis Banu in Gujarat was gang rape and murder of his family members were at the time was the state's chief minister Narendra Modi. The Supreme Court has given the Central Investigation Agency (CBI) the Central Bureau of Investigation (CBI) in the hands of the Central Bureau of Investigation (CBI) for not investigating the case.
He said, "I like to know on Modi government would speak for Muslim women's rights (divorce issue)-what they will appeal against the Bombay High Court verdict that the criminals are sentenced to death?' During the mass killing of Muslims in Gujarat, 17 people, including Bilkis Banu and her family members, escaped on a small truck in search for security. Most of them were the people of Bilkis and nearest relatives. But they were caught by extremist Hinduman miscreants at Radhikapur in Dahod district near Ahmedabad. In front of the eyes of 19-year-old Bilkis, 14 of his family were brutally murdered. Among the dead were 4 women and 4 children. Brutally crushed in front of Bilkis's eyes and her child Saliha was killed. Bilkis mother Halima and her sister died. Five months pregnant Bilkis Banu was brutally raped by miscreants. Her body wounds a violent mob.
The miscreants leave meant Bilkis as dead in naked body. At that time, the police was not recognized file of a case against miscreant about this incident and threatened to Billkis. Doctors of the hospital did not help him by lifting the human services.
Bilkis had to overcome the insignificant insistence and bravery and Modi's police was surrender. At last, police were forced to complain about rape. Bilkis Banu went to the National Human Rights Commission and the Supreme Court.
In December 2003, the Supreme Court ordered the CBI to investigate the incident. The CBI arrested the accused in January 2004. Bilkis buried family members were re-examination of the central investigation agency.
Based on the petition filed by Bilkis in relation to the death of witnesses, the Supreme Court transferred the case to the Mumbai sessions court in August 2004.
Court accused 13 people in 2008. Convicted 11 peoples as Jasawant Nai Govinda Nai, sailesh Bhat, radhesyam Shah, Bipin Chandra Joshi, keshar bhai bhohaniya, raju bhai Sony, mitesh Bhat, Ramesh Chandan, Prodip Mordhia and baka bhai moradhiya were sentenced to life imprisonment for rape and murder.
Police officer of limkhera police station sombhai Gori was sentenced three years in connection with distorting the statement of Bilquis Bano. Later he died.
On March 4, the court ordered the execution of the life sentence of the convicts on Thursday for appeals against the punishment in the Bombay High Court. On the other hand, a lower court redeems two doctors and five policemen accused in connection with plunge evidence. But the HC accused them again.
বাংলা তরজমা:
মৃত্যুদন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ায় দ্বিমুখী মানদন্ড কেন? প্রশ্ন ওয়াইসির। ইন্ডিয়ার মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু গণধর্ষণ-হত্যা মামলায় আসামীদের শাস্তি প্রসঙ্গে দ্বৈত মানদন্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ মামলায় তিনি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইন্ডিয়া বহুল আলোচিত নির্ভয়া গণধর্ষণ-হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গতকাল (শুক্রবার) চার আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে। এর আগে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টও আসামীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের সাজা দিয়েছিল।
অন্যদিকে, এ ঘটনার একদিন আগে ৪ মে মুম্বাই হাইকোর্ট ২০০২ সালে ভয়াবহ গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু গণধর্ষণ-হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেয়। হায়দ্রাবাদের লোকসভা সদস্য ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘আসামিরা গুজরাট দাঙ্গার সময় কেবল গর্ভবতী বিলকিস বানুকে ধর্ষণই করেই ক্রান্ত হয়নি তার মাসুম শিশু সন্তানকে পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করেছে। বিলকিস বানুর বোন, মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হত্যা করা হয়েছিল। আমার মনে হয় এ মামলায় আসামিদের মৃত্যুদন্ড দেয়া উচিত ছিল’।
ওয়াইসি বলেন, আমি হাইকোর্টের রায়কে সম্মান করি কিন্তু মৃত্যুদন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমুখী মানদন্ড কেন? বলেন, তিনি ইয়াকুব মেমনের মৃত্যুদন্ড নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু এটা সকলেই জানেন যে, ১৯৯৩ সালে মুম্বাই বিস্ফোরণ মামলায় তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তা সত্ত্বেও আদালত তার বিরুদ্ধে আনুষঙ্গিক প্রমাণ পেয়েছিল।
ওয়াইসি বলেন, গুজরাটে যখন বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল সে সময় নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার সরকার এ মামলার সঠিক তদন্ত না করায় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে তা তুলে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আমি মোদি সরকারের কাছে জানতে চাই মুসলিম নারীদের অধিকারের (তালাক ইস্যুতে) কথা বলা সরকার কী মুম্বাই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে যাতে অপরাধীরা মৃত্যুদন্ডের সাজা পায়?’
গুজরাটে মুসলিম নিধনযজ্ঞের সময় নিরাপত্তার সন্ধানে ছোট ট্রাকে চড়ে পালাচ্ছিলেন বিলকিস বানু ও তার পরিবারের সদস্যসহ আরো ১৭ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন বিলকিসের আপনজন। কিন্তু তারা আহমেদাবাদের কাছে দাহোদ জেলার রাধিকাপুরে হিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন। ১৯ বছর বয়সী বিলকিসের চোখের সামনে তার পরিবারের ১৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৪ জন নারী ও ৪টি শিশু। বিলকিসের চোখের সামনে নৃশংসভাবে পাথরে মাথা থেঁতলে দিয়ে হত্যা করা হয় তার শিশু সন্তান সালেহাকে। নিহত হন বিলকিসের মা হালিমা এবং তার বোনও। দুর্বৃত্তদের হাতে পাঁচ মাসের গর্ভবতী বিলকিস বানু পাশবিকভাবে ধর্ষিতা হন। তার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দেয় হিংস্র উন্মত্ত উগ্র হিন্দুরা।
বিলকিসকে মৃত ভেবে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে যায় ওই দুর্বৃত্তরা। সেসময় পুলিশ বিলকিসের ধর্ষণের অভিযোগ না নিয়ে হুমকি দিয়ে থানা থেকে বিতাড়িত করে। হাসপাতালের চিকিৎসকরাও চরম সাম্প্রদায়িক চরিত্রে নিমজ্জিত থেকে ডাক্তারী পেশার সেবার আদর্শ ত্যাগ করে বিলকিস বানুকে চিকিৎসা করেননি।
কিন্তু বিলকিসের অদম্য জেদ ও সাহসের কাছে পরাস্ত হতে হয় তখনকার মোদি সরকারের পুলিশকে। শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগ নিতে বাধ্য হয় পুলিশ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিলকিস বানু।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট এ ঘটনার সিবিআই তদন্তের আদেশ দেয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে সিবিআই। বিলকিসের পরিবারের সদস্যদের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় পরীক্ষা করে কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা।
সাক্ষীদের প্রাণহানির আশঙ্কায় বিলকিসের আবেদনের ভিত্তিতে ২০০৪ সালের আগস্টে সুপ্রিম কোর্ট ওই মামলা মুম্বাই দায়রা আদালতে স্থানান্তর করে।
২০০৮ সালে ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে যশবন্ত নাই, গোবিন্দ নাই, শৈলেশ ভাট, রাধেশ্যাম শাহ, বিপিনচন্দ্র যোশী, কেশর ভাই ভোহানিয়া, রাজু ভাই সোনি, মিতেশ ভাট, রমেশ চন্দন, প্রদীপ মোরধিয়া এবং বাকা ভাই ভোহানিয়াসহ ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়।
বিলকিস বানুর বয়ান বিকৃত করায় তিন বছরের কারাদন্ড হয় লিমখেড়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা সোমভাই গোরির। পরবর্তীতে তিনি মারা যান।
সাজা প্রাপ্তরা মুম্বাই হাইকোর্টে শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন করলে আদালত গত ৪ মে বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। অন্যদিকে, নিম্ন আদালতে ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ লোপাটের সঙ্গে জড়িত দুই চিকিৎসক, পাঁচ পুলিশকর্মী রেহাই পেলেও মুম্বাই হাইকোর্ট পুনরায় তাদের অভিযুক্ত করেছে। এ হলো ইন্ডিয়ার বিচার ব্যবস্থার হাল-হকিকত।
চরম সাম্প্রদায়িক দেশ ইন্ডিয়ায় প্রশিক্ষণ নেবে বাংলাদেশের বিচারকরা!
কাগজে-কলমে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও ইন্ডিয়া মূলত চরম হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দেশ। এমন বৈষম্যপূর্ণ ও সাম্প্রদায়িক দেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাবে বাংলাদেশের বিচারকরা। বাংলাদেশের সব মানুষ চায় দেশের বিচার ব্যবস্থা উন্নত হোক-আধুনিক হোক। সাধারণ মানুষ বিচার চাইতে গিয়ে যাতে কোনো মতেই হয়রানীর শিকার না হয়-সেটা সবারই প্রত্যাশা। দুনিয়াটা বহুদূর এগিয়েছে। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি ও অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করার মতো। তবুও আইনী শিক্ষা, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার ব্যবস্থার নাম নিলে সবার আগে চলে আসবে বৃটেনের নাম। এ বিষয়ে উন্নত দুনিয়ার কোনো দেশ এখনো পর্যন্ত বৃটেনকে অতিক্রম করতে পারেনি। আইনী শিক্ষা বা আইন ও বিচার ব্যবস্থা আধুনিকায়ন এবং উন্নতি করার জন্য যদি প্রশিক্ষণ নেয়ার দরকার হয়-সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের উপযুক্ত দেশ হলো গ্রেট বৃটেন। ইন্ডিয়ার বিচার ব্যবস্থা এমনিতেই নানা সঙ্কটে জর্জরিত। যার কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিচারকরা কেন প্রশিক্ষণ নিতে যাবে এমন এক সঙ্কট জর্জরিত সাম্প্রদায়িক দেশে? দুমুর্খরা বলে এ সরকার জনগণের ম্যান্ডেটহীন। সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে ইন্ডিয়ার মদদে। তাই সবকিছু হচ্ছে ইন্ডিয়ার ইশারায়। সুতরাং সারা দুনিয়াকে বাদ দিয়ে এ সরকারের চোঁখ নিবদ্ধ আছে ইন্ডিয়ার দিকে। এ সরকারের কাছে ইন্ডিয়া হলো সব আধুনিকতা ও উন্নতির কেন্দ্রবিন্দু! ইন্ডিয়া ছাড়া দুনিয়ার আর কোনো দেশের দিকে এদের চোঁখ পড়ে না। পড়ার কথাও নয়। তথ্য প্রযুক্তিতে সবচেয়ে উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি সেকশনের ভার ছেড়ে দেয়া হয়েছে রাকেশ আস্তানা নামের এক ইন্ডিয়ানকে। শুয়োরকে যেখানেই লালন-পালন করা হোক না কেন-তার নজর থাকে সবসময় নোংরা জায়গায় এবং নোংরা বস্তুর দিকে। আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থাও হয়েছে শুয়োরের মতো। ভূঁতের পা নাকি পিছন দিকে থাকে। তাই ভূঁত সবসময় পিছন দিকেই হাটে। শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন বলে বাকওয়াজী করে চলেছেন অবিরত। সামনের দিকে নয়-বাস্তবে তারা দেশকে ভূঁতের মতো পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের প্রশাসন থেকে শুরু করে সব জায়গা এমনকি ক্যান্টনমেন্টকেও ইন্ডিয়ান গোয়েন্দাদের বিচরণ ক্ষেত্র বানানো হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণের নামে দেশের বিচার ব্যবস্থাও ইন্ডিয়ার হাতে তুলে দেয়া হবে। কিন্তু দেশের মানুষ পিছন দিকে নয়-সামনের দিকে যেতে চায়।
বিষয়: রাজনীতি
১১৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভারত তো সুপার পাওয়ার হল বলে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন