সব জঙ্গি কি শুধু আস্তানাতেই থাকে?
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ৩১ মার্চ, ২০১৭, ১১:৪০:০৪ রাত
দেশে হঠাৎ করেই কথিত জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গেছে। একের পর এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে! সিলেটের শিববাড়ী এলাকার আতিয়া মহলে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছিল। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে অতি উৎসাহী দেশী-বিদেশী মিডিয়াগুলোর চোঁখ এখন কথিত জঙ্গি বিরোধী অভিযানের দিকে। পুলিশ, সোয়াদ, র্যাব-এর ব্যর্থতার পর ২৫ মার্চ থেকে সেখানে সেনাবাহিনী যোগ দিয়েছিল। দেশের সব বাহিনী এমনকি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানের মধ্যে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চলমান অবস্থায় সে ভবনের কাছাকাছি (আনুমানিক ৬০ গজ) দূরে বোমা বিস্ফোরণে র্যাব-এর ইন্টেলিজেন্স চীফ লে. কর্ণেল আবুল কালাম আযাদসহ ২জন র্যাব অফিসার গুরুতর আহত হয়েছেন। ২ পুলিশ অফিসারসহ নিহত হয়েছেন ৭জন। সব মিলিয়ে আহত হয়েছে ৭০জনের মতো। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ছাত্রলীগের দুই নেতা। এমন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বোমা হামলা বা বিস্ফোরণের ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ইতিমধ্যে বোমা বিস্ফোরণে আহত র্যাব-এর ইন্টেলিজেন্স চীফ লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরিয়ে আনার পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)-এর তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর সেখানে তিনি ইন্তেকাল করেন। র্যাব-এর আইন মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বৃহস্পতিবার রাত একটায় এ তথ্য জানান। সেনা অফিসার আযাদের মৃত্যু কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সিলেটের কথিত ‘জঙ্গি’ বিরোধী অভিযানে চার দিনের নাটকীয়তা শেষে ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। অভিযান চলাকালে বিপুল অস্ত্রের প্রচারণা চালানো হয়েছিল জোরে-শোরে। কিন্তু সেনা বাহিনীর নেতৃত্বে চার দিন ব্যাপি অভিযানের পর চারটি লাশের সন্ধান দিয়েছে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তারা। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র থাকার গল্প প্রচারিত হয়েছিল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। অভিযান শেষে কি ধরনের অস্ত্র পাওয়া গেছে তাঁর কোন তথ্য জানানো হয়নি। এ অভিযান চলাকালে কথিত ‘জঙ্গিদের’ কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে-এমন প্রচারণার কারণ কি? ২৪ মার্চ সকাল থেকেই থেকে গোটা এলাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। ঘোষণা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। র্যাব-এর ইন্টেলিজেন্স চীফ নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এমন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কিভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো? কারা ঘটিয়েছে এ বিস্ফোরণ? প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রলীগের স্থানীয় যে দু’জন নেতা নিহত হয়েছেন তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কি করছিলেন? বিপুল পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকা অবস্থায় এ এলাকায় কিভাবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো? বোমা বহনকারী নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেতরে ল. কর্ণেল আযাদকে টার্গেট করল কিভাবে? বোমা বা বিস্ফোরক সামগ্রী সুপার মার্কেট, গ্রোসারি বা স্টেশনারী দোকানে পাওয়া যায় না। কারা এবং কোথা থেকে এসব বোমা এনে সেনা অভিযানের খুব কাছের এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটালো? নাকি সুপরিকল্পিতভাবে আযাদকে হত্যা করা হয়েছে! আহত হবার পর র্যাব ইন্টেলিজেন্স চীফ আজাদকে প্রথমে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সিএমএইচে আনার পরদিন সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। দুদিন পর চিকিৎসকদের পরামর্শেই সেখান থেকে গত বুধবার তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। পরে তাঁকে সিএমএইচের আইসিইউতে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার রাত একটায় তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। সবকিছু যেন মহা রহস্যের ঘোরে আচ্ছন্ন। মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখলাম আতিয়া মহলে অবস্থান নেয়া কথিত জঙ্গিদের প্রথমে আত্মসমর্পণের আহবান জানায় পুলিশ। কিন্তু জঙ্গিরা বলে, “তোমরা নয় সোয়াদ টিমকে আসতে বলো”। লেখালেখি ও সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়েছি ২০ বছর হতে চললো। দুনিয়ার কোনো দেশের সন্ত্রাসী বা জঙ্গিরা কোনো বাহিনীকে অভিযান শুরু বা আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে-এরকম ঘটনার কথা এর আগে কখনো শুনিনি। অথচ বাংলাদেশে শুনতে হচ্ছে! অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: ফখরুল আহসান সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তারা নিশ্চিত হয়েছেন ২ ‘জঙ্গি’ ভেতরে নিহত হয়েছেন। ভিতরে আরো ২ জন থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। অভিযান শেষ হয়নি, চলবে।’ সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী ৪ থেকে ৫ জনের অবস্থান ছিল এ বাড়িতে। সর্বশেষ প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ৪/৫জন কথিত জঙ্গি দমনে সেনা বাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে র্যাব, পুলিশ, সোয়াদ সবাই ৩দিন যাবৎ নাকানী-চুবানী খাওয়ার অবস্থা! এর মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণে র্যাব-এর ইন্টিলিজেন্স চীফসহ ৭০ জন আহত এবং ৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গেছে। এসব কোনো কিছুইর যেন হিসাব মিলছে না!
মশা মারতে কামান! অথচ পিলখানায় সেনা অভিযান চালাতে দেয়া হয়নি:
সিলেটের শিববাড়িতে মাত্র ৪ জন কথিত জঙ্গির মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো অভিযান চালানো হলো। অথচ ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসার হত্যাকান্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনীকে অভিযান চালাতে দেয়া হয়নি। ৫৭জন সেনা অফিসারের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জঙ্গি বিরোধী অভিযান ও জঙ্গি নেতাদের গ্রেফতারে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ছাপ রাখা কর্ণেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ। কথিত বিডিআর বিদ্রোহের মাত্র অল্প ক’দিন আগে তাকে ডেপুটেশনে বিডিআরে বদলী করা হয়েছিল। একটি ওয়েবসাইটে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
Colonel Gulzar made 16 SOSs in last 2 hours of his life.
Colonel Gulzar Uddin Ahmed, lauded for his role as a Rab official in the drive against militants, especially those of Jama'atul Mujahideen Bangladesh (JMB), waited a long time for his colleagues to come and to save his life from the brutal hands of the BDR mutineers (so-called) on February 25.
On February 25, in his first call at 9:38 am to RAB intelligence director Lieutenant Col Majid, he sought help for him and the other officers under attack. After that he dialed on the TNT number of DG of RAB, Hasan Mahmud Khandaker. He also talked to ADG of RAB and Commanding officer of RAB-2 and discussed about the operations.
Colonel Gulzar also made four other calls to Army headquarters for help. The duration of the calls was for 31 seconds, 55 seconds, 48 seconds and 101 seconds respectively. And finally he called his some fellow RAB officials and waited for the troops till he was gunned down.
It was learnt that two troops from the RAB headquarter and RAB-2 were headed for Pilkhana after receiving calls from Gulzar at 10:38 am. He informed them that he was lying into the Darbar Hall of BDR headquarter and the mutineers must have to flee away the scene, if only two platoons of armed soldiers reach the area for the Army’s support, as mutineers were not equipped with too much modern weapons.
At about 11:20 am Col Gulzar had received a message in his cell phone. From 9:38 am to 11:20 am he had made a total of sixteen phone calls to different numbers and urged all to save the lives of the army officials including him.
Meanwhile, 2 troops of 300 members RAB team reached the gate-4 of BDR headquarters within 10:00 am and waited for the government order to start operation against the BDR rebellious team.
Finally the government handled the 33-hours long mutiny 'successfully', but was failed to save the talented army officers like Col Gulzar , who had served the nation courageously till death.
Gulzar, who believed that the rescue teams will arrive soon and save his life from the inhuman killing, same as the nation awaits to see the punishment of the killers of Gulzar and others.
The dead body of Colonel Gulzar Uddin Ahmed was found 10 days after the mutiny inside the BDR headquarter and identified by a DNA test on March 10. He was laid to rest on March 11 at the Banani graveyard in Dhaka with his other colleagues, as same as they had fought together to maintain peace across the world.
Colonel Gulzar was posted to BDR in Sylhet early February.
Before being promoted as additional DG of Rapid Action Battalion (RAB), he was in the intelligence wing of the elite crime-busting force, and conducted some major investigations.
He led the operation that netted JMB operations commander Siddiqul Islam alias Bangla Bhai.
বাংলা তরজমা:
“কর্ণেল গুলজার ২ঘন্টায় ১৬ টি ইমার্জেন্সি কল করেছিলেন।
গুলজার উদ্দিন আহমেদ জঙ্গি বিরোধী অভিযানে তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। বিশেষ করে জমিয়তুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর বিরুদ্ধে অভিযানে তার সফলতা ছিল উল্লেখ করার মতো। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় কথিত বিডিআর বিদ্রোহে মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার সহকর্মীদের আবেদন জানিয়েছিলেন তার জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯.৩৮ টায় প্রথমে তিনি র্যাব-এর ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর লে.কর্ণেল মজিদকে ফোন করে তিনি এবং অন্য অফিসারদের জীবন রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন কারণ অফিসাররা আক্রান্ত হয়েছে। এরপর তিনি তিনি টিএন্ডটি নাম্বারে র্যাব ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকারকে ফোন করেন এবং র্যাব-এর এডিজি ও র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসারের সাথে অপারেশনের ব্যাপারে কথা বলেন। তারপর তিনি সাহায্যের জন্য ফোন করেন আর্মি হেডকোয়ার্টারে। সে ফোন কলের ব্যাপ্তি ছিল যথাক্রমে: ৩১ সেকেন্ড, ৫৫ সেকেন্ড, ৪৮ সেকেন্ড এবং ১০১ সেকেন্ড। সর্বশেষ তিনি ফোন করেন তার কিছু র্যাব অফিসারকে এবং গুলির মুখে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনী আগমণের অপেক্ষায় ছিলেন। সকাল ১০.৩৮ টায় কর্ণেল গুলজারের ফোন পেয়ে র্যাব হেডকোয়ার্টার ও র্যাব-২ থেকে ২ সোলজার পিলখানা মুখি হয়েছিলেন। কর্ণেল গুলজার বলেছিলেন, তিনি বিডিআর হেডকোয়ার্টারের দরবার হলে শুয়ে আছেন এবং বিডিআর বিদ্রোহীরা পালিয়ে যেতে পারতেন না যদি শুধু ২ প্লাটুন আর্মি ফোর্স অভিযানে শুরু করতো। বিদ্রোহীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছিল না।
সকাল ১১.২০টা পর্যন্ত কর্ণেল গুলজার তার সেলফোনে মাত্র একটি মেসেজ পান। অথচ সকাল ৯.৩৮ টা থেকে ১১.২০টা পর্যন্ত কর্ণেল গুলজার বিভিন্ন নাম্বারে ১৬ বার কল করে সেনা অফিসার ও তার জীবন রক্ষার আবেদন জানান। ইতিমধ্যে সকাল ১০.০০ টাং ২ সেনা ও ৩০০ সদস্যের র্যাব টিম বিডিআর হেডকোয়ার্টারের ৪ নং গেটে এসে পৌঁছে এবং বিডিআর বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর জন্য সরকারের নির্দেশের অপেক্ষোয় থাকেন। সর্বশেষ সরকার ৩৩ ঘন্টা সময় ক্ষেপণ করায় সফল হয় কথিত বিডিআর বিদ্রোহ। তবে কর্ণেল গুলজারের মতো মেধাবী অফিসারের জীবন রক্ষা করা যায়নি। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের সেবা করেছেন। গুলজার বিশ্বাস করেছিলেন, উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মির্মম হত্যাকান্ড থেকে তার জীবন বাঁচাবে। কর্ণেল গুলজার ও অন্য সেনা অফিসারদের হত্যাকারীদের শাস্তি দেখার জন্য জাতি অপেক্ষা করছে। বিডিআর বিদ্রোহের ১০ দিন পর বিডিআর হেডেকোয়ার্টারের অভ্যন্তরে কর্ণেল গুলজারের লাশ পাওয়া যায় এবং ডিএনএ টেস্ট-এর তার লাশ সনাক্ত হয়। ১১ মার্চ কর্ণেল গুলজারের লাশ বনানী গোরস্থানে দাফন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাকে ডেপুটেশনে বিডিআরে বদলী করা হয়। এর আগে তিনি র্যাব-এর এডিজি পদে প্রমোশন পেয়েছিলেন। র্যাব-এর ইন্টেলিজেন্স উইং-এ চাকরীকালীন তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত কাজ পরিচালনা করেন।
তিনি জমিয়তুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) কমান্ডার সিদ্দিকুল ইসলাম প্রকাশ বাংলা ভাইকে গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।”
এখন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরী করার জন্যই পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে মাস্টার প্লান করে সেনা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে। মাত্র ৪/৫জন কথিত জঙ্গি দমনের জন্য সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো অভিযান চালানোর ঘটনায় কথিত বিডিআর বিদ্রোহের সে নারকীয় ঘটনাটি আবার সামনে চলে এসেছে। জনমনেও জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন। এ মূহুর্তে কোনো প্রশ্নেরই সঠিক জবাব মিলছে না। জবাব দেবেই বা কে? জবাব দেয়ার মতো কেউ তো নেই। কারণ এ সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব্ করে না। র্যাব-১১ কমান্ডার তারেক সাইদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জে ৭ হত্যাকান্ডের ঘটনা, ৫ জানুয়ারির কুখ্যাত নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ফয়েজ আহমদকে হত্যা করে ৩ তলা থেকে লাশ ফেলে দেয়া। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতাকে আটক করতে গিয়ে সাধারণ জনতা কর্তৃক র্যাব ফোর্সকে ঘেরাও করে ফেলা এবং ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার এনে তাদের উদ্ধার করা। আশকোনায় বোমা বিস্ফোরণের পর ২৭ ফেব্রুয়ারি তুলে নেয়া আবু হানিফ মৃধাকে হত্যার ঘটনা। মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে অস্বীকার করা সহ আরো বিস্তর অপকর্মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে এলিট ফোর্স র্যাব-এর বিরুদ্ধে। মূলত র্যাব-এর অনিয়ম, চরিত্র স্খলন, মানুষকে আটকের পর অস্বীকার, আটককৃতদের হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসীর ক্রসফায়ারে নিহত হওয়া ছাড়া র্যাব-এর বিরুদ্ধে তেমন গুরুতর কোনো অভিযোগ ছিল না। আসলে যে কোনো সংস্থা বা বাহিনীর আচরণ-ব্যবহার ও কর্মতৎপরতা নির্ভর করে সংস্থাটিকে কারা ব্যবহার করছে তারা উপর। যেমন: “ছুরি ডাক্তারের হাতে গেলে মানুষের জীবন বাঁচে আর ডাকাতের হাতে গেলে মানুষের জীবন নাশ হয়”। তলানীতে ঠেকে যাওয়া র্যাব-এর ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ এ যাবৎ নেয়া হয়নি। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলোরও কোনো সুনির্দিষ্ট তদন্তের ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অভিজ্ঞ বিশ্লেষক বলছেন র্যাব-এর অনিয়ম, চারিত্রিক স্খলন ও নানা অপকর্মের প্রসঙ্গকে ধামাচাপা দেয়া এবং এ বাহিনীর প্রতি মানুষের সহানুভূতি তৈরীর জন্য ইন্টেলিজেন্স চীফ লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদকে স্ক্যাপ গোট বানানো হয়েছে! এদিকে সিলেটে অভিযান চলাকালীন বোমা বিস্ফোরণ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হামলা নয়, আগে থেকে পড়ে থাকা বোমা ধাক্কা লেগে বিস্ফোরিত হলেই সিলেটের শিববাড়িতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। র্যাব-এর গোয়েন্দা প্রধানসহ আহত হন অর্ধশত। বিবিসি বাংলা-কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে যখন শিববাড়ির ওই সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানাটি নিরাপত্তা বাহিনী ঘেরাও করে ফেলে, তখনই বোধহয় কোনো একসময় এখানে আশেপাশে তারা বোমাটি রেখে গিয়েছিল বা আগেই রেখে গিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'পুলিশরা যখন দেখেছে, তখনই এটা বিস্ফোরিত হয়েছে, ধাক্কা-ধোক্কা খেয়ে।' শনিবার সন্ধ্যায় জঙ্গি আস্তানা 'আতিয়া মহলে' চলমান কমান্ডো অভিযান সম্পর্কে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই পাশে একটি জায়গায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। নিহত অন্য চারজন 'উৎসুক' জনতা বলে জানিয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। এছাড়া আহত হন অর্ধশত। এ ঘটনায় গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত হন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় বিস্ফোরণের সময় একজন মোটর সাইকেল আরোহীর আগমনের বিবরণও পাওয়া যায়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, 'এটি লক্ষ্য করে কোনো হামলা নয়। কিভাবে হয়েছে এটা আমরা এখনও ঠিক জানি না। তদন্ত শেষে বলতে পারবো বিস্ফোরণ কিভাবে হয়েছে এবং বোমাটা কিভাবে আসলো।'
সেনা অভিযানের প্রশংসায় ইন্ডিয়ান সেনা অফিসার এবং শের-ই বাংলার উক্তি:
এদিকে সিলেটে কথিত জঙ্গি আস্তানায় সেনা অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইন্ডিয়ান দাদারা। মানে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক অফিসার। ইন্ডিয়ার মদদ ও ইন্ধনে বর্তমান অবৈধ ও গণবিরোধী সরকার এতো বেশি অপকর্ম করে চলেছে যে-তাতে ইন্ডিয়ানদের নাম লিখতেও ঘৃণা হয়। ইন্ডিয়ান সেনা অফিসারদের প্রশংসা প্রসঙ্গে বাংলার বাঘ হিসেবে খ্যাত শের-ই বাংলা একে ফজলুল হক-এর স্মরণীয় উক্তির কথা মনে হলো: তিনি বলেছিলেন, “যখন দেখবে আনন্দবাজার ও হিন্দুরা আমার প্রশংসা করছে তখন বুঝতে হবে আমি মুসলমানদের ক্ষতি করে ফেলেছি-যখন দেখবে হিন্দুরা আমার সমালোচনা করছে তখন বুঝতে হবে আমি আমার নীতিতে অটল আছি।” এ একবিংশ শতাব্দীতেও শের-ই বাংলার এ উক্তির প্রাসঙ্গিকতা কমেনি।
জঙ্গি আস্তানায় অভিযান এবং শিশু-মহিলাদের নির্মম ভাবে হত্যা!
এ নিবন্ধ লেখার সময় আরো কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ২টি মৌলভিবাজার জেলায় ২টি কুমিল্লার কোটবাড়ীতে। মৌলভীবাজারের নাসিরপুরের ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, লাশগুলোর মধ্যে একজন পুরুষ, দুইজন নারী ও চারজন শিশুর লাশ রয়েছে। লাশগুলোর মধ্যে চারটি শিশুর। যাদের বয়স এক থেকে ১২ বছর। দুজন নারীর; একজনের বয়স ৩৫, অন্যজনের ৫৫। আর যুবকের বয়স ৩৫। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, নাসিরপুরের আস্তানায় সাত থেকে আটটি ডেড বডি সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের। প্রতিকূল অাবহাওয়ার কারণে অভিযান শুরু হতে বিলম্ব হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর ‘অপারেশন হিট ব্যাক’ দ্বিতীয় দফায় শুরু হয়।
জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে আবারো মির্মম ভাবে ৪ শিশু ও ২ মহিলাকে হত্যা করা হলো।
জঙ্গি আস্তানা ও অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পশ্চিমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সমর্থন আদায়ের অপচেষ্টা:
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে কেন হঠাৎ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে? সবারই জানা থাকার কথা জঙ্গি প্রসঙ্গটি পশ্চিমা দুনিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। কথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস নিয়েও পশ্চিমাদের মাথাব্যাথার শেষ নেই। অথচ এ আইএস ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সিআইএ-র যৌথ তত্বাবধানে তৈরী করা হয়েছে বলে নিরপেক্ষ মিডিয়াগুলো তথ্যভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। জঙ্গি নিয়ে অতি উৎসাহী পশ্চিমা দেশ ও মিডিয়াগুলো এসব রিপোর্টকে মোটেও কেয়ার করে না। মুসলিম দেশগুলোতে আইএস নিয়ে তারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েই চলেছে।
উদ্দেশ্য কথিত প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা চুক্তি করার প্লট তৈরী:
হঠাৎ জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং জঙ্গি নাম দিয়ে কিছু মানুষকে লাশ বানানো হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। সবাই জানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া কোনো বৈধ সরকার নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কোনো সভ্য দেশ নির্বা্চন বলে স্বীকৃতি দেয়নি। এ নির্বাচন দেশ-বিদেশের কারো কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও ইন্ডিয়ার মদদে অবৈধ সরকার দিব্যি দাপটের সাথে ক্ষমতা দখলে রেখে তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গি প্রসঙ্গকে সামনে এনে এবং জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নামে মানুষ হত্যা করে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে চায়। ১। জঙ্গি অভিযান ও তাবেদার মিডিয়াগুলো দিয়ে সাড়াশি প্রপাগান্ডা চালিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের কোশেশ করা। ২। জঙ্গি দোহাই দিয়ে ইন্ডিয়ার সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী কথিত নিরাপত্তা ও সামরিক চুক্তিকে জরুরি প্রমাণ করে এটাকে হালাল করার কোশেশ করা। হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য ইন্ডিয়ার মদদে জনগণের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতা দখলে রাখা। ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য হলো হাসিনাকে পুতুলের মতো ব্যবহার করে দেশটির একশ ভাগ স্বার্থ হাসিল করে নেয়া। শেখ হাসিনা আগামী ৭ এপ্রিল ইন্ডিয়া সফরে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার এ সফরেই নিরাপত্তা ও সামরিক চুক্তি সেরে ফেলতে চাইছে ইন্ডিয়া। কিন্তু হাসিনার জবরদস্তি মূলক ক্ষমতা দখলে রাখার অপচেষ্টায় যেমন জনগণের সমর্থন নেই। ঠিক তেমনি জঙ্গি প্রসঙ্গকে সামনে এনে পশ্চিমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ইন্ডিয়ার সাথে কথিত নিরাপত্তা ও সামরিক চুক্তি কোনোটির ব্যাপারেই মানুষের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই। ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য জনস্রোত বা জনমতকে পদদলিত করে ইন্ডিয়ার সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী যেকোনো চুক্তির পরিণাম মারাত্মক হতে পারে।
বিষয়: রাজনীতি
১৫২১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর অন্যদিকে তুলে নেবার খবরও সমান তালে আসতেছে ।
http://epaper.prothom-alo.com/view/dhaka/2017-03-31/1
http://epaper.prothom-alo.com/view/dhaka/2016-12-13/1
মন্তব্য করতে লগইন করুন