নিরাপত্তা-প্রতিরক্ষা চুক্তি বনাম মূর্তি বিরোধী আন্দোলন
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১১:৪১:০২ সকাল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ইন্ডিয়া সফরে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া সেনাবাহিনী যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক বিমান বিনিময় করবে। চুক্তির ড্রাফটও প্রস্তুত রয়েছে। এমনই দাবি করেছে ইন্ডিয়ান অনলাইন বাংলা পত্রিকা কলকাতা টুয়েন্টিফোর ডটকম।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উভয় দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে প্রশিক্ষণ শিবির ও যৌথ সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হবে। যুদ্ধজাহাজ ও সামরিক বিমান বিনিময়। আন্তর্জাতিক পানি সীমা বরাবর যৌথ টহল। দুই দেশের নৌ সেনার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগের বিষয়গুলো থাকবে চুক্তিতে। পত্রিকাটির দাবি স্থানীয় পর্যায়ে এ চুক্তির বিরোধিতা করা হলেও বর্তমান সরকার সামরিক চুক্তিতে আগ্রহী। মনে হচ্ছে ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে তার স্বার্থের অনুকূলে প্রতিরক্ষা চুক্তি করিয়ে নিতে চাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ চুক্তিতে সম্মত হওয়া মানে ইন্ডিয়ার গোলামীর জিঞ্জিরে চিরতরে আনুষ্ঠানিকভাবে আটকে পড়া। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে এই চুক্তি করবেন বা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনো তাতে বাধা দিয়ে যাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ইন্ডিয়ার চাপের মুখে যে কোনো সময় নতি স্বীকার করতে পারেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। ২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে দেশের ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইন্ডিয়ার হাত আছে বলে মনে করেন বহু বিশেষজ্ঞ। বর্তমানেও সেনাবাহিনীকে চাপে রাখা হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতিরোধ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সচেতনতা। আম জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিরোধ ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে এখনো উচ্চ বাক্য করছে না। বামপন্থীরা ইন্ডিয়ার দালালী করছে বহু আগে থেকে। তারা রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করছে ঠিকই। তবে, তা লোক দেখানো। ইন্ডিয়ার দালাল মিডিয়াগুলো এ গুরুতর বিষয় ও ইস্যুকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ অস্পষ্টভাবে কিছু কথা প্রকাশ করছে।
আলোচিত চুক্তি ও ইন্ডিয়া সম্পর্কে শেখ হাসিনা:
ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কেউ কিছু আদায় করতে পারলে আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে-বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি বা অন্য কোনো সরকার ইন্ডিয়ার কাছে দাবি আদায়ের সাহস পায়নি। তারপরও তারা ইন্ডিয়া বিরোধিতার কথা তুলে নানা বক্তব্য দিয়ে আসছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে ইন্ডিয়ার দালালি কারা করে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার রাজধানীতে যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ইন্ডিয়া সফরের আগে সম্ভাব্য নানা চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে কথা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। সরকার ইন্ডিয়ার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করতে যাচ্ছে দাবি করে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এ ধরণের কোনো চুক্তি হলে দেশের মানুষ সেটা মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিএনপির এ অবস্থান নিয়ে কিছু বলেননি। চুক্তি নিয়ে কিছু না বললেও না বললেও দলটির এর আগে নানা সময় ইন্ডিয়া বিরোধিতা করে দেয়া নানা বক্তব্য এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে শুনি খুব ইন্ডিয়া বিরোধী কথা। আমার প্রশ্ন ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে যখন আমেরিকান কোম্পানি আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে চাইলো ইন্ডিয়ার কাছে-তখন ইন্ডিয়ার কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল কে? খালেদা জিয়াই তো দিয়েছিলেন। তিনিই তো ক্ষমতায় এসেছিলেন। আমি তো চেয়েছিলাম, আমার দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগবে। আমার ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে, তারপর ভেবে দেখবো আমরা বিক্রি করবো কি করবো না। ফলাফল কী? যাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলে, এখানে যে ‘র’ (ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা) এর প্রতিনিধি, সে তো হাওয়া ভবনে বসেই থাকতো। আমেরিকার অ্যাম্বাসির লোক হাওয়া ভবনেই বসে থাকতো। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতেই তো কাজ করেছে তারা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় এসে তারা গ্যাস বিক্রি করতে পারেনি, কিন্তু মুচলেকা তো দিয়েছিল। তাদের মুখেই আবার এত ইন্ডিয়া বিরোধী কথা।’ ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ইন্ডিয়া সফর নিয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসলো। তখন তিনি ইন্ডিয়া গেলেন। ইন্ডিয়ায় গিয়ে ওনি বেশ ঘুরে-টুরে আসলেন। যখন এখানে সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে কী হলো? ওনি বলেছেন, ‘গঙ্গার পানির কথা? ওহ তো, আমি তো আমি ভুলেই গেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্ডিয়া বিরোধী কথা বলবেন, তার আগে ওনি গঙ্গার পানি আদায় করার জন্য ফারাক্কা পর্যন্ত লং মার্চও করেছিলেন, আন্দোলনও করেছিলেন। কিন্তু ইন্ডিয়া গিয়ে গঙ্গার মানির কথা ভুলেই গেলেন। তাহলে দালালিটা করে কে? আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পরই আমরা কিন্তু গঙ্গা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি।’ ইন্ডিয়ার সাথে ছিটমহল বিনিময় নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দুই বছর আগে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার একরেরও বেশি ভূমি পেয়েছে। ইন্ডিয়ার সাথে ভূমি বিরোধ মেটাতে বিএনপির কোনো উদ্যোগ না থাকারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারির বিষয়ে জাতির পিতা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চুক্তি করে রেখে যান, আইন পাস করে রেখে যান, কই বিএনপি, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া। যারা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা তো এক বারের জন্যই আমাদের সীমানার দাবিও করেননি। সীমানা নির্দিষ্ট করার সাহসও পায়নি আমি বলবো। ’ ইন্ডিয়া ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধ মীসাংসা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার পর আওয়ামী লীগের গত আমলে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নির্দিষ্ট হয়। মিয়ানমারের সাথে মামলা জেতার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন। যদিও পরে সে অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসে পরে তিনি তা ফিরিয়ে নেন। ইন্ডিয়ার সাথে মামলাও বাংলাদেশের জয় হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকার। সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশও তাই মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া-কোনো সরকার কখনও এ ইন্ডিয়া ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা, কোনো মামলা বা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? নেয়নি। কেন নেয়নি? তারা যদি এতই দেশপ্রেমিক হবে, তাহলে দেশের এই সমস্যার কথা তোলেনি কেন?’ বিএনপির ইন্ডিয়া বিরোধিতা যে অহেতুক এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে সেটার প্রমাণ দিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির উদাহরণ টানেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য এলাকায় শ্বায়ত্বশাসনের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রামে থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে চুক্তি করে। বিএনপি সে সময় এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে দেশে হরতাল ও লংমার্চ করেছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, এই চুক্তি হলে বাংলাদেশের একটি বড় অংশে ইন্ডিয়ায় চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলে, ‘ইন্ডিয়ায় ৬৪ হাজার শরণার্থী ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের। আমি ক্ষমতায় গিয়ে এই শরণার্থীদেরকে ফিরিয়ে আনি। বলা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি হলে ফেনী পর্যন্ত ইন্ডিয়া হয়ে যাবে। আমি প্রশ্ন করলাম, তাহলে তো খালেদা জিয়া ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার হবে বা প্রাদেশিক পরিষদে যেতে হবে তাকে। অথবা পশ্চিমবঙ্গের পার্লামেন্টে যেতে হবে অথবা ত্রিপুরায় যেতে হবে। ওনি বুঝি ত্রিপুরার পার্লামেন্টে যাবেন।’ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতেও বাধা’-এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারেনি-এথন আবার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে। আমি একটা কথাই বলবো, এই সমস্ত খেলা বহু তারা লেখেছে। তাদের কাছে দেশপ্রেম নয়, ক্ষমতাটাই তাদের কাছে ভোগের বস্তু।’
এ্যাডলফ হিটলারের প্রচার সচিব জোসেফ গোয়েবলস-এর থিউরি ও শেখ হাসিনা:
বড় মিথ্যা সম্পর্কে এডলফ হিটলার-এর প্রচার সচিব জোসেফ গোয়েবলস-এর থিউরি ছিল “একটি মিথ্যাকে বার বার সত্য বলে প্রচার করলে মানুষ সেটাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে”। The big lie theory or commonly known as Goebbels’ principle states that if one wrong is reverberated many a times then people will accept that wrong as right. Joseph Goebbels believed that “the most brilliant propagandist technique will yield no success unless one fundamental principle is borne in mind constantly-it must confine itself to a few points and repeat them over and over”.
শেখ হাসিনা তার আওয়ামী লীগও মনে হয় জোসেফ গোয়েবলস-এর সে থিউরি আদ্যোপান্তই গ্রহণ করেছেন। মিথ্যাকে বার বার সত্য বলে প্রচার করে তারা মানুষকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করছেন এবং ধোকা দিচ্ছেন। ইন্ডিয়া সম্পর্কে শেখ হাসিনার এসব কথার বাস্তব ভিত্তি কতটুকু? আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কিছু আদায় করতে পারেনি-এ বাকওয়াজী কতটুকু সত্য? বাস্তবতা হলো: স্বাধীনতার পর ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের একটি মাত্র সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ চুক্তি হয়েছে। সেটা ১৯৭৭ সালে সম্পাদন করা গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি। গ্যারান্টি ক্লজসহ এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৪৪ কিউসেক পানি পায়। ১৯৭৭ সালে কি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল? ১৯৭৪ সালে ই্ন্দিরা-মুজিব সীমান্ত চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ভূখন্ড বেরুবাড়ী ইন্ডিয়ার কাছে হস্তান্তর এবং আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম বাংলাদেশকে ফেরৎ দেওয়ার কথা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শেখ মুজিবের আমলেই বাংলাদেশ তার ভূমি বেরুবাড়ী ইন্ডিয়ার কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু ইন্ডিয়া আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম হস্তান্তর করেনি। দীর্ঘ ২০ বছর পেরিয়ে যায় কিন্তু আঙ্গরপোতা-দহগ্রামের মানুষ নিজ দেশের ভূমিতে যাতায়াত করতে পারে না। বিএনপি সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় ১৯৯৩ সালে আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে ইন্ডিয়া সফরে গিয়ে গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে ভুলে গেছেন। এ কথা তিনি এবং তার দলের নেতারা এ পর্যন্ত বহুবার বলে দেশের মানুষকে অবিরত ধোকা দেয়া ও বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছেন। সত্য ও বাস্তবতা আসলে কি? আসলেই কি একজন প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়ে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে ভুলে যান না্ ভুলে যাবার কথা? এসব গাঁজাখুরি উক্তি, কথা-বার্তা শুধু উম্মাদদের পক্ষেই বলা সম্ভব। এসব কথা যদি আওয়ামী লীগ নেতারা বলতেন তাহলে কথা ছিল না। কারণ আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য পেশ করার সময় কোনো কালেই সত্য, বাস্তবতা ও দায়িত্বশীলতার ধার ধারেন না। তারা সবসময় নিজেদের মনগড়া রেকর্ড বাজান বা গীত গান। গায়ের জোরে নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠা করার আওয়ামী খাসলত বহু পুরনো। কিন্তু শেখ হাসিনাতো এর আগেও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি কিভাবে আবাল ছেলে-পুলেদের মত অবিরাম এসব গাঁজাখুরি কথা বলে যান? খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন। সে সফরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয়সহ ইন্ডিয়ার সাথে বাংলাদেশের বিরাজমান সব সমস্যা নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সে আলোচনার যৌথ ইশতেহার প্রকাশিত হয়েছে। সেটা নিম্নরূপ:
Joint communiqué issued at the end of the visit of the Bangladesh Prime Minister Begum Khaleda Zia to India.
New Delhi, May 28, 1992.
1. At the invitation of His Excellency Mr. P.V. Narasimha Rao, Prime Minister of the Republic of India, Her Excellency Begum Khaleda Zia, Prime Minister of the People’s Republic of Bangladesh paid a State visit to India from May 26-28, 1992.
2. During her visit, the Prime Minister of Bangladesh called on His Excellency Shri R. Venkataraman, President of India, and His Excellency Dr. S.D. Sharma, Vice-President.
3. The Prime Ministers held comprehensive and wide-ranging discussions covering international, regional and bilateral issues in an atmosphere of friendship, harmony and cordiality.
4. Reviewing the recent momentous and unprecedented changes in the international situation, they expressed satisfaction at the more positive developments and expressed the hope that these would be built upon in the interest of the international community as a whole. The end of the cold war, dissolution of sharp ideological clevages and renewed emphasis on resolution of differences through peaceful means, would hopefully result in a world order based on equity, justice and cooperation. They called for a simultaneous democratisation of international relations and a greater thrust on alleviation of poverty. The decision making organs of the U.N. which were sought to be invested with greater active responsibility, must enjoy wider representation and reflect the collective opinion of its membership
The Non-aligned Movement based on its abiding principles of independence of judgement and freedom of action, and its emphasis on equitable international economic development, has come to acquire a renewed relevance in the light of these developments.
The two Prime Ministers reiterated their belief that SAARC represents the faith and aspiration of the countries of South Asia to enhance regional cooperation in the interest of greater understanding and well-being of the peoples of the region. Towards this end, they felt that a further momentum should be given to SAARC activities in the core areas of economic cooperation. The two leaders felt that the Seventh SAARC Summit to be held in Dhaka at the end of this year assumes special significance as the beginning of the second cycle of SAARC Summits and expressed the hope that it would not only lead to the consolidation of the past achievements and would also identify new meaningful avenues to achieve its objectives.
The two leaders expressed their determination to further consolidate the friendly, harmonious and good neighbourly relations between Bangladesh and India, in the larger interest of the peoples of the two countries and of peace and stability in the region. A significant opportunity was now available for the purpose based on the mandate of the people.
Both sides noted with satisfaction the recent Exchange of Letters regarding the modalities for implementation of the terms providing for right of passage for Bangladesh citizens through Tin Bigha area which will become effective from June, 26, 1992.
Based on this understanding, it was agreed that efforts should be intensified to resolve the other outstanding issues emanating from the India-Bangladesh Land Boundary Agreement of 1974. It was also agreed that discussions on delimitation of the Maritime Boundary would be resumed at an early date. Moreover, they I noted the need for discussions in due course concerning the question of New Moore/South Talpatty Island for an in-depth examination on the basis of all relevant facts and principles.
The two Prime Ministers noted that due to growing need for waters, the flows available in the Ganga/Ganges and Teesta would fall short of the requirements of the two countries particularly during the lean season. They agreed that an equitable, long-term and comprehensive arrangement for sharing the flows of these and other major rivers evolved through mutual discussions would serve the best interest of the peoples of the two countries. They directed their Ministers concerned to make renewed endeavours for achieving an acceptable settlement including the interim arrangements for sharing the dry season flows on the Ganga/Ganges in the meanwhile. The Prime Minister of India assured that every possible effort will be made to avoid undue hardship to Bangladesh by sharing the flows in Ganga/Ganges at Farakka on an equitable basis. The concerned Ministers of the two sides will meet for this purpose on an urgent basis.
In the meanwhile, joint monitoring of releases at Farakka and the Teesta barrage, and observations on the flows of the major rivers into Bangladesh will be revived and undertaken immediately. Taking into account the problems being caused due to large-scale illegal immigration of people across their borders, they expressed their determination to stop illegal movement of people across the border by all possible means including the strengthening of existing arrangements and mutual co-operation in this regard.
Both sides resolved to take effective measures in order to maintain peace and tranquillity all along the border and to refrain from unfriendly activity.
The two Prime Ministers agreed to arrange speedy repatriation of all Chakma refugees to Bangladesh in full safety and security. In this context, the Bangladesh side agreed to set up a representative political-level Committee that would encourage the refugees to return. The Indian side assured that its authorities would cooperate fully in the process of repatriation.
The two Prime Ministers directed that special focus should be placed on increasing and diversifying trade and economic cooperation between the two countries. They agreed that the authorities concerned would meet at an early date, preferably August/September 1992, to hold Trade Review Talks with a view to renewing the existing Trade Agreement. They agreed that the Joint Economic Commission between the two countries should meet in October 1992. Existing cooperation in the fields of Culture, Education, Information and Defence could also be expanded.
The Prime Minister of Bangladesh expressed her appreciation to the Prime Minister, the Government and the people of India for the warm welcome and hospitality extended to her and the members of her delegation during their stay in India.
The Prime Minister of Bangladesh extended an invitation to the Prime Minister of India to visit Bangladesh. The invitation was accepted with pleasure.
দেশ বিরোধী চুক্তি বনাম মূর্তি বিরোধী আন্দোলন:
দেশি-বিদেশী মিডিয়ায় ইতিমধ্যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, শেখ হাসিনার আসন্ন ইন্ডিয়া সফরে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ২টি চুক্তি। এ ২টি চুক্তির ড্রাফটে যা বলা হয়েছে-তাতে স্পষ্টই বুঝা গেছে এ চুক্তি দেশের চরম স্বার্থ বিরোধী। চুক্তিগুলো হলো: ১। নিরাপত্তা চুক্তি, ২। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় চুক্তি। নিরাপত্তা চুক্তির আওতায় কথিত জঙ্গি দমনের নামে যেকোন সময়-যেকোন উছিলায় ইন্ডিয়ান আর্মি বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। কথিত সে যৌথ বাহিনীর কমান্ড থাকবে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর হাতে। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা হবে পুকুলের মতো। অর্থাৎ এ চুক্তি হলে বাংলাদেশের স্বাধীন স্বত্বা ও মর্যাদা বলতে কিছুই থাকবে না। বাংলাদেশকে কাশ্মীর ও প্যালেস্টাইনের পরিণতি বরণ করতে হবে। ইন্ডিয়ান মিডিয়ায় বলা হচ্ছে দেশে প্রবল বিরোধিতা থাকলে শেখ হাসিনা ইন্ডিয়ার সাথে এসব চুক্তি করবেন। এ জন্যই দেশের মূল ইস্যু পাশ কাটিয়ে হাসিনা ও তার চেলা-চামুন্ডারা বিএনপিকে ইন্ডিয়ার দালাল বলে অভিহিত করে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করার অপচেষ্টা করছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনকে টেনে এনে নানারকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এসবের উদ্দেশ্য একদম দিনের আলোর মতোই পরিস্কার। দেশ বিরোধী চুক্তির বিষয়ে মানুষ যাতে অন্ধকারে থাকে সে জন্য জঙ্গি নাটক সাজানো হচ্ছে। সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবী থেমিস-এর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে একই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। জঙ্গি নাটকের কাহিনী শুনতে মগ্ন থাকবে সাধারণ মানুষ। ধর্মভিরু মুসলমানরা মনোযোগী হবে মূর্তি বিরোধী আন্দোলনে। অন্যদিকে অবৈধ সরকার দেশ বিরোধী চুক্তি করবে নির্বিঘ্নে। আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে হেফাজতে ইসলাম একটি বড় শক্তি। যে কোনো ইস্যুতে হেফাজত নেতারা মুখ খুললে তা সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্ব পায়। কিন্তু ইন্ডিয়ার সাথে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তির তোড়জোড়ের বিষয়ে সংগঠনটি রহস্যজনকভাবে নিরবতা পালন করছে। হাইকোর্টে প্রাঙ্গণে গ্রীক দেবীর মুর্তি নির্মাণের বিষয় নিয়ে সংগঠনটির নেতারা বেশি মনোযোগী বলে মনে হচ্ছে। আওয়ামী সরকারও এটাই চায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগণ অন্য কিছুতে মনোযোগী হোক। গুরুত্বহীন বিষয নিয়ে জনগণকে বিতর্কে ব্যস্ত রেখে সে সুযোগে নির্বিঘ্নে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর করাই সরকারের আসল মতলব। ইসলাম বিদ্বেষী সেকুলারদেরকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে মুর্তি-প্রতীমার দেশে পরিণত করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। মূর্তির প্রতিবাদ অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু শুধু মূর্তি নিয়ে পড়ে থাকলে বিপদ হবে। কথিত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ দেশবিরোধী নানা বিষয়ে নিরবতা মোটেও ভাল আলামত নয়। হেফাজতে ইসলাম মনে হয় মূর্তির বিরোধী আন্দোলনে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে। এ জন্য অনেকেই এ সংগঠনটির ব্যাপারে বিরূপ বা ভুল ধারণা পোষণ করছে। অনেকে এটাও বলছেন যে, হেফাজত ইন্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ইসলাম ও বাংলাদেশ বিদ্বেষী আগ্রাসী শক্তির ব্যাপারে হেফাজতের ভূমিকা স্পষ্ট করা উচিত। একই সাথে প্রকৃত ইসলামীপন্থি সংগঠন গুলোর জোড়ালো ও সোচ্চার ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল।
বিষয়: রাজনীতি
১১৪৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন