আগামী নির্বাচন, জোট জোট খেলা এবং নাজমুল হুদা

লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১৩ মার্চ, ২০১৭, ০৭:৪২:২৪ সন্ধ্যা

[img]http://www.samakal.net/assets/images/news_images/2017/02/26/earshad_file-photo_samakal_11492.jpg[/img



ইদানিং কয়দিন পর পর নানা ফর্মূলা নিয়ে হাজির হচ্ছেন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে মি. নাজমুল হুদা ও তার স্ত্রী সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। যারা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিকে ন্যূনতম বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করেন তাদের কাছে কোন মানুষকেই নির্যাতন করা সমর্থনযোগ্য নয়। কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে দেশের বেশির ভাগ মিডিয়াই ছিল সে সরকারের পক্ষে। শুধু পক্ষে বললে ভুল হবে-এসব মিডিয়া পুরোপুরি সে সরকারের তাবেদার হিসেবে কাজ করেছে। তখন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিএফআই-এর সরবরাহ করা বিভিন্ন দূর্নীতির রিপোর্টগুলো কোনরকম যাচাই-বাছাই বা সঠিক তথ্য অনুসন্ধান না করেই প্রকাশ করে রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হনন করেছে এসব মিডিয়া। কিছুদিন আগে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সমর্থক, তাবেদার ও সহযোগী একটি ইংরেজী দৈনিকের সম্পাদক বিষয়টি স্বীকার করেছেন। শুধু স্বীকারোক্তি নয়-তিনি স্বইচ্ছাই স্বীকার করেছেন যে, তিনি বা তারা সেসময় কাজটা ভাল করেননি। গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহ করা রিপোর্ট যাচাই-বাছাই ও সত্যা-মিথ্যা অনুসন্ধান না করে প্রকাশ করার কথা স্বীকার করেছেন-সেটা অবশ্যই ভালো কথা। কিন্তু এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন রিপোর্ট প্রকাশের কারণে যেসব রাজনৈতিক নেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কাছে তিনি বা তারা কখনো মাফ চেয়েছেন বা দুঃখ প্রকাশ করেছেন কি? দু’একটি সংবাদপত্র এবং হাতে গোনা ক’জন সাংবাদিক ও কলামিস্ট ওয়ান ইলেভেন সরকারের পক্ষে নিজেদের গা ভাসিয়ে দেননি। তারা সে সরকারের আসল মতলব বুঝতে পেরেছেন এবং তাদের নানা অপকীর্তি ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে জোড়ালো ভাবে লেখালেখি করেছেন। আমি নিজেইও সে সরকারের নানা কু-কীর্তি সম্পর্কে যথেষ্ট লেখালেখি করেছি। নাজমুল হুদা এমনিতেই নানা কারণে বিতর্কিত। বিএনপিতে থাকাকালেও তিনি বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কের জন্ম দিতেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি বিএনপি’র বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্তুতি গাইতেন। তখন তিনি বলতেন, তারেক রহমানই আমার নেতা। নাজমুল হুদা নিজে অনেকবারই স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই তার বিএনপিতে আগমন। নাজমুল হুদা মাঝে মাঝে এমন সব উদ্ভট কথা-বার্তা বলেন-তা অনেকের হাসির খোরাক যোগায়। ওয়ান ইলেভেন সরকার গত হবার পর নানা বিতর্কিত বক্তব্য পেশ করার কারণে তাকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। পরে নিজের ভুল স্বীকার করায় তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর তিনি আবার বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রথমে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) নিয়েও বেশ কিছুদিন লম্ফ-ঝম্ফ করেছেন। এনডিএফ আসল জাতীয়তাবাদী এবং এনডিএফই আগামীতে প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আগামী নির্বাচন মানে ২০১৪ সালের একদলীয় নির্বাচনে খুব ভাল ফলাফল করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথাই বলেছেন। পরিশেষে নাজমুল হুদার এনডিএফ মস্ত বড় এক অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে। এরপর এনডিএফ থেকে নাজমুল হুদাকেই বহিস্কার করা হয়েছে। দেশের বর্তমান অসহনীয় পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র মনোভাবাপন্ন কোনো মানুষই স্বস্তিতে নেই। বিগত ৭ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই জনগণের অংশগ্রহণ নেই। এ সরকারের নির্বাচন মানেই ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, শিশু-কিশোরদের ভোট দেয়া, ভোট কেন্দ্রগুলোতে পাইকারী ভাবে সিল মেরে ব্যালট পেপার ভর্তি করা এবং ভোট কেন্দ্রগুলোতে হোন্ডা আর গুন্ডাদের তান্ডব। গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হলো ১৪টি উপজেলা পরিষদ ও ৪টি পৌরসভা নির্বাচন। টিভি’র সচিত্র প্রতিবেদন ও প্রিন্ট মিডিয়ার খবরে দেখা যায় যে, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম বা নগণ্য। উপজেলা এবং পৌরসভার ভোটে কোনো কেন্দ্রেই ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। দিনের প্রথমার্ধ থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্র ছিল ফাঁকা। নির্বাচন কমিশনের প্রতি ‘আস্থাহীনতায়’ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ না থাকায় স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও বেশকিছু কেন্দ্রে জাল ভোট, প্রকাশ্যে সিল, কেন্দ্র দখল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও দিন শেষে ব্যালট বাক্স ভর্তির অভিযোগের খবর মিডিয়ায় আসে। জাল ভোট দেয়ার অপরাধে ৩ আওয়ামী লীগ কর্মীকে কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। নানা অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি স্থানে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা। বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে ভোটাদের অনুপস্থিতিতে কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, পোলিং এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভোট কারচুপি ও মোটর সাইকেল বহরের ছবি ডিলেট করে পুলিশের হস্তক্ষেপে ক্যামেরা ফেরত দেয়া হয়েছে। অবশ্য, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মনজুর হোসেন মিলন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোতে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট দিয়েছিলাম। রোববার রাতে ও সোমবার সকালে সরকারি দলের স্থানীয় ও বহিরাগত ক্যাডাররা তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে না যেতে হুমকি ও ভয় দেখায়। হুমকি উপেক্ষা করে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টরা যায়। সোমবার সকালে হোসনাবাদ নিজামউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ভোট কেন্দ্রের ধানের শীষ মার্কার এজেন্ট মোঃ সুজনকে মারধর করে অন্যান্য এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সরকারি দলের ৩ শতাধিক ক্যাডার শরিকল ইউনিয়নের ৭টি ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সীল মেরে ভোট বাক্স ভর্তি করে। সরকারি দলের হুমকির কারণে উপজেলার অন্যান্য ভোট কেন্দ্রে ভোটাদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। এ সুযোগে সরকারি দলের ক্যাডাররা ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক কারচুপি করে।’ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সকাল ১০টায় কটকস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়ে ১০টায় কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টায় ভূরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়ে ১১টায় পশ্চিম শাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুপুর ১২টায় নাঠৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাড়ে ১২টায় মাহিলাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুপুর ১টায় বাটাজোর অশ্বিনী কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুপুর দেড়টায় চন্দ্রহার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বুথের ভেতরে ও কেন্দ্রের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। সাংবদিকদের উপস্থিতি টের পেলে বুথ থেকে বের হয়ে কেন্দ্রের মাঠে আসে তারা। কমলাপুর ও কটকস্থল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে নৌকার ২/৩ জন সমর্থককে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে। দৈনিক যুগান্তর, নয়াদিগন্ত ও কলমের কন্ঠ পত্রিকার গৌরনদী প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিক দুপুর দেড়টার দিকে চন্দ্রহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে দায়িত্বরত এএসআই কামাল সাংবাদিকদের বাঁধা দেন। এ সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ১২/১৪টি মোটর সাইকেলে আসলাম শিকদারের নেতৃত্বে সরকারি দলের ৩০/৩৫ নেতাকর্মী মোটর সাইকেল বহর নিয়ে চন্দ্রহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে। দৈনিক কলমের কন্ঠ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক পার্থ হালদার সে ছবি তুললে আসলাম ক্যামেরাটি ছিনিয়ে নেন। এরপর ছবি ডিলেট করে সাংবাদিককে মারার জন্য তেড়ে আসেন। কর্তব্যরত পুলিশ ও কয়েকজন যুবলীগের নেতার হস্তক্ষেপে ক্যামেরা ফেরত দেন। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এদিকে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, বানোয়াট বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী বলেন- অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেয়নি এটা তার ব্যাপার। ভোটে ভরাডুবি হবে বুঝতে পেরে তিনি কুৎসা রটাচ্ছেন বলে মেরী দাবি করেন। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহে আলম খানের মৃত্যুতে পদটি শূণ্য ঘোষণা করা হয়। এ উপজেলায় সর্বমোট ১ লাখ ৪১ হাজার ২৯৬ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৭১ হাজার ৪১৯ ভোট ও নারী ৬৯ হাজার ৮৭৭ ভোট। উপজেলার ৪৫টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোট কেন্দ্রগুলো এতো অরাজকতা, কেন্দ্র দখল করে পাইকারী ভাবে ব্যালট পেপারে সিল মারা, সরকারি দলের গুন্ডাদের তান্ডবের ছবি তোলায় সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলেট করে দেয়া, বিএনপি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের জবরদস্তি মূলক ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচন। তারপরও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ‘শান্তিপূর্ণ ভোটে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি’। এটা যেন অনেকটাই সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীনের সুরেই গীত গাওয়া। ভোট শেষে ইসি যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। স্থানীয় নির্বাচনে যা খুবই কম। এখন কি জবাব দেবেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা? সিইসি হিসেবে শপথ নেয়ার পর তিনি ঘোষণা দেন ‘সব দলকে আস্থায় এনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবো’। সামান্য কয়েকটি উপজেলায় নির্বাচন-উপনির্বাচনের যে খেলা তিনি দেখালেন-তা কি আসলে ‘সব দলকে আস্থায় আনার নমুনা? নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের হালচাল এবং দেশের যা পরিস্থিতি তাতে সুস্থ ও বিবেকবান কোনো মানুষই স্বীকার করবে না যে, বর্তমান জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। অথচ নাজমুল হুদা অবিরত বলে চলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নাজমুল হুদার কথা শুনে মনে হয় তিনি এখন আবার নতুন এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এবার তিনি বলছেন, বিএনএ’র নেতৃত্ব সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ.এম এরশাদের হাতে ছেড়ে দিতে তিনি প্রস্তুত। এ সম্পর্কে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের রিপোর্টে বলা হয়েছে: বাংলাদেশ জাতীয় জোট-বিএনএর নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে প্রস্তুত এর চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এরশাদ তার জোটের কিছু দলকে লোভ দেখাচ্ছেন জানিয়ে জনাব হুদা বলেন, জাপা চেয়ারম্যানের জোট করার ইচ্ছা থাকলে তাদের সাথে তিনি যোগ দিতে পারেন। এরশাদ যোগ দিলে এই জোটের প্রধান হবেন তিনিই। ০৮ মার্চ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় নাজমুল হুদা এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জোটের নীতি এবং সমকালীন রাজনীতি নিয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনএ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নাজমুল হুদার নেতৃত্বে ৩১ দলের জোট গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী নির্বাচনে সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। তারা নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছেন সোনালী আঁশ। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট গঠনের চেষ্টায় আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদও। বেশ কিছু ছোট ছোট দল এই জোটে যোগ দেবে বলে জাতিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। তবে কোন কোন দল জোটে আসছে-এ বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। সূত্র: আরটিএনবিডি ০৭-০৩-২০১৭।

আগেই উল্লেখ করেছি যে, নানা কারণেই আগে থেকেই নাজমুল হুদা বেশ বিতর্কিত ব্যক্তি বা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে তিনি ও তার স্ত্রী চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সেসময় আমি রাজনৈতিক নেতাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ করেছি এবং সে বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি। কথিত ওয়ান ইলেভেন সরকার গত হবার পর কেমন জানি ব্যারিস্টার হুদা অতি মাত্রায় বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন। নানা সময় তিনি এমন সব কথা বলছেন-সেগুলো পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি এখন বিএনপিতে নেই। সেটা রাজনীতি সব মহলই অবগত। কে কোন দল করবে বা না করবে সেটা তার একান্তই নিজস্ব ও ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু নাজমুল হুদার মত একজন ঝানু আইনজীবী ও বাকপটু রাজনৈতিক নেতা ছেলে-পুলেদের মত কথা-বার্তা বলবেন-সেটাতো মোটেও শোভনীয় নয়। মনে হয় এসব বক্তব্য পেশ করার জন্য কারা যেন তাকে কাজে লাগিয়েছে। তিনি তাদের এ্যাসাইনমেন্ট পালন করছেন মাত্র। তার মানে তিনি এখন যা করছেন বা বলছেন সেটা নিজের বুঝ বিবেচনায় নয়। অন্য কারো পারপাস সার্ভ করছেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সবই করা হচ্ছে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তত্বাবধানে। অর্থাৎ আগামীতে আবারো সাজানো, তামাশার ও ভোটারবিহীন নির্বাচন আয়োজনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এসব রাজনৈতিক জোট-জোট খেলা চলছে। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আবারো তামাশা ও ভোটারবিহীন নির্বাচন আয়োজন করে কিভাবে সে নির্বাচনকে হালাল ও গ্রহণযোগ্য করা যায়-সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য একটার পর একটা অপকৌশল ও ব্লু-প্রিন্ট তৈরী করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ.এম এরশাদ জোট জোট খেলা খেলছেন একই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। এর আগে বেশ কিছু দিন জনৈক কামরুল হাসান নাসিম কে দিয়ে আসল বিএনপি-আসল বিএনপি করে আস্ফালন করানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তত্বাবধানে মি. নাসিম বেশ কয়েকবার বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়েছেন। কথা হলো: আসলে কোন দল কাকে নিয়ে জোট করবে বা কিভাবে নির্বাচন করবে সেটাও সেসব দলের নিজস্ব বিষয়। তবে, প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মনে রাখা উচিত যে, জনমতের বাইরে গিয়ে গুটিকতক নেতার নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য গ্রহণ করা ব্লু-প্রিন্ট, অপকৌশল, অপরাজনীতির ফলাফল এদেশে কোন দিন ভাল হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে বলে মনে হয় না। ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ.এম এরশাদের আমলের গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা আ.স.ম আবদুর রব ২৩ দলীয় জোট গঠন করেছিলেন। কারা এ জোট গঠনের উদ্যোক্তা ও মদদদাতা সেটা সবাই জানে। সে ২৩ দলীয় জোটের পরিণতি কি হয়েছিল-সেটাতো না বললেও চলে। মি. নাজমুল হুদা একজন ঝানু রাজনৈতিক নেতা। তিনি কিভাবে রাজনীতি করবেন-কার সাথে রাজনৈতিক জোট করবেন সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। তবে একটা কথা না বললেই নয় যে, তিনি নিশ্চয় জানেন যে, শূণ্যের সাথে শূণ্য যোগ করলে ফলাফলটা শূণ্যই হয়।

বিষয়: রাজনীতি

১১১২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382218
১৩ মার্চ ২০১৭ রাত ০৯:২৩
কুয়েত থেকে লিখেছেন : এই রাজনৈতিক ময়দানে আরো কতযে খেলা দেখব তার সিমা নেই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
382223
১৪ মার্চ ২০১৭ সকাল ১০:০৩
সাইয়েদ ইকরাম শাফী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন।
382246
১৪ মার্চ ২০১৭ রাত ১১:২৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Excellent analysis mashallah. Jajakallahu khair.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File