সরকারের ব্লু-প্রিন্ট, পশ্চিমাদের সে পুরনো গীত এবং অবৈধ এম.পি’র ক্ষমতার দাপট!
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৬:৩৬:৩৬ সন্ধ্যা
কথাটা অনেক দিন থেকেই বলাবলি হচ্ছে। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের আমলে দায়ের করা জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হবে। কত বছরের সাজা হবে সেটাও বলে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ পাঁচ থেকে সাত বছরের সাজা দেয়া হবে তাকে। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭ হাজারেরও বেশি মামলা বাতিল করা হয়েছে অনেক আগেই। একই আমলে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলাও বাতিল করা হয়নি। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কর্কশ ভাষায় কথা বলতে পারদর্শি-চাপাবাজ কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, বিএনপি নেতাদের মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমি মন্ত্রী হইনি। আসলেই তো! বিএনপি নেতাদের মামলা বাতিল করা হলে-তাদের রাজনৈতিক ভাবে কোনঠাসা ও ঘায়েল করা হবে কিভাবে?। একই ভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মামলাও বাতিল করা হয়নি-তাকে হয়রানী ও নানারকম চাপে রাখার জন্য। এ জন্য তার মামলা নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বহীন, অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা নানারকম বাকওয়াজী করে চলেছেন। সরকারের তাবেদার ও সব অপকর্মের সহযোগী মিডিয়াগুলোও এ ব্যাপারে নানারকম ফরমায়শী ও বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্ট, নিবন্ধ ও মতামত প্রকাশ করে চলেছে অবিরাম। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু হামেশা বাকওয়াজী ও হুমকি দিয়ে বলে চলেছেন যে, খালেদা জিয়ার জায়গা হবে কাশিমপুর কারাগার। কোনো কোনো সময় আবার বলছেন, খালেদা জিয়া বাইরে থাকায় আমরা টেনশনমুক্ত হতে পারছি না। সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ বলেছেন খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি। খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে বিএনপি ভাঙবে! এবং আমরা হবো প্রধান দল। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রভূদের সাথে দেশের চরম স্বার্থ বিরোধী বেশ কয়েকটি দাসত্বমূলক চুক্তি করা হয়েছে। দেশের স্বাধীন স্বত্বা যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটা বিলীন করা যাচ্ছে না শুধু খালেদা জিয়ার কারণে। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া বস্তবড় বাঁধা। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে প্রভূদের সাথে আরো কিছু দাসত্বমূলক চুক্তি করার আয়োজন চলছে। এ জন্যই সরকারের মন্ত্রীরা নানারকম বাকওয়াজী করে চলেছেন। এ ব্যাপারে বাকওয়াজীতে পারদর্শী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপিকে নানারকম হুমকি-ধমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হবে বলে নানারকম কথাও ভেসে বেড়াচ্ছে। সরকার এসব করছে অত্যন্ত গোপন ব্লু-প্রিন্টের মাধ্যমে। কিন্তু সমস্যা হলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে করা সরকারের সব ষড়যন্ত্র, কূটচাল প্রভূদের স্বার্থ রক্ষায় দেশবিরোধী অপতৎপরতা গুলো মোটেও গোপন থাকছে না। সবই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। জেনে হোক বা না জেনে হোক দালাল ও তাবেদার মিডিয়াগুলো সরকারের অনেক অপকর্ম ও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তৈরী করা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাগুলো আগাম প্রকাশ করে ফেলছে। এসব তাবেদার মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করে বলছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একটা রাজনৈতিক মামলায় সাজা দেয়া হবে। তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে ছলে-বলে, কলে-কৌশলে এবং হামলা-মামলার ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে বিএনপির একটা অংশকে দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ইলেকশন করাবে। সে বিএনপি’র জন্য ৫০/৬০টা সিট বরাদ্ধ! রাখা হয়েছে। ৪০টার মতো আসন বরাদ্ধ! রাখা হয়েছে বর্তমান সরকারের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী তাবেদার অন্যান্য খুচরা দলগুলোর জন্য। ২০০ আসন নিয়ে আবার সরকার! গঠন করবেন হাসিনা। সরকারের গায়ে লেগে থাকা অবৈধ তকমা আর থাকবে না। তখন বর্তমানের অবস্থার চেয়ে আরো বহুগুণ বেশি দূর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, দুঃশাসন, অপশাসন এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দেশ চালানো হবে। কারণ তখন সে সরকার হবে বৈধ সরকার। এ ধরণেরই একটি সরকারি ব্লু-প্রিন্ট ও সমীকরণ আন্দাজ করতে পেরে বিএনপিও নাকি বিকল্প নেতৃত্ব গঠন করার চিন্তায় ব্যস্ত! সরকারের নির্লজ্জ সমর্থক ও তাবেদার মিডিয়াগুলো পাঁচ জনের নাম প্রকাশ করেছে! তারা হলেন: ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এবং রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। এটাই হলো অবৈধ সরকারের ব্লু-প্রিন্ট-এর সারমর্ম ও আগামীতে আবার সাজানো নির্বাচনের প্ল্যান। আরেকটি ব্লু-প্রিন্ট হলো: যদি কোনো মতেই বিএনপিকে ম্যানেজ করা না যায়-তাহলে দলটিকে বাদ দিয়ে আবারো একতরফা ও একদলীয় নির্বাচন করে ক্ষমতা দখলে রাখা এবং কুক্ষিগত করা হবে। জনগণের অন্যতম প্রধান মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করে প্রভূদের ইন্ধন ও ইশারায় বন্দুকের জোরে জরবদস্তি মূলক ক্ষমতা দখলে রাখার ব্লু-প্রিন্ট অনেকটাই পাকাপোক্ত।
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন তোফায়েল আহমেদ!
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত ইয়াসোজা গুনাসেকারার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির নানান ইস্যু নিয়ে আলোচনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নতুন সিইসির নেতৃত্বে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনোদিন আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদাকে ঘিরে বিএনপি আপত্তি জানালেও আগামী সংসদ নির্বাচনে ঠিকই অংশ নেবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি অনেক কথাই বলে, আবার ভুলেও যায়। আমি তো শতভাগ নিশ্চিত, বিএনপি এ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন, (১২/০২/২০১৭)
বিএনপিকে ছাড়া আবার নির্বাচন ও ক্ষমতা দখলের হুমকি:
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু ও সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। অন্য দিকে অবৈধ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলে চলেছেন যে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি’র নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলই না। বাহ্ বাহ্! কি চমৎকার! “চুরি তো চুরি আবার সিনা জোরি”। কোন খুঁটির জোরে অবৈধ সরকাররের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসব কথা বলেন এবং ওবায়দুল কাদেররা বিএনপিকে বাদ দিয়ে সাজানো নির্বাচন করে আবার ক্ষমতা দখল করার স্বপ্ন বা দুঃসাহস করেন সেটা জানা-উপলব্ধি করার জন্য খুব বেশি পন্ডিত বা জ্ঞানী হবার দরকার হয় না। বিএনপি নয় নিবন্ধন বাতিল হবার কথা আওয়ামী লীগের। কারণ তারা জনগণের মতামত ও মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে জবরদস্তি মূলকভাবে ক্ষমতা দখলে করে আছে। আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জনগণের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।
পশ্চিমাদের সে পুরনো গীত:
নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ দেখতে চাইছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট মন্তব্য করে বলেছেন, জনগণের আস্থা অর্জন করাটাই নতুন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনকে তাদের কাজের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগের দিনই ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদ্যুন জানিয়েছিলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন চাইলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন শক্তিশালী করতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। তারা আগ্রহভরে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন। পিয়েরে মায়াদ্যুন বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট কোন সহায়তা চাইলে ইইউ প্রস্তুত আছে। কেননা ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন কর্মসূচী নেই। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের অংশীদায়িত্বমূলক সম্পর্ক রয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখতে চেয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষ করে গত ডিসেম্বরে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়ক সাব গ্রুপের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছিল, তারা বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, নির্দলীয় ও দক্ষ নির্বাচন কমিশন দেখতে চায়।
নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বিদেশী কূটনীতিকরা। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে তারা আলোচনাও করতে চেয়েছিলেন। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে তারা অনুমতি পাননি।
বাংলাদেশে বরাবরই একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে চান কূটনীতিকরা। সকল রাজনৈতিক দল যেন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, সেটাই প্রত্যাশা করে আসছেন তারা। সে কারণে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ আয়োজনের চেষ্টায় ঢাকায় এসেছিলেন তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি সে সময় দু’পক্ষের মধ্যে একাধিক বৈঠক করে সমঝোতায় আনার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তার সেই চেষ্টা সফল হয়নি। বাংলাদেশে বরাবরই একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ কথাটা অনেক দিন থেকেই শুনতে হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের নামে তামাশা করার প্রায় দেড় বছর আগে থেকে পশ্চিমা দেশ ও সে দেশের কূটনীতিকরা সে একই গীত গেয়ে চলেছেন। এ বক্তব্য এখন চর্বিত চর্বণ হয়ে গেছে। তাদের এ চর্বিত-চর্বনে তো বাংলাদশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, জনগণের আস্থা অর্জন করাই নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যটা মানুষের হাসির খোরাক যোগাবে বটে! যারা জনগণের মতামতকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করে না। জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হলো ভোটের দানের অধিকার। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার। সরকার জনগণের সবগুলো মৌলিক অধিকার পদদলিত করে জবরদস্তি মূলক ভাবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। দেশের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পেটোয়া বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করে সরকার ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী, এম.পি ও আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূল করার হুমকি-হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন। এমন একটি জনপ্রতিনিধিত্বহীন ও অবৈধ সরকার কিভাবে জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করবে? মিসেস বার্নিকাট আপনি তার ব্যাখ্যা দেবেন কি?
অবৈধ এম.পি’র ক্ষমতার দাপট! তেতুলিয়া পরিবহন বন্ধ:
এম.পি’র গাড়ী সাইড না পাওয়ার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জানা যায়, রাজধানীর মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের সামনে মেট্রোরেলের কাজ চলায় সরু রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় এমপি ইলিয়াস মোল্লার গাড়ি সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। একই সময় তার গাড়ির সামনে তেতুলিয়া পরিবহনের একটি বাস আটকে যায়। আর পিছন থেকে এমপি ইলিয়াস মোল্লার গাড়ি হর্ন দেয়। এদিকে যানজটে আটকে পড়া তেতুলিয়া পরিবহনের বাসটি সাইট দিতে না পারায় এমপি ইলিয়াস মোল্লার নির্দেশে তার এক লোক ওই গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যায়।পরে সন্ধ্যার দিকে মিরপুর-১২ নম্বর পেট্রোল পাম্পের সামনে ইলিয়াস মোল্লার লোকজন সড়কে চলাচল করা তেতুলিয়া পরিবহনের সব বাস একে একে থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেন। এর ফলে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। তারা এভাবে গাড়ি থেকে তাদের নামিয়ে দেওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যাত্রীরা বলেন, একজন সংসদ সদস্য কী করে যাত্রীদের এভাবে ভোগান্তিতে ফেলতে পারেন। এ বিষয়ে তেতুলিয়া পরিবহনের এক বাস চালক বলেন, এমপি ইলিয়াস মোল্লার নির্দেশে তেতুলিয়া পরিবহনের গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এমপি বলেছেন কাল (শনিবার) থেকে তেতুলিয়া পরিবহনের কোনো গাড়ি রাস্তায় চলবে না। তেতুলিয়া পরিবহনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো.মাসুম বলেন, ছোটখাটো একটা সমস্যা হয়েছে মাননীয় এমপি মহোদয়ের সঙ্গে। তবে আশা করি তা খুব শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত মাননীয় এমপি মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। শুক্রবার রাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি আমাকে সময় দিতে পারেননি। তবে আমি বিশ্বাস করি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অপরদিকে, বার বার এমপি ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে এবিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। আর যাত্রীরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তেতুলিয়া পরিবহনের বাস নির্বিঘ্নে চলাচলের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
বিডিমর্নিং (11 ফেব্রুয়ারি, 2017)
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অত্যাচার এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী মিডিয়ার ভূমিকা:
বইমেলা চত্বর থেকে ১১ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার আটকের পর তাদের রাজধানীর মিন্টো রোডে সিটিটিসি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান একটি দৈনিককে বলেন, আটকদের মধ্যে দু-তিনজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাকিরা মাদ্রাসার ছাত্র। মেলায় গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় শাহবাগ থানা পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদের সিটিটিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা চত্বরে ১১ জনের দলটিকে জটলা করতে দেখে পুলিশ। বেশ-ভূষা ও কথোপকথনে সন্দেহ হওয়ায় তাদের আটক করা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা বা তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে জানান ওসি। লালবাগের জামিয়া কোরানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আহলুল্লাহ্ ওয়াসেল সমকালকে বলেন, মাহদী নামে তার প্রতিষ্ঠানের ইফতা বিভাগের এক শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে মেলা থেকে পুলিশ আটক করেছে। আটক অপর ছাত্ররা মাহদীর বন্ধু বলে জানা গেছে। তারা মেলায় বই কিনতে গিয়েছিল বলে দাবি করেন ওই শিক্ষক।দৈনিক সমকাল (১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)
তরুণ লেখক যাইফ মাসরুরসহ ১১ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটকের পর সোস্যাল নেটওয়ার্কে তোলপাড় শুরু হয়। এর দু’দিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো: মেলা থেকে প্রকাশ্যে এতজন তরুণকে আটক করে দুই দিন থানায় রাখার ঘটনাটি নিয়ে সরকারের তাবেদার ও অন্ধ সমর্থক মিডিয়াগুলো কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। আটককৃতদের ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় ধরে থানায় রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল না। আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে আটকের ২৪ ঘন্টার বেশি পুলিশ তাদের হেফাজতে রাখতে পারে না। রাখলে তা আইনের লঙ্ঘন। কোনো অভিযোগ থাকলে আদালতে না তোলে অনিশ্চিয়তার মধ্যে দীর্ঘ সময় আটক রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। যদিও হাসিনার অবৈধ সরকারের আমলে আইন এবং ন্যায় বিচারকে পদদলিত করা নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। আইন-শৃংখলা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে হেফাজতে রাখা মানুষদের ওপর শারিরীক নির্যাতনের হাজারো অভিযোগ ও প্রমাণ আছে। দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবিওয়ালা পরা মানুষের প্রতি পুলিশের সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকানো এখনকার সাধারণ ঘটনা। এ সরকারের সব অপকর্মের সহযোগী হলো বাংলাদেশের ইন্ডিয়াপন্থী মিডিয়াগুলো। আশ্চর্য্যের বিষয় যে, মাদ্রাসা ছাত্রদের আটক ও তাদের ৪৮ ঘন্টা পুলিশ হেফাজতে রাখার ঘটনাটা ইন্ডিয়ার পদলেহনকারী মিডিয়াগুলো প্রকাশ করেনি। পুলিশ-র্যাব কর্তৃক মানুষ আটক করা এবং পরে অস্বীকার করা। অনেক সময় আটকের পর গুম করে পরে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা এখন ডাল-ভাত। মিডিয়ার প্রধান দায়িত্ব হলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সেক্টরের অন্যায়-অনিয়মের ঘটনাগুলো জোড়ালো ভাবে প্রকাশ করে জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা দানে ভূমিকা পালন করে। দুনিয়ার সব দেশের মিডিয়াগুলোতে এ রেওয়াজ বিদ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সবসময় একটি দেশের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা পালনের বদঅভ্যাসের কারণে এসব মিডিয়াকে অনেকে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণ্যবাদী মিডিয়া হিসাবে আখ্যায়িত করেন। এ ব্রাহ্মণ্যবাদী মিডিয়াগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর স্বেচ্ছাচার, অন্যায়, অনিয়ম, মামলা, গ্রেফতার বাণিজ্য, আটক করে অস্বীকার করা এবং আটককৃত ব্যক্তিকে হত্যা করে দুর্ঘটনা-বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলোর রিপোর্ট বেশির ভাগ সময় এড়িয়ে যায়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এসব মিডিয়াগুলোর সাপোর্ট পেয়েই সরকার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-পীড়নে উচ্চ ও নিম্ন আদালতগুলোকে চরমভাবে অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ক বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার একেবারেই ভুলে গেছে যে, দুনিয়ার কোনো দেশেই জুলুম-নির্যাতন, দুঃশাসন-অপশাসন এবং ফ্যাসিবাদী শাসন কখনো স্থায়ী হয়নি।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৫৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন