অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়ার জন্যই কি নির্বাচনে যাবে বিএনপি?
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৪৩:৩৫ দুপুর
কতিপয় ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী বেশ কিছুদিন থেকে সরকারের দালাল ও অন্ধ সমর্থক মিডিয়া গুলোতে অবিরাম লিখে চলেছেন যে, হাসিনার অধীনেই নাকি বিএনপি নির্বাচনে যাবে বা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য এক পায়ে খাড়া! যতোকিছুই হোক না কেন বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এসব ফরমায়েশী কলাম-নিবন্ধে বিশ্বস্ত সূত্র হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক(?) বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বা প্রভাবশালী-সিনিয়র নেতাদের নাম উদ্ধৃতি দেয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক(?) এধরণের উদ্ধৃতি দিয়ে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও ফরমায়েশী কলাম, গল্প ইত্যাদি ফাদা খুব সহজ। কেউ কেউ আবার দেশে সুস্থধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপি’র নির্বাচনে যাওয়া উচিত বলে নসিহত করছেন। কিন্তু কারা দেশে এ অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরী করেছে এবং জনগণের সব মৌলিক অধিকার পদদলিত করে জবরদস্তি মূলক ক্ষমতা দখল করে আছে-সেটা কিন্তু বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি’র পরিণতি হবে মুসলিম লীগের মতো। এমন কথাও বলছেন বর্তমান অবৈধ সরকারের অন্ধ সমর্থক ও পদলেহনকারী কলাম লেখকরা। আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে কোন দল এবং কারা দেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরী করেছিল-সে ব্যাপারে একটি শব্দও থাকে না এসব কলাম লেখকের কলাম ও নিবন্ধ গুলোতে। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান হত্যা, গুম, অপহরণ, মিছিল-মিটিং-এ হায়েনার মতো পুলিশের ঝাপিয়ে পড়া। প্রতিনিয়ত সাজানো মামলা দিয়ে রজৈনৈতিক বিরোধীদের হয়রানী ও ঘায়েল করা। দেশের শেয়ার মার্কেট লুট, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ডাকাতিসহ সরকার দলীয় লোকদের সীমাহীন লুটপাট এবং সারাদেশে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের ত্রাসের রাজত্ব ও তান্ডবের ব্যাপারেও তারা একেবারে নিরব। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাহীন অন্যায়-অনিয়ম, গ্রেফতার ও মামলা বাণিজ্য, বেপরোয়া ভাব ও বিভাগীয় শৃঙ্খলাহীনতা ভয়াবহ ও মহামারী রূপ ধারণ করেছে। 1996 সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। 2006 সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কার(?) দাবিতে প্রভূদের প্রত্যক্ষ মদদ ও ইন্ধনে নজীরবিহীন নৈরাজ্য ও অরাজকতা চালিয়েছিল। তাদের সে নৈরাজ্যের কারণেই 2007 সালের 11 জানুয়ারি দেশে ওয়ান ইলেভেন সরকার নামে একটি ছদ্মবেশী সামরিক সরকার 2 বছর ক্ষমতায় ছিল। দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ ও রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য আদালতের কাঁধে বন্ধুক রেখে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বিতর্কিত বিচারপতি খায়রুল হক-এর মাধ্যমে একতরফা ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছিল। আওয়ামী কেন একবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে? কেনইবা তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও অরাজকতা চালাবে? কেনই বা তারা আবার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করবে? অবৈধ সরকারের অন্ধ সমর্থক এসব কলাম লেখকের লেখায় এ জ্বলন্ত বিষয় গুলো একেবারে থাকে না বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কলাম-নিবন্ধের সারমর্ম এই যে, বর্তমানে দেশে কোনো সঙ্কট নেই। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে গিয়েছে। দেশের যাবতীয় সঙ্কটের জন্য দায়ী বিএনপি। 5 জানুয়ারির সাজানো, কুখ্যাত ও কুকুর মার্কা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিএনপি ভারি অন্যায় করে ফেলেছে! বিএনপি নির্বাচনে গেলে দেশের সব সঙ্কট ও সমস্যা নিরসন হয়ে যাবে। তাই বিএনপিকে অবশ্যই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। যেসব মিডিয়া, কলাম লেখক অবিরাম এসব লিখে চলেছেন-2006 সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ শেষের দিকে কি ভূমিকা ছিল তাদের? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে যখন আওয়ামী লীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তখন কি তারা এসবের বিন্দুমাত্র আলোকপাত করেছেন? না আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য নসিহত করেছেন? না-এসবের কিছুই তারা করেননি। তারা বরং তারা আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য, আরাজকতাকে নির্লজ্জ ভাবে সমর্থন দিয়েছেন। সে সময় তারা আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিকে জোরালো ভাবে সমর্থন করে পত্রিকার পাতা ভরিয়ে ফেলতেন এবং টিভি চ্যানেলগুলো সরগরম করে রাখতেন। এখন দেখা যাচ্ছে এদের বর্তমান অবস্থান একেবারে বিপরিতমুখি। জনগণের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতা দখল করে রাখার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যেমন বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বা শরম নেই। ঠিক আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক এসব কলাম লেখকের বোধ হয় কোনো শরম নেই। বর্তমান জনমসর্থনহীন অবৈধ সরকার পরিকল্পিত ভাবে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সত্যি করে বলতে গেলে বলতে হয় যে, ইন্ডিয়ার মদদ ও ইন্ধনে দেশে এখন হাসিনা ডাইন্যাস্টি কায়েম করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় নিপীড়ক বাহিনীর ভূমিকায় এখন আইন-শৃঙখলা বাহিনী:
দূর্নীতি, লুটপাট, সরকার দলীয় লোকদের দাপট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। পুলিশকে তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু আওয়ামী করণ এবং গোপালী করণ করা হয়নি-আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়োগ করে পুরো বাহিনীকেই কলুষিত করা হয়েছে। এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। হামেশা তাদের ব্যস্ত রাখা হয়েছে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, পীড়ন, নির্যাতন এবং সাজানো মামলা দায়েরের কাজে। এ জন্য পেশাদার অপরাধী-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো আগ্রহ বা ভূমিকা নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পেশাদারিত্ব কি পরিমাণ অবনতি হয়েছে-সেটা জানা যাবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি’র ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের ঘটনায়। এ পর্যন্ত 45 বারের মতো পিছিয়েছে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকান্ডের ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়। 2012 সালের 11 ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙগা টিভি’র নিউজ এডিটর সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলা’র সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন নাহার রুনিকে নিজ বাসার বেডরুমে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বত্তরা। এ দীর্ঘ সময়েও এ আলোচিত হত্যাকান্ডের ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসাররা। অন্য দিকে অবৈধ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যে কোনো রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং, সমাবেশ বানচাল করে দিচ্ছে পুলিশ। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়েরে সাথে সাথেই তাদের আটক করা হচ্ছে। অথচ পেশাদার সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের পুলিশ খুঁজে পায় না। গত 2 ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ২৮ জন হেজাবধারী মহিলা আটক করেছে পুলিশ। যার নেতৃত্ব দিয়েছে বিপ্লব কুমার নামের এক পুলিশ অফিসার। এসব মহিলা নাকি সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল! অবৈধ সরকারের ভিত্তি কতো দূর্বল-তারা মাত্র 28 জন হেজাবি মহিলার হাতে উৎখাত হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে ভোগে । এসব মহিলাদের কাছে কোরআন, হাদীস ও ব্যক্তিগত নোটবুক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। অথচ সরকারের পদলেহনকারী মিডিয়াগুলো পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, তারা কি নাশকতা করার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ বলেছে, ''গ্রেফতারকৃত মহিলারা নাকি গোপন বৈঠক থেকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছিল''। দেশে কতো চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনা ঘটে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনার কোনো কূলকিনারা করতে পারে না। অথচ কোরআন নিয়ে আলোচনাকারী মহিলাদের গ্রেফতার করে। দেশে এখন যা চলছে এটা আসলে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছুই নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন রাষ্ট্রীয় নিপীড়ক বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে। আটককৃত এসব মহিলাকে প্রথমে 2 দিন এবং এরপর আবার এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আটককৃত এসব মহিলাদের মধ্যে কয়েক জনের শিশু সন্তানের বয়স 5 থেকে এক বছরের মধ্যে। অর্থাৎ তারা মায়ের দুধ পোষা অবোধ ও নিষ্পাপ শিশু সন্তানের মা। মায়ের রিমান্ড চলাকালীন এ নিষ্পাপ শিশুরা মাতৃ আদর-স্নেহ, মমতা থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়েছে। 5 মাস বয়সী শিশুর মাকে রিমান্ডে নেয়া কিরকম অন্যায়, জুলুম সেটা কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়? এর আগেও বিরোধী দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে রিমান্ডে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। যেসব জজ, ম্যাজিস্ট্র্যাট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক সাজানো মামলায় রিমান্ড মঞ্জুর করছেন তাদের বিচারিক সক্ষমতা, নীতি-নৈতিকতা বিচারিক মান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন ড. শাহদীন মালিক সহ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী।
ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বিচার বিভাগের মর্যাদা, নিরপেক্ষতা ও বিচারিক সক্ষমতা:
একজন হত্যা মামলার আসামী রুহুল কুদ্দুস বাবুকে হা্ইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদাহানীর যে বীজ বপন করা হয়েছিল-সেটা এখন ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আশঙ্কা করে বার বার বলেছেন তিনি ন্যায় বিচার পাবেন না। জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট মামলা প্রসঙ্গে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন তিনি ন্যায় বিচার পাবেন না-তখন আর বুঝতে বাকী থাকে না যে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য বিচার বিভাগকে কোথায় নিয়ে ঠেকানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের অবস্থাই বা কেমন? বিচার বিভাগের ধ্বংসযজ্ঞ ও অরাজকতা বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন লিখেছেন:
আজকে কোন গল্প দিয়ে নয়, শুরু করছি বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটির হতভাগা জনগোষ্ঠীকে শাসন এবং শোষণ করার জন্য প্রণীত আইনের বিধান বইটির করুণ পরিণতির কথা দিয়ে। ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ নামক এই গ্রন্থটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মাথায় প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের কাছ থেকে ধার করে এনে ছাপিয়ে দেওয়া হয় সদ্য স্বাধীন জনগণকে শাসনের সর্বোচ্চ আইন হিসাবে। ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর এ ধার করা বিধানটির কিছু নাম এবং কিছু দাঁড়ি, কমা পরিবর্তন করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিধান হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এবং এটি আইনে পরিণত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ নামক বইটি দেশের সর্বোচ্চ আইনের বিধান হিসাবে কার্যকর হওয়ার মাত্র সাত মাস পর এর উপর প্রথম আঘাত হানা হয় ১৫ জুলাই ১৯৭৩ সালে, এর মাত্র দু মাসের মাথায় ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সালে দ্বিতীয়বার ছুরি চালানো হয় এর উপর। ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর তৃতীয় বার আঘাতের পর ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী মাসের ২৫ তারিখ বাংলাদেশের এই ২৬ মাস বয়সী শিশু সংবিধানকে শেখ মুজিবুর রহমান কলমের খোচায় রক্তাক্ত করে জন্ম দিলেন নতুন এক দলের, নাম তার বাকশাল। আর ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ পরিণত হয় ‘বাকশাল বিধানে’। তার পরের ইতিহাস সবারই জানা। এক নেতা এক দেশ, শেখ মুজিবের বাংলাদেশ এ অভিশপ্ত ইতিহাস থেকে জাতি মুক্তি পেলেও তা বেশীদিন স্হায়ী হয়নি।
শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা তাঁরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সংবিধানকে ‘হাসিনা বিধানে’ পরিণত করলেন দেশের সব শ্রেণী, পেশার মানুষের মতামতকে শুধু উপেক্ষা নয় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
বাংলাদেশ সংবিধানকে ‘হাসিনা বিধানে’ পরিণত করে এটি এখন রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নির্যাতনের বিধান হিসাবে ব্যবহার করছে। পিতার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে-এক দল, এক নেতা এক দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, এ মুল মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে রাষ্ট্রের সবকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সফলভাবে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বাংলাদেশের শাসন যন্ত্রের মধ্যে প্রশাসন তথা নির্বাহী বিভাগের সর্বস্তরে অযোগ্য দলীয় লোকদের দিয়ে একটি এক দলীয় আওয়ামী প্রশাসন তৈরি করা হয় হাসিনা শাসনের শুরুতেই। নির্লজ্জ দলীয়করণ, অনৈতিক আত্মীয়করণ, বেআইনি গোপালীকরণের মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পদে অসাংবিধানিক ভাবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের এই সাংবিধানিক অঙ্গটিকে আওয়ামী লীগের একটি অংগ সংগঠনে পরিণত করা হয়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আরেকটি সাংবিধানিক অঙ্গের নাম হচ্ছে স্বাধীন বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ আদালতের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। বাংলাদেশ সংবিধান হাসিনা বিধানে পরিণত হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন এই সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগে যে ব্যাক্তিটি দলীয় এবং প্রতিহিংসার রাজনীতির ক্যান্সারের জীবাণু ছড়িয়ে দেন তিনি হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভাজনের বিষ বাষ্প, পরস্পরের প্রতি হিংসা, প্রতিহিংসা বিদ্বেষ, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে অশান্তি, অস্থিরতা, হত্যা, খুন, নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় রাষ্ট্রের সবচেয়ে বিতর্কিত বিচারপতি খাইরুল হকের ইতিহাস বিকৃতির কিছু নজিরবিহীন রায়ে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান এবং এই সংবিধান বাংলাদেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও পদ সৃষ্টি করেছে এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করেছে। বিচারপতি খাইরুল হক বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের পবিত্রতম স্থান, দেশের সর্বোচ্চ বিচারিক আদালত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদটি শপদ বাক্য পাঠের মাধ্যমে অলংকৃত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘন করেন। সংবিধানের ৯৬(৪)(a) ক্ষমতা বলে বাংলাদেশ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য প্রণীত ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’ এর ৬ এবং ৮ নম্বর ধারা সম্পূর্ণ ভায়োলেট করে, শপদের বাক্য গুলির সাথে প্রতারণা করে, রাষ্ট্রের সংবিধানের অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে সংবিধান এবং রাষ্ট্রের জনগণের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সম্পূর্ণ দলীয় আনুগত্যে প্রধান বিচারপতি হলেন তিনি।
বিচারালয়কে বলা হয় মানুষের ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং ভরসা কোনটিই আর অবশিষ্ট নেই। সত্য নয় এখানে বিচার হয় সরকারের ইশারায়, আইন নয় বিচারের রায় দেওয়া হয় আওয়ামী আইনজীবীদের মুখের দিকে তাকিয়ে। বিচারপতি খাইরুল হকের আমলে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে সর্বনিম্ন আদালত পর্যন্ত যে ‘খাইরুল হক’ ভাইরাস ছড়ানো হয় তা ইবোলা ভাইরাসের মত দ্রুত সংক্রামিত হতে থাকে আর বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের আমলে আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাওয়ার ভরসার সমাধি রচিত হয়।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন গ্রন্থ সংবিধান এবং এই সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিচারালয় হচ্ছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং এর প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচারপতি খাইরুল হক প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ত্রাণের টাকা উপহার (ঘুষ) হিসাবে গ্রহণ করে তিনি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেন। একজন প্রধান বিচারপতির এধরনের নীতি নৈতিকতার স্খলন এ ধরণিতে দ্বিতীয়টি হয়েছে কিনা জানা নেই। শুধু তাই নয় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল যে তাঁর হঠকারী অসাংবিধানিক এবং অগ্রহণযোগ্য বিচারিক রায় ছিল তা সংবিধানের নীচের অংশটুকু পড়লেই পরিষ্কার বুঝা যাবে। ‘সংবিধানের ৯৯। (১) কোন ব্যক্তি (এই সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের বিধানাবলী-অনুসারে অতিরিক্ত বিচারকরুপে দায়িত্ব পালন ব্যতীত) বিচারকরুপে দায়িত্ব পালন করিয়া থাকিলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের বা অপসারিত হইবার পর তিনি কোন আদালত বা কোন কর্তৃপক্ষের নিকট ওকালতি বা কার্য করিবেন না’। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার পর বিচারপতি খাইরুল হক অবসরে যাওয়ার ১০ মাস পর পূর্ণাজ্ঞ রায় লিখেন, যা ছিল পূর্বের রায়ের সাথে অসামঞ্জস্য পূর্ণ এবং সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
এখানেই শেষ নয়, এই এক ব্যাক্তির নীতিহীনতা, অনৈতিক আচরণ, মানবিক মূল্যবোধের স্খলনের কারণে রাষ্ট্র আজ বিভক্ত। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেছিলেন, ‘ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়, যেকোনো রাষ্ট্রে যখনই সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভাকে সংবিধান ও আইনের আওতায় রাখতে ব্যর্থ হয় এবং নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ হয়ে দাঁড়ায় তখনই রাষ্ট্রে ও নাগরিকদের জীবনে চরম বিপত্তি দেখা দেয়।’ এই একই ব্যাক্তির স্ববিরোধী অবস্থান, নীতিহীনতা এবং সরকারের প্রতি আজ্ঞাবহতার নিদর্শন স্বরূপ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে তাঁর সুপারিশে সরকার গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ জাতীয় সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসন বিল পাসের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদের হাতে। সংবিধানের ৯৬ (৩) দফায় বর্ণিত ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল’-এর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ প্রক্রিয়া ছেঁটে ফেলে দিয়ে চালু করা হলো সংসদের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণ প্রক্রিয়া।
পাঠক মাত্রই জানেন গত ৬ জানুয়ারী সুপ্রিমকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের এক নেত্রী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচার না করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ৭ জানুয়ারি বুধবার হাইকোর্ট রিটের শুনানি শেষে আদেশ দেন যে, ‘তারেক রহমান যতদিন আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকবেন, ততদিন তার কোনো বক্তব্য-বিবৃতি সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।’
এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য যে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে ‘পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারালয়ে ন্যায্য ও প্রকাশ্য শুনানি লাভের অধিকার’। বাংলাদেশ সংবিধানের সর্বশেষ হাসিনা ভারসান অনুসারেও এর ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী এবং ৩৯ অনুচ্ছেদ মতে প্রতিটি নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং ৩৯ এর (ক) মতে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার এবং (খ) মতে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।এখানে আদালত রায় দেওয়ার জন্য কোন আইনের তোয়াক্ষা করেনি এমনকি ন্যূনতম প্রসিডিউর রুলও মানা হয়নি। এই রায় শুধু নজিরবিহীনই নয়, মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোন নাগরিকের বাক স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা এই আওয়ামি-জাহেলিয়াতের যুগ ছাড়া কোথাও ঘটেছে বলে জানা নেই।
সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ ও চাকুরির শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। এই প্রদত্ত ক্ষমতার বলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ প্রণীত হয়। এবং এটি আইনে পরিণত হয় ১৮ মে ১৯৭৯ সালে।
৩২টি ধারা উপধারা ও বিধি সম্বলিত এ বিশদ নীতিমালায় সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিশেষ বিশেষ কার্যক্রমের ওপর সীমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনার খাতিরে এই বিধিসমূহ মোটামুটি তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথমত, কতিপয় বিধি রয়েছে যা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত। আজকের আলোচনার জন্য প্রথম অংশটুকুই প্রাসঙ্গিক বিধায় এটি উল্লেখ করছি। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রগুলো হলো যেমন; ফটকা বিনিয়োগ, সংসদ-সদস্য বা সরকারি কর্মচারী নন এমন ব্যক্তির নিকট সরকারি কর্মচারীর পক্ষে কোনো কাজে হস্তক্ষেপের জন্য তদবির করা, রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেয়া, সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ প্রচার করা, সংকীর্ণতা, পক্ষপাতিত্ব ও প্রতিশোধমূলক নিপীড়নকে প্রশ্রয় দেয়া এবং ক্ষমতার ইচ্ছাকৃত অপব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।
পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রভাব কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সরকারি কর্মচারীর জন্য অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একজন সরকারি কর্মচারী বিদেশী মিশন বা দাতাসংস্থার নিকট থেকে বিদেশ সফরের আমন্ত্রণ বা বিদেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ লাভের জন্য তদবির করতে পারবেন না। বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রটির মালিক হচ্ছেন দেশের জনগণ। হাসিনা বিধান মতে হাসিনা এর অসাংবিধানিক এবং অবৈধ দখলদার।বাংলাদেশের সংবিধানকে শুধু নয় হাসিনা বিধানের হাসিনাকেও পিছনে ফেলে বাংলাদেশের জনগণের টাকায় বেতনভুক্ত রাষ্ট্রের তিন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান বিজিবি মহাপরিচালক, পুলিশের আইজিপি এবং র্যাব-এর মহাপরিচালক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা সভ্যতার ইতিহাসে এটিই প্রথম। সুতরাং এদের হাতে দেশের সংবিধান,দেশের জনগণ এবং রাষ্ট্রের সম্পদ কোনটিই নিরাপদ নয়। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে (১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷ কিন্তু এঁরা সংবিধানকে বুটের তলায় পিষ্ট করে রাষ্ট্রের জনগণের টাকায় কেনা বন্দুক দিয়ে দেশের মালিক জনগণের বুকে তারা নির্বিচারে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছে, গুলি করছে। রাজনৈতিক আওয়ামী লীগারদের চেয়ে রাষ্ট্রীয় পোশাকের আড়ালে আওয়ামী লীগাররা রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের জনগণের জন্য বেশি ভয়ংকর। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে -প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানব সত্বার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে৷ এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপরের পংতিগুলি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে উদ্ভট এবং হাস্যকর।এই দখলদার হাসিনা সহ বিকৃত ও অসুস্থ মস্তিষ্কের কিছু উন্মাদের হাতে আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত। এই উন্মাদদের নিষ্ঠুরতা এবং পৈশাচিকতা হিংস্র হায়ানাদেরকেও হার মানায়। এদের প্রতিহত করার এখনই সময়।
নতুন সিইসি নুরুল হুদা এবং আবার সাজানো নির্বাচনের পাঁয়তারা?
দেশে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো: অনেক নাটকের পর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কেএম নুরুল হুদাকে সিইসি হিসাবে নিয়োগ দান। তবে আওয়ামী সরকারের জামানায় ইস্যুর অভাব নেই। একটি ইস্যু কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেলে আবার আরেকটা ইস্যু তৈরী করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়ের করার জন্য যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশেষ শাখা গড়ে তোলা হয়েছে-মনে হচ্ছে ঠিক সেভাবে ইস্যু তৈরী করার জন্য একটি বিশেষ বাহিনী তৈরী করা হয়েছে। একটি ইস্যু শেষ হতে না হতে আরেকটা ইস্যু খাড়া করা হচ্ছে। নতুন নতুন ইস্যু তৈরী করে দেশের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করাই অবৈধ সরকারের একমাত্র এজেন্ডা ও উদ্দেশ্য। নতুন সিইসি সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদা সম্পর্কে যতদুর জানা যায় তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ এর নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের প্রধান ছিলেন। তার ছোট ভাই নাসির উদ্দিন সবুজ নওমালা ইউনিয়ন, বাউফল থানা আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক। 1996 সালে আওয়ামী লীগের জনতার মঞ্চে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি আমলে কেএম নুরুল হুদাকে ওএসডি করা হয় এবং তিনি ওএসডি হিসাবে অবসরে যান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে চাকরীতে তাকে চাকরীতে পুর্নঃবহাল করে। ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ নতুন সিইসি হিসেবে কেএম নুরুল হুদার নাম প্রস্তাব করেনি। তার নাম প্রস্তাব করেছে তরিকত ফেডারেশন! তরিকত ফেডারেশন নামের মাজার ব্যবসায়ী আওয়ামী দালালদের ব্যবহার করে কৌশলে নিজেদের বিশ্বস্ত ও খাঁটি লোককে সিইসি বানিয়েছে সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, অপকৌশল, অপকর্ম, কূটচাল ও হীন চেষ্টায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়ের করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের চেয়ে একশ বছর পিছিয়ে আছে বিএনপি।
বিএনপি’র প্রতিক্রিয়া:
এদিকে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন বিষয়ে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া রাতে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ২০ দলীয় জোটভুক্ত প্রত্যেকটি দলও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনে নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। দুর্ভাগ্যক্রমে ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সেই প্রত্যাশাকেই ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে গভীর জাতীয় সংকট। আর তাই এবারের নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি বিএনপি শুরু থেকেই অসীম গুরুত্ব ও গভীর ঐকান্তিকতার সঙ্গে নিয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম যাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তারা হবেন সৎ, দলনিরপেক্ষ, দক্ষ, সাহসী, প্রজ্ঞাবান, কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। এই উদ্দেশ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ১৩ দফা প্রস্তাব জনগণের সামনে উপস্থাপন করেন। দেশনেত্রীর এই যৌক্তিক প্রস্তাবে দেশবাসী উৎসাহিত হয় এবং যথার্থই নিরপেক্ষ, যোগ্য ও সাহসী একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে বলে আশা করে। বিএনপি’র।
বিএনপি মহাসচিব অত্যন্ত সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছেন। কিন্তু বিগত আট বছর যাবৎ আওয়ামী সরকার বিএনপি’র কোনো ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিপূর্ণ দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছে? পরোয়া করেছে? না বিন্দুমাত্র মূল্য দিয়েছে বা সমীহ করেছে? এবারো কি বিএনপি’র কথা মতো সরকার জনগণের মনের আশা পুরণ করবে? বিএনপি’র সমস্যা হলো: দলটি সবসময় ডিফেন্সিভ রাজনীতি করে। ডিফেন্সিভ রাজনীতি করে এ সরকারের কাছ থেকে কখনো জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি বা জনগণের মৌলিক অধিকারের মধ্যে এক নাম্বার সিরিয়ালে থাকা ভোটের অধিকার আদায় করা যাবে?
অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়ার জন্যই কি নির্বাচনে যাবে বিএনপি?
দেশে প্রসঙ্গের অভাব নেই। তাই হাজার চেষ্টা করলেও নিবন্ধের পরিধি ছোট করা যায় না। এ যে, চারদিক থেকে শোরগোল তোলা হয়েছে যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এ ব্যাপারটি অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে। আসলেই কি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে কি বিএনপি এক পায়ে খাড়া? সেটা যদি হয় তাহলেতো সিইসি বা অন্য কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা অনর্থক। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে সত্যিকার অর্থে কোনো সঙ্কট নেই! আসলেই কি শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? যদি শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে সম্মত হয়-তাহলে 2013 সালের শেষের দিকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আন্দোলন করেছিল কেন? এ আন্দোলনে পুলিশ-র্যাব 5 শতাধিক বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো এখনো আপনজন হারানোর শোক ও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের মন-প্রাণে এখনো আপনজন হারানোর ক্ষত দগদগ করছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে মূলত হাসিনা ডাইন্যাস্টি কায়েম করা হয়েছে। অর্খাৎ নির্বাচনের সময় বর্তমান অবৈধ সংসদ বহাল থাকবে। হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। আগেই বলা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ নিজেদের লোক নিয়োগ করে দেশের প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রসঙ্গে বলাই বাহুল্য। জন্মলগ্ন থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দাঙ্গাবাজিতে পারদর্শি আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভোট কেন্দ্রগুলোতে যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে সেটা না বললেও চলে। বিগত সাত বছর যাবৎ আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরকারের মদদপুষ্ট দলীয় সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের তান্ডব ও ত্রাসের রাজত্ব দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঢাকা ইউনিভার্সিটি’র সাবেক ভিসি প্রফেসর ড: এমাজ উদ্দিন আহমদ-এর পরামর্শে বিএনপি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিন সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্রগুলোতে কি পরিমাণ সন্ত্রাস ও তান্ডব চালিয়েছিল এবং স্বয়ং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ড: এমাজ উদ্দিন আহমদ-এর মতো বয়োবৃদ্ধ বুদ্ধিজীবী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর সাথে কি আচরণ করেছিল-তা কি ভুলা যায়? এতো কিছু দেখা ও জানা এবং বিগত সাত বছরের বেশি সময় যাবৎ সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন, মিথ্যা, সাজানো মামলায় জর্জরিত হবার পরও অবৈধ সরকারকে বৈধতা দানের জন্য বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? বিএনপি কি করবে না করবে-সেটা একান্তই তাদের দলীয় ব্যাপার। তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল এবং হাসিনা যতোদিন গদি দখল করে রাখবেন-ততোদিন দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন প্রত্যাশা করা দুরাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
লেখক:
সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও মানবাধিকার সংগঠক।
বিষয়: রাজনীতি
১২৬৮৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গত ৩ বছরে পরিস্থিতি বিএনপির জন্য হিতে বিপরীত হয়ে এসেছে । অনেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এসেছেন এদেশে এবং আমাদের হাসুবুও বেশ কিছু দেশে গিয়ে সরকার প্রধানদের সাথে মত বিনিময় করেছেন । আর বাজপেয়ি তো হাসুবুর ফ্যান হয়ে গেছেন!
বিএনপি ও তার সমর্থকদের সেই সময়ের স্ট্র্যাটেজি যে মারাত্মক ভুল ছিল এটা এখন দিবালোকের মতই ষ্পষ্ট।
মন্তব্য করতে লগইন করুন