সর্বগ্রাসী দখলের থাবা: এবার দখল ইসলামী ব্যাংক
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১০:২৪:০৭ রাত
আওয়ামী সরকারের কথিত মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সরকারের তাবেদার, দালাল মিডিয়া, সংঘবদ্ধ বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী প্রায় অভিযোগ করতো যে, ইসলামী ব্যাংক এ বিচারকে বানচাল করার জন্য দেদারসে অর্থ ব্যয় করছে। এ বিচারকে কেন্দ্র করে একেবারেই সামনের সারিতে নিয়ে আসা হয়েছিল ইসলামী ব্যাংককে। মানবতা বিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতাদের আয়ের অন্যতম উৎস ইসলামী ব্যাংক-এ কথাটি বার বার বলেছেন আওয়ামী লীগ ও তাদের নির্লজ্জ সমর্থকরা। কথিত মানবতা বিরোধী অপরাধী জামায়াতে ইসলামীর নেতারা দেশে-বিদেশে অর্থ ব্যয় করেছেন বিচার বন্ধে চাপ তৈরির জন্য। এ কাজে অর্থ ব্যয় করেছে ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। সরকার তার ভাড়াটে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের অর্থের উৎস বন্ধ করার সাঁড়াশি প্রচার অভিযান চালিয়েছিল। ইসলামী ব্যাংকে জামায়াত মুক্ত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার এগিয়েছিল কৌশল ও নিজস্ব পলিসি অনুযায়ী। শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল যে-ঠিক কবে নাগাদ ইসলামী ব্যাংক দখল করা হবে। এটা ইতিমধ্যে হয়ে গেলো। জামায়াত সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, এমডিসহ আরও অনেক পদে পরিবর্তন করা হয়েছে খুব দ্রুততার সাথে। আরও পরিবর্তন হবে। জামায়াত নেতাদের কোনো সম্পৃক্ততা থাকছে না ইসলামী ব্যাংকে। প্রায় 35 বছর যাবৎ জামায়াত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালনা করেছেন। পরিবর্তিত নতুন কর্তারা বলেছেন ব্যাংক পরিচালনা বা নীতিতে পরিবর্তন আসবে না। শরিয়া ভিত্তিতেই চলবে ব্যাংকটি। কর্মকর্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বা চাকরিচ্যুত করা হবে না। অন্য ধর্মের লোকদেরও চাকরি দেওয়া হবে। অভিযোগ ছিল যে, জামায়াত-শিবিবের লোকেরাই চাকরির সুযোগ পেত ব্যাংকটিতে। মূল কথা হলো ধর্মনিরপেক্ষ! আদলে গড়ে তোলা হবে এ সফল ব্যাংকটিকে। দায়িত্ব নেওয়ার পরই এসব কথা বলেছেন, নতুন চেয়ারম্যান, এমডি। আসলে বাস্তবে কি দেখা যাচ্ছে? ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয়ার পরই অনিয়মের মহামারী শুরু হয়েছে ব্যাংকটিতে। অনিয়ম এতো ব্যাপক যে, সরকারের অন্ধ সমর্থক মিডিয়াগুলোও আর চুপ থাকতে পারছে না। মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে: ‘কোনও নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। গত 9 জানুয়ারি সোমবার পর্যন্ত ২৬ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন শাখায় পোস্টিংও দেওয়া হয়েছে। দেশের একটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর তালিকা অনুযায়ী আরও ২৫০জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এ নিবন্ধ লেখার সময় ইতিমধ্যেই সেটা সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ব্যাংকটির নতুন ম্যানেজিং কমিটি সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিলেও বাস্তবে ঘটছে এর উল্টো। ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল-‘মাত্র ৫৫ মিনিটে ৭৫ জনের ভাইভা’। একদিনে কোনো নোটিশ ছাড়াই ২৫০ জন দলীয় ক্যাডার নিয়োগ। প্রতি পদের বিপরীতে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ! এমন জঘন্য ঘুষের কারবার! ইসলামী ব্যাংকের ইতিহাসে ইতিপূর্বে আর কখনো ঘটেছে বলে কেউ শুনেনি। ঘুষ তো দুরের কথা ইন্টারভিউতে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়া ব্যতিত কারো পক্ষে এ ব্যাংকে চাকুরী পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ইসলামী ব্যাংক কি কর্মকর্তা শূণ্য হয়ে পড়েছে? এ জন্য ‘মাত্র ৫৫ মিনিটে ৭৫ জনের ভাইভা’ সম্পন্ন করতে হবে? গ্রাহকের আস্থা ও সেবার ক্ষেত্রে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ ব্যাংকটি ছিল এক নাম্বারে। এক নাম্বার এমনিতেই হয়নি। সৎ, যোগ্য গ্রাহকদের সেবা দানে অত্যন্ত আন্তরিক লোকবল ছিল বলেই ইসলামী ব্যাংক এক নম্বর ব্যাংক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। তড়িঘড়ি করে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তারা কি আসলে যোগ্য লোক কিনা? যদি তারা যোগ্য লোক হন-তবে পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ কেন? নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখে স্পষ্টই মনে হচ্ছে যে, অযোগ্য-অদক্ষ দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কোটি-কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য। এ অনিয়ম ও দূর্নীতি সূচনার মাধ্যমে মালিকানায় আসা বৃহৎ ব্যবসায়ী গ্রুপের এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন নতুন চেয়ারম্যান এবং এমডি। যে হারে দলীয় বিবেচনায় লোকবল নিয়োগ-পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে-তাতে ইসলামী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা। সরকারি মালিকানাধীন সোনালী থেকে বেসিক ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে-নানা স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মের ও দূর্নীতির কারণে। সরকার ও তার ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা এতোদিন সাঁড়াশি প্রপাগান্ডা চালিয়েছিল যে-ইসলামী ব্যাংকের অর্থ মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। জঙ্গিবাদ পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যবহার হয়েছে, ইত্যাদি-ইত্যাদি। তবে সরকার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে কখনো এসব অভিযোগের সঠিক প্রমাণ দিতে পারেনি। ইসলামী ব্যাংক থেকে জামায়াতকে বের করে আওয়ামীকরণ করাই যে সরকারের আসল উদ্দেশ্য-সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। জামায়াত তাদের অনুসারী লোকজন দিয়েই ব্যাংকটি পরিচালনা করেছে-এ কথা হয়তো সত্য। কিন্তু জামায়াত অযোগ্য লোকবল নিয়োগ দিয়েছে, পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ দিয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ কখনো শুনেনি। অযোগ্য লোক দিয়ে আর যাই হোক না কেন-দেশের এক নম্বর ব্যাংক হিসেবে নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে পারতো না। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা জানেন যে, বেসরকারি ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব সরকারের নয়। ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য ম্যানেজিং কমিটি থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক-ই বিধি অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তো আর ফেরেস্তারা পরিচালনা করে না। সরকার নিযুক্ত গভর্ণরই সেটা নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার ইতিমধ্যেই বলেছে ইসলামী ব্যাংকের ঘটনায় তাদের হাত নেই। শেয়ার মার্কেটসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে ধ্বংসের অন্যতম হোতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আইডিবি’র চাপেই ইসলামী ব্যাংকে এ্ পরিবর্তন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথা শুনে অনেকেই হেসেছেন। তবে এ হাসি সুখের নয়-চরম ক্ষোভ ও দুঃখের। অর্থমন্ত্রী নিজের ব্যক্তিগত ও সরকারকে দায় মুক্তি দিতে গিয়ে অনেকটা “ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না” প্রবাদটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নতুন ভাবে! সরকার ও তার তাবেদাররা সব কিছুই করতে পারে বা বলতে পারে! ক্ষমতা তাদের হাতে। সরকার আগেকার দিনের রাজা-বাদশাদের মতো ক্ষমতাকে যাচ্ছে তাই ব্যবহার করে চলেছেন। সরকার বলছে, ব্যাংকটির এমডি, চেয়ারম্যান, পরিচালনা পরিষদ সব কিছু করেছে। সরকারের নির্দেশনা ও গাইডলাইন অনুযায়ী যে সব ঘটনা ঘটেছে বা সব কিছু করা হয়েছে-সেটা একজন শিশু বলে দিতে পারে। সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গ্রুপ যে ব্যাংকটির বেশিরভাগ মালিকানা কিনেছে-সেটা একটা ফুৎকারে ঘটেনি। এটা স্পষ্ট যে, মানবতা বিরোধী অপরাধী ‘মুক্ত’ করার নামে ইসলামী ব্যাংককে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে দিয়ে ‘দখল’ বা আওয়ামীকরণ করা হয়েছে মাত্র। যে স্টাইলে ইসলামী ব্যাংক দখল করা হয়েছে-তাতে আগামীতে আরো বহু প্রতিষ্ঠান দখলের মুখে পড়বে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বর্তমানে সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডার হচ্ছে কুখ্যাত ভূমিদস্যু ও ব্যাংক লুটকারী বলে পরিচিত এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ। ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ দখল করার আগের কয়েক মাস ধরে সাইফুল আলম ওরফে এস আলম ৭০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেন ইসলামী ব্যাংক থেকে। এই ব্যবসায়ী গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টে ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে হয়ে যাওয়া ব্যাংক লুটে নেতৃত্ব দিয়েছেন এস আলম। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের ১৭ হাজার কোটি টাকা লুটের প্রমাণ পেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শেখ হাসিনার সাথে তার বিশেষ সম্পর্কের কারণে তাকে হলমার্কের মালিক তানভীরের মতো কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। বরং এখন বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককের বড় শেয়ারটি তার হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যম ঋণের নামে লুট করা হবে ইসলামী ব্যাংককে। এর আগে এস আলমের ব্যাংক লুট নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ এসেছে। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, হলমার্ক আড়াই হাজার কোটি টাকা নিলেও এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা নিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। আবুল খায়ের গ্রুপ নিয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আর এস আলম কেবল ইনল্যান্ড বিল পার্চেজ করেই নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য ঋণও নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের ব্যাপারে সরকারের প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ ও সহযোগিতা রয়েছে বলেই কেউ কিছুই বলছে না। তারা টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সব অনিয়মের কথা জানলেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মহা কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। এক ব্যাংক থেকে টাকা অন্য ব্যাংকে নেয়া হয়েছে। ঋণ নেয়া ব্যাংকের টাকা কাগজে-কলমে লেনদেন করে পরিশোধ দেখানো হলেও আবার ঐ টাকা নতুন করে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের মূল টাকা চলে গেছে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত গ্রুপ এস আলমের হাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হিসাব মতে, ঐ টাকার পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি। ঐ টাকা নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক রয়েছে। সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপের মালিক আলহাজ মো. সাইফুল আলম মাসুদ নানা কৌশলে ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালীদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন। এর মধ্যে কেবল ইনল্যান্ড বিল পার্চেজ (আইবিপি) করেই নেন ১৭ হাজার কোটি টাকা, যা ফান্ডেড দায়। এসব টাকা নেয়া হয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা, আগ্রাবাদ শাখা, রূপালী ব্যাংক আন্দরকিল্লা শাখা, লালদীঘির পূর্বপাড় শাখা, খাতুনগঞ্জ শাখা, আমিন মার্কেট শাখা, জনতা ব্যাংক লালদীঘির পাড় ও আগ্রাবাদ শাখা, অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘির পাড় শাখাসহ সেখানকার আরো একটি শাখা। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে সুগার ও ফুড গ্রেইনের নামে আইবিপি করে এই ১৭ হাজার কোটি টাকা তারা হাতিয়ে নেয়। এই টাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তারা ঋণ নিয়েছে। ঐ টাকার পরিমাণ আরো ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র জানায়, ঐ টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য তারা আশ্রয় নিয়েছে এমন এক কৌশলের, যা সাধারণভাবে ভাবাও অসম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, তারা পাঁচ হাজার ব্যাংক হিসাব খুলেছে। ঐ সব হিসাবে বিভিন্ন ভাবে টাকা লেনদেন হচ্ছে। তারা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ নেয়া ছাড়াও এলসি, এলডিআর করা, বিল ইস্যু করণসহ বিভিন্নভাবে লোন নিচ্ছে। আর ঐ ঋণের পরিমাণ এক একটির বিপরীতে ২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র আরো জানায়, এস আলম গ্রুপের নামে আগে এলসি, বিল ও ঋণের ব্যাপারে অনেক অনিয়ম ছিল। তাদের ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে বলার পর তারা টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে এনেও দেয়। কিন্তু আসলে এখন অনিয়ম হলেও ভিন্নভাবে হচ্ছে, এটা কাগজে-কলমে ফাঁক থাকছে না। কারণ এখন তারা ব্যাংকের টাকাই লেনদেন করছে, নিজেরা টাকা বিনিয়োগ করছে না। কেবল যা করছে, তা হচ্ছে এক শাখা থেকে টাকা অন্য শাখায় ও এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে নেয়ার ঘটনা। আর বিভিন্ন ব্যাংকে ইনল্যান্ড বিল পার্চেজ করে টাকা বের করে নিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে তারা জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডি, ডিএমডি, জিএম, ডিজিএমসহ সবাই সহযোগিতা করছেন। এজন্য তারা মাসোহারা পাচ্ছেন। সূত্র জানায়, অনেককেই তারা এককালীন টাকাও দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রামের ডিজিএম মো. সোলায়মান, ইব্রাহিম ভূঁইয়া, আবুল বাসার ও দীপঙ্কর ভট্টাচার্য প্রতি মাসে এস আলম গ্রুপের অফিসে যান। সেখান থেকে তারা মাসোহারা নিয়ে আসেন। সেটি তারা নেন এবং চট্টগ্রামের জিএম মাসুম কামাল ভূঁইয়া ভাগ দেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জন্য আবার আলাদা মাসোহারা পাঠান এস আলম। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা সবই জানি কিন্তু সবাই ম্যানেজ। তাই কিছুই করতে পারছি না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এস আলমের সবচেয়ে বড় ব্যবসা হচ্ছে চট্টগ্রামে। সেখানে তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। চট্টগ্রামে তাদের মূল ব্যবসা হলেও ঢাকার অনেক ব্যাংক থেকেও তারা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে ১১০০-১২০০ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে জনতা ব্যাংকের ডিএমডি গোলাম সারোয়ার বলেন, এস আলম বড় গ্রুপ বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ তারা নিচ্ছে আবার অনেক ঋণ তারা পরিশোধ করছে। তিনি বলেন, এখন ১১০০-১২০০ কোটি টাকার ঋণ আছে। ঐ ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তিনি বলেন, অনিয়ম হয়েছে কি না, সেটা আমি বলতে পারব না। এদিকে ইসলামী ব্যাংকের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আরাস্তু খান হুংকার ছেড়ে বলেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ালে মাফ নাই। এ সংক্রান্ত প্রমাণ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা বোর্ডের অন্য সদস্যরাও এ সময় তার সাথে ছিলেন। সাংবাদিকদের আরাস্তু খান বলেন, ‘কেউ যদি স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হন তাহলে চাকরি যাবে না। কারো চাকরি খাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের নাই। আমরা চাই ব্যাংকের যে কোনও স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে কোনও ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হোন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ভালো ব্যাংক। এই ব্যাংক এ বছরও দুই হাজার তিন কোটি টাকা মুনাফা করেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে আরাস্তু খান বলেন, নিজের নিয়োগকে তিনি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘কর্মচারীদের মনে শঙ্কা থাকা উচিত না। পরিচালনা বোর্ড অত্যন্ত দক্ষ। পরিচালনা বোর্ডে যারা আছেন তারা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষ।’ এর আগে মি. আরাস্তু খান বলেছিলেন, ইসলামী ব্যাংকে অন্য ধর্মের লোকদেরও নিয়োগ দেয়া হবে। ইসলামী ব্যাংক শরীয়াহ ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে। মুসলিম নামধারী ধর্মনিরপেক্ষ মোনাফেক ও অন্য ধর্মের লোকেরা কিভাবে ইসলামী ব্যাংককে শরীয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত করবে? ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান আরাস্তু খানের পারিবারিক সেলফি শো’তে যা দেখা গেলো তাতে আশঙ্কা করা স্বাভাবিক যে, ভবিষ্যতে নামাজের ওয়াক্তে নামাজের পরিবর্তে ইসলামী ব্যাংকে ফ্যাশন শো হবে! সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, আন্তরিকতা, স্বচ্ছতার কারণেই যে ব্যাংকটির অবস্থান ছিল নাম্বার ওয়ান-তার অপমৃত্যু দেখার জন্য হয়তো বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। কবি ফররুখ আহমদ লিখেছেন, “ভাড়াটিয়া চিন্তাবিদ, পেশাদার দুষ্ট বুদ্ধিজীবী চিরন্তন প্রথামত কুবুদ্ধির ঢিবি”। দখলদার সরকার এবং তাদের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী দেশটাকে কোথায় নিয়ে ঠেকাবে?
সাইয়েদ ইকরাম শাফী
লেখক: গল্পকার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
E-mail:
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন