ইসরাইল বিষয়ক প্রচারণা ও বাস্তবতা
লিখেছেন লিখেছেন সাইয়েদ ইকরাম শাফী ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:৫৯:১৯ রাত
ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র বিষয়ে বিএনপি’র বিরুদ্ধে বেশ জোরে-শোরে অপপ্রচার চালিয়েছে অবৈধ সরকারের প্রপাগান্ডা মেশিনগুলো। বর্তমান অবৈধ সরকারের সব অপকর্মের মদদ ও ইন্ধনদাতা একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাই যে এসব অপপ্রচারের মূল হোতা সেটা বুঝতে কারো বাকী নেই। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও ইতিহাস যারা জানেন তারা এসব গাঁজাখুরি অপপ্রচারে বিস্মিত হচ্ছেন।
ফিরে দেখা ইতিহাস :
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। অর্থাৎ ইন্ডিয়া-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ঠিক ১ বছর পর। একটি মাত্র মুসলিম দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। দেশটি হলো তুরস্ক। তুরস্ক যখন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তখন দেশটির রাজনৈতিক আদর্শ সঠিক ছিল না। ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল পাশা দেশটিতে ইউরোপীয় আদলে ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন। দেশটির অর্ধেক অংশ ইউরোপে বাকী অংশ এশিয়া মহাদেশে। কঠোর ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবর্তনের নামে দেশটিতে শুরু হয় চরম ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা। একদিকে ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের পতন অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতার কারণে পুরো মুসলিম দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় দেশটিকে। ১৯২৩ সালে ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের পতনের পর প্যালেস্টাইন বৃটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। এদেশটিকে দুনিয়ার অন্যতম ইতিহাস সমৃদ্ধ লালন ভূমি বলা হয়। প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন একটি প্রচলিত নাম। এ নামটি খৃষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দ থেকে ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত অধিক প্রচলিত ছিল। ভূমধ্যসাগরীয় জর্ডান নদী এবং বিভিন্ন সংলগ্ন ভূমিগুলোর ভৌগলিক অঞ্চলগুলোকে এ নামে অভিহিত করা হতো। এ অঞ্চলেই প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গড়ে উঠে। প্যালেস্টাইন ১ম বিশ্বযুদ্ধের আগে ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ১৯১৬ সালে বৃটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে Sykes-picot চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির ফলে আরব দেশগুলো বিভক্ত হয়ে যায়। যা বৃটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু প্যালেস্টাইনকে আন্তঃ রাষ্ট্রীয় করা হয়। প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র স্বতন্ত্র দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। যা পশ্চিম তীর ও গাজা ট্রিপ। কিন্তু জেরুজালেমের সংযোজিত অংশ যেটাকে প্যালেস্টাইন-এর রাজধানীর অংশ মনে করা হয়। পূর্ব জেরুজালেম যা ইসরাইলের দখলে রয়েছে। যেটা পশ্চিম তীরের অংশ নয়। সেটি ইসরাইলের অংশ মনে করা হয়। এই পূর্ব সীমানা পশ্চিম তীরের বর্ডার জর্ডানের সাথে যুক্ত। দক্ষিণ সীমান্তের গাজা ট্রিপ মিশরের সাথে সংযুক্ত। পশ্চিম তীর জর্ডান নদীর তীরে এবং গাজা ট্রিপ ভূমধ্যসাগর দ্বারা বেষ্টিত।
ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাস :
হযরত মূসা (আ.) এর উম্মত ইহুদীদের কোনো দেশ ছিল না। দেশহীন জাতি হলেও শিক্ষা-দীক্ষা এবং বিজ্ঞান চর্চায় ইহুদীরা বেশ অগ্রসর জাতি। টাকা লগ্নি বা সুদের ব্যবসায়ও ইহুদীদের খ্যাতি আছে। জনসংখ্যার দিক থেকে ক্ষুদ্র জাতি ইহুদীরা সারা দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের একচেটিয়া অধিপতি। প্রাসঙ্গিক কারণেই সারা দুনিয়ায় বসবাসকারী ইহুদী জনসংখ্যার বিবরণ তুলে ধরছি। একটি ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে: On the eve of Israel Independence Day 2016, Israel's population stood at a record 8,522,000. Diversity & Growth. The Jewish population makes up 6,377,000 (74.8%); 1,771,000 (20.8%) are Arabs; and, those identified as "others" (non-Arab Christians, Baha'i, etc) make up 4.4% of the population (374,000 people).Nov 15, 2016। বাংলা তরজমা: ২০১৬ সালে স্বাধীনতা দিবসের পূর্বে ইসরাইলের রেকর্ড জনসংখ্যা হলো: 8,522,000। বিভাজন: ইহুদী জনসংখ্যা 6,377,000। শতকরা হিসাবে: (74.8%) আরব: 1,771,000 । শতকরা হিসাবে: (20.8%) অন্যান্য: নন আরব খ্রিস্টিয়ান, বাহাই ইত্যাদি: 374,000। শতকরা হিসাবে: 4.4%। এটা ১৫ নভেম্বর ২০১৬ সালের হিসাব। আমেরিকা মহাদেশ: 6,468,800, এশিয়া মহাদেশ: 6,142,000, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ: 120,100, আফ্রিকা মহাদেশ: 74,700, ইউরোপ মহাদেশ: 1,407,200, সর্বমোট 1,42,12800। 2014 সালের হিসাব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা হলো: 316,200,000. যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদীদের সংখ্যা হলো: মাত্র 5,700,000। শতকরা হিসাবে মাত্র 1.8%। Sources: Jewis Vitual Library Sergio DellaPergola. “World Jewish Population, 2012.” The American Jewish Year Book (2012) (2014) (Dordrecht: Springer) p. 212-283. Population Reference Bureau. বাস্তব ব্যাপার হলো: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদীরা অত্যন্ত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। অথচ দেশটির রাজনীতি-পররাষ্ট্র নীতি থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে ইহুদীরা। দেশটির মিডিয়া তথ্য প্রযুক্তি, অস্ত্র ও তেল ব্যবসাও ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণে। উল্লেখ করা যেতে পারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেদেশের জনমত জরিপ কে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির জন্য এটা একটা খারাপ দুষ্টান্ত বটে। কারণ মার্কিন জনমত কখনো ভুল বা মিথ্যা হয় না। অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন ইহুদীরা। দুনিয়ার বড় বড় বিজনেস কর্পোরেট হাউজগুলো ইহুদীদের মালিকানাধীন। যেমন: কোমল পানীয় কোম্পানী কোকাকোলা, পেপসি, বিখ্যাত পাদুকা কোম্পানী বাটা, প্রসাধন কোম্পানী ইউনিলিভার ও পেট্রোলিয়াম কোম্পানী শেল সহ আরো বহু বড়-বড় বিখ্যাত কোম্পানীর মালিকানা ইহুদীদের হাতে। এসব বিবরণে সহজেই বুঝা যায় ইহুদীরা ব্যবসা-বাণিজ্যে কতোটা অগ্রসর জাতি। প্রখ্যাত বৃটিশ নাট্যকার উইলিয়াম সেক্সপীয়ার তার বিখ্যাত গ্রন্থ “মার্চেন্ট অব ভেনিস“-এ শাইলক নামের একজন ইহুদী সুদের কারবারীর নিষ্ঠুর সুদের ব্যবসার বর্ণনা করেছেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও পরমাণু সূত্রের উদ্ভাবক এ্যালবার্ট আইনস্টাইন ইহুদী। জানা যায়, এ্যালবার্ট আইনস্টাইন ইহুদীদের কোনো রাষ্ট্র না থাকার কারণে আক্ষেপ করতেন। তিনি ইহুদীদের জন্য রাষ্ট্র সৃষ্টির দাবি করেছিলেন। এর পর বৃটেন ইহুদী রাষ্ট্র সৃষ্টিতে তৎপর হয়। বৃটিশ সেক্রেটারী অব স্টেট মি. বেলফোর কর্তৃক ১৯১৭ সালে ঘোষিত “বেলফোর ঘোষণা”র মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টির রাস্তা তৈরী হয়। বেলফোর ঘোষণার সূত্র ধরেই বৃটিশ শাসিত প্যালেস্টাইনকে বিভক্ত করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে গণভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং পশ্চিমাদের প্রভাব ও চাপে এ গণভোটের রায় চলে গিয়েছিল ইসরাইলের পক্ষে। জাতিসংঘের তথাকথিত ১৮১ নং প্রস্তাবের পরিকল্পনার মাধ্যমে ১৯৪৭ অখন্ড প্যালেস্টাইনকে দ্বিখন্ডিত করা হয়। এ প্রস্তাবে প্যালেস্টাইন ও ইসরাইল নামে ২টি দেশের কথা বলা হয়। এ প্রস্তাবের আলোকে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে জাতিসংঘ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলেও প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ সুযোগে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতায় মিশর, জর্ডান ও লেবাননসহ দূর্বল আরব দেশগুলোর ভূমি দখল অব্যাহত রাখে। ইসরাইলের অব্যাহত আরব ভূমি দখলের কারণে ১৯৬৭ সালে ৫জুন মিশর, জর্ডান ও সিরিয়ার সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ বেঁধে যায়। এ যুদ্ধের আগে ইসরাইল তার নির্ধারিত সীমান্ত অতিক্রম করে এবং পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। ১৯৭৯ সালে ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে সাক্ষরিত হয় ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি। এ চুক্তির মধ্যস্থতাকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ড্যাভিড সিটিতে স্বাক্ষরিত হওয়ায় এ চুক্তির নাম দেয়া হয় ক্যাম্প ড্যাভিড চুক্তি। এ চুক্তির মাধ্যমে মিশর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। মিশর হলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দানকারী ২য় মুসলিম ও ১ম আরব দেশ। ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার পর আরব লীগ থেকে মিশরকে বহিস্কার করা হয়। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরই দেশটিকে স্বীকৃতি দেয় ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরা জন্ম লগ্ন থেকে চরম হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দেশ ইন্ডিয়া। শুধু স্বীকৃতি নয়-তলে তলে দেশটির সাথে গভীর সুসম্পর্ক গড়ে তোলে ইন্ডিয়া। ইসরাইলের সাথে সামরিক, বৈজ্ঞানিক, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে গলায়-গলায় ভাব রয়েছে ইন্ডিয়ার। একদিকে ইসরাইলের সাথে গভীর সখ্যতা-অন্যদিকে প্যালেস্টাইনের প্রতি দরদী ভাবও (!) বজায় রেখেছে চরম হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দেশটি। অর্থাৎ গাছেরটা খাওয়া আবার তলারটা কুঁড়ানো (!)। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। 2014 সালের হিসাব অনুযায়ী ইন্ডিয়ায় 5,000 ইহুদি বসবাস করে। তারা ইন্ডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক-বেসামরিক পদে নিয়োজিত। জেএফআর জ্যাকব নামের একজন ইহুদী ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর জেনারেল ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন চক্রের আমলে এই জেএফআর জ্যাকব বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন এবং বাংলাদেশ কিভাবে চলবে সে ব্যাপারে নানা উপদেশ বাণী বিতরণ করে গেছেন। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে ইসরাইল বিষয়ক প্রপাগান্ডা জোরদার হয়ে উঠেছে। বিএনপি নাকি ইসরাইলের সহযোগিতা নিয়ে বর্তমান জনসমর্থনহীন ও অবৈধ সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। ঘটনার সূত্রপাত ইসরাইলকে স্বীকৃতিদাতা ও গভীর সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দেশ ইন্ডিয়া থেকেই। বিএনপি’র নব নির্বাচিত যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী নাকি ইন্ডিয়ায় গিয়ে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি’র প্রধান ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর কথিত এজেন্ট মেন্দি সাফাদী’র সাথে বৈঠক করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন। জানা যায়, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ব্যবসায়িক কাজে ইন্ডিয়া সফরে যান। সে সফরকালীন জনৈক শিপন বাবু তাকে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নয়াদিল্লী-তেল আবিব সম্পর্ক বিষয়ে একটি সেমিনারে নিয়ে যান। সে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি’র প্রধান ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর কথিত এজেন্ট মেন্দি সাফাদী। এ সেমিনারে মেন্দি সাফাদী ও আসলাম চৌধুরীর বেশ কিছু গ্রুপ ছবি তোলেন। এ সেমিনারের পরই বর্তমান সরকারের এক মন্ত্রীর মালিকানাধীন ও কট্টর সরকার সমর্থক এবং তাবেদার একটি সংবাদপত্রের ব্যানার হেডলাইনে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় যে, ”সরকার উৎখাতে এবার মোসাদ”। এ রিপোর্ট ও নয়াদিল্লীর কথিত সেমিনারের সূত্র ধরেই ১৫ মে, ২০১৬ইং তারিখে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করা হয়। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত রিমান্ড আদেশ মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে আসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “ফেসবুকের যোগাযোগের সূত্র ধরে দিল্লীতে শিপন বাবুর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। এরপর সে আমাকে ওই বৈঠকে নিয়ে যায়”। তিনি বলেন, “একটি ওপেন সেমিনারে কিভাবে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করা হয় সেটা আমার বোধগম্য নয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র”। আসলাম চৌধুরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মোসাদ-এর সাথে সরকার উৎখাতের তৎপরতার খবর ভিত্তিহীন ও কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই না। আমি ব্যবসায়িক কাজে ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম সেখানে শিপন বাবুর সাথে আমার পরিচয়। তিনি আমাকে একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। যেখানে তেল আবিব-নয়াদিল্লী সম্পর্ক নিয়ে একটি সেমিনার হচ্ছিল। ওই বৈঠকের পর একটি গ্রুপ ছবিতে আমি যোগ দেই। ওই ছবি দিয়ে যে রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে ভিত্তিহীন ভাবে আমাকে সরকার উৎখাতের ঘটনার সাথে জড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে সাক্ষাতের দুই মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাথে মোসাদ-এর কথিত এজেন্ট মেন্দি সাফাদীর বৈঠক হয়েছিল। ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাথে সাক্ষাতের কথাটি জানিয়েছেন, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি সাফাদী। ২৬ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। এ সাক্ষাৎকারে মেন্দি সাফাদী বলেন, বাংলাদেশের অনেক লোকের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে আমার যোগাযোগ রয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র আমন্ত্রণে যখন নয়াদিল্লী সফর করি তখনও বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আসলাম চৌধুরীর সাথে দেখা করেছি এটা সত্য। তবে তা কোনো বৈঠক ছিল না। ভারতীয় জনতা পার্টির আমন্ত্রণে আমি নয়াদিল্লী যাই, তখনই আসলাম চৌধুরীর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। মেন্দি সাফাদী বলেন, আসলাম চৌধুরীর সাথে সাক্ষাতের দুই মাস আগে ওয়াশিংটনে সজিব ওয়াজেদ জয় নামে বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। এ সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী টেলিভিশন পর্দায় শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের ছবি দেখিয়ে বলেন, ইনি কি সে ব্যক্তি? উত্তরে মেন্দি সাফাদী বলেন, হ্যাঁ, ইনিই সে ব্যক্তি। যার সাথে ওয়াশিংটনে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। মেন্দি সাফাদীকে প্রশ্ন করা হয় যে, সজিব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সেটা কি আপনি জানেন? জবাবে সাফাদী বলেন, আমি জানতাম তিনি বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। সাফাদী বলেন, তবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তা আমার জানা ছিল না। এটাতো কারো অজানা নেই যে, বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার সব অপকৌশল অবলম্বন করছে একমাত্র ইন্ডিয়া। কারণ এতে ইন্ডিয়ার বড় ধরণের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। ইন্ডিয়া এ সরকারের কাছ থেকে চট্টগ্রাম-মঙ্গলা সমুদ্র বন্দর ও আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার এবং ট্রান্সজিটের নামে পুরো বাংলাদেশকে করিডোর হিসাবে ব্যবহার করাসহ বাংলাদেশের চরম স্বার্থ বিরোধী আরো বেশ কিছু চুক্তি আদায় করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। অনেকে বলেন, ইসরাইল খুবই শক্তিশালী রাষ্ট্র। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ইহুদী লবি’র কারণেই অত্যন্ত ক্ষুদ্র দেশ হওয়া সত্বেও ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অবশ্য এর পিছনে মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাদের অদূরদর্শি রাজনীতিও কম দায়ী নয়। 1981 সালের 7 জুন ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে ইরাকের পরমাণু প্রকল্প সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। আগেই বলা হয়েছে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই দেশটির সাথে গভীর সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়া কি কখনো চায়বে-তার মাটিতে বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ ও ইন্ডিয়া বান্ধব সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র হোক? ইসরাইলই বা কেন বাংলাদেশের বর্তমান জনসমর্থনহীন ও অবৈধ সরকারকে উৎখাত করতে যাবে? ইসরাইল নিজেই একটি পুরোপুরি স্বীকৃত বা বৈধ রাষ্ট্র নয়। ইসরাইলের সাথে আঁতাত করে বিএনপি সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে-এধরণের প্রপাগান্ডা গাঁজাখুরি গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। সবাই জানে প্রচার-প্রপাগান্ডায় বিএনপি খুবই দূর্বল দল। দলটি’র বিরুদ্ধে ইসরাইল বিষয়ক প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ মদদে। যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রপাগান্ডার মাধ্যমে সরকার এক ঢিলে দুই পাশি শিকার করতে চাচ্ছে। ১। বিএনপি’র জনসমর্থনে ফাঁটল ধরানো। ২। মুসলিম দুনিয়ায় বিএনপি’র যে সুনাম ও ভাবমূর্তি রয়েছে সেটা নষ্ট করা। ইসরাইলের একজন রাজনৈতিক নেতা বা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর কথিত এজেন্ট মেন্দি সাফাদীর সাথে সাক্ষাৎ করা যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতা হয়-তাহলে হাসিনার ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত নয় কেন? প্রশ্নটি খুবই যুক্তিসঙ্গত। এক যাত্রায় দুই ফল হবে কেন? ইসরাইল বিষয়ক প্রচার-প্রপাগান্ডা নির্জলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যদিওবা অবৈধ সরকার তার তাবেদার ও দালাল মিডিয়াকে দিয়ে এ প্রপাগান্ডা ভালই জমিয়ে তুলেছিল। ডুবন্তরা খড়-কুটো পেলে তা আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়। বর্তমান অবৈধ সরকারের অবস্থাও হয়েছে সেরকম। সবাই জানে এ সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। কিন্তু একটার পর একটা ইস্যু তৈরী করে দেশের মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করাই সরকারের আসল ও একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্ত এতো অপকর্মের পরও কি সরকারের শেষ রক্ষা হবে? জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়, “সামনে আসছে শুভ দিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা; এবার শুধিতে হইবে ঋণ”।
সাইয়েদ ইকরাম শাফী
E-mail:
বিষয়: বিবিধ
১৫০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন