কুড়িগ্রাম ;এক পিছিয়ে পরা জনপদ।মিথ্যে আশ্বাস যখন এ জনপদের স্বপ্ন।
লিখেছেন লিখেছেন মোশারফ রিপন ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ০৯:০৬:৩০ রাত
দেশের সর্বাধিক দারিদ্র্য
পীড়িত জেলা কুড়িগ্রাম
(৬৫%)। এখান থেকে দেশের
অন্যত্র যাতায়াতের জন্য
বাসই একমাত্র ভরসা। বহুদিন
থেকে একটা আন্তঃনগর
ট্রেনের দাবি করছে
এখানকার মানুষ। সরকার
ভিক্ষা হিসেবে দিলো
একটা শাটল ট্রেন; যার বগি
মাত্র তিনটা! গতি গরুর
গাড়ির চেয়ে সামান্য
বেশি, মাঝেমাঝে ঘন্টায়
৯/১০ কিলোমিটারেও নেমে
আসে!
প্রায়ই সেটা আবার
মূল ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেসকে
মিস করে। মানে রংপুর
এক্সপ্রেস ওটাকে রেখেই
ঢাকা চলে আসে! তামাশা
আর বলে কাকে!
অথচ
দেশের সর্বাধিক শ্রমিক
যোগান দানকারী জেলা এই
কুড়িগ্রামই! বিশ্বাস না হলে
সকাল- সন্ধ্যা এই জেলার
বিভিন্ন বাসস্টপেজ গুলোতে
গিয়ে দেখেন কত হাজার
শ্রমিক প্রতিদিন ভিড়
করছে! চেয়ার কোচে চড়ার
সামর্থ্য নেই, সেমি চেয়ার
কোচের ছাদই অনেকের
ভরসা; গন্তব্য ঢাকা কিংবা
চট্টগ্রাম। এই অভাগারাই
শহুরে ভদ্রজনের কাছে
পরিচিত 'মফিজ' নামে।
সম্বলহীন- অভাবী মানুষের
সাথে কি নির্মম, নিষ্ঠুর
মস্করা!
ছোটবেলায় দেখেছি আমার
গ্রামের শ্রমিকরা এলাকায়
কাজ না থাকায় দলে দলে
শহরের দিকে পাড়ি
জমাচ্ছে। এখনো পরিস্থিতি
তেমনই। অধিকাংশ বাড়ি
পুরুষ শূন্য। গ্রামের ছোট ছোট
মুদি দোকান, চায়ের
দোকানও চলছে না,
কাস্টমার নাই। পরিবারের
কর্মক্ষম সদস্যরা রিকশা
চালাতে, রাজমিস্ত্রির
কাজ করতে, গার্মেন্টসে
চাকুরি করতে শহরে গেছে।
যাওয়ার ভাড়াটাও
অনেকের কাছে থাকে না।
কারো ভাড়া থাকলেও বউ-
বাচ্চার হাতে ভরণপোষণের
জন্য ৫০০টাকা দিয়ে
যাওয়ার সামর্থ্যও থাকে
না। স্থানীয় সুদখোর বা
এনজিওর কাছ থেকে চড়া
সুদে ঋণ নিয়ে অজানার
উদ্দেশ্যে রওনা হয়। শহরে
পৌছে যেনোতেনো একটা
কাজ জুটিয়ে হলেও বাড়িতে
কিস্তির টাকা পাঠাতে
হবে প্রথম সপ্তাহেই। পিছনে
ফেলে যায় অশ্রুসজল নয়নে
সন্তান কোলে বিদায়
জানাতে আসা কিশোরী বঁধূ,
বৃদ্ধা মাকে! বাড়ির পাশে
রাস্তায় দাঁড়িয়ে বহুবার
দেখেছি এই হৃদয় বিদারক
দৃশ্য!
বড় বড় শহরগুলোতে খোঁজ
নিয়ে দেখুন, কুড়িগ্রামের
শ্রমিক বেশি পাবেন যারা
একেবারে নিচু স্তরের
কাজগুলো করছে। ভুল বললাম,
করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ
ঋণের কিস্তি, জমি বর্গা
নিয়ে ধান লাগিয়েছে বউ-
সেখানে সার-নিড়ানি খরচ,
বাচ্চার স্কুলের খরচ, বোনের
বিয়ের যৌতুক জোগাড় করা,
বউয়ের চিকিৎসার খরচসহ
একবারে তার অনেক টাকার
দরকার। যে কারণে সব কাজই
তার কাছে বড় কাজ হয়ে
ওঠে! তাইতো তাজরীনে
আগুন লাগলে, রানা প্লাজা
ধসে পড়লে, কোথাও দুর্ঘটনা
ঘটলে কুড়িগ্রামের অভাগা
শ্রমিকরাই সংখ্যার
বিচারে থাকে প্রথম
স্থানে! এমন সস্তা শ্রমিক যে
জেলায়, সেখানে শিল্পায়ন
তো দূরের কথা, ছোট একটা
কারখানাও স্থাপিত হয়নি!
একমাত্র সরকারী টেক্সটাইল
মিলটিও বলতে গেলে অচল
হয়ে পড়ে আছে বহু বছর ধরে।
প্রত্যেক জেলার মত এখানেও
একটা শিল্পনগরী আছে,
বিসিক নামে। সেখানে দু-
একটি চাউল কল হওয়া ছাড়া
পুরোটাই ফাকা পড়ে আছে,
এটি এখন গরু-ছাগলের
চারণভূমি! সস্তা শ্রমের
ক্রেতা সেজে শিল্পপতি আর
তার দোসর রাষ্ট্র এই গরিব
"মফিজদের" পাঠিয়েছে
মৃত্যুর দুয়ারে!
নেতানেত্রীদের মুখে
প্রায়ই শুনি, উত্তরবঙ্গের
মঙ্গাকে নাকি জাদুঘরে
পাঠানো হয়েছে! কীভাবে?
এখানে স্থায়ী
কর্মসংস্থানের বদলে চলে
"কাজের বিনিময়ে খাদ্য
(কাবিখা), "টেস্ট রিলিফ
(টিআর) আর দশটাকা সেরের
চাউল দানের বাটপারি
কর্মসূচী। দুর্নীতি কত প্রকার
ও কী কী- তার সবকিছুই
এখানে দৃশ্যমান।
চুরিচামারি চলছে বহুবছর
ধরেই। আজ অব্দি শুনিনি
কেউ ধরা পড়েছে! একবিন্দুও
বাড়িয়ে বলছি না। আমার
বাবা আওয়ামী লীগের
স্থানীয় রাজনীতির সাথে
যুক্ত বহু বছর। এসব ত্রাণের
কার্ড, কম্বল বিতরণের
রাজনীতি খুব কাছে থেকেই
দেখেছি। সে এক তুঘলকি
কারবার! ওই গল্প আরেকদিন
করা যাবে।
এখন চলছে সাসটেইনেবল
ডেভেলপমেন্ট গোল বা
টেকসই উন্নয়নের কাল।
তাহলে এই ত্রাণ নির্ভর
কর্মকাণ্ডকে তবে কী নামে
ডাকা যেতে পারে? এটা
কীকরে টেকসই হয়?
কুড়িগ্রামের এক ভদ্রলোক
কিছুদিন আগে আক্ষেপ করে
বলেছিলেন, স্বাধীনতার পর
থেকে আজ অব্দি যে
পরিমাণ রিলিফ গিয়েছে
কুড়িগ্রামে, সেগুলো কয়েন
বানিয়ে ঢেলে দিলে
কুড়িগ্রাম শহর এক-দেড় ফুট উচু
হয়ে যেত! এভাবে ত্রাণ
বিলিয়ে এই অঞ্চলের বিপুল
সংখ্যক মানুষকে ত্রাণ
নির্ভর জাতিতে পরিণত
করা হয়েছে। সামান্য চার/
পাঁচকেজি চাউল বিতরণের
খবর পেলেই অনেকে কাজ
ফেলে দিনের পর দিন
ক্ষমতাসীন দলের নেতা/
ইউপি মেম্বারের পিছু পিছু
ঘোরে। অনেকে টাকা ঘুষ
দিয়েও এসব ত্রাণের লিস্টে
নিজের নাম লিপিবদ্ধ করে।
ভাবতে পারেন কোন
পর্যায়ের আত্নসম্মান
বিবর্জিত অলসে পরিণত
হয়েছে এরা?
আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি,
এভাবে মঙ্গা দূরীকরণ সম্ভব
নয়। সরকার যেটা বলছে
সেটা নিছক রাজনৈতিক
বয়ান, স্পষ্ট মিথ্যাচার!
বিষয়: বিবিধ
১০২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন