বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:২৩:২৫ বিকাল
ইসলাম মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র সত্য জীবন বিধান। পৃথিবীর প্রথম মানুষ,প্রথম মুসলিম ও প্রথম নবী হিসাবে মহান আল্লাহ হযরত আদম আ.কে অহী জ্ঞান দিয়ে মানব জাতির হেদায়াতের উদ্দেশ্যে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন। আদি পিতা হযরত আদম আ. আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের যে নূর (আলো)বহন করে প্রথমিকভাবে তার ঔরসজাত সন্তানদেরকে হেদায়াতের পথ প্রদর্শন করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় লক্ষ লক্ষ পয়গম্বর আ. যুগে যুগে এ ধরাতলে প্রেরিত হয়ে তারই আলোর মশাল প্রজ্বলিত করেছিলেন। এ অনুপম আদর্শের পথ ধরে হযরত আদম আ. এর সন্তানদের মধ্যে থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসাবে হযরত মুহাম্মদ সা. এর আগমন এক বিশেষ মর্যাদা ও আবহে সিক্ত ছিল এটা নির্দ্ধিধায় বলা যায়। কেননা নবীজির ছ. উপর নাজিল করা হলো সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন। এই কুরআনই মানব জাতির হেদায়াতের একমাত্র পথ প্রদর্শক।
মানুষের সার্বিক জীবনের সকল প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এই কুরআনে লিপিবদ্ধ রয়েছে আর মানব সন্তানেরা যদি তাদের জীবনের সকল প্রয়োজনীয় কাজে ও কর্মে এই কুরআনকে আঁকড়ে ধরে তাহলে তারা সত্য পথ থেকে কখনও বিচ্যুৎ হবেনা। রাসুল ছ. তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, “ আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি যা অনুসরন করলে তোমাদের কখনও পতন হবেনা আর তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব তথা আল কুরআন আর অন্যটি হলো আমার সুন্নাত”।
এমতাবস্থায় আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, বর্তমান পৃথিবীর পাপ পংকিল সমাজ ব্যবস্থায় নবী করিম ছ. এর দেখানো পথ যদি মানবজাতি অনুসরণ করে তাহলে তাদের অধঃপতন কখনও হবেনা। বর্তমান পৃথিবী একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। মানুষ বৈষয়িক দিক থেকে অনেক দূর এগিয়েছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানবজাতি আকাশ অন্তরীক্ষের সীমানা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, তারা আদর্শ নির্বাচনে অনবরত ভুল করে চলেছে। অর্থাৎ অহী জ্ঞান বাদ দিয়ে মানব রচিত মতবাদ অনুসরণ করতে গিয়ে গোঁজামিলের আশ্রয় নিচ্ছে ও হেদায়াতের পথ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছএহেন অবস্থায় বিশ্ব শান্তি সুদূর পরাহত। উপরন্তু মানুষের অধিকার হরণ চলছে বিশ্বব্যাপী। এক শ্রেণীর মানুষ বিশেষ করে মুসলমানেরা ধর্মীয় কারণে দূর্বলরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আর এভাবে লংঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। উল্লেখ্য হানাহানি, অশান্তি ও বিবাদে জর্জরিত আরব জাতিকে আল্লাহর রাসুল ছ. শান্তির ললিত বাণী শোনালেন আর মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্ধেষের পরিবর্তে ভালবাসার জয়গান গাইলেন। তিনি বাস্তবে একটি শান্তিময় ও প্রকৃত মানবাধিকার সম্পন্ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মদিনায় স্থায়ী শান্তি কায়েম করলেন।
আল্লাহর রাসুল ছ. মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্বকে উৎখাত করলেন এবং এক মহামহিম স্রষ্টার অনুগত বান্দাহ হিসেবে তারই একক দাসত্বের নিগঢ়ে আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। তিনি বললেন কালো-ধলো কিংবা আরব-অনারবে কোন পার্থক্য নেই, পার্থক্য সূচিত হবে খোদাভীতির মাধ্যমে। মহান আল্লাহ কর্তৃক নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ ছ. এর প্রেরণের মুখ্য উদ্দেশ্যই ছিল বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক আল্লাহর গোলাম হিসাবে মানবমণ্ডলীকে দুনিয়া ও পরকালে নাজাতের জন্য প্রস্তুত করা। রাসুল ছ. কে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন-সূরা- ৭,আয়াত- ২৩ “ তোমার প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবেনা এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি সদয় হও। তাদের মধ্য থেকে একজন অথবা দুইজনই যদি বৃদ্ধ হয়ে যায় তাদের সাথে উহ শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করবেনা এবং তাদের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করো। তাদের সাথে সদয় ব্যবহার করো এবং বলো, হে আমাদের দয়াময় প্রভু তাদের প্রতি রহম কর, যে রকম ছোট বেলায় তারা আমাদের প্রতি রহম করেছিল”। মহানবী ছ. আরবের একটি ভয়ঙ্কর, রূঢ় ও জাহেলী সমাজে মানুষের সাথে ভাল ব্যবহারের তালিম দিলেন ও কৃতকার্য হলেন।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গি :
বস্তুত মানবাধিকার বিষয়ে পাশ্চাত্য ও ইসলামের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্যণীয়। সকল ভাল কাজে তারাই অগ্রগামী এ রকম মনোভাব পাশ্চাত্য জগতে বিদ্যমান। অথবা তারাই শুধু উপযুক্ত এবং নিজেদের মধ্যে সকল সুবিধাগুলো ভাগাভাগি কওে নেয়াই উত্তম এ রকম প্রবণতা অসততার শামিল। তারা মনে করে পনের শতকের ম্যাগনাকাটা হলো মানবাধিকারের মহা সনদ। অথচ এই ম্যাগনাকাটা ইসলামের ছয় শত বছর পর তৈরী হলো। আরো কি এখানে পূর্ণাঙ্গ কোন নীতিমালা লক্ষ্য করা যায় না। মূলত পাশ্চাত্য ১৭শত শতাব্দীর আগে মানবাধিকার বিষয়ে কিছুই জানতো না। বর্তমানে কোন কিছু তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে আমেরিকার নেতৃত্বে পাশ্চাত্য জগৎ এক জোট হয়ে চিৎকার করতে থাকে। অসততা এখন তাদের অলংকার। তাদের নিকট মানবাধিকার হলো বিচার মানি তবে তাল গাছটা আমার প্রবাদের অনুরূপ। কেননা তারা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে স্বৈরশাসকদের অস্ত্র দিয়ে নৈতিক সাপোর্ট দিয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সেসব দেশের জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন করছে আবার মুখে মুখে বলছে মানবাধিকারের কথা। তারা ও তদেও দোসররা ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়া ও ইরাক, আফগানিস্তান,পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লংঘন করছে ও এমন কি এ নিয়ে টু শব্দটি করেনা। তারা মানবাধিকার লংঘন করে নিজেরাই আর অন্যদেরকে নির্লজ্জের মত মানবাধিকারের সবক শিখায়। বলতে গেলে চোরের মার বড় গলার ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকা।
এভাবে পাশ্চাত্য জগৎ ভণ্ডামির আশ্রয় নিয়ে বিশ্ববাসীকে ধোকা দিচ্ছে ও বিশ্ব সভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বলেঅভিযোগ রয়েছে। অপর পক্ষে ইসলাম আল্ল¬াহ প্রদত্ত সকল অধিকারকে মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। এখানে মৌলিক মানবাধিকার বিষয় যেমন রয়েছে তেমনি খোদাভীতির মাধ্যমে সত্য পন্থা নির্ধারণে সততার গুরুত্বের কথাও বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন “আল্লাহর বিধান অনুসারে যারা বিচার ফায়সালা করেনা তারা কাফির, তারা জালিম ও তারা ফাসিক”। (সুরা-৫,আয়াত-৪৪-৪৫-৪৭)। অর্থাৎ মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব খাটানোর কোন অধিকার নেই, বরং তিনিই তাদের সৃষ্টিকর্তা তারই বিধিবিধান প্রয়োগের মাধ্যমে মানব কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে। মোদ্দাকথা আল¬াহ প্রদত্ত সকল অধিকার চিরন্তন, স্থায়ী ও শাশ্বত। এ সমস্ত বিধান অপরিবর্তনীয় ও অলংঘনীয় আর এ বিধিবিধান অনুসরণের মাধ্যমেই মানব কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে।
ইসলামে বর্ণ বৈষম্য নিষিদ্ধ :
কুরআন বলে “হে মানব সন্তান আমরা তোমাদেরকে একটি পুরুষ ও একটি নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা এক অপরকে জানতে পারে। বড় কথা হলো যে ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের সেই আমার কাছে বড় ধার্মিক”। (সুরা-৪৯,আয়াত-১৩) ইসলাম সম্পদের অসমতা অথবা জাতীয়তার কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে। মানুষকে আল্লাহ সমান মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তবে পরবর্তীতে তার বিশ্বাস ও স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যের উপর নির্ভর করে তাদের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হবে। অথচ বর্তমান বিশ্বে বর্ণ বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে এবং তা সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে বিশ্ব মানবতাকে আড়ষ্ট করে ফেলেছে। পাশ্চাত্য বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে এমনকি আকাশ মণ্ডলে পাড়ি জমাচ্ছে অথচ পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি বুভুক্ষ মানুষের জন্য তারা কিছুই করছেনা বরং সারা দুনিয়ায় যুদ্ধ বিগ্রহ লাগিয়ে তারা ফায়দা লুটছে বলেও অভিযোগ আছ্ েঅথচ ইসলামের নবী সকল রকমের বর্ণ বৈষম্যবাদ, দাস প্রথা বিলুপ্ত করে একটি চমৎকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদাহরণ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে গেছেন।
ইসলাম ন্যায় বিচারের শিক্ষা দেয় :
সুরা- ৪, আয়াত-৫৮ “আল্লাহ তোমাদেরকে ন্যায় বিচারের জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন,তোমরা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বিচার করবে”। অতঃপর সুরা- ৪৯ আয়াত-৯ এ বলা হয়েছে “ তোমরা ন্যায় বিচার করবে আর আল্লাহ ন্যায় বিচারকদের ভালবাসেন”। অতঃপর সুরা- ৫ আয়াত-৮ এ বলা হলো “ন্যায় বিচার করা ধার্মিকতার নিকটবর্তী”। রাসুল (সা.) বলেন “ওহে মানব সমাজ অন্যায় বিচার থেকে সতর্ক থেকো কেননা অবিচারের জন্য কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে অভিযুক্ত হবে”।
বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয় :
মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে বড় অধিকার হলো বেঁচে থাকার অধিকার ও মানব জীবনের প্রতি সম্মান বোধ। আল্লাহ বলেন “যদি কোন মানুষকে বিনা কারণে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় সে যেন পুরো মানব জাতিকে হত্যা করলো” সুরা- ৫,আয়াত-৩২। কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে “কোন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করোনা”। (সুরা-৬,আয়াত-১৫১)।
জীবনের নিরাপত্তা বিধান :
পাক কুরআন বলছে “যে বা যারা একটি মানুষের জীবন রক্ষা করলো সে যেন পুরো মানব জাতিকে রক্ষা করলো”। সুরা- ৫,আয়াত-৩২। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তাছাড়া বর্ণ-বৈষম্যের কারণে বা দারিদ,অশিক্ষা কিংবা অসুস্থতার কারণে অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ইসলাম গ্রহণযোগ্য মনে করেনা, বরং সমাজপতি ও রাষ্ট্রকে এ জন্য দায়ী বলে মনে করে, যেহেতু তাদের দায়িত্বের মধ্যে এসব বিষয় অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। সুতরাং সুষ্টু ও নিরাপদ জীবন যাপনের সকল অধিকার প্রতিটি মানুষের জন্য জন্মগত অধিকার হিসাবে ইসলামে স্বীকৃতি পেয়েছে। বরং এসব বিষয়কে অগ্রাধিকারযোগ্য বিষয় হিসেবে পরিচিহ্নিত করেছে।
দরিদ্র-অভাবীদের ধনীদের সম্পদে অধিকার :
ইসলাম যাকাত প্রথার মাধ্যমে গরীবের উপর ধনীদের দায়িত্বকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। যাকাত গরীবদের উপর অনুকম্পা নয় বরং খোদা প্রদত্ত অধিকার। আল্লাহ বলেন ‘তাদের ধন সম্পদে গরীব ও অভাবীদের হক তথা অধিকার রয়েছে। (সুরা-৫১,আয়াত-১৯)।
বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা :
প্রত্যেকটি মানুষরেই ধর্ম পছন্দ ও কথা বলার অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। ইসলাম কোন মানুষকে বেচাকেনা কিংবা তার অধিকার খর্ব করার মত কোন গর্হিত কাজের অনুমতি দেয়নি। আল্লাহ বলেন “ তারা ন্যায়কে গ্রহন করে ও অন্যায়কে বর্জন করে”। (সুরা- ৯,আয়াত-৭১)
সকল মানুষের সমান অধিকার :
নবী করিম ছ. বলেন “কোন আরবের উপর অনারবের আধিপত্য নেই, অথবা কোন অনারবের উপর আরবের কোন আধিপত্য নেই, অথবা সাদার উপর কালো অথবা কালোর উপর সাদার, তোমরা সকলে আদমের সন্তান, আর আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে”। রাসুল সা. বলেন“ প্রকৃত মুসলমান সেই যার জিহবা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ”। অর্থাৎ মানুষের উপর মানুষের প্রভূত্বকে উৎখাত করে এক আল্লাহর নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য।
সম্মান রক্ষার গ্যারান্টি :
আল্লাহ বলেন“ হে বিশ্বাসীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে ঠাট্টা বিদ্রুপ করোনা, একে অন্যের বিরুদ্ধে বদনামী করোনা এবং একে অন্যের বিরূদ্ধে খারাপ ব্যবহার করোনা, অসম্মান করোনা, একে অন্যের বিরুদ্ধে গীবত করো না”।( সুরা-৪৯,আয়াত-১১,১২)।
জীবন ও সম্পদ রক্ষার অঙ্গীকার :
আল্লাহ বলেন “যে কেউ একজন বিশ্বাসী লোককে বিনা কারণে হত্যা করে হত্যাকারী চিরকাল দোযখে থাকবে”। সুরা- ৪,আয়াত-৯৩। অল্লাহর রাসুল ছ. বলেন “ইসলামী রাষ্ট্রে একজন অমুসলিমকে বিনা বিচারে কেউ হত্যা করলে সে জান্নাতের ঘ্রানও পাবেনা”। বুখারী, আবু দাউদ। আল্লাহতায়ালা অন্যের সম্পদকে অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন তিনি বলেন “তোমরা একে অন্যের সম্পদকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্যায়ভাবে গ্রাস করোনা”। সুরা-২,আয়াত-১৮৮। তাছাড়া ইসলাম সংগঠন করার অধিকার, বিবেকের ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা, ধর্ম অনুসরণের অধিকার, জীবনের সকল মৌলিক অধিকার পাওয়ার অধিকার, আইনের চোখে সকলের সমান অধিকার, কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়, পাপ থেকে বাঁচার অধিকার, অন্যায় কাজের প্রতিরোধের অধিকার নিশ্চিত করেছে। এমনকি শত্র“কেও বিনা ওজরে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবেনা , যুদ্ধে শিশু ও নারী ,অসুস্থ ও আহতদের নিরাপত্তার বিধান রয়েছে , এমন কি শত্র“র সম্পদও ধ্বংস না করার অঙ্গীকার করা হয়েছে, কোন ভাবেই স্বেচ্ছায় চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে না,বিরোধীদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার ও রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহনের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
ইসলামে নারীর অধিকার :
ইসলাম নারীদের নান্দনিক ও অত্যন্ত উচ্চ মার্গের অধিকার নিশ্চিত করেছে। স্বামী পছন্দের ও তালাক দেয়া নেয়ার অধিকার রয়েছে তাদের। স্বাধীনভাবে কাজ কর্ম ও বিচরণের অধিকারও স্বীকৃত হয়েছে। ধর্ম পরিবর্তন ও গ্রহনের ও ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলার স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। আল্লাহ বলেন, ধর্মে কোন জোর জবরদস্তি নেই। নারীর স্বামীর সম্পত্তি, পিতার সম্পত্তি, মোহরানা ও খোরপোশের অধিকার রয়েছে। ইসলামী সমাজ তাদের ইজ্জত আব্র“র গ্যারান্টি সমাজ দিতে বাধ্য। মেয়েদেরকে ভোগ্যপণ্যের মত ব্যবহারের প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দুরভিসন্ধি ইসলাম গ্রাহ্য নয়। বরং নারীরা সমাজের সম্মানিত সদস্যা। তাদেরকে যৌতুকের অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে ইসলামের বিধান মানতে হবে।
প্রতিবেশীদের হক:
কুরআনের সুরা -৪, আয়াত-৩৬ এ আল্ল¬াহ বলেন“তোমাদের প্রতিবেশী আত্মীয় হোক কিংবা অনাত্মীয় তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করো”। ইসলাম মানুষের পারস্পরিক অধিকারকে সম্মানের চোখে দেখে থাকে। আল্ল¬াহর রাসুল ছ. বলেন “যদিও প্রতিবেশী পরিবারের অন্তুর্ভূক্ত না হয় তারপরও আল্লাহ তাদের প্রতি উদার ও সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন”( মুসলিম) তিনি আরও বলেন “তুমি পেট ভরে খেলে আর তোমার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলো, তুমি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নও”। তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের তোমাদের উপর তিন রকমের হক রয়েছে (১) যিনি মুসলিম ও আত্মীয় তার তিনটি হক। (২) অমুসলিম প্রতিবেশী ও অনাত্মীয় মুসলিম প্রতিবেশীর দুটি হক। ৩) যে প্রতিবেশী মুসলিমও নয় আত্মীয়ও নয় এদের ১টি হক রয়েছে। তিনি অভাবী প্রতিবেশীদের হক নিশ্চিত করতে বলেছেন।
এবার বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোকপাত করা হলো:
ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ পূর্নাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃত সত্য :
বস্তুবাদিতা নয় বরং জীবনের প্রয়োজনে স্রস্টার ইবাদতের নিমিত্তে যতটুকু সম্পদ দরকার ততটুকু ভোগ এবং ব্যবহার করা ইসলামে বৈধ। এই জীবনের পরও একটি জীবন আছে যেখানে দুনিয়ার জীবনের সকল ভাল মন্দের নিশ্চিত বিচার হবে, এই বিশ্বাস থেকেই ইসলামের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিফলিত হয়েছে। হাদিস শরীফে আছে “প্রকৃত অভাব মুক্তি হচ্ছে মনের অভাব মুক্তি”। অথচ মানুষ লাগামহীন, বেপরোয়া ও উশৃংখল জীবন যাপনের মাধ্যমে সমাজে যতসব অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে এটা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে।
বর্তমান বিশ্বে দ্বান্ধিকতা বিরাজ করছে :
দু ’দুটি বিশ্ব যুদ্ধের নায়ক ছিল পাশ্চাত্য শক্তি। তারা পৃথিবীকে করায়ত্ব করার চেতনায় বিভোর হয়ে সারা বিশ্বে অশান্তি জিঁইয়ে রেখেছে। নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার দুরভিসন্ধি থেকে যত সব সংঘাতের সৃষ্টি করছে তারা। ইসলামের দৃষ্টিভংগি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মানুষ আল্লাহর গোলাম আর গোলামের চিন্তা চেতনা সেই আল্লাহ প্রদত্ত বিধি বিধানের নিরিখে পরিচালিত হবে এটাই চান তিনি। সুতরাং শাসক গোষ্ঠি আল্লাহর বিধি বিধানের আলোকে মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে ও শান্তির বানী শোনাবে সর্বত্র এটি আসল কথা। তার ব্যত্যয় স্রষ্টার নিকট গ্রহণযোগ্য হবেনা এটাই বাস্তবতা। ইসলাম সকল সংঘাতের মূল কারণ হিসাবে মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্বকে দায়ী করেছে। সুতরাং ইসলাম শুধু সমাধানের কথা বলেনি তার প্রয়োগের কথাও ব্যাখ্যা করেছে । যেমন: ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমে স্রষ্টার আনুগত্যেও বিষয়টিকে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করেছে।
জীবন ব্যবস্থার এককত্ব নিশ্চিতকরণ :
সকল নবীই আল্লাহর বার্তাবাহক ও সে সব বার্তা মানবজাতির জন্য একমাত্র অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ ছ. চুড়ান্ত ও সর্বশেষ নবী এবং তিনি অহীর বাণী নিয়ে মানবজাতির নিকট হাজির হলেন। মানুষের মাঝে বৈরিতার পরিবর্তে একতার আহবান জানালেন। আল্লাহ বলেন” যদি তারা তুমি যা বিশ্বাস করো তাই করে থাকে তাহলে তারা সঠিক পথে আছে। তবে তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে ভুল পথে ধাবিত হবে, সুতরাং আল্লাহ সব কিছু জানেন।”(সুরা-২,আয়াত-১৩৭)।
আল্লাহর বাণীর শ্রেষ্ঠত্ব :
নবী করিম (সা.) নির্দ্দিষ্ট কোন জাতি, অঞ্চল কিংবা গোষ্টির জন্য প্রেরিত হননি । বরং তিনি ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত স্বরুপ। সুরা- ২৫, আয়াত-১ “কতো মহান তিনি যিনি তার বান্দার উপর সত্য মিথ্যার পরখকারী হিসাবে ফোরকান নাজিল করেছেন,যাতে করে সে সৃষ্টি কুলের সতর্ককারী হতে পারে”। অতপর সুরা-৩৪,আয়াত-২৮ এ বলা হয়েছে ”হে নবী আমি তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি”। অতপর সুরা- ৭,আয়াত-১৫৮ এ বলা হলো“ কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব যাকে অনুসরণ করা সকল মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক”।
চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন :
চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রেও মুসলিম যোদ্ধারা আইন ভঙ্গ করতে পারবেনা। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে শান্তি চুক্তি অথবা মৈত্রী চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে তবে সে সব চুক্তির শর্ত মান্য করে চলা মুসলিম শাসকদের জন্য বাধ্যতামূলক। রাসুল ছ. মুসলিম যোদ্ধাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে বিশ্বাস ভঙ্গ না করার নির্দেশ দিয়েছেন। হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি বিরুদ্ধবাদীরা ভঙ্গ করলেও নবী করিম ছ. তা মেনে চলেন অক্ষরে অক্ষরে।
যুদ্ধ ঘোষনার নীতিমালা :
আল্লাহতায়ালা বলেন “যদি কখনও কোন জাতির কাছ থেকে তোমার এ আশংকা হয় যে তারা চুক্তি ভঙ্গ করবে তাহলে তুমিও সে চুক্তি তাদের উপর ছুঁড়ে দাও। তবে নিজে আগে চুক্তি লংঘন করোনা।” অর্থাৎ যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষেত্রেও একটি ন্যায় নীতি ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার জন্য আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধ ঘোষণার আগে সে বিষয়ে শত্র“কে অভিহিত করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান যুগে শক্তিমান রাষ্ট্রগুলো দুর্বল ও অসহায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ধ্বংসলীলা ঘটাচ্ছে। আফগানিস্তান, কুয়েত, ইরাক ও লিবিয়া আক্রমন কি তার নমুনা বহন করেনা?
ক্ষমা ভালবাসা দয়া ও পরোপকারের নিশ্চয়তা :
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ভাল কাজের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। “আল্লাহ ভাল কাজের আদেশ ও খারাপ কাজ বর্জন করার কথাও বলেছেন”। তিনি আরো বলেন“মুসলিম জাতিকে কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে”। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন-“সৃষ্টের উপর সদয় হও। তাহলে আল্লাহতায়ালাও তোমাদের উপর সদয় হবেন”।
বিশ্বমানবতা বোধের সৃষ্টি :
সারা বিশ্বে মানবকুল এক আল্লাহর সৃষ্টি ও এক আদমের সন্তান। সে হিসাবে সকল মানুষ পরস্পরের ভাই ভাই ও আত্মীয়। সুতরাং বিশ্ব মানবতার কল্যাণ সাধন ও তার মাধ্যমে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। জাতি , ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সকলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবে এটাই ইসলামের শিক্ষা।
ইসলাম তরবারী দ্বারা নয় বরং তার অন্তর্নিহিত সত্য-সৌন্দর্যের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে :
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে এ সত্য দিবালোকের মত স্পষ্ট হবে যে, ইসলাম সকল নবীদের ধর্ম ও মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র অনুকরণীয় জীবনাদর্শ, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য উপহার হিসাবে দান করেছেন। ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য্যে অভিভূত হয়ে নবী করিম ছ. এর সময় ও তৎপরবর্তী সময়ে এমনকি বর্তমান যুগেও দলে দলে দিক হারা মানব সন্তান ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। ইসলাম বিরোধীরা বলে থাকেন এসলাম তরবারীর জোরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর ছেয়ে ডাহা মিথ্যা আর কি হতে পারে? কেন না আজকের ইউরোপ আমেরিকায় কোন রাজা বাদশাহ তরবারী দিয়ে ইসলাম প্রচার করছে যার ফলে হাজার হাজার আধুনিক মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে ? ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র, সে ইন্দোনেশিয়ায় কে বা কারা তরবারী নিয়ে যুদ্ধ করে কোটি কোটি মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিল জানতে ইচ্ছে করে না ? এভাবে সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, এত অপপ্রচারের পরও বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে সম্প্রসারণশীল তথা বর্ধিষ্ণু ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। এক সমীক্ষায় আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে রূপান্তর হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই মুসলমানেরা প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্টিতে পরিণত হয়েছে। এসব আশাব্যন্জক খবর নয় কি? বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রচার বৃদ্ধি পেয়েছে। মহানবী ছ. নবীগনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী হিসাবে আল্লাহ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছেন এবং এ সময় তাঁর আনীত জীবন ব্যবস্থা মানব জাতির জন্য একমাত্র নির্ভুল জীবন বিধান হিসাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন “আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম,দ্বীন হিসাবে ইসলামকে মনোনিত করলাম ”।
উপরের আলোচনা থেকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দৃষ্ঠিভঙ্গি সুন্দরভাবে বিধৃত হয়েছে। আর তার প্রাণ পুরুষ মহানবী ছ. হলেন এসব কিছুর পুরুধা। উপরন্তু— মানবাধিকার ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের বিধিবিধান সঠিকভাবে কার্যকর করা গেলে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে এটা জোর দিয়ে বলা যায়। এ প্রসংগে জর্জ বার্নাডশ এর একটি উক্তি প্রনিধানযোগ্য,তিনি বলেন ”যদি মুহাম্মদ ছ. এর মত কোন মানুষ এ যুগে এ সময়ে পৃথিবীতে আর্বিভূত হোন এবং পৃথিবীর নেতৃত্ব গ্রহন করেন আর তাঁর আনিত জীবনাদর্শ দিয়ে পৃথিবীকে শাসন করেন তাহলেই কেবল পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপন সম্ভব হবে”।
বিষয়: বিবিধ
৪২৪৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন