সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের কবলে মুসলিম উম্মাহ/// এম ওসমান গনি
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ০৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ০১:৫৩:২৫ দুপুর
পাক কুরআন সদর্পে ঘোষণা করছে, “আল্লাহ তাআলার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম”। পাক কুরআন আরও বলছে “সত্য সমাগত মিথ্যা হোক অপসৃত, বস্তুতঃ মিথ্যা অপসৃত হবেই”। কুরআনের এ অমোঘ বাণীর অনুরণনে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি ইসলামই হচ্ছে আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে মানব জাতির জন্য অনুসরণীয় একমাত্র সত্য, গ্রহণযোগ্য জীবন বিধান। এ দ্বীনের সত্যতা অন্যান্য ধর্মের মূল ধর্মীয় গ্রন্থেও জোরালোভাবে উল্লেখ আছে। এ বিষয়টি বিরুদ্ধবাদীরা ইসলামের সত্যতার প্রমাণ হিসাবে কেন মেনে নেবে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা কি তাদের অদর্শিক দেওলিয়াত্বের নমুনা নয়? অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি আমার রাসুলকে প্রেরণ করেছি হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে যাতে করে অন্যান্য সকল দ্বীন তথা মতাদর্শের উপর এটিকে বিজয়ী করতে পারে। কিন্তু তা অবিশ্বাসী ও অংশীবাদীদের যতই অপছন্দ হোক না কেন”। এ আয়াতের মাধ্যমে হকপন্থী নেতৃত্বের তথা নবীর অনুসৃত নীতির অনুসরণের কথাই বলা হয়েছে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, এই সত্য দ্বীন শুধু নবী ছ. একা প্রচার করেন নি। মহান স্রষ্টার তরফ থেকে পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও নবী হযরত আদম আ. এঁর মাধ্যমে যে অহী জ্ঞানের শুভ যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা যুগে যুগে ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গাম্বর আ. এর মাধ্যমে সারা দুনিয়ায় প্রচার-প্রসার লাভ করে। পাক কুরআনে চারটি বড় কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর সেগুলো হলো তাওরাত,যবুর,ইঞ্জিল ও কুরআন। তাওরাত হযরত মুসা আ. এর উপর,যবুর হযরত দাউদ আ. এর উপর,ইঞ্জিল হযরত ঈসা আ. এর উপর এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা ছ. এর উপর নাযিল হয় সর্বশেষ ও চুড়ান্ত আসমানী কিতাব আল কুরআন বা ফোরকান। কুরআনের অপর নাম ফোরকান আর ফোরকান শব্দের অর্থ হলো সত্য-মিথ্যার পরখকারী। এভাবে প্রায় চৌদ্দ শত বছর পূর্বে নবী করিম ছ.এর উপর আল্লাহর এ কুরআন অবতীর্ণের মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম ষোলকলায় পূর্ণতা লাভ করে। অতএব নবী করীম ছ. এর পর পৃথিবীতে আর কোনো নবী আসবেন না। এটি মহান সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে দৃপ্ত ঘোষণা। এ বিষয়টি মানব জাতিকে স্মরণ রাখতে হবে। নতুবা তারা ভুল পথে পরিচালিত হবে ও এভাবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য,সেটি সময়ের ব্যাপর মাত্র।
নবী করিম ছ.এর উপর প্রত্যাদেশকৃত বাণী তথা জীবনবিধান যে সর্বশেষ আসমানী কিতাব সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন “আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমার উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং দ্বীন হিসাবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম”। নবীর অবর্তমানে এ সত্য দ্বীনের নিশানবরদার হিসাবে বর্তমানে সারা বিশ্বে হকপন্থী ইসলামী পন্ডিত ও তার অনুসারীরা দ্বীনের এ মশাল জ্বালিয়ে রাখার প্রয়াস ও দ্বীনের পতাকাকে উড্ডীন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব কথা হলো ইসলাম বিরোধী অগণতান্ত্রিক, অশুভ শক্তি, কুরআনের পরিভাষায় তাগুতী শক্তির তা মোটেও সহ্য হয় না। এ জন্যই তারা বসে নেই, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও কলা কৌশলের মাধ্যমে ইসলামের রওনক-সৌন্দর্যকে চাপা দিয়ে কিম্বা নি®প্রভ করতে এরা সদা তৎপর। এমন কি ইসলামকে অন্যায়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সারা দুনিয়ার সকল অপশক্তিকে এক সাথ করে দূর্দান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও সালমান রুশদী, কখনও তসলিমা নাসরিন কিম্বা অভিশপ্ত আমেরিকান ইহুদী চলচিত্রকার নকুলা বা অন্যান্য অভিশপ্তদের দিয়ে কার্টুন ছাপিয়ে, প্রতিবেদন লিখিয়ে আল্লাহর কুরআন ও আমাদের মহানবীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বার বার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
র্দূভাগ্যরে বিষয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন ডেনমার্ক, ইতালী,ফ্রান্স,জার্মানীতে বাক স্বাধীনতার নামে ইসলামের মৌলিক বিধানের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমন অব্যাহত রয়েছে। এটা কি ধরণের বাক স্বাধীনতা আমাদের বোধগম্য নয়। ওরা আলোচনায় বসতে নারাজ। অথচ তাদের ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে কিছু লিখলে বা বললে তারা তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলত বা যুদ্ধ লাগিয়ে দিত। তারা কি দেখে না ইসলাম সত্য ধর্ম হওয়ার কারণেই এত অপপ্রচারের পরও পৃথিবীতে সব ছেয়ে বেশী বর্ধিষ্ণু ধর্ম। ৯/১১ এর পর শুধু আমেরিকাতেই পঞ্চাশ হাজার আধুনিক শিক্ষিত মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। অবাক কণ্ড হলো বিদ্ধেষীরা বিগত দুশ বছরে ইসলাম ও তার নবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট বিষয়ের উপর ষাট থেকে সত্তর হাজারেরও বেশী বই ছাপিয়ে কুৎসা রটাতেও নির্লজ্জের মত এরা পিছপা হয় নি যা কোনোক্রমেই সহ্য করার মত নয়। আল্লাহর রাসূল ছ. বলেন, “মিল্লাতু কুফরুন ওয়াহিদা”। অর্থাৎ সকল কুফরি শক্তি এক ও তাদের চেতনা অভিন্ন। ইসলাম বিরোধীরা অযৌক্তিকভাবে আল্লাহ তাআলার চিরন্তন আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। আসলে কি তা অদৌ সম্ভব? ওরা যদি প্রকৃত অর্থে এক স্রষ্টায় বিশ্বাস করে,পরকালের শাস্তি ও পুরস্কারে আস্থা রাখে তাহলে তাদের আচর-আচরণে পরিবর্তন আসা উচিৎ। নতুবা তাদের ব্যবহার ও তাদের চরিত্র বিশ্ববাসীর সামনে নিরেট ভণ্ডামি হিসাবে পরিচিহ্নিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া স্রষ্টার তরফ থেকে এ ভণ্ডামীর শাস্তি তো পরকালে মওজুদ আছেই যা আসমানী কিতাব সমুহে বিধৃত হয়েছে। কেননা হকপন্থী মুসলমানেরা যা কিছু করছে তা সর্বশেষ ও চুড়ান্ত আসমানি কিতাব আল কুরআন প্রদত্ত বক্তব্যেরই অনুস্মরণ কিম্বা প্রতিদ্বনি যার মর্মবাণি থেকে খাটি মুসলমানেরা এক চুল পরিমাণও সরে আসতে নারাজ। এখানে কোনো গোজামিলের আশ্রয় অকল্পনীয়। এটি ইসলাম বিরোধীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তাহলেই কেবল মুসলমান সম্পর্কে তারা সঠিক ধারণা পোষণ করতে সক্ষম হবে।
আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে লক্ষ্য করছি যে, দুনিয়া জুড়ে মুসলমানদের ওপর পরিকল্পিতভাবে ও একতরফাভাবে চরম নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। ইহুদী-খৃষ্টান ও তাদের দোসর পৌত্তলিক-নাস্তিকদের পরিকল্পিত ও ঐক্যবদ্ধ ক্রুসেডের মুখোমুখি মুসলমানেরা। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে স্বজাতি বিরোধী মুসলিম নামধারী কুলাঙ্গার ও মুনাফিকরা। দেশে দেশে মুসলমানেরা আজ শঙ্কিত, আতঙ্কিত, চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। অনেক ক্ষেত্রে নিজ দেশে পরবাসীর মত মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ তার কোনো প্রতিকার নেই। বলতে গেলে উচ্চ বাচ্য নেই কোথাও। মুসলিম জাতি সংস্থা ও আই সি,শক্তিমান ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ নীরব ; ইরাক, আফগানিস্তানে মার্কিনীরা, কাশ্মীরে ইন্ডিয়া এবং ফিলিস্তিনে ইহুদীরা আর বার্মায় বৌদ্ধরা ঠান্ডা মাথায় মুসলমানদের উপর যে নৃশংস হত্যাকন্ড চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে তা মানবেতিহাসে বিরল ও মানব সভ্যতার ললাটে কলঙ্কিত অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে।
আমেরিকা মিথ্যা অজুহাতে গায়ের জোরে দখল করে নিলো জাতিসংঘ এবং ওআইসিভূক্ত দু’টি মুসলিম দেশকে এবং দেশ দু’টোকে তছনছ করে যেন নরক কুন্ডে পরিণত করল অথচ জাতিসংঘ কিছুই করল না। নীরব মুসলিম বিশ্ব, পেট্রোডলারের ভোগবাদী আরব বিশ্ব নীরব, তথাকথিত সভ্য সমাজসহ কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করল না। বরং আমেরিকার সহযোগীর ভূমিকাই পালন করল অনেকে। অথচ চীন-রাশিয়ার উচিৎ ছিল নির্যাতিতদের পক্ষাবলম্বন করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তোলা । কিন্তু বাস্তবে প্রবাদ বাক্যের মতই ‘লাল কুত্তা শিয়ালের ভাই’ প্রতিভাত হলো। মুসলিম নির্যাতনে ওরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আবার প্রমাণিত হলো মুসলমানদেও পক্ষে কেউ নেই। এভাবে বলতে গেলে দেশে দেশে এক অমানবিক ও হিংস্র হত্যাযজ্ঞের শিকার নিরীহ মুসলিম জনগোষ্ঠি। চীন, কাশ্মীর, ভারত,পাকিস্তান, চেচনিয়া, মায়ানমারসহ অনেক দেশেই চলছে মুসলিম নিধনযজ্ঞ অবলীলায়। আমাদের মনে হয় তাতে সায় রয়েছে বৃহৎ শক্তিবর্গের নতুবা তারা চুপ কেন? এর বিচার করবে কে? কে আছে মজলুমদের রক্ষায় এগিয়ে আসবে? বাস্তবেও কেউ নেই তাদের আল্লাহ ছাড়া। তাই আমরা বলব মুসলমানদের ঈমানের দৃঢ়তা দরকার। তাহলেই কেবল আল্লাহর সাহায্য অসবে। আল্লাহও তাই বলেছেন। কোনো ব্যক্তি শক্তি বা রাষ্ট্রের উপর নয় বরং আল্লাহর প্রতি আস্থা বাড়াতে হবে। তারই সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে আর তারই কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কেন না তিনিই উত্তম বন্ধু ও সাহায্যকারী।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে মুসলিম হত্যা যেন কোনো অপরাধই নয়। এরা যেন কোনো মানুষই নয়। আমেরিকার সমাজ বিজ্ঞানী লর্ড হান্টিংটনের ‘Clash of Civilization’ ’ বই এর মূল বক্তব্যের মনস্তাত্বিক ও বাস্তব প্রতিফলন যেন শুরু করে দিয়েছে ইহুদি-খ্রীষ্টান জাতি যে বইতে মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্য তথা খৃষ্ট জগতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখানো হয়েছে। সভ্যতার মোড়কে অসভ্য ও বর্বরতার নিদর্শন আমরা নিকট অতীতে ভারত,কাশ্মীর ,বার্মা, ফিলিস্তিন,ইরাক,আফগানিস্তান ও বসনিয়ায় অবলোকন করেছিলাম আর তা এখনও চলমান। বরং তা পাকিস্তান, সিরিয়া ,লিবিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে বহু গুনে। হানাহানি বন্ধের কোন লক্ষণ নেই কোথাও। বরং এতে উস্কানী দিচ্ছে শত্রুরা। বাস্তবে এর প্রতিফলন আমরা অবলোকন করছি। বসনিয়া যুদ্ধের সময় তৎকালীন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জন মেজর সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, “We never tolerate a sovereign Muslim state in the heart of Europe.”অর্থাৎ, আমরা ইউরোপের বুকে একটি স্বাধীন মুসলিম দেশ কখনও মেনে নিতে পারি না। সে প্রসঙ্গে কুরআন বলে, “তারা চায় আমার আলোকে এক ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে, অথচ আমি আমার আলোকে আরও উজ্জ্বলতা দান করেই ছাড়ব। এতে কাফির-মুশরিকদের মনে যতই জ্বালা যন্ত্রণা সৃষ্টি হোক না কেন।” প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বাণীই সত্য। বসনিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছে আর কাশ্মীর, ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ব জনমত যে কোন সময়ের চেয়ে এখন বেশী।
একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখা যাবে সারা পৃথিবীতেই এক বিভৎস চিত্র দেদিপ্যমান, কোনো না কোনো ভাবেই মুসলমানেরা চরম নির্যাতন নিপিড়নের শিকার। মুসলিম বিশ্ব কিম্বা অমুসলিম বিশ্ব সর্বত্রই সন্ত্রাসের মুখোমুখি তারা, যেন মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলার উৎসব চলছে সবখানে। কোথাও আল-কায়দার নামে, কোথাও মৌলবাদী , কোথাও ইসলামপন্থী বা অন্য কোনো নামে ইসলামের দুষমনেরা নিরীহ মুসমানদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা,গুম,নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। অমুসলিম দেশের কথা কি বলবো, মুসলিম দেশসমুহেও মুসলমানেরা নির্যাতিত হচ্ছে অমানবিকভাবে অবলীলাক্রমে। রাবাত থেকে জাকার্তা বিশাল মুসলিম বিশ্বের কোথাও শান্তি নেই, শৃংখলা নেই, দ্বীনের পক্ষে উচ্চ কণ্ঠ নেই। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, তিউনিসিয়া, আলজিরিয়া এমনকি এক সময়ের শান্তিময় মধ্য প্রাচ্যেও আগুন জ্বলছে, চলছে সংঘাত-সংঘর্ষ অহরহ। ভাই ভাইয়ের রক্ত ঝরাচ্ছে নির্বিঘ্নে। সামান্য ছুতো নাতায় বিবাদ-বিসম্বাদে লিপ্ত হচ্ছে।
খুব গভীরে চিন্তা করলে দেখা যাবে এসব কিছুর পিছনে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের ইসলাম বিরোধী শক্তির কারসাজি রয়েছে, তারা কৌশলে আমাদের মধ্যে সংঘাত লাগিয়ে ও মিল্লাতকে বহুধা বিভক্ত করে ফায়দা লুটছে। আর এসব কাজে দালালীতে নেমেছে এক শ্রেণির মুনাফিক, সুবিধাবাদী, স্বার্থপর ও মেরুদন্ডহীন মুসলিম নামধারী কুলাঙ্গার। এরা স্বজাতির মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে চলেছে। তারা রাজনীতিতে ইসলামকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মানব রচিত বাদ-মতবাদে জড়িয়ে পড়ে ইসলাম পন্থীদের সাথে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করছে। সারা মুসলিম বিশ্বের একই অবস্থা। দালাল নেতৃত্বের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট। কারজাই,তালেবানি ও বংশানুক্রমিক রাজা বাদশাহরা তাদেরই সৃষ্ট গোলাম। অথচ চোখের সামনে হাজারো গোলামী করেও শেষ রক্ষা হলো না সাদ্দাম,গাদ্দাফীদের তা কি বর্তমান মুসলিম বশংবদ রাজা বাদশাহরা অনুধাবন করতে পারেন না? আমরা সুবিধাবাদীদের এখনই ঘুরে দাড়ানোর আহবান জানাচ্ছি। দয়া করে মৃত্যুকে ভয় করুন মুনাফেকি আচরণ বন্ধ করুন নচেৎ আপনাদেরও সাদ্দাম-গাদ্দাফীর মত শেষ রক্ষা হবে না। এটা কুরআনের ঘোষণা যা ভবিষ্যতই বলে দেবে। সুতরাং সময় থাকতেই অপ শক্তির বগলের তলা থেকে বেরিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। এভাবে নিজে বাঁচুন, জাতিকে বাঁচান।
আজ মুসলমানেরা বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে কুরআনের মূল বাণী থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তারা ছোট খাট বিষয়কে সামনে নিয়ে পরষ্পর পরষ্পরের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা আন্দোলন থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক হয়ে কাজ করছে। আল্লাহ বলেন, “তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ কর, আর পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না”। অথচ আমরা কুরআনের এ বাণীকে অবজ্ঞা করে শুধু বিচ্ছিন্নই হইনি বরং পরস্পর রক্তারক্তিতে লিপ্ত হয়েছি। একে অপরকে শত্রুর চেয়েও খারাপ ভাবছি। এ রকম অবস্থা থেকে পরিত্রানের একমাত্র ও শুদ্ধ পথ হলো আল্লাহর কুরআন ও রাসূল ছ. এর হাদিসের মর্ম বাণীর দিকে নিজেদেরকে ফিরিয়ে আনা যা বিদায় হাজ্ব এর ভাষণে রাসুল ছ.উল্লেখ করেছেন।
মনে রাখতে হবে ইসলামের শত্রুরা সারা দিন মাস বছরব্যাপী বুদ্ধিবৃত্তিকে আধিপত্যের মাধ্যমে ইসলামী পূণর্জাগরণকে থামানোর জন্য ছলে বলে কৌশলে মুসলমানদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে ও বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। এই সত্য বিষয়টি বৃহত্তর জনগোষ্ঠি উপলব্ধি করতে সক্ষম না হলে মিল্লাতের চরম ক্ষতি অনিবার্য। আমরা জানি সারা বিশ্বে ওআইসিভূক্ত মুসলিম দেশের সংখ্যা ৫৭ টি, আর অধিকাংশ অমুসলিম দেশে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় বৃহত্তম জাতি হিসেবে মুসলমানদের অবস্থান উৎসাহব্যঞ্জক। এত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের পরও এই অবস্থান নিঃসন্দেহে শাশ্বত জীবন ব্যবস্থার ইঙ্গিতবহ বলতে হবে। দুঃখ লাগে যখন দেখি বর্তমান পৃথিবীতে একটি মুসলিম দেশও নেই যেখানে শত ভাগ আল্লাহর কুরআন ও রাসূল মাকবুল ছ. এর আদর্শ অনুযায়ী দেশ শাসন হচ্ছে? অথচ আমরা নিজেদেরকে খাটি মুসলমান বলে দাবী করছি । কিন্তু তাহলে কেন এত অধঃপতন আমাদের ? আমরা কেন আপন চিরন্তন সত্য আদর্শের বিপরীতে মানব রচিত গোজামিল মার্কা মতবাদের পিছু ধাবমান হয়েছি ? তা মোটেই বোধগম্য নয়। তার জবাব কি তাদেরকে মহান আল্লাহর দরবারে দিতে হবেনা পরকালে? তার কি কোনো হিসাব নিকাশ করেছে তারা আদৌ ? নচেৎ নড়া চড়া নেই কেন? মনে রাখতে হবে আল্লাহর দরবারে ভাল মন্দের জররা জররা হিসাব দিতে হবে সবাইকে। এ বিষয়কে যেন আমরা হেলায় ফেলায় ভুলে না যাই।
আশ্চর্যের বিষয় বিগত ৭০ বছরেও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়নি, একই সময়ে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করা যায় নি। দীর্ঘ সময় ধরে একটা কথাও রাখেনি ভারত,ইসরাইল।তাতে তাদেরতো কিছুই হয়নি। এ রকম জাতিসংঘের রেজুলেশন অমান্য মুসলিম বিশ্বের কেউ করুকতো। সাথে সাথেই একশন। দূর্ভাগ্যের বিষয় এজন্য মুসলিম বিশ্ব কোনো ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে পারে নি। এক চোখের পলকে পূর্ব তিমুরকে ইন্দোনেশিয়া থেকে ও দক্ষিণ সুদানকে সুদান থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ কাশ্মীর, চেচনিয়া এখনও পরাধীন, কসোভো সার্বীয় নরপশুদের হাতে বন্দী। আরাকানে মুসলমানেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম। পাকিস্তানকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র চলছে। ওয়াজিরিস্থানকে পাকিস্তান থেকে কেড়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে । সৌদি আরবকে ভেঙ্গে তিনটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্ঠা চলছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশকে ভেঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে খ্রীষ্টান রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছেন। এভাবে সারা দুনিয়ায় মুসলিম দেশসমুহকে ছিন্ন ভিন্ন করে দূর্বল,পরনির্ভরশীল ও অস্থির করে রাখার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এটা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় আমাদের মাঝে ঐক্য ও ইসলামরে সম্মান রক্ষায় বজ্রকঠিন শপথ ছাড়া মিল্লাতের দূর্দিন- অমানিশা ঘুছানো সম্ভব নয় এটা কি আর বুঝিয়ে বলার দরকার আছে। তবে এজন্য হতাশ হলে চলবেনা, তাড়াহুড়ো করা চলবেনা। চোখ কান খোলা রেখে একতার নজরানা পেশ করতে হবে সর্বক্ষেত্রে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে। আল্লাহাহ বলেন “তোমরা হতাশ হয়োনা, তোমরা নিরাশ হয়োনা, তোমরাই হবে বিজয়ী যদি তোমরা হও মুমিন।” এজন্য আমাদের দ্বীনের সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার আর বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার। তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সঠিক জবাব দিতে হবে ও ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর সমাজ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে । নতুন নতুন মিডিয়া সৃষ্টি করতে হবে। এরা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে উস্তাদ, এটা স্মরণ রাখতে হবে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়ার দিকে থাকালে তা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। পরিশেষে সারা বিশ্বের মুসলিম ভাইদের হুশিয়ার ও সাবধান হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। নচেৎ দ্বীনের এ মশাল নিষপ্রভ হয়ে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে এ জাতির স্মৃতি স্তম্ভ। আমরা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। মনে রাখতে হবে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে শত্রুর হাত থেকে তথা ষড়যন্ত্র থেকে মুসলিম উম্মাহকে বাঁচাতে হবে। কেননা এ ছাড়া যে আমাদের গত্যন্তর নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন