আর রাহিকুল মাখতুম গ্রন্থের পর্যালোচনা, লেখক: আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, বাংলায় অনুবাদ করেছেন খাদিজা আখতার রেজায়ী, আল কুরআন একাডেমী লন্ডন কর্তৃক বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে প্রচারিত
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:০৮:৪০ দুপুর
গ্রন্থ পরিচয়: ১৯৭৬ সালের মার্চ্ মাস। ১৯৩৬ হিজরীর রবিউল আউয়াল। করাচীতে রাবেতায়ে আলামে ইসলামীর উদ্যোগে বিশ্ব মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সমাপ্তি অধিবেশনে সারা দুনিয়ার লেখকদের প্রতি নবী করীম (সঃ) এর জীবনী রচনার জন্য লেখা আহবান করা হয়।উক্ত আহবানে সারা দিয়ে বিশেষ করে লেখকের এক আত্মীয়ের পীড়াপীড়িতে লেখক নবী করীম (সঃ) এর জীবনী লেখতে সম্মত হন। অবশেষে ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসের ৬,৭,৮ তারিখে করাচীতে পুনর্বার প্রথম এশীয় ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত সম্মেলনে উক্ত জীবনী রচনাটি প্রথম বিজয়ী হিসেবে ঘোষিত হয়।
উল্লেখ্য রাবেতার ঘোষনার পর সারা বিশ্ব থেকে রাসুল (সঃ) প্রেমিক লেখকের সর্বমোট ১১৮২ টি পান্ডুলিপি জমা পড়ে। প্রাথমিক বিবেচনায় বাছাই কমিটির পক্ষ থেকে মাত্র ১৮৩ টি পান্ডুলিপির মধ্যে থেকে আর রাহিকুল মাখতুমকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষনা করা হয়।
এই পান্ডুলিপিটি পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য বইটি প্রথম ভাষান্তর ও প্রকাশ করা হয় ১৯৯৯ সালে।ইতিমধ্যে এই বইয়ের ৫ম সংস্করন ২০০১সালেপ্রকাশিত হয়।এরপরও কোন সংস্করন বের হয়ে থাকতে পারে।
অভিমতঃ এই বই সম্পর্কে রাবেতার সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ড. আব্দুল্লাহ ওমর নাসের ভূয়সী প্রশংসা করেন।তাছাড়া রাবেতার বর্তমান সেক্রেটারী জেনারেল শায়খ মুহাম্মদ আলী আল হারাকান ও এই বইয়ের ব্যাপক প্রশংসা করেন।
লেখকের পরিচয়ঃ
লেখক ছফিউর রহমান মুবারকপুরী একজন বিজ্ঞ আলেম, মুফতি ও শিক্ষক ছিলেন।জন্ম ১৯৪২ সালে ভারতে। ১৯৬১ সাল থেকে তিনি শিক্ষকতার সাথে জড়িত। এ পর্যন্ত তিনি ১৪ টি বই রচনা করেন। একটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন ।
বাংলা ভাষায় বইটিঃ
আর রাহিকুল মাখতুম কুরআনুল কারীমে ব্যবহৃত একটি বাক্যাংশ থেকেই নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হল ছিপি আটা উত্তম পানীয়। সুরা আল মুতাফফিন এ আয়াত রয়েছে। অনুবাদক ও প্রকাশক বলেছেন বইটির বিশ্বব্যাপী চাহিদা অস্বাভাবিক।জনপ্রিয়তার জন্য তারা এটি অনুবাদ ও প্রকাশনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। বাংলা ভাষাভাষিদের উত্তম কিছু উপহার দেয়ার মানষেই সার্বিক অর্থে পরকালীন নাজাতের উছিলায় তারা বইটি বাংলা ভাষাভাষি পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। বস্তুত মূল বইটি আরবী ভাষায় লিখিত । মূলত সিরাতে রাসূল(সঃ) এর মৌলিক গ্রন্থগুলো আরবী ভাষায় সংকলিত ও সংরক্ষিত আছে। এই বইয়ের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হল লেখক মনগড়া কোন কথা বলেননি। উপরন্তু হাদীস ও অন্যান্য গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়েই তিনি বইটি লেখা সম্পন্ন করেছেন। বাংলায় অনুবাদক খাদিজা আখতার রেজায়ী অনেক পরিশ্রম করেছেন
এই বইখানি আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন তিনি লন্ডন প্রবাসী হয়েও এরকম কঠিন ও অসাধারণ কাজে হাত দিয়েছেন। তিনিও আল্লাহর রেজাবন্দি হাসিলের উদ্দেশ্যে এটি করেছেন।
Content of the Book
আরবের ভৌগলিক পরিচয়। জাতিসমূহ , প্রশাসনিক অবস্থা অর্থাৎ প্রাগ ইসলাম যুগের বিভিন্ন বাদশাহী নেতৃত্বের সংক্ষিপ্ত আলোচনা রয়েছে। যেমন ইয়ামেনী বাদশাহী, হেযাজের নেতৃত্ব ,হেরার বাদশাহী ও সিরিয়ার বাদশাহী উল্লেখযোগ্য।
অতঃপর আরবের ধর্ম বিশ্বাস ও মতবাদ, জাহেলী সমাজের খন্ডচিত্র, অর্থনৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য এখানে আলোচিত হয়েছে।
রাসুল(সঃ) মক্কা জীবনের ১৩ বছর নিজ ঘরে পরদেশী জুলুম নির্যাতনের ১৩ বছর শিরোনামে বর্ণিত হয়েছে। এ সময় তিনি গোপনে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুপ্রতিম ব্যক্তিদের কাছে দাওয়াত পৌছান। এ সময় মক্কার বাইরে তায়েফে তিনি দাওয়াত পৌছান। এ সময় আয়েশা(রাঃ) এর সাথে বিয়ে ও মেরাজ সংঘটিত হয়।
অতঃপর হিজরতের উদ্দেশ্যে মদিনায় গমন । মদিনার পুরনো নাম ছিল ইয়াছরিব। ফকিরের বেশে বাদশাহ শিরোনামে মাদানী জীবনের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখিত হয়েছে এ গ্রন্থে। প্রথম পর্যায়ে নতুন সমাজ ব্যবস্থার রুপায়ন শিরোনামে অনেক বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। মসজিদে নববীর নির্মান কাজ , ইয়াহুদীদের সাথে চুক্তির বিষয় রয়েছে। বদরের যুদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে । এসময় রাসুল (সঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্র ইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতা বিষয় আলোচিত হয়েছে । অতঃপর উহুদের যুদ্ধ :এ যুদ্ধে শেরে খোদা হযরত হামযার (রঃ) শাহাদাত, হযরত হানযালা (রঃ) এর বাসর শয্যা থেকে জেহাদে গমন , এ যুদ্ধে বিশৃংখলা নবীর শাহাদাতের মিথ্যা রটনা ও প্রতিক্রিয়া ওবাই ইবনে খালাফের হত্যাকান্ডসহ বহু বিষয় আলোচিত হয়েছে।
খন্দকের যুদ্ধ, হোদায়বিয়ার সন্ধি হাবশার বাদশাহ নাজজাশীর নামে পত্র প্রেরণ, মিশরের বাদশা মুকাওর নামে , পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের নামে, ইয়ামামার শাসক আম্মান , দামেশকের শাসক ও অসংখ্য বিদেশী শাসকগোষ্ঠীর নামে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র প্রেরণ। অতঃপর মুতার যুদ্ধ ও মহাবিজয়ের দ্বারপ্রান্তে শীর্ষক আলোচনা। অতপর আজ থেকে কোন প্রতিশোধ নয়।
ইসলামী বাহিনীর মক্কা প্রবেশ, বায়তুল্লায় প্রবেশ ও মুর্তি অপসারন । কাবা ঘরের চাবি তখন হযরত আলী রা: এর হাতে । কাবার ছাদে এই প্রথম বেলালের আযান ও শোকরানা নামাজ আদায়। অতপর ৯ জন চিহ্নিত অপরাধী-হত্যাকারীকে মুত্যুদণ্ড প্রদান। মক্কাবিজয়ের পরদিন রাসুল (সঃ) এর ভাষন।
অতপর বিদায় হজ্বের ভাষনঃ
আল্লাহর রাসুল (সঃ) সমবেত আবেগে আপ্লুত লক্ষাধিক সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন – তোমাদের সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা তখন কি বলবে, সাহাবারা বললেন আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আাপনি দিনের দা্ওয়াত সকলের কাছে পৌছে দিয়েছেন। কল্যাণকামিতার ব্যাপারে ন্যাস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। একথা শুনে নবী করীম (সঃ) শাহাদাত আঙ্গুল আকাশের দিকে তুলে লোকদের দিকে ঝুকিয়ে তিনবার বললেন হে আল্লাহ পাক তুমি সাক্ষ্য থেকো নবী করীমের (সঃ) বাণীগুলো উমাইয়া ইবনে খালফ উচ্চারণ করে মানুষের নিকট পৌছে দিচ্ছিলেন। এসময় আয়াত নাযিল হলো ‘ আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দিনাকুম ওয়াআতমামতু আলাইকুম নেয়ামাতি ওয়ারাদিতু ইসলামা দিইনা ’
নবী করিম স: এর দুনিয়াবী বিদায়। অন্তিম যাত্রায় মহানবী (সঃ) ।
নবী করীম (সঃ) একাদশ হিজরীর ২৯ সফর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রচন্ড মাথা ব্যাথা অনুভব করলেন ক্রমেই দূর্বল হয়ে পড়লেন। এভাবে তিনি সাত দিন অতিবাহিত করলেন। অতঃপর ১১ হিজরীর ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবার মহা প্রভূর সান্নিধ্যে চলে গেলেন।
বিষয়: বিবিধ
২১৭৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি হয়তো বইটি পড়েছেন। এই বইটিতে হযরত ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহনের প্রচলিত ঘটনাটির বর্ণনা কি আছে? যাহা আমাদের দেশে আলেম সমাজ বলে বেড়ায়। বোনের বাড়িতে গিয়ে মারধর করা, গোসল করে সূরা ত্বাহা তেলাওয়া করা, অঅতঃপর রাসূল সঃ এর দরবারে গিয়ে ঈমান আনয়ন করা।
আমাদের দেশের একজন শাইখ বলেছেন: এটি নাকি একটি বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী। আমার প্রশ্ন হলঃ বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী নিয়ে কিভাবে একটি বই বিশ্ব সেরা হতে পারে?
আশাকরি এ ব্যাপারে আপনার মতামত পাবো।
আর যদি ঘটনা সত্যিই হয়, তবে শাইখগন কেন যে মিথ্যাচার করছে। আল্লাহই জানেন।
ধন্যবাদ পোস্টটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন