গণতন্ত্র ও ভোটের গুরুত: প্রেক্ষিত মুসলিম বিশ্ব ////

লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ১৩ জুলাই, ২০১৫, ০৮:০৫:০২ রাত

বর্তমান ধারার গণতন্ত্রে ভোট সরকার পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার। আমরা জানি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য যে গণ রায়ের ব্যবস্থা রয়েছে তাকেই ভোট বলে। কিন্তু পশ্চিমাদের এ ব্যবস্থা ইসলামী আদর্শের সাথে শত ভাগ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকারের পরিবর্তে সংখ্যালঘুর সরকার প্রবর্তন হয় অনেক সময়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আল গোর ও বুশ ভোট যুদ্ধে যে তুলকালাম কান্ড ঘটে গিয়েছিল তা থেকে পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্বলতা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠে। উপরন্তু এ গণতন্ত্রে ঐশী শাসন ব্যবস্থার গ্যারান্টি নেই। বরং মানব রচিত মতবাদই সেখানে প্রধান উপজিব্য। পক্ষান্তরে ইসলামী গণতন্ত্রে প্রত্যেক মানুষ প্রার্থী ও ভোটার হয় সমভাবে। বড় কথা হলো এই গণতন্ত্রে সরকার ইচেছ করলেই খোদায়ী বিধানের বিপরীত কোন সংবিধান রচনা,আইন প্রণয়ন কিংবা চালু করতে পারে না।

এ ব্যাপারে আল কুরআনের বক্তব্য স্পষ্ট, “তারা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন ৪টি কর্ম সাধন করে- ক) সালাত কায়েম করে, খ) যাকাত প্রথা প্রচলন করে, গ) ভাল কাজের আদেশ দেয় ও ঘ) মন্দ কাজ প্রতিরোধ করে।” এখানে মুসলিম নেতৃত্বের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম নেতৃবৃন্দ কুরআনের এই চার দফা কর্মসূচী মানতে বাধ্য। অথচ দুঃখের বিষয় হলো বর্তমান মুসলিম সমাজে ইসলামী আইন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে এবং তা চালু না থাকার কারণে জনগণকে বাধ্য হয়ে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হয়। এতদসত্ত্বেও ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। তার তাৎপর্য দেশ ও জাতির জন্য সময় সময় জীবনের চেয়েও মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে।

এটি সত্য কথা মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্র সফলভাবে বিকশিত হয় নি। সর্বত্র গণতন্ত্রের নামে চলছে স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র। ঐসব তন্ত্র-মন্ত্রের মোড়কে স্বৈরাচার, দুরাচার, সাম্রাজ্যবাদের দালাল, জাতি বিরোধী, স্বার্থবাদী শক্তি জনগণের মাথার উপর জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসে সব সময়। ধাপ্পাবাজ, টাউট বাটপার এ সব নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা বিবৃতিতে মনে হয় জনগণের খাঁটি গোলাম, সেবক ও একমাত্র পাহারাদার। কিন্তু বস্তুত তারাই সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদীদের পা চাঁটা গোলাম, তা পরক্ষণেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। তারপরও জনগণ তাদেরকে ভোট দেয় অথবা জোর করে ভোট নেয় তারা। নির্বাচিত হয় কাগজে কলমে। প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যের মুরুব্বীরা আসে দলে দলে, সার্টিফিকেট দিয়ে যায় ডজন ডজন। হৈ হৈ রৈ রৈ চর্তুদিকে ধুম পড়ে যায়।

তবে সে রায় যদি নিজেদের মতের বিরুদ্ধে হয়, যদি সেটা আলজেরিয়ার ব্যাপারে হয়, কাশ্মীর, আফগান কিংবা মিশর-সুদানের জনগণের রায় হয় তখন ঐ সমস্ত মেকি সাম্রাজ্যবাদীরা মুখে কুলুপ এঁটে রাখে। এ সময় তারা জনগণের শত্রুদের পক্ষ নিতেও কুন্ঠিত হয় না। কী বিচিত্র মানসিকতা, মানবতা-মানবাধিকারের সংজ্ঞা! “বিচার মানি তবে তাল গাছটা আমার।” পশ্চিমাদের দুরভিসন্ধি ও তাদের তৃতীয় বিশ্ব বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব সম্পর্কে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা কিংবা পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারের মতই। পাশ্চাত্য দেশসমূহ মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশাহ, একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার ও বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের ঘোর সমর্থক। এ জন্যই কি এদেরকে রক্ষার জন্য তারা সৈন্য সামন্ত নিয়ে ঝড়ো গতিতে হাজির হয়ে যায় ?

কুয়েতের কথা যদি বলি আমেরিকা সেখানে কত দ্রুত সৈন্য পাঠিয়ে রাজতন্ত্রকে রক্ষা করল সেটা কি অবাক হওয়ার মত নয়? মনে হয় ওরা আগে থেকেই জানত ওসব কথা এবং এ জন্য প্রস্তুতও ছিল । এগুলো জনগণের কাছে কাকতালীয় বলেই মনে হয়। বলা হয়ে থাকে দেশটি ইরাককে দিয়ে কুয়েত আক্রমণ করালো আবার কুয়েতের সাহায্যে এসে ইরাককে ঘায়েল করল। অর্থাৎ, “চোরকে বলে চুরি কর আর গৃহস্থকে বলে ধর ধর।” এই প্রবাদ বাক্য এ ক্ষেত্রে শত ভাগ প্রযোজ্য কিনা চিন্তাশীলরাই বলতে পারেন? তবে কথা হলো, ইরাকী শাসকগোষ্টী তাদের কথা শুনবে কেন? আফগানরা ওদের কথা মানবে কেন? এ জন্য কি তারা কম দায়ি?

প্রায় সকল মুসলিম দেশেই নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর ছ. শেখানো গণতন্ত্র বাদ দিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অবলীলাক্রমে পাশ্চাত্য গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র-গোষ্ঠীতন্ত্র তথা বিভিন্ন মানব সৃষ্ট তন্ত্রমন্ত্র চলছে অবলীলাক্রমে। সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে পেট্রো ডলারের কারণে তাদের দেশের জনগণের একাংশ অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুটা উন্নতি করলেও বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে এখানে কিছুই নেই। জনগণ প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য কিংবা কোন বক্তব্য রাখতে পারেন না। দেশগুলোতে কমিউনিজমের চেয়েও বেশী জঘন্য উপায়ে মানবাধিকার লংঘন ও বাক স্বাধীনতা খর্ব করে ডিকটেটরশীপ তথা একনায়কতন্ত্র কায়েমের অভিযোগ শুনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।

কুয়েতে, সৌদিতে ভোটাধিকার নস্যাৎ করে জনগণকে বেপরোয়াভাবে ভোগ বিলাসে মত্ত করে রাখার বিরোধীদের সমালোচনা অনেক পূরনো? জনগণের মধ্য থেকে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এভাবে। ফলশ্রুতিতে দালাল শ্রেণি,মেরুদন্ডহীন, নিস্তেজ, ভীরু, কাপুরুষের জাতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশই ধীরে ধীরে। তার পরিণাম যে ভয়াবহ তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আর তা কোনো ক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। বিশেষ করে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও তার লালনের স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সামাজিক কাঠামো ও তাদের চালচলন মুসলিম জাতির জন্য অপমানজনক ও লজ্জাকর হিসেবেই পরিচিহ্নিত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে মুসলিম বিশ্বের ধনকুবের অনেকে পাশ্চাত্য, ইহুদী ও ভারতীয় ললনাদের পাণি গ্রহণে লক্ষ লক্ষ ডলার উড়াচ্ছে দেশে-বিদেশে।

মিশরের কায়রো ও আরব আমিরাতের দুবাই নগরী এখন বিশ্ব গণিকালয়ে পরিণত হওয়ার বদনাম রয়েছে। অভিযোগ আছে যে আরব ধনকুবের সন্তানদের অনেকে মদ, মেয়ে নিয়ে বিদেশের হোটেল ও মোটেলগুলোতে নিত্য নতুন সুন্দরী নারীদের সংস্পর্শে রঙীন স্বপ্নে বিভোর রাত কাটাচ্ছে নিয়মিত। এভাবে চরম এক বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে নিপতিত আরব বিশ্ব। বলা বাহুল্য মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই কম বেশি এ রকম অবস্থা বিরাজ করছে।

মিশরের দিকে তাকান, কত রক্ত ঝরল দেশটিতে, যেন থামাথামি নেই। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারী নিরীহ মুসলমানদের উপর নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক আবু নাসের থেকে সাদাত ও তার ঘৃণ্য উত্তরসুরী হোসনী মোবারক ও বর্তমান সামরিক দূরাচার ইহুদীদের পা চাটা গোলাম পর্যন্ত সকলে মিলে কী অমানবিক অত্যাচার নিপীড়ন ও ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাযজ্ঞ চালাল তা কল্পনাও করা যায় না। দেশটিতে অন্যায় ও জোর জবরদস্তিমূলকভাবে জনগণের রায় ও মতামতকে পাল্টে দিয়ে কি নোংরা প্রচেষ্টা চালানো হলো সাম্প্রতিক সময়ে তা ভাবতেও অবাক লাগে। বলতে গেলে এখানেও শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল গণতন্ত্রকে হত্যা করা হলো।

সামরিক সরকার ইহুদী রাষ্ট্রটির সহযোগিতায় ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ক্ষমতা দখল করেছে বলে মুরসী সমর্থকরা এমন কি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত অভিযোগ করেছেন। প্রকৃত পক্ষে তাদের সকল কর্মকান্ড মানবতা বিরোধী ও ইসলামের দুশমদের পক্ষে নিবেদিত এটা এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনিভাবে এক এক করে অধিকাংশ মুসলিম দেশে গণতন্ত্রের ‘গ’ও নেই, নেই ইসলামী আদর্শের অনুশীলন। বরং ইসলাম আদর্শবাদীদের সাথে চলছে চরম দুষমনি ও তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের মত আচরণ। সত্যি কথা বলতে কি মুসলিম বিশ্বে ইসলামপন্থীরা যেন নিজ দেশে পরবাসী।

কয় বছর আগের কথা তখন তুরস্কের কথা মনে উঠলে তো গা শিউরে উঠতো। তাদের কথা চিন্তায় আসলে ঘৃণায়, ক্ষোভে, দুঃখে, লজ্জায় মন আতকে উঠে। তখন দেশটি যেন মুসলিম জাতির কলঙ্ক ছিল। যে তুরস্ক এক কালে মুসলিম বিশ্বের গর্ব ছিল, ওসমানীয়া খেলাফতের মাধ্যমে যারা পৃথিবীর বৃহত্তর অংশ শাসন করত তাদের দেশে মুসলিম মানসকে এভাবে হেনেস্তা করা হবে ভাবতেও অবাক লাগে। সামরিক দুরাচারের মদদে ও পরোক্ষ ইঙ্গিতে তখন সংসদ চলত সে দেশে। জেনারেলরাই ছিল দেশের হর্তা কর্তা বিধাতা। মাথায় স্কার্ফ পরার অপরাধে যে দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংসদের সদস্য পদ পর্যন্ত বাতিল হতে পারে সে দেশ সম্পর্কে কী বলা যায়?

ক্ষমতার মসনদে থেকে ঝেঁকে বসা প্রায় সকলেই ইহুদীদের পা চাঁটা গোলাম। এই সেদিন আরবাকানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রিয় ইসলামী দলটিকে ইসলামের সপক্ষে কথা বলার অপরাধে ক্ষমতা থেকে জোরজবরদস্তিমূলক উৎখাত করেছিল সাম্রাজ্যবাদের দালাল মুসলমানদের দুশমণ সামরিক নৈরাশ্যবাদীরা। কই, বিশ্ব মোড়ল গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা মার্কিনীরা এ জন্য তো টু শব্দটি করলো না তখন। মায়াকান্না কি শুধু কুয়েতের জন্য? সেখানে মধু আছে, রস আছে, এ জন্যই বুঝি এত দরদ? সুখের কথা বর্তমানে সেখানে অবস্থার উন্নতি হয়েছে, ইসলামপন্থীরা আবার ক্ষমতায় এসেছে দেশটিতে। এখনও ষড়যন্ত্র চলছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদেরকে উৎখাত করে আবারও খোদাদ্রোহী শক্তির লালনের পাঁয়তারা চলছে।

সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের কথা যেখানে চলে না সেটি কি রকম গণতন্ত্র আমাদের বুঝে আসে না। প্রায় সব কটি দেশে পাশ্চাত্য সভ্যতার ধাচে তথাকথিত গণতন্ত্রের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এভাবে করে আফ্রিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া অঞ্চলসহ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র কোথাও গণতন্ত্রের কোন নাম নিশানা নেই।

এ ব্যবস্থাটি যেন তেলা মাথায় তেল দেয়ার মতই। প্রকৃত অর্থে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গরীব মানুষের জন্য কোন গঠনমূলক কর্মসূচী নেই। যার করুণ পরিণতিতে এ সব দেশে শিল্প বিপ্লব ও অর্থনৈতিক মুক্তি যথাযথভাবে গণ মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে নি। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামরিক শক্তি অর্জনে মুসলমানেরা এখনও আত্ম নির্ভরশীল হতে পারে নি। কি পেট্রো ডলারের দেশগুলো, কি গরীব রাষ্ট্রগুলো কোথাও কোন স্বয়ম্বরতা অর্জনের প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না।

অথচ রাবাত থেকে জাকার্তা পর্যন্ত বিশাল মুসলিম বিশ্ব তেল, স্বর্ণ, গ্যাস, রাবারসহ অফুরন্ত খনিজ, বনজ ও জলজ সম্পদের অধিকারী। তারপরও ওরা গরীব অলস অকর্মণ্য পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত। ওদের মধ্যে রয়েছে কোটি কোটি মুনাফিক ও জাতি বিরোধী কুলাঙ্গার, যারা মুখে মুখে মুসলমান দাবী করলেও তলে তলে বেঈমান হয়ে আছে বহু আগে থেকেই সে সম্পর্কে তাদের হুঁশ কিংবা ধারণাই নেই। ওসব নেতৃবৃন্দ চরম সুবিধাবাদী,উচ্ছাভিলাসী,ভোগবাদী ও চরিত্রহীন। ওদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ওরা সময় মতখোদায়ি গজবে নিপতিত হবে,তবে জনগণকে ওদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হতে হবে।

বাংলাদেশের অবস্থা আরো করুণ আরো শোচনীয়। এখানে রাজনীতি সন্ত্রাসী ও বুর্জোয়া নির্ভর কালোবাজারী ধনিক বণিক লাঠিয়ালদের নীতিতে পরিণত হয়েছে বলে প্রায়শই অভিযোগ শুনা যায়। সারা দেশে চলছে জোর যার মুল্লুক তার প্রবাদের প্রতিফলন। যে দেশে গায়ে পড়ে সমস্যা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করে নিজ দেশের নাগরিকদের স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ শক্তি বলয়ে বিভক্ত করে সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারার কথা শুনা যায় সে দেশে গণতন্ত্রের কী বা বাকী থাকে তা সহজেই অনুমেয়। তিন বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষিতা হচ্ছে এদেশে অবলীলাক্রমে।

সুদ, ঘুষ, জেনা, ব্যভিচার হানাহানি,খুন-গুমসহ হাজারো অপকর্ম ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত বাংলাদেশ। এখানে আবার পার্লামেন্টারী ফরম অব গভর্ণমেন্ট ও চালু আছে। যার মর্ম বুঝার যোগ্যতা কি আমাদের আছে? যে দেশে টাকার জোরে, সন্ত্রাস করে, জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় বলে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায়শঃই অভিযোগ শুনা যায় সে দেশে গণতন্ত্রের লেবেল শুধুই লোক দেখানো প্রচারণা বৈ আর কিছু নয়। এদেশের সংসদ যেন কুরুক্ষেত্র। মারামারি ও গালাগালির আখড়া। এখানে পরমত সহিঞ্চুতার অভাব ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত রাজনীতি চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে নিপতিত সাধারন মানুষ । এভাবে বলতে গেলে দেশটি যেন দুনিয়ার দোজখে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার বর্তমান নেতৃত্বের পর্বত প্রমাণ ব্যর্থতার পরও ঘুরে ফিরে একই নেতৃত্বের নিগড়ে বন্দি হয়ে আছে জনগণ। এর থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই!

ওপরে বর্ণিত মুসলিম জাতির অধঃপতন ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য শিক্ষিত ‘সাধারণ জনগণ’ নামে কথিত অংশটি কম দায়ি নয়। ঐ অংশটি সচেতন বা অবচেতনভাবে দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে বিজাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে তৎপর। তারা নিজেদের পবিত্র আমানতকে অপাত্রে দিয়ে ওদেরকে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে দিচ্ছে। আর ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু থেকে ঐ সব দুশ্চরিত্র কুলাঙ্গার নেতৃবৃন্দ যা ইচ্ছা তাই করবেন এটাইতো স্বাভাবিক। এ জন্য তাদেরকে সমালোচনা করা হয় দায়ি করা হয় এককভাবে। কিন্তু একথা ভুললে চলবে না তারা তো আমাদেরই প্রতিচ্ছবি।

আজকে ইতিহাসের পাতায় মুসলিম শাসক গোষ্ঠীর ব্যর্থতা ও যে সকল অপকর্মের ফিরিস্তি রয়েছে তার জন্য নিঃসন্দেহে তারা দায়ি। তবে সাধারণ মানুষ বলে কথিত আমাদের কি কোন দায়-দায়িত্ব নেই? আমরা কি একেবারে ধোয়া তুলসী পাতা? আমরা কি পরোক্ষভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় পাঠিয়ে অপরাধ করি না? মুসলমানদের বড় দুর্ভাগ্য যে, তারা অল্পে বিক্রি হয়ে যায়। আমরা এক টাকা দিলে রোপণ করি আবার দু টাকা দিলে তা উপড়ে ফেলি। অর্থাৎ, এ জাতির বোধোদয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দায়িত্ব সচেতনতা নেই বললেই চলে। লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে আমরা দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে পারি। সত্য অসত্যের পরখ করতে পারি না। প্রলোভনে পড়ে জাতীয় বেঈমানের পক্ষ নেই।

এভাবে অর্থের প্রভাব, ভয়ভীতি কিংবা লোভে দুষ্ট দাম্ভিক বিদেশি দালাল ও চরিত্রহীন লোকদের নির্বাচিত করি। অনেক সময় অবৈধ অঢেল সম্পদের মালিক অশিক্ষিত লোকও জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়। তাদের একাংশ দুর্নীতির গডফাদার, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করেছে, চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে দেশকে। এদের সম্পর্কে সজাগ থাকা দরকার। আর এরা ঘুরে ফিরে একই আদর্শের ধারক-বাহক। নিঃসন্দেহে এরা ঘৃণার পাত্র। কেন না তারা গরীব মানুষের সহায় সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, যে জনতা সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে নিজ দেশ, জাতি ও ধর্মের বিরুদ্ধে যেতেও দ্বিধা করে না, যারা নিজেদের মান মর্যাদা বুঝে না, চোখ থেকেও অন্ধ, সত্য ও জাতীয় স্বার্থকে প্রকাশ্যে অবলোকন করার পরও বিজাতীয় স্বার্থের ক্রীড়নক হয় ও মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়, তারা কি কম দায়ি?

জনগণের অসতর্কতা, মুসলিম জনতার কোন্দল ও হানাহানিও কম নয়। যখন নতুন শাসকগোষ্ঠী যে কোনো ভাবে ক্ষমতায় আসে আর গরীব মানুষের রক্ত ও সম্মানের তোয়াক্কা না করে চরম নির্যাতন চালাতে থাকে তখন এক শ্রেণির লোক সময়ের তালে তালে সুর বদলায়, রঙ বদলায় নিমেষেই। তারা নতুন বাটপারের খাতায় নাম লেখায়। অথবা বড় বাটপারদের সহযোগী হতে এতটুকুও কুন্ঠিত হয় না। আশ্চর্যের ব্যাপার এ সমস্ত জনগণের রক্ত চোষা, জালিম, জোচ্চোর জাতীয় স্বার্থ হত্যাকারীদের বহিঃবিশ্ব মনে করে সাধু সন্নাসী, জনগণের রায়ে ক্ষমতায় আসে। এটা বিশ্বাস না করার কী কারণ থাকতে পারে? নচেৎ এরা ক্ষমতার পট পরিবর্তনে বার বার ক্ষমতায় আসে কী করে?

যে পদ্ধতিতে যেভাবে যে উপায়ে, কারচুপি করে বা প্রভাব বিস্তার কিংবা জোর খাটিয়ে ভোট প্রয়োগ হয়ে গেলে সে ভোটের ভিত্তিতে কেউ যদি এগিয়ে যায় আর নির্বাচিত হয় পরবর্তীতে সে কালিমা আর থাকে না। বিশ্ববাসী সে দিকে তাকায় না। সুতরাং জনগণ যদি সচেতন হতো ভোটাধিকার প্রয়োগে কুশলী হতো, নির্ভীক দেশপ্রেমিক, ধার্মিক ও সৎ লোকদের ভোট দিত, সংঘবদ্ধ হয়ে কারচুপি রুখতো, আর সে ভোটে সৎ, দেশপ্রেমিক ও খাঁটি লোকদের ক্ষমতায় বসাতো, অন্তত বহির্বিশ্বে দেশের মান মর্যাদা অনেকাংশে বেড়ে যেত।

আমাদের সকলের স্মরণ রাখা উচিত হবে যে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের আইডেনটিটি প্রকাশে ও ইসলামী জীবন বিধান পরিপূর্ণ অনুসরণের ঘোষণা না দিতে পারছি ও সে হিসেবে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে না পারছি ততক্ষণ আমাদের মর্যাদা বাড়বে না বরং কমবে বৈকি। কেন না প্রত্যেক জাতিই তার স্বকীয় ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েই বিশ্বব্যাপী মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের বেলায়ও সেটা শত ভাগ সত্য।

বাংলাদেশের নির্বাচন সবসময়ই এ জাতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনেক সময় আমাদের জন্য চরম বিপদের ঘন্টাধ্বনি হিসাবে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এটি যদি আমরা ধারালো তরবারির সাথে তুলনা করি তাহলে মনে হয় যথার্থ হবে। এই তরবারির সাহায্যে আমরা জাতীয় স্বার্থবিরোধীদের গলা কাটতে পারি। অথবা নিজেরাই কতল হয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারি। বিগত দিনের নির্বাচনের হাল হকিকত দেখে জনগণের একাংশ নির্বাচনকে ধোকাবাজি, ধাপ্পাবাজি, নোংরামী, মিথ্যা, নাপাকি এমনকি হারাম কাজ হিসেবে চিহ্নিত করতেও দ্বিধা করে না। তারা নিজেদের ভদ্র, অভিজাত, ধর্মভীরু হিসাবে মনে করে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে নিজেদের ও পরিবার পরিজনদের বিরত রাখতে সচেষ্ট হয়।

আলেম ওলামাদের বিশেষ করে কওমী আকিদার অনুসারীদের অনেকে ও তাদের পোষ্য নারী আরও অনেক অবচেতন অচেতন নারীদের সাথে যোগ দিয়ে ভোট ব্যাংকে স্বেচ্ছা প্রণোদিত ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে নির্লজ্জভাবে বিরত থাকে। তাদের ধারণা এগুলোর সাথে দ্বীন-ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। কী বিচিত্র অভিরুচি এদের? এরা সত্যের সাক্ষ্য দিতেও নারাজ। জঘন্য ভ্রান্ত ধারণা যা তাদের চিন্তা চেতনাকে আড়ষ্ট করে রেখেছে। এর পরিণতি যে কতই ভয়াবহ তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে।

ইরানের জিন্দাদীল মুসলমানেরা শাহের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে যদি সাহস নিয়ে রুখে না দাঁড়াতো তা হলে ইতিহাসের চাকা অন্য দিকেই ঘুরতো এটা বুঝিয়ে বলার দরকার হবে না। কেন না ভীরু ম্রিয়মান চিত্তের মুসলমানদের কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশে মুসলমানেরা যেন নিজ দেশে পরবাসী। নিশ্চয় অতীতে আমাদের গাফিলতির কারণে চরম মাশুল দিতে হয়েছে। যদি আমরা সময় এবং অবস্থার আলোকে সচেতন না হই তাহলে গোটা জাতিকে গ্রাস করে ফেলবে অনায়াসেই। বরং যে রাজনীতি টাউট টন্নিদের হাতে জিম্মি তাকে ছিনিয়ে আনা অতীব জরুরি।

এমনকি সময় সময় বিশেষ করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রাক্কালে সংঘবদ্ধভাবে সে সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ফরজ হয়ে যায়। নিরবতা পালন শত্রুর হাতকে শক্তিশালী করারই নামান্তর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক। এতদবিষয়ে কোরআন পাক ঘোষণা করছে, “তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম জাতি, তোমাদেরকে মানবতার কল্যাণের জন্য উত্থিত করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখ। এবং আল্লাহর উপর অবিচল থাক।” আপনি যদি হানাহানির ভয়ে কিংবা সন্ত্রাসের ভয় করে নির্বাচন থেকে দূরে সরে দাঁড়ান তাহলে প্রকারান্তরে জালিমদের পক্ষই নিলেন। রাসুলে মকবুল ছ. বলেছেন, “জালিম শাসকের বিরুদ্ধে হক কথা বলা উত্তম জিহাদ।”

ভোট সাক্ষ্য পর্যায়ের। স্বাক্ষী যদি সাক্ষ্য দেয়া থেকে বিরত থাকে কিংবা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়- দুটোই অপরাধ। ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। মনে রাখতে হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সাক্ষ্য দেয়া ইসলাম উচ্চ মর্যাদা দেয় ও খুব বেশি পছন্দ করে। বর্তমান হক ও বাতিলের দ্বন্দ্বে হকের পক্ষে রায় দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেই হিসাবে ভোট দেয়া উত্তম সাক্ষ্য। ভোট ত্যাগ করা পরহেজগারী অথবা ঈমানদারীর লক্ষণ নয়। ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকা সুস্থতার পরিচায়কও নয়। এতে আল্লাহদ্রোহী ফাসেক, মুনাফিক, বদমায়েশের হাতে গোটা ভোট ব্যাংক ছেড়ে দিয়ে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ সব ভীরু কাপুরুষ মেরুদ-হীন পূর্বসূরীদের অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্ম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।

অবাক লাগে যখন দেখি মানুষ ইসলামকে নিজেদের সুবিধামত করে বিভিন্ন তরিকা আর ফেরকায় বিভক্ত করে আল্লাহর দ্বীনকে ব্যবহার করছে। এ সব নতুন নতুন সৃষ্টি দ্বীন-ই-ইলাহী ও অন্যান্য কুফরী তরীকার চেয়ে কম নয়। মানুষ দ্বীনকে নামাজ রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। তারা কুরআনের কিছু মানে কিছু মানে না। অর্থাৎ, সুবিধা যেখানে আছে, নির্ঝঞ্জাট মনে হয় যে সব ব্যবস্থা সেগুলোতে পরহেজগারী খোঁজে। বেওকুপ ওই সব মানুষেরা। পাক কুরআনের ৬,৬৬৬ টি আয়াত ও ৩০ পারার মধ্যে মাত্র একটি পারার সমান বিষয় আলোচিত হয়েছে পাঁচটি মৌলিক বিশ্বাসকে নিয়ে। আর সেগুলো হল- ঈমান, নামাজ, রোজা, যাকাত ও হাজ্জ সম্পর্কে। তাহলে বাকী ২৯ পারায় কী আছে? সেগুলো কি রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, বিজ্ঞান ও অন্য সব বিষয়ে নয় ? পাক কোরআন বলে, “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং অপর অংশের সাথে কুফরী কর? যদি তাই কর তাহলে তোমাদের জন্য দুনিয়া ও পরকালে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে।”

আজকে যারা দ্বীন ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেখতে চায় সেটা কার নীতি? এটি কি রাসুল ছ. এর কোন বিধান ছিল নাকি তারা নিজেরা এরূপ তরীকা তৈরী করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ছ. নামে চালিয়ে দিচ্ছে।

একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে কুরআনের বৈজ্ঞানিক র্ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ছে উত্তরোত্তর। ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মত নিছক কোন ধর্ম নয়। “এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা”। সুতরাং, ইসলামের নামে ইসলামকে খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে? ইসলাম অবিমিশ্র কোন আদর্শের নাম নয়। এটি একটি একক, অখন্ড ও জীবন্ত বোধ বিশ্বাসের নাম। আর যারা নিজেদেরকে প্রচলিত রাজনীতির ধারক সাজতে গিয়ে ইসলামকে ব্যবহার করছে অথবা অবজ্ঞা করছে বা ইসলাম অননুমোদিত রাজনীতির গোড়াপত্তন করতঃ সে আদর্শের পক্ষে কাজ করা বা মৌন সম্মতি প্রদান করছে তিনি যেই হোন না কেন মুনাফিক হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন মিল্লাতের কাছে। এরা ক্ষেত্র বিশেষে কাফেরদের চেয়েও জঘণ্য। কেন না কাফেররা প্রকাশ্য শত্রু আর মুনাফিকরা ঘরের বিভীষণ। এদের সম্পর্কে সজাগ থাকুন। ওরাই দ্বীনকে জিকির ও ফিকিরের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছে। আর যারা রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি বিজ্ঞান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে দ্বীনকে উৎখাত করে তাগুত তথা অশুভ শক্তির অনুসারী সেজেছে, তারা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুশমন।

কুরআন বলে, “আমি রাসুলকে ছ. প্রেরণ করেছি হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে। যাতে করে বাতিল সকল মতবাদের উপর এটি বিজয়ী হতে পারে। কিন্তু মুশরিকদের তা পছন্দ হয় না।”

অনেকে ভোটকে আমানতদারী ও দায়িত্ববোধের পরিবর্তে গোষ্ঠীবাদ, আত্মীয়বাদ ও অঞ্চলবাদের নিগড়ে আবদ্ধ করে খেয়ানতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অথচ সুপাত্রে ভোট প্রদান সকলের নৈতিক দায়িত্ব ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সময় জাতিকে চরম মাশুল দিতে হয়।

কেউ কেউ বলে ভোট নষ্ট করে লাভ কি? তাদের দৃষ্টিতে যিনি নির্বাচিত হবেন না তাকে ভোট দেয়া মানে ভোট নষ্ট করা। এটিও একটি ভুল চিন্তা, কেন না বুদ্ধিমান লোক জেনে শুনে সঠিক মার্কায় ভোট দেয়ার পর সেটা নষ্ট হয় না। তার প্রার্থী জয়লাভ না করলেও সেটি শুদ্ধ ভোট হিসাবে গণনায় অন্তর্ভূক্ত হয়। তাদের ভোটই কেবল নষ্ট হয় যারা প্রতীক বরাবর না মেরে অথবা দুই প্রতীকে অথবা লাইনে সিল মারে কেবল তাদের ভোটই নষ্ট হিসাবে পরিগণিত হয়। সুতরাং, ন্যায়ানুগভাবে পরহেজগার দ্বীনদার,সৎ-সত্যনিষ্ঠ ও ইসলামী আদর্শবাদের সমর্থকদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর পবিত্র আমানত তথা সত্যের সাক্ষ্য হিসাবে পরিগণিত হবে।

আমরা কি আমাদের প্রিয় নবীর ছ. সংগ্রামী জীবনের দিকে একটু তাকাতে পারিনা? তিনি কীভাবে তিলে তিলে দগ্ধীভূত হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠায় অনঢ় থেকে দ্বীন ও মিল্লাতের জন্য শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে সত্য সাধনায় ব্যাপৃত ছিলেন। কোন হুমকি ধমকি কিংবা ভয়ভীতি, লোভ লালসা কোন কিছুতেই তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে এতটুকু পিছপা হন নি। বরং তিনি কাফেরদের কর্তৃক কাবা শরীফকে বিভক্ত করে ব্যবহারের আহবানের প্রেক্ষিতে দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, “হে আরবের কাফের মুশরিকরা, তোমরা জেনে রেখো মুহাম্মদের ডান হাতে যদি সূর্য আর বাম হাতে যদি চন্দ্রও এনে দাও তারপরও মুহাম্মদ আল্লাহর দ্বীন প্রচার থেকে বিন্দুমাত্র ক্ষান্ত হবে না।” অর্থাৎ, ইসলামকে খন্ডিত করে অবিমিশ্রভাবে ব্যবহারের কোন উদ্যোগেই তিনি সাঁয় দিবেন না। এটি তাঁর জীবনের শেষ কথা।

তাহলে আমরা নবীর উম্মত হয়ে ইসলামের দুশমনদের সাথে কীভাবে আঁতাত করি কিংবা হাত মিলাই? মনে রাখবেন ভোট যুদ্ধে নিজেকে নিবৃত রেখে পরহেজগার সেজে ভোট না দিয়ে অথবা অপাত্রে ভোট দিয়ে ইসলামের দুশমনদের হাতকে মজবুত ও শক্তিশালী করে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচতে পারবেন না। আমাদেরকে আমাদের সকল কাজের জন্য আল্লাহ তাঅালার দরবারে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং স্মরণ রাখা উচিত হবে যে, ইসলামী তরিকা বাদ দিয়ে যত সব চিন্তা চেতনা আমাদের মাঝে উদিত হয় সবই শয়তানের ধোঁকা বৈ কিছু নয়। প্রতিটি ভোটের মূল্য অনেক। মূর্খ, পন্ডিত, প্রেসিডেন্ট, কৃষক, রাজা, প্রজা সকলের ভোটের মূল্য এক। একটি ভোটের কারণে দেশ ও জাতির অভাবনীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সৎ, যোগ্য ও নীতিবান লোকদের ভোট দেয়া সকলের কর্তব্য।

সুতরাং দুটো লক্ষ্য সামনে রেখে বাংলাদেশের জনগণকে সবসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এক-সম আদর্শিক লোকদের নিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচন, দুই-যোগ্য, আদর্শবান ও সত্যনিষ্ঠ প্রার্থীদের নির্বাচিত করা। আর আমরা যদি একতাবদ্ধ হয়ে আদর্শবান প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রয়োগ করি তাহলে সমাজে সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠা অবিলম্বে সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। কেন না আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। আর সকলে মিলে যদি সৎ দেশপ্রেমিক ও চরিত্রবান লোকদের নির্বাচিত না করি তাহলে বর্তমান ধারার রাজনীতি বদলাবে কী করে? কীভাবে বিকশিত হবে গণতন্ত্র ও দেশের গঠনমূলক উন্নয়ন? কী করে ইসলামের কালজয়ী আদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে? সুতরাং, নিঃসন্দেহে একথা বলা যায় যে, মুসলমানদের এ দুর্দিনে, বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র আমানত। প্রত্যেকটি যোগ্য মুসলমান নর-নারীর জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে সৎ পাত্রে এর প্রয়োগ ফরজ বা বাধ্যতামূলক। কেন না প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনে ও গণতন্ত্র সুরক্ষায় ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। এর ব্যতিক্রম ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

বিষয়: বিবিধ

১৪৯৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

329874
১৪ জুলাই ২০১৫ রাত ০২:৫৫
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ১)অনন্য, অসাধারণ। খুবই ভাল লেগেছে প্রিয় ওসমান ভাই।

২)
329876
১৪ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:১৯
ওসমান গনি লিখেছেন : ধন্যবাদ মিনহাজ ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File