সংস্কৃতি-সভ্যতার নামে অনাচার
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ১১ জুলাই, ২০১৫, ০৬:১৭:৪৯ সন্ধ্যা
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করেছেন ও নির্দ্দিষ্ট উদ্দেশ্য-লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি তাও তিনি বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি মানুষ এবং জীন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” স্রষ্টার তরফ থেকে সাফ কথা শুধু ইবাদতের উদ্দ্যেশেই তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তবে আপনি মানেন কি মানেন না তা ভিন্ন কথা। আপনি কি তাগুতের অনুসারী হবেন, না আল্লাহর পথে চলবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আল্লাহর আইন মানতে ও কথা শুনতে আপনি বাধ্য, কেন না তিনিই আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।
এখন আসুন আল্লাহর ইবাদত বলতে কী বুঝায় একটু আলোচনা করি। মনে রাখতে হবে মানুষের জীবনের সকল কর্মকেই ইবাদতের মধ্যে গণ্য করা হয়। তবে সেটা আল্লাহর নির্ধারিত পথ ও পদ্ধতিতে হতে হবে। অর্থাৎ ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমানো পর্যন্ত, এমন কি ঘুম পর্যন্ত ইবাদতের মধ্যে গন্য অর্থাৎ সারা দিনের, সারা জীবনের সকল কর্মকান্ডে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই একমাত্র কাম্য ও ব্রত হওয়া চাই । মানুষ তার ইচ্ছামত বিকৃত উপায়ে অথবা ভুলপথে জীবন পরিচালনা করবে সেটা সৃষ্টিকর্তা চান না।
মোদ্দাকথা, ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর আধিপত্যের নিরঙ্কুশ আনুগত্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, আজকের দুনিয়ায় অশান্তি আর হানাহানির মূলেই রয়েছে স্রষ্টার পথ থেকে বিচ্যুতি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, মানুষ স্বপ্রণোদিতভাবে ও মনগড়া উপায়ে বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ সৃষ্টি করে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপর। এই ধর্মগুলোর মধ্যে একটি মাত্র সত্য ধর্ম থাকতে পারে নিশ্চয়ই। সেই একটি পথ কোনটি সুচিন্তিতভাবে বেছে নিতে হবে বিশ্ববাসীকে।
বাস্তবিকই মানুষের অতীত, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের একচ্ছত্র ধারণা নেই। অথচ হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে স্রষ্টা কর্তৃক মনোনীত যে ধর্মের শুভ যাত্রা শুরু হয়েছিল আর যে ধর্মের নাম ইসলাম তা এখনও অবিকৃতভাবে স্ব-মহিমায় ভাস্বর। শেষ নবী ও বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা স. এর মাধ্যমে তার সফলতা ও পূর্ণতা লাভ করেছে। সেই ইসলামের শাশ্বত পথে যদি মানুষ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ জীবনের সকল কাজ-কর্ম পরিচালনা করে, তাহলে বর্তমান বিশ্বে শান্তির নামে যে অনাচার ও সংস্কৃতির নামে যে বেহায়াপনা চলছে তা বন্ধ হতে বাধ্য। কেন না ইসলামী সংস্কৃতি সুন্দর, সত্য ও শুভত্বের পথে পরিচালিত। এ জন্য আমরা বলছি ষড়রিপুর উন্মাদনায় আড়ষ্ট মানব জাতিকে চির শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে হলে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ঘটাতে হবে।
আমরা কোনভাবেই সংস্কৃতিকে জীবন থেকে নিজেদের আলাদা করে দেখতে পারি না। সংস্কৃতি মানেই মানুষের জীবনাচার। তবে যৌন সুঁড়সুঁড়িমূলক ও উগ্র আচরণ সমৃদ্ধ অপসংস্কৃতি থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করা জরুরি। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের অনেক দেশ বহুগামিতা, মদ ও জুয়াকে তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তার অনিবার্য ফলশ্রুতিতে সে সব দেশে পিতৃ পরিচয়ের পরিবর্তে মাতৃ পরিচয় প্রাধান্য পাচ্ছে। এ সময়ে মদ, জুয়া ও প্রকাশ্যে বেশ্যাবৃত্তির জন্য পৃথিবীর অনেক দেশেই চরম অস্থিতিশীলতা ও হানাহানি বিরাজ করছে। জানা যায় খোদ আমেরিকাতে একই পরিবারের সদস্য সদস্যারা নির্যাতিত হচ্ছেন অন্য সদস্য-সদস্যা কর্তৃক। এমনকি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে পিতার নিকট মেয়ে কিংবা ছেলের নিকট মাতা। কী ভয়াবহ অবস্থা তা ভাবতেও অবাক লাগে। মনুষ্যত্ববোধ কত নিচে নেমে গেলে এরকম হতে পারে একটু চিন্তা করে দেখুন। খৃষ্টানেরা নিজেদেরকে ঈসা আ. এর উম্মত বলে দাবি করেন। অথচ তাদের নবী কর্তৃক নিষিদ্ধ যৌন উন্মাদনাকে তারা তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে পাশ্চাত্য জগতই যৌনাচারকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েদেরকে অবাধ স্বাধীনতার নামে নেংটি পরিয়েছে। তৃতীয় বিশ্বেও এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে। আর প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের অনেক দেশে মহিলাদের উশৃংখল চলাফেরার কারণে যত সব লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ থেকে শুরু করে হত্যাকান্ড পর্যন্ত সংঘঠিত হচেছ অহরহ। এর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে মুসলমানদের জন্য। একত্ববাদের নিগড়ে আবদ্ধ মুসলিম জাতির জন্য এ সব কিছু নিষিদ্ধ। ইসলাম যৌনতাকে হারাম করে দিয়েছে। অবৈধ যৌনাচারের শাস্তি সর্বোচ্চ। এটা আল্লাহর বিধান। দূর্ভাগ্যের বিষয় এই কর্মটিকে আধুনিক সভ্যতা ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তুলেছে নির্লজ্জের মত। এই একটি কারণেই লুত আ.এর জাতিকে আল্লাহতাআলা পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। ইতিহাস এর সাক্ষী।
মেক্সিকো ও কলম্বিয়া রাষ্ট্রে মাদক চোরাকারবারীদের দাপট ও সামাজিক অনাচার ও হত্যাযজ্ঞ কত জঘন্য আকার ধারণ করেছে তা পত্র-পত্রিকায় প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে। যৌন সংস্কৃতির নামে যৌনাচার ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী আকারে আর তার ফলে এইডস মারণাস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী এইডস আক্রান্ত রোগী। আফ্রিকা মহাদেশে এইডস মহামারী রূপ পরিগ্রহ করেছে এবং ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। সৌভাগ্যের বিষয় মুসলিম দেশসমূহে ইসলামের যৎকিঞ্চিত আদর্শ অনুসরণের সুবাদে এইডস এর প্রকোপ প্রায় নেই বললেই চলে। তারপরও মুসলিম বিশ্ব ধীরে ধীরে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের যৌনবাদী সংস্কৃতির ছোবলে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা হুশিয়ার করছেন।
মনে রাখতে হবে নারী পুরুষের অবাধ ও অবৈধ মেলামেশাকে ইসলাম সম্পূর্ণরূপে হারাম করে দিয়েছে। তথাপি নারীরা তাদের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে সংস্কৃতিসহ জীবনের সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বাধা নেই। তবে সকল ক্ষেত্রে উগ্রতা পরিহার করত: মধ্য পন্থা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। পাক কুরআনে আল্লাহ মুসলিম জাতিকে মধ্যপন্থী জাতি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। যে জাতি সত্য ও সুন্দরের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এবং যে পথ চির শান্তি ও কল্যাণের পথ হিসাবে পরিচিহ্নিত হয়েছে। আমরা মানব জাতিকে উর্ধালোকের আলোক দেশের বাণী চিরন্তনীর পথে ফিরে আসার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। কেন না ইসলাম প্রাকৃতিক ধর্ম হিসেবে বিবেচিত আর ইসলামে সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশের সুন্দর ব্যবস্থাপনা রয়েছে।
কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় এক শ্রেণির মানুষ লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে এমন সব আচরণ করছে যা শুনলে অবাক হওয়ার মতোই। বর্তমানে পাশ্চাত্যে হাজার হাজার উলঙ্গ নর-নারীর ক্লাব রয়েছে। যত সব নোংরামী, অপকর্ম আর পশুবাদী কাণ্ড-কারখানা ঘটছে সেখানে। তারপরও তারা বলে এটা নাকি সভ্যতা, এটি তাদের অধিকার। কী বিচিত্র অভিরূচি এদের। আমেরিকার মত তথাকথিত সভ্য দেশে সম গোত্রীয় বিয়ে বৈধ। সম্প্রতি মেক্সিকোতেও এরকম একটা আইন পাশ হয়েছে। এভাবে চরম উচ্ছৃঙ্খলতা চলছে সেসব দেশে। তার অনিবার্য পরিণতিতে পাশ্চাত্যে খৃষ্টানদের জন্মের হার সর্বনিম্ন। ওসব দেশে লক্ষ লক্ষ বন্ধ্যা নারী আছে যারা কোন সন্তান নিতে পারেন না। আবার এমন মহিলার সংখ্যাও কম নয় যারা ইচ্ছে করে সন্তান নিবে না। সারা জীবন ফুর্তি করে কাটাবে। কী অভিনব চিন্তা-চেতনা। তাহলে মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটবে কী করে?
বিশেষজ্ঞরা বলছে জনসংখ্যায় অসমতা তাদের দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে অদূর ভবিষ্যতে। বিশেষ করে সাদা চামড়ার লোকদের ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রযোজ্য। ফ্রান্স সরকার অকাতরে স্বীকার করে যে, জনসংখ্যার স্বল্পতার জন্য দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে তাদের পরাজয় হয়েছে। ইংল্যান্ড, সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের মাদেরকে বেশি বেশি সন্তান নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। টনি ব্লেয়ার চার সন্তানের জনক। সিঙ্গাপুর জনসংখ্যা স্বল্পতায় অস্থির। তাইতো ইসলাম শাশ্বত কথাই বলে, ”অভাবের তাড়নায় তোমরা ভ্রুণ হত্যা করো না”। সত্য কথা হলো মানব সন্তান শুধু পেট নিয়ে জন্মায় না তাদের দুটো হাতও আছে।
ভারত তাদের দেশে সংস্কৃতির নামে লক্ষ লক্ষ উদাম নারী রাস্তায় নামিয়েছে। ক্লিনটন যখন ভারতে আসে তখন সুন্দরী ললনাদের কাঁঠাল গাছে কাঁঠাল ধরার মতই তার গলায় কাঁধে পিঠে ঢলাঢলি দিতে দেখা যায়। ক্লিনটনদের এগুলো খুব পছন্দ। নেংটি পড়া উচ্ছৃঙ্খল নারীদের দিয়ে শত শত টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষদের বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুন-তরুনীদের নৈতিক পদস্খলনের দিকে ধাবিত করছে দেশটি। অর্ধ-উলঙ্গ মেয়েদের দিয়ে নাচা নাচি কুদা কুদি এখন ভারতীয় চ্যানেলের প্রধান আকর্ষণ। মুসলমানরো হচ্ছে এ চ্যানলেগুলোর অন্যতন গ্রাহক।আমরা জানতে পেরেছি ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশসমূহ এখন ভারতীয় পর্নো ছবির প্রধান বাজার।
ভারতের অনেক রাজ্যে মেয়ে ভ্রুন চিহ্নিত হওয়ার পর ভ্রুন হত্যার কারণে মেয়ে সন্তানের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যার ফলে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে দেশটতি। ইসলাম মেয়ে কিংবা ছেলে সবাইকে সম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বরং মেয়েদের সম্মান খানিকটা বেশিই। তাছাড়া চীনেও এক সন্তান নীতির কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ভূমিকম্পে হাজার হাজার শিশু সন্তান নিহত হওয়ার কারণে তাদের মা বাবাদের আর্ত চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
ইসলাম ভ্রুণ হত্যাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এটি অপসংস্কৃতি, মানব হত্যার এ সংস্কৃততিে মুসলমানদের চরম আপত্তি আছ। এ বিষয়গুলো আলোচনায় আনার অন্যতম কারণ হলো মানুষের আচার আচরন, চিন্তা চেতনাই তো তাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। এ রকম ধ্বংসকারী সংস্কৃতি যদি ছড়য়িে পড়ে তাহলে মানব সভ্যতার বেদিমূলে কুঠারাঘাত করা হবে । এসব অপ সংস্কৃতি যদি র্সবত্র ছড়য়িে পড়ে তাহলে র্সবনাশ হয়ে যাবে ।
পাশ্চাত্য জগত ও ভারতীয়রা তাদের নাটক সিনেমায় সংশয়বাদ, উদ্ভট বিষয় ও অস্থিরতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। গতির নামে দুর্গতি বরণ করছে ওরা। তারা যত সব কাল্পনিক ও আকাশ কুসুম বিষয়কে নাটক সিনেমার উপজীব্য হিসাবে গ্রহণ করছে। বাস্তবতা বিবর্জিত চিন্তা-চেতনাকে উত্থাপনের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের সর্বনাশ করছে। আশ্চর্যের বিষয় নাটক সিনেমার মাধ্যমে পাশ্চাত্য ও ভারতীয় কুচক্রি মহল ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার কোশেশ করছে।
এদের প্রচার মাধ্যমগুলো এতই শক্তিশালী যে, এরা তিলকে তাল করতে পারে। উস্কানী দিয়ে দাঙ্গাও লাগিয়ে দিতে পারে, মিথ্যাকে সত্যের মত চালিয়ে দিতে পারে গোয়েবলসীয় কায়দায়। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের চার শত টিভি চ্যানেল তাদের দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এটা তো অন্যায়। ভিন্ন মতের বিষয়কে অগ্রাহ্য করা অসহনশীল ও উন্নাসিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের মিডিয়া তথা টিভি চ্যানেলগুলো ভারত নিবে না। অথচ তাদের যৌনবাদী নিকৃষ্ট মিডিয়াগুলো আমরা অহরহ গিলছি। আমাদের লাজ লজ্জা বলতে কিছুই নেই। এর প্রতিকার হওয়া দরকার। সুস্থ বিনোদনের স্বার্থে নতুন নতুন দেশীয় চ্যানেল সৃষ্টি হওয়া উচিৎ এবং সে সমস্ত চ্যানেলে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের আলোকে নিজস্ব সংস্কৃতির লালন করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য। বন্ধ হওয়া চ্যানেলগুলো খুলে দেয়া উচিৎ।
বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্ব থেকে তেমন একটি চ্যানেল নিতে চায় না। অথচ ৫৭ টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হাজার হাজার টিভি চ্যানেল চালু আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও মুসলমানদের দ্বারা সুস্থ বিনোদন চ্যানেল চালু আছে। তাদের সাথে আমাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের সাযুজ্য ও চিন্তা চেতনায় মিল রয়েছে। সে হিসেবে কিছু কিছু দেশ থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল আমাদের দেশের দর্শকদের দেখার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া ও মালশেয়িার নাম উল্লেখ করা যায়। দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, এখন এমন সময় যে, উলঙ্গপনা যত বেশী তাদের জনপ্রিয়তাও যেন তত বেশি।
মনে হয় মানুষের রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই জাতীয় স্বার্থেই এদেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে শালীনতার মানদণ্ডে বাছাই করে সুস্থ ও সুন্দর বিনোদনের ব্যবস্থা উপহার দেয়ার মতো তৈরি করা জরুরি। কিন্তু সেটা কে করবে? রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে কি বাঁচার কোন উপায় থাকে? আমরা সরকারকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাবো যে, সংস্কৃতির নামে দেশে যে অপসংস্কৃতির মহাযজ্ঞ চলছে তার থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্যে ও তা নিয়ে গভীরভাবে ভাববার জন্যে। কেন না সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়া জাতির বাঁচার কোন উপায় নেই এবং এর কোন বিকল্পও নেই তা কি বুঝিয়ে বলার দরকার আছে?
এ সময়ে সারা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যাবে পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে সচেতন বিশ্ব অতিষ্ট। তারা সংস্কৃতি চর্চার অন্তরালে ধর্মীয় প্রচার, আদর্শিক প্রচার ও জাতীয়-রাষ্ট্রীয় চিন্তা-চেতনাগুলো উপস্থাপনেও পারঙ্গম। সংস্কৃতির অন্তরালে কি যে সব চলছে একটু মনোযোগ দিলেই প্রতিভাত হবে। ডিসকভারী চ্যানেল, জিওগ্রাফিক, এনিমেল প্লানেট চ্যানেল ও ফক্স হিস্ট্রি চ্যানেল সহ অসংখ্য ভারতীয় চ্যানেল ইংলিশ চ্যানেলের মোড়কে ইংরেজী ভাষাবাসীদের ব্যবহার করে তাদের দেশের জাতীয় আদর্শ, ধর্ম, সামরিক, কুটনীতি প্রচার ও শত্রু রাষ্ট্রের বিরূদ্ধে অপপ্রচারে অহরহ লিপ্ত।
বিশ্ব সমাজ এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের তাণ্ডব অবলোকন করছে। অপসংস্কৃতির অনাচারে যুব সমাজ তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে। বিশ্ব জুড়ে একটি বিকলাঙ্গ, মেধাহীন ও অসুস্থ সমাজ পঙ্গপালের মতো ধেয়ে আসছে, যার পরিণাম হবে ভয়াবহ। বাংলাদেশও এ সব অপসংস্কৃতির যাঁতাকলে নিস্পৃষ্ট হচ্ছে। এ দূর্যোগ থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য শিক্ষিত সমাজকে বিশেষ করে সংস্কৃতিসেবীদের সজাগ থাকতে হবে, নিতে হবে দায়িত্ব। এহেন পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সত্য ও সৌন্দর্যের পুজারী হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশেষ করে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতিসেবীদের আন্তরিক কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের এবং এ জাতিকে এই মহা দুর্যোগ তথা তাগুতী তান্ডব থেকে বাঁচাতে হবে। রুখতে হবে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ। নতুবা জাতি হিসাবে আমরা কোনক্রমেই মাথা উঁচু করে দাড়াতে সক্ষম হব না। কেন না অনৈতিক, উশৃংখল ও যৌনবাদী সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধ্বংস অনিবার্য, এমন কি এ সব নোংরামির ধর্মীয় দৃষ্টিতেও একদিন বিচার হবে, দুনিয়াতে না হলেও পরকালে নিশ্চয়ই।
---------------০----------------
বিষয়: বিবিধ
১৭৭২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন