বন্ধন
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ০৫ জুলাই, ২০১৫, ০৮:০৩:১২ রাত
ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার স্থপতি ড: সুকর্নো বলেছিলেন “ আমি তারুণ্যদীপ্ত, সৎ-সত্যনিষ্ট ১০ জন ইন্দোনেশিয়ান যুবক পেলে সারা পৃথিবীকে তোলপাড় করে দেব ”। অপরপক্ষে আধুনিক মালেশিয়ার রুপকার ড:মাহাথির মুহাম্মদ এক ধাপ এগিয়ে বললেন “ আমাকে ১০ জন প্রতিশ্রুতিশীল,সৎ-সত্যনিষ্ট ও তারুণ্যদীপ্ত মালয় যুবক দেন আমি বিশ্ব জয় করে ফেলব।” এদের দুজনের কথাতেই সততা আছে, সত্যতা আছে, এটা জোর গলায় বলা যায় । আমাদের বিশ্বাস ঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ এ পৃথিবীতে তরুনেরাই কেবল পারে শান্তিময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে ও পৃথিবীকে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে। তবে এটাও সত্য যে সেজন্য চিরন্তন আদর্শের ছোঁয়া লাগবে ,অনুশীলন ও অনুসরন লাগবে সেই আদর্শের অবলীলাক্রমে। তবে সত্য ও শুভত্বের স্পর্শ যথার্থ সময়ে না লাগলে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে জানার ঘাটতি থেকে যায়। আমাদের অনেকের জীবনও একসময় তারুন্যের উচ্ছাসে ভরা ছিল তবে সৎসংগের অভাবে জীবনের রূপ-গন্ধ ভাল করে উপলব্দি করতে পারিনি তখন, আর সেই সুবাধে ভবঘুরের মত ঘুরতে হয়েছে মরীচিকার পেছনে ও স্বার্থবাদের মিছিলে দিনের পর দিন। তখন মনে হতো এখানেই সব সুখ-শান্তি , আর এতে দোষের কিছু নেই।
নিজেদেরকে অযাচিত ভাবে জাহির করার খায়েস আমাদের পেয়ে বসেছিল অক্টোপাশের মত। আমাদের চৈতন্যে বৈকল্য ধরেছিল । অবক্ষয়ের জোয়ারে তরী উঠিয়ে জীবনের সুখ খুজছিলাম । বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে নকল জীবনের বন্ধন অগ্রাহ্য করে সত্যবাদের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার সাহস ও যোগ্যতা কোনটাই আমাদের ছিলনা। তথাকথিত তন্ত্র-মন্ত্রের মায়াময় ছদ্মাবরণে অবরুদ্ধ হয়ে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়িয়েছি দিকবেদিক অসুন্দর ও অকল্যাণের পেছনে। ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি , জানতে পারিনি জীবন সত্য, মহাসত্যের উৎস কোথায় কিম্বা সৃষ্টি রহস্য ,জীবনের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য বা জীবনের পরপার সম্পর্কে । বহুকাল কেটেছে এভাবে, অবশেষে এক সময় ধ্বংসের কিনারে এসে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে দয়াময়ের দয়ায় বোধের জগতে সত্যবাদের শীতল হাওয়া বইতে শুরু করলো তখন বুদ্ধিদীপ্ত প্রত্যয়ে কাপালিক সভ্যতার সাময়িক বিচ্ছিন্ন আমোদ প্রমোদ আর নিছক দুনিয়াদারীর তথাকথিত আকাশচুম্বি সফলতার বন্ধন চিরতরে ছিন্ন করে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার সুবর্ণ সূযোগ হাত ছাড়া করা গেলনা। এটা নিছক আল্লাহর রাহমত বৈ কিছুই নয় ।
আমাদের এ বন্ধন ছিন্নের প্রতিজ্ঞা ছিলো নতুন বন্ধনের উচ্ছাস আর প্রেরণায় উদ্ভভাসিত, কারো কাছে তা ভালো লেগেছে আর কেউ মুখ ঘুরিয়েছে চিরতরে। তবে আমাদের এতটুকু ভয় ও দু:খ বোধ নেই তাতে। আমাদের নবী হযরত ইব্রাহীম (আ) একদা তারকারাজি এমনকি উজ্জল চন্দ্র ও প্রকান্ড আলোক পিন্ড সূর্যকে প্রভূ ভেবে ক্ষনিকের জন্য বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু যার উপর দয়াময়ের করুনাসিক্ত ভালবাসা রয়েছে সে কি ভ্রান্তির বেড়াজালে অবরুদ্ধ হয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে চিন্তা চেতনায় আড়ষ্ট হয়ে চলতে পারে চিরদিন? না তা কষ্মিন কালেও সম্ভব নয় , তাইতো শেষ পর্যন্ত আমাদের নবী বললেন তারকারাজি, চন্দ্র, সূর্য সবইতো দেখি উদিত হয় আর অস্ত যায়। এভাবে সবকিছুরই লয় আছে নিশ্চয়ই। সুতরাং সেসব বস্তু আমার প্রভূ হতে পারেনা। শেষ পর্যন্ত নবী ইব্রাহিম (আ) তার স্রষ্টার সন্ধান পেলেন। তিনি ধন্য হলেন, ভ্রান্ত পথ থেকে সত্য পথে ফিরে আসলেন। এটি কুরআনের সত্য বলা ইতিহাস , মুমিনের প্রেরণার উৎস বিধান,এতে আমরা উজ্জীবিত হই,সত্য সন্ধানে উদগ্রীব হই অনেক বেশী।
আমাদের প্রতিজ্ঞা এখন থেকে নতুন বন্ধনের কথাই বলবো শুধু। কেন না এ বন্ধন আকাশমালার মহারাজার অমোঘ বানীর দৃপ্ত আহবানে উদ্দিীপ্ত হয়ে সাড়া দেয়ার বন্ধন, মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন, সৌর্হাদ্যের, সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আমরা জানি জীবনকে ঘিরে বেতাল আর মিথ্যা প্রবঞ্চনার মহড়া চলছে তা ভঙ্গুর-ক্ষণস্থায়ী। তাগুত সেখানে প্রতিপাদ্য বিষয়। লক্ষ্যহীন আপাত সুখ ও স্বাচ্ছন্দের হাতছানি হয়তোবা কোন কোন মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে, তবে প্রকৃত বোদ্দা -যোদ্ধাদের হাতে শেষমেষ অবাঞ্চিত শক্তির মহা প্রয়াণ ঘটে এটাই বাস্তবতা। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যপানে ধাবমান দৃঢ়চেতা বিশ্বাসী মানুষেরই জয় হয়। শুরুতে বন্ধন ছিন্নের কথা বলেছিলাম । জানতে হবে কিসের বন্ধন । তা কি অশুভ চক্রের বন্ধন? হ্যাঁ তাই। কে না জানে সৃষ্টির আদি পিতা আদমের (আ) জাত শত্রু ইবলিস একনিষ্ঠ ভাবে আদিকাল থেকে বিরুদ্ধবাদীর মত বিভ্রান্ত করে চলেছে এক খোদার বিশ্বাসে আসক্ত-অনুরক্ত বনি আদমেরে। নিশ্চয়ই শুভ অশুভের এ দ্বন্দ্বে শুভত্বের জয় হয়েছে চিরকাল। তবে মেকী সভ্যতার এ মিছিলে অশুভ চক্র বসে নেই একটুও । এদের প্রধান সেনাপতি ইবলিশ। তবে ভয় নেই তাদের যারা শাশ্বত সত্যের সমর্থক।
মহা সত্যের স্বপক্ষে জনতার টালমাটাল মিছিল শুরু হোক আবার। বীর যোদ্ধা মুক্ত বুদ্ধির প্রবক্তা, মহা মুক্তির পানে, মোহময়তার বন্ধন ছিন্ন করে, সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবার দৃপ্ত শপথ নেবে ,ভয় নাই তার কলিজায় । আল্লাহর বাণী “অম্লান শান্তির পথে ইসলামের এ দীপ্তাকাশে এসো হে বিশ্বাসী এসো আনন্দ পূর্ণ আশ্বাসে।” সত্য ও ন্যায়ের পথে জাগ্রত জনতার কাতারে মহাসত্যের সন্ধানে দৃপ্তকন্ঠ আমাদের। আমাদের অন্তরাত্মায় জ্বলছে যে আলো আমাদের মনস্পটে ভাসছে যে ছবি সেতো উর্ধাকাশের আলোক দেশের বানী চিরন্তনী। জানি সত্য সে বানী মানি না কেন জানি না। আত্ম প্রবঞ্চক হই নিজের অজান্তেই। এতো আপন অস্থিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
আমরা জানি এমনিতেই এ দুনিয়ায় আগমন ঘটেনি মোদের। একটি পরিকল্পিত মিশনে জীবন দান করলো আর পাঠালো হেথায় যে স্বত্বা তাকেই মোরা হন্যে হয়ে খুজছি। এ জীবন নশ্বর পিছু টানছে সবই। আমরা অসহায় একটি মশকের কাছে, আমরা বিব্রত একটি পিপীলিকার কাছে। আর আমার নবী বলেন “এ পৃথিবীর মূল্য যদি একটি মক্ষিকার ডানার মতও মনে হতো সে সত্বার কাছে, যার হাতের মুটোই বিশ্ব জহানের সকল ক্ষমতাই নিবদ্ধ, তাহলে তিনি অস্বীকারকারী ও অংশীবাদীদের এক ফোটা পানিও পান করাতেন না”। অথচ এ মূল্যহীন পৃথিবীর সুখ আহলাদে আমরা বিভোর । তাই সে সত্ত্বার খোঁজে ও সে পথে আমরা নিবেদিত থাকতে চাই ,চলতে চাই নেয়ামত প্রাপ্তদের পথে, অভিশপ্তদের পথ থেকে পানাহ চাই ।
ধিক্ তাদের যারা মহাসত্যকে অস্বীকার করে, লাঞ্চিত , পদদলিত ও অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস দেখায় । ধিক্ তাদের যারা ঐশী বিধানের বিপরীতে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে প্রকাশ্যে অথবা অপ্রকাশ্যে নিজেদের মর্জি খাটায়। মনে রাখতে হবে সত্য এক ও অভিন্ন যার নাই একাধিক পথ, বিনাশ কিংবা খন্ডিত কোন রূপ। হ্যাঁ যে পথ জাহান্নামের যার প্রদর্শক তাগুত সেটি তো আমাদের পথ নয়। কেন না সত্য এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট । আল্লাহ বলেন “ সত্য সমাগত মিথ্যা হোক অপসৃত বস্তুত মিথ্যা অপসৃত হবেই।”
এ বন্ধন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানবতার স্বপক্ষে। আমাদের বন্ধনে যারা,তাদের প্রাণ স্পন্দন জাগুক ঘুমের পাড়া। এখানে কি নেই কোন বনি আদম সিপাহসালার যারা ডাকবে সকলেরে ডাহুকের বেশে। নতুন ধারার স্রোতধারা সৃষ্টি করবে যারা তারা নির্ভীক বহুমাত্রিক সৈনিক নিরহংকার। দেবে হুংকার বারংবার ঘুমের ঘোরে আছে যারা তাদেরে। মনে রাখতে হবে একটি কাপালিক সমাজে অর্থ যেখানে উপলক্ষ, ক্ষমতা যেখানে মানদন্ড সেখানে একই উদ্দেশ্যে লক্ষ্য ও আদর্শের মানুষ গুলোকে খুব কাছাকছি এসে সদর্প চিত্তে দাড়াতে হবে সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়, এটাতো বাস্তবতা । যে বন্ধন সত্যের জয়গান গায় , মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বানী শুনায় ,শাশ্বত সত্যের নিশানবরদার যে সিপাহসালার তার মৃত্যু নেই। সে বন্ধন চির উন্নত চির জাগরুক থাকুক তার শিখা। এ বন্ধন চিরন্তন ,আর এ বন্ধনের বিশ্বাসে-নিশ্বাসে মানবতার স্বপক্ষে সত্য ও সুন্দরের দৃপ্ত প্রদীপ্ত ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হোক এই আমাদের কামনা।
আমাদের বন্ধন সকল বন্ধ্যাত্ব, দু:খ ও গ্লানি ঘুচিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে চলুক, অশান্তি ও অশুভ সত্ত্বাকে অগ্রাহ্য করে অধ:পতিত ও নিগৃহীত মানবত্মার কল্যাণকামিতায় ব্রতী হোক এটাই বাঞ্চনীয়। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এ সত্য উচ্চারণে ও অনুরণনে, পরমত সহিষ্ণুতায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় উজ্জীবিত হই ও আন্তরিকভাবে কাজ করি সকলে মিলে। আমাদের এ বন্ধন প্রয়াস কাল কালান্তর জাগরুক থাকুক। বন্ধন সকলের অন্তরাত্মাকে জাগিয়ে তুলুক,সকল ঝঞ্জাল, অন্ধকার আর অসত্যের মূলোৎপাটনে সাহসী ভূমিকা পালন করুক । এ বন্ধন সকলের মাঝে দৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি করে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সত্য ও সুন্দরের পথে অটুট থাকুক ও তৃতীয় নয়ন হিসাবে বীর দর্পে এগিয়ে চলুক এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি ।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। পোস্টটি এডিট করে ইমো গুলো তুলে দিয়ে, (সা), (আ) এই ভাবে দরুদ সংক্ষেপ গুলো দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন