মানব প্রেম
লিখেছেন লিখেছেন ওসমান গনি ০৪ জুলাই, ২০১৫, ০২:২৫:৪১ দুপুর
মানুষ সৃষ্টির সেরা। আশরাফুল মাখলুখাত। মহান স্রষ্টা করুণা করে তাঁর অস্তিত্ব প্রকাশের অভিলাষে মানব জাতিকে পয়দা করেছেন। উপরন্তু তাঁর সমস্ত সৃৃষ্টির মধ্যে তিনি মানব সম্প্রদায়কে সৃষ্টির সেরা হিসাবে মর্যাদা দান করেছেন ও সে হিসাবে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন। তাইতো তাদেরকে সুন্দরতম দেহ অবয়বে এবং অফুরন্ত বুদ্ধিমত্তা আর জ্ঞান-প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্ত সৃষ্টিকে তাদের অনুগত করে দিয়েছেন ও অপরাপর সৃষ্টির উপর কর্তৃত্ব দান করেছেন। এর থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় মহান রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে কতটুকু ভালবাসেন। এক কথায় বলা যায় মানব প্রেমে বিভোর হয়ে তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন ও পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। মানুষের মধ্যে প্রেম ভালবাসার যে অনুপম আদর্শ ও নিদর্শন লক্ষ্য করা যায় তা তাঁরই নিকট থেকে উৎসারিত।
মহান স্রষ্টা যেমন মানুষকে অকৃত্রিম ভালবাসেন তেমনি মানুষের মাঝেও মানব প্রেমের মহান আদর্শ উজ্জীবিত হওয়া একান্ত দরকার। মানুষ যদি মানুষকে প্রকৃত অর্থে ভাল না বাসে ও ভাল মন্দ বিচারে কিছুটা ছাড় দিতে রাজি না হয় তাহলে আমাদের এ অতি সুন্দর ধরনীতলে শান্তির সুবাতাস বইবে কি করে ? উপরন্তু অশান্তির দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে সর্বত্র। তাই বলা যায় মানব প্রেমই হল সকল সৎকর্ম আর বিশ্বাসের ভিত্তিমূল। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলতে হয় যে মানবতার প্রতি দরদি মন আর কল্যাণকামিতার মধ্যেই মানবজাতির সুন্দরতম ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। কবির ভাষায় যদি বলি “সকলে আমরা সকলের তরে, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"।
আল্লাহতায়ালা মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন“তোমরাই দুনিয়ার সর্বোত্তম জাতি তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের নিমিত্তে উত্থিত করা হয়েছে , তোমরা সৎ কাজের আদেশ কর ও অসৎ কাজ থেকে লোকদেরকে বিরত রাখ এবং আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান আন”। এটা আল্লাহরই নির্দেশ যে মানুষের কল্যাণে মানুষকে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে ,আর মানব প্রেম ব্যতিরেকে এটা কখনও সম্ভব নয় । এমনকি মানব প্রেম ছাড়া দুনিয়াতে কোন মহৎকাজই সুসম্পন্ন হতে পারে না। কেননা জীবনের এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সত্য ও ন্যায়ের স্বপক্ষে জীবন পরিচালিত করতে হলে এর কোন বিকল্প নেই। মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধই কেবল পৃথিবী থেকে হানাহানি, সংঘাত আর সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারে। কালো আর ধলোর ব্যবধান ঘূচিয়ে “কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রাঙ্গা”এই মহান বাণী অনুরনণের মাধ্যমে বাহিরের ভেদ-বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে যথার্থই মানব প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বিশ্বকে কল্যাণকর কিছু দেয়ার বাসনা থাকতে হবে।
পৃথিবীতে যা কিছু মহান, যা কিছু কল্যাণকর তার সবকিছুই মানব প্রেমের মহান আদর্শে বিভূষিত। তাজমহলের কথা কি কেউ কখনও ভূলতে পারে? সম্রাট শাহজাহান ও তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের প্রেমময়ী জীবন গাথাঁর স্মৃতি চিহ্ন হলো পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল । আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মানব প্রেমে উজ্জীবিত মানব সম্প্রদায়ই কেবল জাতিতে জাতিতে সংঘাত ও দেশে দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ থামাতে পারে। এ যেমন সত্য কথা তেমনি মানব প্রেম বিবর্জিত আজকের দুনিয়ায় বসনিয়া, চেচনিয়া, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন সহ গোটা বিশ্ব ব্যাপী যে মানব রক্তের হোলি খেলা চলছে তা মানব জাতির জন্য তথাকথিত সভ্য দুনিয়ার জন্য কলংক বৈ কিছুই নয়। সত্য ও চির শাশ্বত কল্যাণকর মহামুক্তির মহিমান্বিত যে আলোকবর্তিকা মানব জাতির সম্মুখে দেদীপ্যমান তা যদি আমরা অস্বীকারের মাধ্যমে মানববন্ধনকে ছিন্ন করে মানবপ্রেমহীন নুতন নিরাপদ পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখি তা কষ্মিনকালেও সফল হতে পারেনা। পৃথিবীর অস্থিতই তখন বিপন্ন হবে । এমনকি প্রাচ্য প্রাতিচ্যের দাম্ভি¢ক, অত্যাচারী শাসক গোষ্টি নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে চলেছে দিনের পর দিন। অথচ পৃথিবী নির্বিকার। নির্বিকার তথাকথিত জাতিসংঘ আর বিশ্ব মোড়লেরা। তার একটিমাত্র কারণ আর তা হলো প্রকৃতপক্ষে ওদের কাছে কোন মনুষ্যত্ববোধ নেই, নেই বৈষম্যহীন মানব প্রেম ।
পৃথিবীতে দুই দুইবার বিশ্ব যুদ্ধসহ যত বিপর্যয় সংগঠিত হয়েছে তার কোনটিই মুসলমানেরা সংগঠিত করেনি । এর মূলে রয়েছে খৃষ্টান ও অন্য জাতিসমুহের অন্যায় বাড়াবাড়ি তথা আধিপত্য বিস্তারের মহড়া । আমেরিকা অনবিক বোমা ফাটিয়েছে জাপানে ,বিনা অজুহাতে ইরাক-আফগানিস্তনকে দখল করে ধ্বংস করেছে । এর পরও তাদের শান্তি নেই। পরবর্তী টার্গেট পাকিস্তান! বলতে গেলে ন্যায়ের পথে ধাবমান যে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রই তাদের টার্গেট। বস্তুত প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ধর্মহীন সমাজে পরকাল বলতে কিছুই নেই । যা কিছু চলছে লোক দেখানো ধাপ্পাবাজি । এখন ধর্ম নিয়েও মানুষ মহা সংকটে নিপতিত । পৃথীবিতে চলমান প্রত্যেক ধর্মকেই স্ব স্ব ধর্মের অনুসারীরা সত্য ধর্ম বলে দাবি করছে । আর্শ্চযের ব্যাপার হলো এতগুলো সত্য ধর্ম কিভাবে একসাথে হতে পারে বুঝে আসেনা? কেন না আমরা জানি সত্য এক ও অভিন্ন। স্রষ্টা যদি একজনই হয়ে থাকেন তার ধর্মও হবে একটি। তাহলে এত ধর্ম আসলো কোত্তেকে? এজন্য মানব জাতির উচিৎ হবে অনুসন্দিৎসু মন নিয়ে গবেষণা করে সত্য উৎঘাটন করা । নচেৎ মিথ্যাবাদি হিসাবে মানবজাতির বড় অংশ পরিচিহ্নিত হবে নিঃসন্দেহে। আমরা মনে করি হিংসা বিদ্বেষের প্রধান কারণ হলো পরকাল সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারনা ও অসত্য ধর্মের নামে যুদ্ব বিগ্রহে জড়িয়ে পড়া ও মানুষের প্রতি নিরপেক্ষ ভাবে উজ্জীবিত হয়ে ভালবাসা পোষন না করা ।
পরিশেষে আসুন সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানব প্রেমের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে বিমোহিত হই ও এ পথে বজ্রকঠিন শপথ গ্রহণ করি। সকল কালিমা, অসত্য, জঞ্জাল, অন্ধকার আর নৈরাজ্যের বেদীমূলে কুঠারাঘাত করে সত্য ও সুন্দরের সূর্যকে ছিনিয়ে আনি ও আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে আলোকিত করার মানসে মানবপ্রেমের বিশ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে সম্মূখ পানে এগিয়ে যাবার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করি ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৮ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন