শরিয়াহ মানার প্রয়োজনীয়তা।
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ০৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:০৪:৩১ দুপুর
কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক সহীহ আক্বিদাহ হলো আল্লাহ (সুব কর্তৃক প্রদত্ত ও রাসূলুল্লাহ (সা কর্তৃক প্রদর্শিত শরিয়ার আইন-বিধান কঠোরভাবে মান্য করা জরুরী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ (সুব বলেন:
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
অর্থ: “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; (তা হচ্ছে ঐই জীবন ব্যবস্থা) যার ব্যাপারে তিনি নূহ (আ কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আমি (আল্লাহ) তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দ্বীন কায়েম করো এবং এই ব্যাপারে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সুরা শু’রা ২৬:১৩)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা গেল, আল্লাহ (সুব জীবন ব্যাবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এবং ঐ জীবন ব্যাবস্থাই কায়েম করা আদেশ করেছেন। সুতরাং মুসলিমের কর্তব্য হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত জীবন ব্যাবস্থাই পালন করবে এবং কায়েম করবে। অন্য কারো হুকুম যদি আল্লাহর হুকুমের বিরোধি হয় তাহলে তা প্রত্যাখান করবে।
কিন্তু পীর-মাশায়েখগণ বলেন: পীর যদি হুকুম করেন তা মানতে হবে যদিও আল্লাহ প্রদত্ত শরিয়তের প্রকাশ্য বিরোধী হয়। যেমন চরমোনাই পীর বলেন:
بمی سجادہ رنگن کن گرت پیر مغاں گوید+کہ سالک بےخبر نہ بود زراہ ورسم منزل
অর্থ: “কামেল পীরের আদেশ পাইলে নাপাক শারাব দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গিন করিয়া তাহাতে নামাজ পড়। অর্থাৎ শরীয়তের কামেল পীর সাহেব যদি এমন কোন হুকুম দেন, যাহা প্রকাশ্যে শরীয়তের খেলাফ হয়, তবুও তুমি তাহা নিরাপত্তিতে আদায় করবে। কেননা, তিনি রাস্তা সব তৈরী করিয়াছেন। তিনি তাহার উঁচু-নিচু অর্থাৎ ভালমন্দ সব চিনেন, কম বুঝের দরুন জাহেরিভাবে যদিও তুমি উহা শরীয়তের খেলাফ দেখ কিন্তু মূলে খেলাফ নহে।” (‘আশেক মাশুক’ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ এছহাক রচিত ৩৫ নং পৃষ্ঠায়।)
অথচ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা এর হুকুমের বিরূদ্ধে কারো হুকুম মানার কোন সুযোগ নেই। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে:
عَنْ أُمِّ حُصَيْنٍ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم لاَ طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ في مَعْصِيَةِ الخَالِقِ
অর্থ: “উম্মে হুসাইন (রা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা ইরশাদ করেছেন: স্রষ্টাকে অমান্য করে সৃষ্টিজগতের কারো আনুগত্য চলবে না”। (জামেউল আহাদীস: হা: ১৩৪০৫, মুয়াত্তা: হা: ১০, মু’জামূল কাবীর: হা: ৩৮১, মুসনাদে শিহাব: হা: ৮৭৩ আবি শাইবা: হা: ৩৩৭১৭, কানযুল উম্মাল: হা: ১৪৮৭৫।)
এছাড়া নিম্নের হাদীসটিতে বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করা হয়েছে:
عَنْ عَلِىٍّ قَالَ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سَرِيَّةً وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْهِمْ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْمَعُوا لَهُ وَيُطِيعُوا فَأَغْضَبُوهُ فِى شَىْءٍ فَقَالَ اجْمَعُوا لِى حَطَبًا. فَجَمَعُوا لَهُ ثُمَّ قَالَ أَوْقِدُوا نَارًا. فَأَوْقَدُوا ثُمَّ قَالَ أَلَمْ يَأْمُرْكُمْ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ تَسْمَعُوا لِى وَتُطِيعُوا قَالُوا بَلَى. قَالَ فَادْخُلُوهَا. قَالَ فَنَظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالُوا إِنَّمَا فَرَرْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- مِنَ النَّارِ. فَكَانُوا كَذَلِكَ وَسَكَنَ غَضَبُهُ وَطُفِئَتِ النَّارُ فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَوْ دَخَلُوهَا مَا خَرَجُوا مِنْهَا إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ
অর্থ: “আলী (রা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করলেন। এবং সাহাবীদেরকে তার কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন। অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন। তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেন। সকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ (সা কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নাই? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন। এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষন পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল। যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তণ করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা বললেন ‘তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজেই।”(সহীহ মুসলিম হা:নং: ৪৮৭২, সহীহ বুখারী হা: নং: ৪৩৪০, সহীহ মুসলিম বাংলা; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃক তরজমা; হা: নং: ৪৬১৫।)
এ হাদীস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, শরিয়তের বিরূদ্ধে কারো হুকুমের আনুগত্য করা যাবে না। অথচ পীর সাহেবদের কাছে কুরআন ও হাদীসে বর্নিত এসকল বিষয়ের কোনই গুরুত্ব নেই। এমনকি তাদের ধর্ম ও মাযহাব ভিন্ন বলে তারা দাবী করে থাকে। যেমন: ‘ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা’ এর ৭২ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে
عاشقاں را ملت و مذہب جداست+عاشقاں را ملت و مذہب خداست
অর্থ: “মাওলানা রুমি ফরমাইয়াছেন: প্রেমিক লোকদের জন্য মিল্লাত ও মাজহাব ভিন্ন। তাহাদের মিল্লাত ও মাজহাব শুধু মা’বুদ কেন্দ্রিক।”
উল্লেখ্য যে, সকল মুসলিমদের দ্বীনই আল্লাহ কেন্দ্রিক এবং আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত। এখানে গোপন কোন বিষয় নেই বরং দ্বীনে ইসলাম স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার একটি ধর্ম। তাহলে পীর সাহেবরা খোদা কেন্দ্রিক কোন ধর্মের কথা বলতে চাচ্ছেন যা অন্যদের ধর্ম থেকে আলাদা? তাহলে দ্বীনে ইসলামের মধ্যে এমনো কোন বিষয় আছে কি যা রাসূলুল্লাহ (সা উম্মতের সকলের সামনে প্রকাশ করেননি? এটাতো শীয়াদের বক্তব্য । পীর সাহেবরাও কি শীয়াদের মতাদর্শকে সমর্থণ করছে?
তাছাড়া ছয় লতিফা সম্পর্কে চরমোনাইয়ের পীর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক সাহেব বলেন, ‘ছয় লতিফার কথা কুরআনে পাক ও হাদীস শরীফে নাই, তবে আল্লাহ পাকের ওলীগণ আল্লাহ পাককে পাইবার জন্য একটা রাস্তা হিসাবে ইহা বাহির করিয়াছেন। যদি লতীফার ছবক আদায় করিতে চান, তবে একজন উপযুক্ত পীরের দরবারে থাকিতে হইবে। (‘ভেদে মা’রেফাত বা ইয়াদে খোদা’ পৃষ্ঠা নং: ৫০।)
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, আল্লাহ (সুব কে পাইবার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা কি কোন রাস্তা বলে দেননি? যদি বলে দিয়ে থাকেন তাহলে নতুন করে রাস্তা বানানোর দরকার পরলো কি? তাছাড়া আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা উম্মতের সামনে স্পষ্ট করে দেয়া সাধারণ কোন শাখাগত বিষয় নয় যে, বিষয়টি উম্মতের ইজতিহাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
(ফেসবুক হতে কপি।)
বিষয়: বিবিধ
১৩৭২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা কথা খুব ভালো লেগেছে যে, অন্যায় কাজে নেতার আনুগত্য করা যাবেনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন