মুসলিমরা আসলে কতোভাগে ভাগ হয়েছে?!?

লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ১৯ মার্চ, ২০১৬, ১০:০৬:২৬ সকাল

সহীহ হাদীস অনুযায়ী মুসলিমরা(শেষ নবীর উম্মত) ৭৩দলে বিভক্ত হবে। আমি মাঝে মাঝে গুনে দেখার চেষ্টা করি এ পর্যন্ত তারা কতো দলে-উপদলে বিভক্ত হল! কিন্তু কখনই কোন অবস্থাতেই হিসাব মেলাতে পারি না!!

প্রথমত আমাদের পরিচয় মুসলিম। আল্লাহ তা'আলা আমাদের মুসলিম জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

* মুসলিম।সেখান থেকে--

ক) সুন্নী

খ) শিয়া

গ) কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়

ঘ) কাদেরীয়া

ঙ) মূর্জিয়া

ইত্যাদি ইত্যাদি-----

ক) সুন্নীদের মাঝে আবার বহু ভাগে বিভক্ত।

১) লা-মাযহাবী

২) হানাফী

৩) শাফেয়ী

৪) মালেকী

৫) হাম্বলী

ইত্যাদি ইত্যাদি----------

১) লা-মাযহাবী- এরা কোন মাযহাব মানে না। তারা কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী।এরা সঠিকটাকে মানার চেষ্টা করে। এরা সর্বদা শিরক-বেদাত বিরুধী। এদের মতে মুসলিমদের মাঝে কোন বিভক্তি নাই। তারা সবাই ভাই ভাই। তাদের পরিচয় একটাই মুসলিম। এইসব বলার পরেও লা-মাযহাবীদের মাঝেই আবার বিভিন্ন নামে বিভক্তি!

আহলে হাদীস

সালাফী

কেউ কেউ আবার তাদের ডাকে রফাদান, ওহাবী, মোহাম্মাদী ইত্যাদি নামে।

২) হানাফী:- এরা ঈমাম আবু হানিফা(রহ.) এর অনুসারী পরিচয় দেয়। কিন্তু এদের মধ্যেও আছে বহু বিভক্তি।

=দেওবন্দী অনুসারী- এরা মূলত দেওবন্দী মতবাদের অনুসারী, হানাফী পরিচয় দিলেও তারা ঈমাম আবু হানিফার অনুসরণ করে না। মূলত তারা আলাদা একটা মতবাদের অনুসারী। যেটা দেওবন্দী মতবাদ।এরা এদের নির্দিষ্ট কিছু ফিকহের কিতাবের বাইরে পড়াশুনা করতে চায় না।

=ঈমাম আবু হানিফা(রহ.) এর অনুসারী- এরা হানাফী পরিচয় দেয় এবং প্রকৃত পক্ষে ঈমাম আবু হানিফার অনুসারী বলে মনে হয়। এদের সংখ্যা বর্তমানে বাড়ছে। এরা ইসলাম নিয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করে। এরা নিজের মতামতকে নির্ভূল দাবী করে না। জানার চেষ্টা করে এবং ভুলটাকে বর্জন আর সঠিকটাকে গ্রহণ করার চেষ্টা করে।এরা শিরক-বেদাত বিরুধী।আমল-আকিদাগতভাবে লা-মাযহাবীদের সাথে এদের অনেক মিল আছে। আমাদের দেশে এদের কয়েকজন শিক্ষিত আলেম আছেন।তাদের মধ্যে - ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার,

অধ্যাপক কামাল উদ্দিন জাফরী প্রমূখ উল্লেখযোগ্য।

=কবর পূজা, পীর পূজারী হানাফী- এরা একেবারেই অজ্ঞ। এরা সর্বদা কবর পূজা. পীর পূজা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। এরা শিরকের অন্ধকারে নিমজ্জিত হানাফী। প্রকৃত পক্ষে এরা ইসলামের অনুসরণ করে না বা ইসলামের কোন ঈমামের অনুসরণ করে না। নিজেদের নফসের বা শয়তানের অনুসরণ করে। কিন্তু তারা হানাফি পরিচয় দেয়! এদের মধ্যে আবার বিভিন্ন তরিকা বা মতাদর্শে বিশ্বাসী আছে। অর্থাৎ এরাও অনেকভাগে বিভক্ত।তার মধ্যে-

-

চিশতিয়া সাবেরিয়া তরিকা।

চিশতিয়া নকশবন্দিয়া তরিকা।

চিশতিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকা।

মাইজভান্ডার তরিকা।

দেওয়ানবাগী তরিকা।

এরকম আরো শত শত তরিকা আছে এদের মধ্যে। তবে এদের সবার একটা মিল আছে তা হল এরা সবাই সূফি ইজমে বিশ্বাসী।

৩) শাফেয়ী মাজহাব- এরা ঈমাম শাফেয়ী (রহ.) অনুসারী এদের মধ্যে কতোটা বিভক্তি আছে জানি না।

৪) মালেকী মাজহাব- এরা ঈমাম মালেক(রহ.) এর অনুসারী। তাদের মধ্যে কতোটা বিভক্তি আছে আল্লাহ ভাল জানেন।

৫) হাম্বলী মাজহাব- তারা ঈমাম হাম্বলী (রহ.) এর অনুসারী। তাদের বিভক্তি সম্পর্কে জানি না।

এতক্ষণ গেল সুন্নীদের বিভক্তি নিয়ে। এবার আসি শিয়াদের ব্যাপারে।

খ) শিয়া- শুনেছি এরা ১২টির অধিক দলে বিভক্ত। এদের একদল প্রধান কয়েকজন সাহাবী হযরত আবু বকর(রাHappy, হযরত উমর(রাHappy, হযরত উসমান(রাHappy কে মানেন না।তাদের গালি-গালাজ করেন।(নাউজুবিল্লাহ)।

তবে একদল এইসব প্রধান সাহাবীদের নামের সাথে রাদিআল্লাহু আনহু উচ্চারণ করেন। এরা একটু উদারপন্থী। বাকীদের সম্পর্কে জানি না।

গ) কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়- যদিও এরা মুসলিম পরিচয় দেয় এবং তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ বলে। কিন্তু মুসলিমরা সর্বসম্মতভাবে একমত যে, তারা মুসলিম নয়। তারা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে তাদের নবী মনে করেন। নাউজুবিল্লাহ।আমাদের দেশে এদের বেশ কিছু অনুসারী আছে।

ঘ) কাদেরীয়া- এদের সম্পর্কে তেমন বেশি কিছু জানি না।

ঙ) মূর্জিয়া- এদের সম্পর্কেও তেমন বেশি কিছু জানি না।

মহান আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের বহু দলে বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। তাদের দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন।মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে আরো বলেছেন, যারা বহু দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে নবী(সাঃ) এর কোন সম্পর্ক নাই। তাদের ব্যবস্থা করবেন আল্লাহ তা'আলা

মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمْ وَكَانُواْ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ

"নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।"

(সূরা আন-আম, আয়াত-১৫৯)।

"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ।"

(সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১০৩)

مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

"যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।"

(সূরা আর-রূম, আয়াত-৩২)

বিষয়: বিবিধ

৩১১২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

362932
১৯ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : মহান আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের বহু দলে বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন। তাদের দলে দলে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন।মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে আরো বলেছেন, যারা বহু দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে নবী(সাঃ) এর কোন সম্পর্ক নাই। তাদের ব্যবস্থা করবেন আল্লাহ তা'আলা

এই কথার দ্বারা লা-মাযহাবীই বেষ্ট না? যারা শুধু মাত্র আল্লাহ এবং রাসূলের কথায় চলতে চায়।
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:০০
300889
মুসলমান লিখেছেন : যারা শুধুমাত্র আল্লাহ পথে চলে এবং রাসূল সাঃ এর অনুসরণ করে।
362942
১৯ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:১৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সব গুলো দান্ধাবাজী ইসলামের জন্য কিন্তু কোন দলাদলি নেই ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৯:৫৯
300888
মুসলমান লিখেছেন : জাঝাকাল্লাহু খাইরান। অনেক ভাল লাগল।
362950
১৯ মার্চ ২০১৬ রাত ০৮:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আসল দল কোনটা ?
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:০১
300890
মুসলমান লিখেছেন : যারা আল্লাহর বিধান মতে রাসূল সাঃ এর অনুসরণ করে।
362970
২০ মার্চ ২০১৬ রাত ০১:০২
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আপনার সংজ্ঞাগুলোতে একটু ভুল আছে। আমার মতে বর্তমানের মুসলিমরা মূলত দু ভাগেই বিভক্ত। শীয়া আর সুন্নী। সুন্নীদের মাঝে চারটি মাসলাক/গ্রুপ রয়েছে। মাজহাবী (হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী) ভারত উপমহাদেশে হানাফীদের সংখ্যাই বেশী (দেওবন্দীরাও হানাফি) হানাফী বলতে শুধুমাত্র ইমাম আবু হানিফার অনুসারী বুঝায় না, বরং ফিকহে হানাফির অনুসারী বুঝায়। আর ফিকহে হানাফি সহ বাকি তিন মাজহাবেই ছয় স্তর/যুগের ইমামগণ রয়েছেন। সুফিবাদীরাও হানাফি। তবে তাদের মাঝে কিছু দলেও মধ্যে শির্ক বিদ্যমান কিছু দলের মধ্যে বেদাত বিদ্যমান। আহলে হাদীস/সালাফি দলটির উতপত্তি কয়েকশত বছর যাবত মাত্র। তবে আমি তাদেরকেও সুন্নী এর অন্তর্ভূক্তই মনে করি। তারা আবার সুফিবাদের ঘোর বিরোধী। এ সকল দলাদলি-ফেরকাবাজির উর্দ্ধে উঠে আরো কিছু দল রয়েছে যারা সকল দলকে নিয়েই ইসলামী হুকুমত কায়েমের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেমন জামায়াতে ইসলামী, ইখওয়ানুল মুসলিমীন, একেপি পার্টি। যারাই ইসলামী হুকুমত কায়েমের স্বপ্ন দেখেন তাদের সবার জন্যই এ দলগুলোর দরজা সর্বদাই উন্মুক্ত। হোক সে মাজহাবী/দেওবন্দী/সুফিবাদী/সালাফি।

হাদীসে ৭৩ বলতে নির্দিষ্ট সংখ্যা ৭৩ কেই বুঝানো হয়নি। বরং আরবী ভাষা রীতি অনুসরারে ৭০, ৭৩, ৭০০, ইত্যাদি সংখ্যা দ্বারা অধিক সংখ্যক বুঝানো হয়।
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:০১
300891
মুসলমান লিখেছেন : ধন্যবাদ।
362988
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৬:১০
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : রাসূল যখন ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন তখন বিভেদ থাকবেই কিন্তু আমি ব্যক্তি যখন কুরআন হাদিসের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করে বুঝতে পারবো যে, ভুল পথে হাটছি তখনই নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে নেবো বাস।
২০ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৯:৫৯
300887
মুসলমান লিখেছেন : এটাই মূল কথা এটাই আমার কথা সম্ভবত এটাই মুসলিমদের কথা।বাকীদের কথা জানি না। আল্লাহ ভাল জানেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File