শিবির করলে তাকে পিটিয়ে মারা জায়েজ!!!
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:২৯:২৫ দুপুর
ছাত্রলীগ নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে বেসরকারি সশস্ত্র বাহিনীটি আছে সেটির সদস্যদেরকে এখন অনেকেই ‘মানুষের কাতারে’ রাখেন না। বছর কয়েক আগে মিডিয়াতেও বাহিনীটিকে ‘দানব’ বলা হতো। এখন অবশ্য মিডিয়ায় এমন আর বলা হয় না। তবে দেশের মানুষের কাছে ‘দানব’ হিসেবেই বিদ্যমান আছে যথারীতি।
তবে সোমবার (২৩ নভেম্বর) যশোর সরকারি এমএম কলেজের একটি ছাত্রাবাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক কর্মীকে পিটিয়ে খুন করার পর বাহিনীটির সদস্যরা অবশেষে ‘মানুষ’ হল!
আওয়ামী লীগের বিরোধিতাকারীদের খুন করা বাংলাদেশে এখন আইনগতভাবে বৈধ একটি কাজ। আর সেই বিরোধী যদি ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে থাকে, বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের, তাহলে তাকে খুন করলে অনেক পূণ্য হয়। ইহকালে অনেক পুরস্কার মিলে।
তো, এমএম কলেজের ছাত্র শিবিরকর্মী হাবিবুল্লাহকে (২২) খুন করার বিনিময়ে পুরস্কার হিসেবে ‘দানব’ ছাত্রলীগ ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচিতি পেল। পিটিয়ে মারলো ছাত্রলীগ কর্মীরা। কিন্তু অনলাইনে বিভিন্ন পত্রিকায় যে খবর আসছে তার অধিকাংশতে লেখা হয়েছে ‘স্থানীয় লোকজন’ বা ‘স্থানীয় মানুষজন’ গণপিটুনী দেয়ার পর মারা গেছে! কত সুন্দর ও সহজভাবে ‘ছাত্রলীগ’কে ‘মানুষ’ করে দিল মিডিয়া!
প্রথম আলো শিরোনাম করেছে, ‘যশোরে শিবির কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, আহত ২’। কে হত্যা করেছে? শিরোনামে বা ইন্ট্রোতে নেই। আছে ভেতরে, ‘শিবিরের দাবি’ হিসেবে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের দাবি অনুযায়ী বলা হয়েছে, ‘নাশকতার পরিকল্পনার জন্য বৈঠকের সময় স্থানীয় লোকজনই ওই তিনজনকে পিটিয়েছে।’ প্রথম আলো ছাত্রলীগের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পরের লাইনেই এর সমর্থনে পুলিশের বক্তব্য দিয়েছে, ‘পুলিশ বলছে, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে।’
যেন ‘নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ’ আছে এমন কাউকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেললে খারাপ কিছু করেনি!
পরে ‘স্থানীয় সূত্র’র বরাতে যে তথ্য দিয়েছে প্রথম আলো তাতেও হত্যাকারীরা ‘ছাত্রলীগের কর্মী’ নয়, বরং ‘কয়েকজন যুবক’!
বাংলানিউজ শিরোনাম করেছে, ‘গোপন বৈঠককালে শিবির কর্মীকে পিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু’।
যে কোন বাসা/বাড়ি/মেস/অফিস একেকটি মাঠ নয়, এগুলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার প্রাইভেট জায়গা। বাসায়, অফিসে যখন কেউ ভাত খায়, উঠে-বসে, আড্ডা দেয়, বৈঠক করে-- এগুলো সবই প্রাইভেট বা গোপনীয় বিষয়। কোনো বৈঠক করতে জন্য কেউ পল্টন ময়দানে যায় না, ঘরে/অফিসেই বসে। মাঠে গেলে ওটা জনসভা/সমাবেশ হয়ে যায়। ফলে প্রত্যেক বৈঠকই একেকটি গোপন বৈঠক। কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ এবং মিডিয়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠককে শুধু গোপন বৈঠক বলে অভিহিত করে সেন্সেশান তৈরি করছে এবং এর মাধ্যমে খুনের মতো অপরাধ উস্কে দিচ্ছে। বাংলানিউজের এই শিরোনামটিই তার প্রমাণ।
যেহেতু বাংলানিউজ ‘গোপন বৈঠক’ এর মতো নেতিবাচক শব্দকে শিরোনামে এনেছে, সেহেতু খুব স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে অনলাইন পত্রিকাটি ‘বৈঠকের কারণে পিটুনী খেয়ে মৃত্যু’কে বৈধতা দিতে চাচ্ছে। হত্যার পেছনে একটা ‘যৌক্তিকতা’ দাঁড় করাতে চাচ্ছে। মানে, ‘এমনি এমনি মারেনি গো, ‘গোপন বৈঠক’ করায় মেরেছে! বুঝলে?!’
এই ‘যৌক্তিকতা’ দাঁড় করানোর পর বাংলানিউজ তথ্য দিচ্ছে, “সোমবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একদল ছাত্র তাদের পিটিয়ে আহত করে। পরে, সন্ধ্যায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুল্লাহর মৃত্যু হয়।”
অর্থাৎ, এখন আর ছাত্রলীগের নাম দিলে তেমন সমস্যা নেই। কারণ হত্যাটা ‘যৌক্তিক’! প্রথম আলো এই ‘যৌক্তিকতা’ দাঁড় করাতে যায়নি বলে দায়টাও ছাত্রলীগের উপর চাপাতে চায়নি। বাংলানিউজ ছাত্রলীগের কথা লিখলো, তবে দায়মুক্তির সুযোগ দিয়ে।
অবশ্য ওসির বক্তব্যে ছাত্রলীগের দায়মুক্তির আরো সুযোগ আছে, “যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাস আলী বাংলানিউজকে বলেন, বিকেলে এমএম কলেজ সংলগ্ন এলাকার একটি মেসে শিবিরকর্মীরা গোপন বৈঠক করছে-এমন সংবাদে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ডেকে আনেন। পরে স্থানীয় ছাত্রদের পিটুনিতে তিনজন আহত হন।” ওসি মহোদয় বলছেন, খুনিরা ছিল ‘স্থানীয় ছাত্র’।
বিডিনিউজের শিরোনাম, ‘যশোরে শিবিরকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা’। সেই একই দশা।
অবশ্য কালের কণ্ঠের শিরোনাম বলছে কে খুনের জন্য দায়ী। ‘যশোরে ছাত্রলীগের হামলায় শিবিরকর্মী নিহত’।
খুবই লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, খুনিদের রাজনৈতিক পরিচয়কে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার পাশাপাশি উপরের চারটি পত্রিকাই তাদের ব্যক্তি পরিচয় পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। সব পত্রিকা নিহত এবং আহতদের নাম বাবা মায়ের নাম, এলাকা ইত্যাদি প্রকাশ করলেও হামলাকারীদের কারো নাম/পরিচয় নিয়ে একটা অক্ষরও দেয়নি! অথচ, প্রতিবেদন লেখার মৌলিক শর্তগুলোর মধ্যে ‘কে করেছে’ (who does) এর উত্তর দেয়া একটি। ‘কে’ এর উত্তর দেয়া একদম ‘ফরজ’।
অভিযুক্তদের নাম পরিচয় প্রকাশ করলে হয়তো বা, তাদের ‘ছাত্রলীগ’ পরিচয়টাও প্রমাণ হয়ে যেত, বা আপাতত মামলা-মোকদ্দমায় পড়ে যেতে হতো। কিন্তু মিডিয়া তাদের পরিচয় প্রকাশ না করায় পুলিশ কারো নাম নির্দিষ্ট না করে ‘বেনামে’ আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার সুযোগ পাবে। আর কিছুদিন পর ওই ‘বেনামে’ আসামী হিসেবে হাবিবুল্লাহর দল থেকেই তার কোনো বন্ধুকে ধরে রিমান্ডে নেয়া হবে।
বিরোধীদের বিনাশ সাধনে ক্ষমতাসীনদের জন্য, এই ঘটনায় ছাত্রলীগের জন্য, মিডিয়ার এই যে পুরস্কার প্রদান প্রক্রিয়া তা এক কথায় অমূল্য!
(এদের রাজনীতির সাথে আমি জড়িত না থাকলেও এদের প্রতি অবিচার দেখে ভাবি কোন দেশে বাস করছি!)
কপি পেষ্ট ফ্রম-
(আব্দুল্লাহ ইবনে ঈবাদ)
http://www.bdfirst.net/newsdetail/detail/200/171426
বিষয়: বিবিধ
১০৫৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন