সাংবাদিক ডেভিড বার্গমানের দৃষ্টিতে সাকা চৌধুরীর বিচারে ১০ টি বড় ত্রুটি
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ২২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪৯:৪৯ সকাল
১) ট্রাইবুন্যাল প্রসেক্যুসনের সাক্ষীর ব্যাপারে কোন বাধা দেয়নি- তাদেরকে ৪১ জন সাক্ষীর অনুমতি দিয়েছে। তার বিপরীতে সাকা চৌধুরী কে মাত্র ৫ জন সাক্ষী উপস্থাপনের অনুমতি দিয়েছে- যার মাঝে মাত্র ৪ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে দিয়েছে। একজন অভিযুক্তের পক্ষে ২০ টি অভিযোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য ৪ জন সাক্ষী দ্বারা কোনমতেই সম্ভব নয়. রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী আর অভিযুক্তের মাত্র ৪ জন- এটা সম্পুর্ন ভারসাম্যহীন।
২) প্রথমে ৫ জন সাক্ষীর অনুমতি দিলেও ৫ম সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানকালে ট্রাইবুনাল তার সাক্ষ্য বন্ধ করে দেয় এই অজুহাতে যে তিনি নাকি সময় নষ্ট করছিলেন। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ ১৩ মাস ধরে তাদের যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেছে, বিপরীতে সাকা চৌধুরীর পক্ষ মাত্র ২৮ দিন সময় পেয়েছে- যার পরে ট্রাইবুন্যাল সাক্ষ্যদান বন্ধ করে দেয়. রাষ্ট্রপক্ষকে বাদীপক্ষের চাইতে ১০ গুন বেশি সময় দেয়া হয়েছিল।
৩) সাক্ষীর সংখ্যা সীমিত করে দেয়ার ফলে সাকা পক্ষ ৮ জন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারেনি- যার মাঝে ৫ জন ছিলেন পাকিস্তানের যাদের সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল যে যে সময় অপরাধের অভিযোগ করা হয়েছে সে সময় জনাব চৌধুরী দেশে ছিলেন না. তারা এফিডেভিট দাখিল করলেও তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে দেয়া হয়নি।
৪) জনাব চৌধুরীর আইনজীবী দেশে থাকা ২০ জন সাক্ষী উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন যারা সাক্ষ্য দিতেন যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অনেক প্রমানই ভুয়া। সে ২০ সাক্ষীকেও ট্রাইবুনাল হাজির করতে অনুমতি দেয়া হয়নি।
৫) ট্রাইবুনালের দেয়া রায়ে জনাব চৌধুরীর পক্ষে দেয়া এফিডেভিট গুলোর কথা স্বীকার করাই হয়নি।
৬) অন্যদিকে আপিল বিভাগ এফিডেভিট গুলো সম্পর্কে কোন যাচাই বাছাই বা প্রমান ছাড়াই বলে দেয় যে সেগুলো নাকি ভুয়া। কিন্তু জনাব চৌধুরীর আইনজীবী তা চেলেঞ্জ করে বলেছেন যে সংস্লিষ্ট সাক্ষীদের কে সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হোক যাতে তারা তাদের এফিডেভিটের বক্তব্য প্রমান করতে পারেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সে সুযোগ দেয়নি।
৭) আপিল বিভাগ বলেছে যে এই এফিডেভিট গুলোতে টেকনিকাল সমস্যা ছিল যেমন সেগুলো সংস্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশী কাউন্সেল দ্বারা নোটারি করা হয়নি ইত্যাদি। তাই সেগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেনা। কিন্তু আপিল কোর্ট ইচ্ত এক্ট এর ১৯(১) ধারা বিবেচনায় নেয়নি যেখানে বলা আছে যে, টেকনিকাল গ্রাউন্ডস এই আদালতে প্রযোজ্য হবেনা। তারপরেই যদি টেকনিকাল গ্রাউন্ড তাহলে যাদের এফিডেভিট তাদেরকে ঢাকা যেত.
৮) ডিফেন্স টিম আবেদন করেছিল যে যে ৮ জন সাক্ষী কে ট্রাইবুনাল অনুমতি দেয়নি তাদের কে যেন আপিল বিভাগ অনুমতি দেয়. সরাসরি অনুমতি না দিলেও যাতে অন্তত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের এফিডেভিট এর বক্তব্য প্রমানের অনুমতি দেয়. কিন্তু আপিল বিভাগ বলে যে জনাব চৌধুরী নাকি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট জমা দিতে পারতেন। অথচ জনাব চৌধুরী তখন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না- করাচি ছিলেন। তিনি করাচি থাকার সাক্ষী উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন, পাঞ্জাবে থাকার নয়. পাঞ্জাবে ছিলেন অন্য সময়ে।
৯) শেষ পর্যন্ত জনাব চৌধুরীর আইনজীবী তার পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন যা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তিক সত্যায়িত। তা আরো সত্যায়ন করেছিলেন সে বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রার, হেড অফ ডিপার্টমেন্ট। তার সাথে রেজিস্ট্রার আলাদা স্টেটমেন্ট দিয়ে তা সত্যায়িত করেছিলেন, এবং স্বয়ং ভিডিও বার্তায় সেটা যে জেনুইন তা বলেছেন। কিন্তু আপিল বিভাগ কোন কারণ প্রমান ছাড়াই বলে দেয় সে সব কিছুই নাকি ভুয়া! এতজন উচ্চ পর্যায়ের লোক একসাথে একটি ভুয়া কাজ কি করতে পারে? আপিল বিভাগ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগুলো যাচাই করার কোন চেষ্টাও করেনি।
১০) আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষকেই প্রমান করতে হবে যে, অভিযুক্ত অপরাধী এবং তার সাক্ষ্য প্রমান ভুয়া। অথচ ট্রাইবুনাল তার রায়ে উল্টো ভাবে বলে যে, অভিযুক্তকেই তার ডকুমেন্টস জেনুইন তা প্রমান করতে হবে, জনাব চৌধুরিকেই প্রমান করতে হবে যে তিনি মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত একটানা পাকিস্তানে ছিলেন, তিনি তখন দেশে ছিলেন না! আপিল বিভাগ ও একই ভাবে বলে যে জনাব চৌধুরিকেই প্রমান করতে হবে তার এফিডেভিট জেনুইন। শুধু প্রমান করলেই চলবেনা, অকাট্য ভাবে প্রমান করতে হবে!
এটা ন্যায় বিচারের বেসিক নীতির বিরোধী।
উৎসঃ ডেভিড বার্গমানের ব্লগ থেকে অনুদিত
বিষয়: বিবিধ
১৩৫১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন