আশুরার রোজা রাখার ফজিলত

লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ১৪ অক্টোবর, ২০১৫, ১১:৫৮:২১ সকাল

প্রশ্ন: আমি শুনেছি আশুরার রোজা নাকি বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়- এটা কি সঠিক? সব গুনাহ কি মোচন করে; কবিরা গুনাহও? এ দিনের এত বড় মর্যাদার কারণ কি?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক: আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম (১১৬২)]

এটি আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ একদিনের রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের সব গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান অনুগ্রহকারী।

আশুরার রোজার মহান মর্যাদার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি এ রোজার ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে আশুরার রোজা ও এ মাসের রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যত বেশি আগ্রহী দেখেছি অন্য রোজার ব্যাপারে তদ্রূপ দেখিনি।”[সহিহ বুখারি (১৮৬৭)]

হাদিসে يتحرى শব্দের অর্থ- সওয়াব প্রাপ্তি ও আগ্রহের কারণে তিনি এ রোজার প্রতীক্ষায় থাকতেন।

দুই: আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আশুরার রোজা রাখা ও এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করার কারণ হচ্ছে বুখারির বর্ণিত হাদিস (১৮৬৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা রোজা রাখ? তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন; তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।”

হাদিসের উদ্ধৃতি: “এটি উত্তম দিন” মুসলিমের রেওয়ায়েতে এসেছে- “এটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ মুসাকে ও তাঁর কওমকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন।”

হাদিসের উদ্ধৃতি: “তাই মুসা আলাইহিস সালাম এদিনে রোজা রাখতেন” সহিহ মুসলিমে আরেকটু বেশি আছে যে “…আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ; তাই আমরা এ দিনে রোজা রাখি”।

বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “এ দিনের মহান মর্যাদার কারণে আমরা রোজা রাখি”।

হাদিসের উদ্ধৃতি: “অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন” বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা তাদের চেয়ে মুসার অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ”।

তিন: আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মার্জনা হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মোচন হয় না। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রূপ হচ্ছে- কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মোচন করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন: আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মোচন করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়… উল্লেখিত আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ মোচন হয়।

যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। … যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।[আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-৬]

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মোচন হয়।

[আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫]

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

বিষয়: বিবিধ

১০২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345643
১৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সুন্দর গুরুত্বপূর্ন পোষ্টের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
১৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৪
286805
মুসলমান লিখেছেন : জাঝাকাল্লাহু খাইরান।
345654
১৪ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:২১
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : জ্ঞানের কথা।
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৯:৫২
286892
মুসলমান লিখেছেন : মুসলমান।
345661
১৪ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৯:৫৩
286893
মুসলমান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File