ঈদ ও জুম'আ একই দিন হলে জুম'আর সলাত সবার জন্য বাধ্যতামূলক কিনা?
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৯:৩২ দুপুর
ঈদ আর জুম’আ একই দিনে হলে, ইমাম জুম’আ পড়বেন। সাধারন মুসলিমদের জন্য এখতিয়ার থাকবে, তারা জুম’আ পড়তেও পারে নতুবা জুম’আর পরিবর্তে যোহর আদায় করতে পারে। ঈদ আর জুম'আ একই দিনে হলে সবার জন্য জুম'আয় উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এমন হলে যার ইচ্ছা সেদিন জুম’আ পরবে, আর না পড়লে গুনাহ নেই। তবে জুম’আ না পড়লে যোহরের সলাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, জুম’আর দিন ঈদ হলে ইমামের জন্য জুম’আর সলাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। কারন সাধারন মুসল্লীদের মধ্যে যারা জুম’আ পড়তে ইচ্ছুক তারা যেন জুম’আ আদায় করতে পারে। এ সম্পর্কে হাদীসে যথেষ্ট দলীল প্রমান বিদ্যমান। এখানে আমরা সরাসরি মুহাদ্দিসগণ হাদিসগুলো থেকে কী বুঝেছেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি ইন শা আল্লাহ।
ইমাম তিরমিযি তাঁর 'সুনানে' অধ্যায় এনেছেনঃ ''দুই ঈদের নামাজের কিরা’আত'' অধ্যায় ৪; কিতাবুল জুম’আ অনুচ্ছেদ ৩৩
নুমান ইবন বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুই ঈদের নামাজে এবং জুম’আর নামাজে 'সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা' এবং 'হাল আতা-কা হাদিসুল গাশিয়াহ' সুরা দুটি পাঠ করতেন। কয়েকবার ঈদ এবং জুম'আর নামাজ একই দিনে হয়ে গেল। তিনি তখনও এ দুই নামাজে উল্লেখিত সুরা দুটিই পাঠ করেছেন'' তিরমিযি ৫৩৩ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইবন হাজার আসকালানী তাঁর বুলুগুল মারামে অধ্যায় বেধেছেনঃ ''যখন ঈদের ও জুম’আর সলাত একদিনে হবে তখন কেউ যদি ঈদের সলাত পড়ে নেয় তাহলে তাকে জুমা’আর সলাত পড়তে হবে না'' অধ্যায় ১২ জুম’আর সলাত
যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) ঈদের সলাত আদায় করে (ঐ দিনের) জুম'আর সলাতের ছাড় দিয়ে বলেছেনঃ ''যার ইচ্ছা হয় সে জুম’আ আদায় করবে'' বুলুগুল মারাম ৪৫৯ (ইবন খুযাইমাহ সহীহ বলেছেন)
ইমাম নাসায়ী তাঁর সুনানে অধ্যায় এনেছেনঃ ''দু’ ঈদ একত্রিত হয়ে যাওয়া এবং তাতে উপস্থিত হওয়া'' পর্ব ১৯ উভয় ঈদের নামাজ; অধ্যায় ৩১
নু’মান ইবন বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জুম’আ এবং ঈদের নামাজে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ এবং ‘হাল আতা-কা হাদিসুল গাশিয়াহ’ পড়তেন। আর যখন জুম’আ এবং ঈদ একই দিনে হয়ে যেত তখন জুম’আ এবং ঈদের নামাজে উক্ত সুরা দুটি পাঠ করতেন'' নাসায়ী ১৪২৪, ১৫৯০ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইমাম নাসায়ী তাঁর সুনানে এ সম্পর্কে আরও একটি অধ্যায় এনেছেনঃ ''যে ব্যক্তি দু’ ঈদের নামাজে উপস্থিত থেকেছে তার জন্য জুম’আর নামাজে উপস্থিত না থাকার অনুমতি'' পর্ব ১৯ উভয় ঈদের নামাজ; অধ্যায় ৩২
ইয়াস ইবন আবু রামলাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রাঃ)-কে যায়দ বিন আরকাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে ঈদ এবং জুম’আর নামাজে শরীক ছিলেন? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি ঈদের নামাজ দিনের শুরুতে আদায় করেছিলেন। অতঃপর জুম’আর নামাজে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন'' নাসায়ী ১৫৯১ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ওয়াহব ইবন কাইসান (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবন যুবাইর (রাঃ)-এর যামানায় একবার ঈদ এবং জুম’আ একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি সূর্য উপরে উঠা না পর্যন্ত ঈদের নামাজ পড়ার জন্য বের হতে দেরি করলেন। অতঃপর বের হলেন এবং খুতবাহ দিলেন এবং খুতবাকে লম্বা করলেন, অতঃপর নিচে নামলেন এবং নামাজ পড়লেন। আর সেদিন লোকদের নিয়ে জুম’আর নামাজ পড়লেন না। এ ঘটনা ইবন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, তিনি সুন্নাহ মতই কাজ করেছেন’’ নাসায়ী ১৫৯২ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইমাম ইবন মাযাহ তাঁর সুনানে অধ্যায় এনেছেনঃ ''একই দিনে দু’ ঈদ একত্রিত হলে'' পর্ব ৭ সলাত আদায় করা এবং তার নিয়ম কানুন; অধায় ১৬৬
ইয়াস ইবন রামলাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে যায়দ বিন আরকাম (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করতে শুনেছিঃ একই দিনে দু’ ঈদে আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হাঁ। সে বলল, তিনি কিভাবে কী করতেন? যায়দ বলেন, তিনি ঈদের সলাত পড়ার পর জুম’আর সলাতের ব্যাপারে অবকাশ দিতেন। অতঃপর যার ইচ্ছা হতো সে জুম’আর সলাত আদায় করতো'' ইবন মাযাহ ১৩১০ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ ''তোমাদের আজকের এ দিন দু’ ঈদ একত্রিত হয়েছে। অতএব যা ইচ্ছা সে জুমা’আর সলাত ছেড়ে দিতে পারে। ইন শা আল্লাহ আমরা অবশ্যই জুম’আ পড়বো'' ইবন মাযাহ ১৩১১ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ''তোমাদের আজকের এই দিনে দু’ ঈদ একত্র হয়েছে, অতএব যার ইচ্ছা সে জুম’আর সলাত ছেড়ে দিতে পারে। ইন শা আল্লাহ আমরা অবশ্যই জুম’আ পড়বো'' ইবন মাযাহ ১৩১১ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইবন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যামানায় একবার দু’ ঈদ একত্রিত হল। তিনি লোকদেরকে নিয়ে ঈদের সলাত পড়ার পর বললেন, যে ব্যক্তি জুম’আর সলাতে আসতে চায় সে আসুক এবং যে চলে যেতে চায় সে চলে যাক'' ইবন মাযাহ ১৩১২ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইমাম আবু দাউদ তার সুনানে অধ্যায় এনেছেনঃ ''ঈদ ও জুম’আ একই দিনে একত্র হলে'' অধায় ২ সলাত; অনুচ্ছেদ ২১৭
ইয়াস ইবন রামলাহ আশ-শামী (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান (রাঃ) যখন যায়দ বিন আরকাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেছিলেন আমি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মুয়াবিয়া (রাঃ) বললেন, আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে একই দিনে দু’ই ঈদ (জুম’আ ও ঈদ) উদযাপন করেছেন? তিনি (যায়দ) বললেন, হাঁ। মুয়াবিয়া (রাঃ) বললেন, তিনি কিভাবে তা আদায় করেছেন? যায়দ ইবন আরকাম (রাঃ) বলেন, তিনি ঈদের সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর জুম’আর সলাত আদায়ের ব্যাপারে অবকাশ দিয়ে বলেছেনঃ ''কেউ জুম’আ সলাত আদায় করতে চাইলে আদায় করে নেব'' আবু দাউদ ১০৭০ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
আতা ইবন রাবাহ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি, একদা আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রাঃ) জুম’আর দিনে আমাদেরকে নিয়ে ঈদের সলাত আদায় করেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে একটু হেলে যাওয়ার পর আমরা জুম’আ সলাতের জন্য গেলাম। কিন্তু তিনি না আসায় আমরা একা একা (যোহরের) সলাত আদায় করে নিলাম। এ সময় আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) তায়েফে ছিলেন। তিনি তায়েফ হতে ফিরে এলে আমরা তাঁর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের সুন্নাত অনুযায়ী কাজ করেছেন'' আবু দাউদ ১০৭১ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
আতা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রাঃ)-এর যুগে জুম’আ ও ঈদুল ফিতর একই দিনে হওয়ায় তিনি বলেন, একই দিনে দুই ঈদ একত্রিত হয়েছে। তিনি দুই সলাত (জুম’আ ও ঈদের সলাত) একত্র করেন এবং প্রত্যুষে মাত্র দু’ রাকা’আত সলাত আদায় করেন, এর অধিক করলেন না। অতঃপর তিনি আসরের সলাত আদায় করলেন'' আবু দাউদ ১০৭২ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ''আজ তোমাদের এ দিনে দুটি ঈদের সমাগম হয়েছে। তোমাদের কারোর ইচ্ছা হলে (জুম’আ ত্যাগ করবে) তার জন্য ঈদের সলাতই যথেষ্ট'' আবু দাউদ ১০৭৩ (আলবানি সহীহ বলেছেন)
ইমাম আহমাদ ইবন আব্দুর রহমান ইবন মুহাম্মাদ আল-বান্না মুসনাদে আহমাদে অধ্যায় বেধেছেনঃ ''বৃষ্টি অথবা ঈদের দিন জুম’আর নামাজে উপস্থিত না হওয়ার বৈধতা'' অনুচ্ছেদ ৪ জুম’আর নামাজ ও সেদিনের ফযীলত এবং উহার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের অধ্যায়
ইয়াস ইবন আবি রামলা শামী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি যায়দ বিন আরকাম (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি রাসুল (সাঃ)-এর সাথে একই দিনে দুই ঈদ অর্থাৎ ঈদ ও জুম’আর নামাজে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন। হাঁ, রাসুল (সাঃ) দিনের প্রথম অংশে ঈদের সলাত আদায় করেছেন, আর জুম’আর সলাত না পড়ার অনুমতি দিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বললেন, তবে যে ব্যক্তি ঈদের নামাজ পরবে, সে ইচ্ছা করলে জুম’আর নামাজ পড়তে পারে'' মুসনাদ আহমাদ ১৫২৯ (সনদ সহীহ)
উল্লেখিত হাদিসগুলোর মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যেঃ
১) রাসুল (সাঃ) ঈদ ও জুম’আ একই দিনে হলে উভয়টি আদায় করেছেন।
২) ইমাম সাহেব জুম’আ ও ঈদের নামাজ উভয়টি আদায় করবেন। কারন যারা জুম’আ আদায় করতে ইচ্ছুক তারা যেন জুম’আ আদায়ের সুযোগ পায়।
৩) ঈদের নামাজ আদায় করলে সাধারন মুসল্লীদের জন্য জুম’আর নামাজ আদায় করা অপরিহার্য নয়, বরং ইচ্ছাধীন।
৪) সাহাবীরা অনেকেই ঈদ ও জুম’আ একই দিনে হলে জুম’আ পরিত্যাগ করেছেন।
(ফেসবুক হতে কপি পেষ্ট)
বিষয়: বিবিধ
১২৭৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
-
আবদুললাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বণ্িত, তিনি বলেন, রাসূলউল্লাহ্(সাঃ) এর যুগে ঈদ ও জুম'আ একই দিনে হলে তিনি সবাইকে নিয়ে ঈদের সালাত আদায় করতেন। অত:পর বলতেন, এখন জুম'আ পড়াতে আসা না আসা তোমাদের ইচ্ছাদিন। তবে আমরা জুম'আ পড়ব।[আবু-দাউদ, হাদিস - ১০৭৩]
ঈদ ও জুম'আ একই দিনে হলে, ঈদের সালাত পড়ার পর জুম'আ পড়া ইচ্ছাদিন বিষয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন