উলামাদের দৃষ্টিতে বুখারী ও মুসলিমের হাদীস
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৩:৩২ সকাল
০১. হাফেয আবূ নাস্র ওয়ায়েলী বলেন, “আহলে ইলম তথা ফুকাহাগণ এ কথায় একমত যে, ‘যদি কেউ কসম করে বলে, বুখারীতে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলি সহীহ, নিঃসন্দেহে সেগুলি আল্লাহর রসূল (সা এর মুখনি:সৃত বানী, এ কথা সত্য না হলে আমার স্ত্রী তালাক।’ তাহলে তার স্ত্রীর তালাক হবে না।” [উলূমুল হাদীস ২২ পৃ:]
০২. ইমামুল হারামাইন বলেন, যদি কেউ কসম খেয়ে বলে যে, ‘বুখারী-মুসলিমে যত হাদীস এসেছে তার সবগুলি নবী (সা এর উক্তি; তানা হলে আমার স্ত্রী তালাক।’ তাহলে তালাক হবে না। যেহেতু উক্ত দুই কিতাবের সহীহ হওয়ার ব্যাপারে মুসলিমদের উলামাগণ একমত। [তাদরীবুর রাবী ১/১৩১-১৩২]
– আবূ ইসহাক ইসফারাইনী বলেন, “হাদীস-বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত যে, বুখারী-মুসলিমের ‘উসূল’ ও ‘মতন’-এ যত হাদীস আছে, নিঃসন্দেহে তা সহীহ।” [ফাতহুল মুগীস ১/৪৭]
০৩. ইবনে স্বালাহও প্রায় একই কথা বলেন। (দেখুন: শারহুন নাওয়াবী ১/১৯)
০৪. ইমাম নাওয়াবী বলেন, “উলামা (রাহিমাহুমুল্লাহ) গণ এ ব্যাপারে একমত যে, কুরআনে আযীযের পর সবচেয়ে বেশী সহীহ কিতাব হল সহীহায়ন বুখারী ও মুসলিম। যেহেতু উম্মাহ (সহীহরূপে) তার বরণ করে নিয়েছে।” [শারহুন নাওয়াবী ১/১৪]
০৫. ইমাম নাওয়াবী বলেন, “উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, এই কিতাবদ্বয় সহীহ এবং উভয়েরর ভিত্তিতে আমল ওয়াজেব।” [তাহযীবুল আসমা অল-লুগাত ১/৭৩]
০৬. শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, “আকাশের নিচে কুরআনের পর বুখারী-মুসলিম ছাড়া অন্য কোন কিতাব সবচেয়ে বেশী সহীহ নয়।” [মাকানাতুস সহীহায়ন ৬ পৃ:]
০৭. হাফেয মুহাদ্দিস আল-আলাঈ বলেন, “উম্মত এ ব্যাপারে একমত যে, বুখারী ও মুসলিম তাঁদের কিতাব সহীহায়নে সনদসহ যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন, তার সবটাই সহীহ, তা পুনঃবিবেচ্য নয়।” [আন-নাক্বদুস সাহীহ, মুলত্বাক আহলিল হাদীস ৮৮/৪৩৮]
০৮. শায়খ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী বলেন, “বুখারী-মুসলিমের ব্যাপারে একমত যে, উভয় গ্রন্থে যে মুত্তাসিল মারফূ হাদীস রয়েছে, তা সুনিশ্চিতভাবে সহীহ। উক্ত গ্রন্থদ্বয় গ্রন্থকার পর্যন্ত মুতাওয়াতির। যে ব্যক্তি উভয়ের ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে, সে ব্যক্তি বিদআতী এবং মু’মিনীনদের পথ ছেড়ে অন্য পথের অনুসারী।” [হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/২৮৩]
০৯. শায়খ আহমাদ শাকের বলেন, “হাদীস বিষয়ক তাহকীকারী আহলে ইলম এবং দলীল দেখে তাঁদের পথ অনুসরণকারীদের নিকট সন্দেহহীন হক কথা এই যে, সহীহায়নের সমস্ত হাদীসই সহীহ। এর মধ্যে কোন একটি হাদীসের মধ্যে কোন খোঁচা মারা বা দুর্বলতার স্থান নেই। অবশ্য দারাকুৎনী প্রমুখ কিছু হাদীসের হাফেযগণ তার কিছু হাদীসের সমালোচনা করেছেন। আর তা এই অর্থে যে, তাঁরা উভয়ে সহীহর যে শর্তে গ্রন্থ রচনা করেছেন, সেই শর্ত সব হাদীসের ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি; অর্থাৎ, সব হাদীসগুলি উচ্চ পর্যায়ের সহীহ নয়। পক্ষান্তরে হাদীস সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কেউ মতবিরোধ করেন নি। সুতরাং রটনাকারীদের রটনা এবং ধারণাকারীদের ধারণা যেন আপনাকে শঙ্কিত না করে যে, সহীহায়নের হাদীস সহীহ নয়।” [আল-বাইসুল হাসীস ২৯ পৃ:]
১০. ইমাম নাওয়াবী (রহ.) এর অভিমত হলঃ
# বুখারী-মুসলিমের হাদীসসমূহেকে উম্মাহ সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে।
# উভয় গ্রন্থের সকল হাদীসের উপর আমল ওয়াজেব।
# গ্রন্থ দু’টি কুরআনে আযীমের পর সবচেয়ে বেশী সহীহ গ্রন্থ।
# পরবর্তীকালের উভয়ের সনদ নিয়ে কোন প্রকার চিন্তা-গবেষণার কোন প্রয়োজন নেই।
# মুতাওয়াতির না হলে উভয় গ্রন্থের হাদীস সুদৃঢ় ধারণা সৃষ্টি করে।
[শারহে মুসলিম, ১৪-১৯ পৃ:]
মূল লেখকঃ আব্দুল হামীদ ফাইযী আল মাদানী
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন