ডেথ আপেল : একটি খেলেই মৃত্যু নিশ্চিত!
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ০৪ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৩১:০১ দুপুর
ফলের জগতে আপেল একটি সুপরিচিত ফল। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনই পুষ্টির দিক থেকে গুণাগুণ আকাশচুম্বী। মেক্সিকো উপসাগরের কাছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এমন এক আপেল জন্মায় যা একটি খেলেই মৃত্যু নিশ্চিত। আর এজন্য এ আপেলের নাম ‘ডেথ আপেল’ আপেলগাছটির নাম ম্যানচিনিল ট্রি বৈজ্ঞানিক নাম হিপোমানে ম্যানচিনেলা। ম্যানচিনেলা শব্দটি এসেছে স্প্যানিস শব্দ ম্যানজানিলা থেকে। এর আভিধানিক অর্থ ছোট আপেল।
অত্যন্ত নিরীহ দর্শন এ আপেলে যে পরিমাণ বিষ, তাহলে পুরো গাছ কেমন বিষে ভরা তা গাছটিকে দেখলে মোটেই বোঝার উপায় নেই। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ এটি ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক গাছ’ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ছাড়াও এ বিষাক্ত গাছটি পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, বাহামা, মধ্য ও উত্তর আমেরিকাতে। এ গাছের শাখা-প্রশাখা, পাতা এমনকি ফল হতে এক ধরনের বিষাক্ত রস নিঃসৃত হয়, যা শরীরের চামড়া স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে চর্মরোগ সৃষ্টি হয়। চোখে লাগলে যে কেউ সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমনকি বৃষ্টির দিনে এ গাছের নিচে আশ্রয় নেয়াও বারণ। কারণ বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে এ রস শরীরে লেগে যেতে পারে। গাছের পাতা ধুয়ে বেয়ে আসা বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলে মুহূর্তের মধ্যে ত্বকে চুলকানি ভাব হতে থাকবে। লাল বর্ণ ধারণ করে স্ফীত হয়ে কালশিটে পড়ে যাবে। ভীষণ জ্বালা-যন্ত্রণা অনুভব হবে আক্রান্ত ব্যক্তির। ডেথ আপেল স্বাদে খানিকটা মিষ্টি এবং এর সুঘ্রাণ ক্ষুধা জাগিয়ে তোলে। তবে সুঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে আপেলে একটি ছোট্ট কামড়ই মানুষের মুখগহবর থেকে শুরু করে পাকস্থলি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিতে যথেষ্ট। আর পুরো আপেল খেয়ে ফেললে মৃত্যু অবধারিত। এ গাছ এতই বিপজ্জনক যে একে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করাও যায় না।
কারণ গাছের কাঠ পুড়ে যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় সেটাও আশপাশের মানুষকে অন্ধ করে দিতে পারে। এ বিষাক্ত গাছের একমাত্র ব্যবহার হল আসবাবপত্র তৈরিতে। তবে সেখানেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ গাছ কাটার সময় এর বাকলের সংস্পর্শে এলে ক্ষতি নিশ্চিত। খেয়াল রাখতে হয় কোনোভাবেই যেন কা- হতে বিষাক্ত রস গায়ে বা চোখে এসে না লাগে। ম্যানচিনিল ট্রি ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোর উপকূলবর্তী সৈকতে বেশি দেখা যায়। সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকে এ গাছগুলো চমৎকার উপকূলীয় বাতাস সৃষ্টি করে। এর শেকড় সৈকতের বালিতে বিস্তৃত হয়ে থাকে। বালিকে স্থির রেখে সমুদ্র ঢেউয়ের ক্ষয় থেকে সৈকতকে রক্ষা করে। এ গাছ প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর রয়েছে ধূসর রঙের বাকল। কা- জুড়ে চকচকে সবুজ পাতা। ছোট সবুজাভ ফুলগুলো গাছের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় শোভা পায়।
এ আপেল গুলো অন্য সাধারণ আপেলের মতোই তবে আকারে ছোট। কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পেকে সবুজাভ হলুদ রং ধারণ করে। একসময় ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উপজাতিরা তাদের শত্র“দের কাবু করতে এ গাছের রস বিষ হিসেবে তীরের ফলায় ব্যবহার করত। শত্র“দের নিষ্প্রাণ করতে এ গাছের পাতা ধোয়া পানি পান করাত। ইতিহাস বলে ফ্লোরিডার কালুজা যুদ্ধে স্প্যানিস অনুসন্ধানকারী জুয়ান পোচ ডে লিয়ন এ গাছের বিষমাখা তীরে আক্রান্ত হন এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই মারা যান।
আমেরিকা আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাস ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসার পর তার সঙ্গীসাথীর অনেকেই ম্যানচিনিল ট্রির বিষক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। তখন তিনি এ গাছের নামকরণ করেন ‘ম্যানজানিটা ডে লা মিউরটি অর্থাৎ মৃত্যুর আপেল। ক্যারিবীয় অঞ্চলের বর্ণিল শোভা উপভোগ করতে গিয়ে অনেক পর্যটকই না জেনে এই উদ্ভিদের বিষে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সাবান পানি দিয়ে ক্ষতস্থানটি ধুয়ে নিতে বলা হয়। আর পুড়ে গেলে বেশি করে পানি ঢালতে হয়।
ক্ষতস্থান ফুলে গেলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ প্রযোজ্য। আর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পর্যটক ও জনসাধারণের সাবধানতার জন্য ফ্লোরিডা ও বাহামা দ্বীপপুঞ্জের এসব গাছে লাল চিহ্ন দিয়ে এবং লাল ফিতে বেঁধে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৮১ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ আসবাবপত্র যে বানাবে গাছের কান্ডে সমস্যা হবে না ? যে গাছের পাতা , ফল, বাকল সমস্যা করে - কান্ড না করার কারণ কি ?
মুনসিড নামে আঙ্গুরের মত দেখতে একই রকমের আরেকটি বিষাক্ত গাছ নাকি আছে।
পোষ্টের মাঝখানের ছবিটা প্রাসঙ্গিক লাগছে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন