হাদিস সংকলনের ইতিহাস - তৃতীয় ভাগ

লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ০১ জুলাই, ২০১৫, ০৯:৫৬:১০ সকাল

ইলমে হাদীসের কতিপয় পরিভাষা

সাহাবিঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাহচর্য লাভ করেছেন বা তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, অথবা জীবনে একবার তাঁকে দেখেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবী বলে।

তাবীঈঃ যিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কোন সাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবিঈ বলে।

মুহাদ্দিসঃ যে ব্যাক্তি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞ্যান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলে।

শায়খঃ হাদীসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলে।

শায়খায়নঃ সাহাবীগণের মধ্যে আবূ বকর ও উমরা (রঃ)-কে একত্রে শায়খায়ন বলা হয়। কিন্তু হাদীসশাস্ত্রে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রঃ)- কে শায়খায়ন বলা হয়।

হাফিজঃ যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ এক লাখ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয় ।

হুজ্জাতঃ অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত বলা হয়

হাকিমঃ যিনি সব হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাকিম বলা হয়

রিজালঃ হাদীসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাঁকে আসমাউর-রিজাল বলা হয়।

রিওয়ায়তঃ হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়ত বলা হয়। যেমন, এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়ত (হাদীস) আছে

সনদঃ হাদীসের মূল কথাটুকু যে সুত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাঁকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীসের বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।

মতনঃ হাদীসের মূল কথা ও তাঁর শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।

মারফূঃ যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাঁকে মারুফূ হাদীস বলে।

মাওকূফঃ যে হাদীসের বর্ণনা-সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে, অর্থাৎ যে সনদ-সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাঁকে মাওকূফ হাদীস বলে। এর অপর না আসার।

মাকতূঃ যে হাদীসের সনদ কোন তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাঁকে মাকতূ হাদীস বলা হয়।

তা’লীকঃ কোন কোন গ্রন্থকার কোন হাদীসের পূর্ণ সনদকে বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা’লীক বলা হয়। কখনো কখনো তা’লীকরূপে বর্ণিত হাদীসকেও তা’লীক বলে। ইমাম বুখারী (রঃ)-এর সহীহ গ্রন্থে এরূপ বহু তা’লীক রয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে যে, বুখারীর সমস্ত তা’লীকেরই মুত্তাসিল সনদ রয়েছে। অনেক সংকলনকারী এই সমস্ত তা’লীক হাদীস মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন।

মুদাল্লাসঃ যে হাদীসের রাবী নিজেই প্রকৃত শায়খের (উসতাদের) নাম উল্লেখ না করে তাঁর উপরস্থ শায়খের নামে এভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শায়খের নিকট তা শুনেছেন অথচ তিনি তাঁর নিকট হাদীস শুনেন নি, সে হাদীসকে মুদাল্লাস হাদীস এবং এইরূপ করাকে ‘তাদলিস’, আর যিনি এইরূপ করেন তাঁকে মুদাল্লিস বলা হয়। মুদাল্লিসের হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়, যে পর্যন্ত না একথা নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, তিনি একমাত্র ছিকাহ রাবী থেকেই তাদলীস করেন অথবা তিনি আপন শায়খের নিকট শুনেছেন বলে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন।

মুযতারাবঃ যে হাদীসের রাবী হাদীসের মতন বা সনদকে বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে হাদীসে মুযতারাব বলা হয়। যে পর্যন্ত না এর কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভভপর হয়, সে পর্যন্ত এই সম্পর্কে অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এই ধরনের রিওয়ায়াত প্রমাণ হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে না।

মুদরাজঃ যে হাদীসের মধ্যে রাবী নিজের অথবা অপরের উক্তিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছেন, সে হাদীসকে মুদরাজ এবং এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বলা হয়। ইদরাজ হারাম। অবশ্য যদি এর দ্বারা কোন শব্দ বা বাক্যের অর্থ প্রকাশিত হয়, তবে দূষণীয় নয়।

মুত্তাসিলঃ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত আছে, কোন স্তরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি তাঁকে মুত্তাসিল হাদীস বলে।

মুনকাতিঃ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি, মাঝখানে কোন এক স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাঁকে মুনকাতি হাদীস, আর এই বাদ পরাকে ইনকিতা বলা হয়।

মুরসালঃ যে হাদীসের সনদের ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে, অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবীঈ সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর উল্লেখ করে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।

মুতাবি ও শাহিদঃ এক রাবীর হাদীসের অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীস পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় রাবীর হাদীসকে প্রথম রাবীর হাদীসের প্রথম রাবীর হাদীসের মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদীসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যাক্তি হন। তবে এইরূপ হওয়াকে মুতাবা’আত বলে। যদি মূল রাবী একই ব্যাক্তি না হন তবে দ্বিতীয় ব্যাক্তির হাদীসকে শাহিদ বলে। আর এইরূপ হওয়াকে শাহদত বলে। মুতাবা’আত ও শাহাদত দ্বারা প্রথম হাদীসটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।

মু’আল্লাকঃ সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হলে, অর্থাৎ সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়লে তাঁকে মু’আল্লাক হাদীস বলা হয়।

মা’রুফ ও মুনকারঃ কোন কোন রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মকবুল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাঁকে মুনকার বলা হয় এবং মকবুল রাবীর হাদীসকে মা’রুফ বলা হয়। মুনকার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।

সাহীহঃ যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবতীয়-গুণ সম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্রুটি মুক্ত তাঁকে সাহীহ হাদীস বলা হয়।

হাসানঃ যে হাদীসের কোন রাবীর যাবতীয় গুণে পরিপূর্ণতার অভাব রয়েছে তাঁকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফিকহবিদগণ সাধারনত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরী’আতের বিধান নির্ধারণ করেন।

যঈফঃ যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাঁকে যঈফ হাদীস বলে। রাবীর দুর্বলতার কারণেই হাদীসকে দুর্বল বলা হয়, অন্যথায় নবী করীম (সঃ)-এর কোন কথাই যঈফ নন।

মাওযূঃ যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তাঁর বর্ণিত হাদিসকে মাওযূ হাদীস বলে। এরূপ ব্যাক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।

মাতরুকঃ যে হাদীসের রাবী হাদীসের ক্ষেত্রে নয় বরং সাধারণ কাজে-কর্মে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে বলে খ্যাত, তাঁর বর্ণিত হাদীসকে মাতরুক হাদীস বলা হয়। এরূপ ব্যাক্তির বর্ণিত হাদীসও পরিত্যাজ্য।

মুবহামঃ যে হাদীসের রাবীর উত্তমরূপে পরিচয় পাওয়া যায় নি, যার ভিত্তিতে তাঁর দোষগুণ বিচার করা যেতে পারে, এরূপ রাবীর বর্ণিত হাদীসকে মুবহাম হাদীস বলে । এই ব্যাক্তি সাহাবী না হলে তাঁর হাদীসও গ্রহণযোগ্য নয়।

মুতাওয়াতিরঃ যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে এত অধিক লোক রিওয়ায়াত করেছেন যাঁদের পক্ষে মিথ্যার জন্য দলবদ্ধ হওয়া সাধারণত অসম্ভব তাঁকে মুতাওয়াতির হাদিস বলে। এ ধরনের হাদীস দ্বারা নিশ্চিত জ্ঞ্যান লাভ হয়।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

328179
০১ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সহিহ হাদিস এ্র সংখ্যা কি ৩ লক্ষের বেশি হবে?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File