হাদিস সংকলনের ইতিহাস - প্রথম ভাগ
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ২৯ জুন, ২০১৫, ১১:১৭:০৮ সকাল
হাদীস শরীফ মুসলিম মিল্লাতের এক অমূল্য সম্পদ, ইসলামী শরই’আতের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি। কুরআন মজীদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদীস সেখানে এ মৌল নীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কুরআন ইসলামের আলোকস্তম্ভ, হাদীস তাঁর বিচ্ছুরিত আলো। ইসলামী গান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হৃদপিণ্ড, আর হাদীস এ হৃদপিণ্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী। জ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিতধারা প্রবাহিত করে এর অঙ্গ-প্রতঙ্গকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় রাখে। হাদীস একদিকে যেমন কুরআনুল আযীমের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে তা পেশ করে কুরআনের ধারক ও বাহক নবী করীম (সঃ)-এর পবিত্র জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা ও কাজ, হিদায়াত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এজন্যই ইসলামী জীবন বিধানে কুরআনে হাকীমের পরপরই হাদীসের স্থান।
আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈল আমীনের মাধ্যমে নবী করিম (সঃ)-এর উপর যে ওহী নাযিল করেছেন, তা হলো হাদীসের মূল উৎস। ওহী-এর শাব্দিক অর্থ ‘ইশারা করা’ গোপনে অপরের সাথে কথা বলা। ওহী দু প্রকার। প্রথম প্রকার প্রত্যক্ষ ওহী যার নাম ‘কিতাবুল্লাহ’ বা ‘আল-কুরআন’। এর ভাব, ভাষা উভয়ই মহান আল্লাহ্র। রাসুলুল্লাহ (সঃ) তা হুবুহু প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় প্রকার পরোক্ষ ওহী এর নাম ‘সুন্নাহ’ বা ‘আল-হাদীস’। এর ভাব আল্লাহ্র, তবে নবী (সঃ) তা নিজের ভাষায়, নিজের কথায় এবং নিজের কাজে ও সম্মতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। প্রথম প্রকারের ওহী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর সরাসরি নাযিল হতো এবং তাঁর কাছে উপস্থিত লোকজন তা উপলব্ধি করতে পারত। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকারের ওহী তাঁর উপর প্রচ্ছন্নভাবে নাযিল হতো এবং অন্যরা তা উপলব্ধি করতে পারত না।
আখেরী নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কুরআনের ধারক ও বাহক, কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবে নামব জাতিকে একটি আদর্শ অনুসরণের ও অনেক বিধি-বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দান করেন নি। এর ভার ন্যস্ত করেছেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর। তিনি নিজের কথা-কাজ ও আচার-আচরনের মাধ্যমে কুরআনের আদর্শ ও বিধান বাস্তবায়নের পন্থা ও নিয়ম কানূন বলে দিয়েছেন। কুরআনকে কেন্দ্র করেই তিনি ইসলামের এক পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান পেশ করেছেন। অন্য কথায়, কুরআন মজীদের শিক্ষা ও নির্দেশসমূহ ব্যাক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য নবী (সঃ) যে পন্থা অবলম্বন করেছেন, তাই হচ্ছে হাদীস। হাদীসও যে ওহীর সুত্রে প্রাপ্ত এবং তা শরী’আতের অন্যতম উৎস কুরআন ও মহানবী (সঃ)-এর বাণীর মধ্যেই তাঁর প্রমাণ বিদ্যমান। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী (সঃ) সম্পর্কে বলেনঃ
“ আর তিনি (নবী) মনগড়া কথাও বলেন না, এ তো ওহী যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (৫৩: ৩-৪)।
“ তিনি (নবী) যদি আমার নামে কিছু রচনা চালাতে চেষ্টা করতেন আমি অবশ্যই তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে লইতাম তাঁর জীবনধমনী” (৬৯: ৪৪-৪৬)।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রা) বলেন: রসুল (সা) জীবনের শেষ দিন গুলোতে সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর জন্য "কিতাবুচ্ছাদাকাহ" রচনা করান। যাতে রয়েছে চতুস্পদ জন্তুর যাকাতের কিছু বিধান। (ইমাম তিরমযি তার জামে'য় আত তিরমিযিতে একথা সংকলন করেছেন সহীহ সানাদে।)
এরখম আরো অনেক সহীফা লেখা হয়েছে রসুল (সা) জীবিত অবস্থায় যেমন:
১. ছহীফায়ে আমর ইবনু হাযম (আহমাদ,আবুদাউদ, নাসায়ী,দারাকুতনী,দারিমী,হাকেম)
২. ছহীফায়ে আলী (আহমাদ)
৩. ছহীফায়ে ওয়ায়েল ইবনু হুজুর (ত্বাবরানী)
৪. ছহীফায়ে সাদ ইবুন উবাদাহ (তিরমিযি)
৫. ছহীফায়ে সামুরা ইবনু জুনদুব (হিফাজাতে হাদীস)
৬. ছহীফায়ে জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ (মুসলিম)
৭. ছহীফায়ে আনাস ইবনু মালেক (হাকেম)
৮. ছহীফায়ে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (ইবনু সা'দ)
৯. মুসনাদু আবু হুরায়রাহ (বুখারী)
১০. মক্কাবিজয়ের ভাষন (বুখারী)
১১. পত্রাদি ও সন্ধি সমুহ
এগুলো থেকে স্পষ্ট প্রমানিত রসুল (সা) এর যুগে হাদীস লেখার বিধান ছিলো। জীবনের শেষদিকে তিনি হাদীস লেখাতে নিষেধ করেন নাই।
আরোও অহরহ প্রমান আছে যে রসুল (সা) এর যুগে হাদীস সংকলন করা হয়েছে। রসুল (সা) হাদীসকে কোরআনের সাথে মিশাতে না করেছিলেন তবে সংকলন করতে আদেশও করেছেন। পার্থক্যটি খুবই সুক্ষ বুঝতে হবে।
জাজাকাল্লাহ
একটু ভেবে দেখুন! রসুল (সা) এর দুই বা আড়াইশত বছর পরে হাদীস সংকলন হয়েছে বলে যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, তা কতযে ভিত্তিহীন এবং মনগড়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাস্তবে হাদীসের বিরুদ্ধে এ সকল অপচেষ্টা আসল উদ্দেশ্য হল, মুসলিম সমাজকে কুরআন ও সুন্নাহের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত করে দেয়া এবং পশ্চিমাদের বেপরোয়া স্বাধীন সভ্যতাকে মুসলমানদের উপর চেপে দেয়া।
ইনশা আল্লাহ! হাদীস অস্বিকার কারীগণ এতে সফলকাম কখনই হতে পারবে না। তাদের চাল বহুত দূর্বল। এই মুসলিম ইতিহাসের মতো হাদীসের রিজালবিদ আর পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই। রিজালশাস্ত্র মুসলিমদের জন্য একটি গর্বিত বিষয় যা অন্য কোন জাতির পক্ষে আদউ সম্ভব না।
আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দিন আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন