ঈমাম বুখারী (রহ.) এর জীবনী- (৫ম অংশ)
লিখেছেন লিখেছেন মুসলমান ২৪ জুন, ২০১৫, ০৯:৪০:৫১ সকাল
ইমাম বুখারী (রঃ) মহৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। দান-খয়রাত করা তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি পিতার বিরাট ধন-সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর সবই গরীব দুঃখী ও হাদীস শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজে অতি সামান্য আহার করতেন। কখনোও কখনও দুই তিনটি বাদাম খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছেন। বহু বছর তরকারী ছাড়া রুটি খাওয়ার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ইমাম বুখারী (রঃ)-এর সততা জনশ্রুতিতে পরিণত হয়েছিল। প্রসঙ্গত এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। আবূ হাফস (রঃ) একবার তাঁর কাছে বহু মূল্যবান পণ্যদ্রব্য পাঠান। এক ব্যাবসায়ী তা পাঁচ হাজার দিরহাম মুনাফা দিয়ে খরিদ করতে চাইলে তিনি বললেনঃ তুমি আজ চলে যাও, আমি চিন্তা করে দেখি। পরের দিন সকালে আরেক দল ব্যাবসায়ী এসে দশ হাজার দিরহাম মুনাফা দিতে চাইলে তিনি বললেনঃ গতরাতে আমি একদল ব্যাবসায়ীকে দিবার নিয়্যাত করে ফলেছি; কাজেই আমি আমার নিয়্যাতের খেলাফ করতে চাই না। পরে তিনি তা পূর্বোক্ত ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার দিরহামের মুনাফায় দিয়ে দিলেন। নিয়্যাত বা মনের সংকল্প রক্ষা করার জন্য পাঁচ হাজার দিরহাম মুনাফা ছেড়ে দিতে তিনি দ্বিধাবোধ করেন নি। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমি জীবনে কোন দিন কারো গীবত শিকায়াত করিনি। তিনি রমযান মাসে পুরো তারাবীতে এক খতম এবং প্রতি তিন রাতে এক খতম কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করতেন। একবার নফল সালাত আদায় কালে তাঁকে এক বিচ্ছু ষোল সতেরো বার দংশন করে, কিন্তু তিনি যে সুরা পাঠ করছিলেন তা সমাপ্ত না করে সালাত শেষ করেন নি। এভাবে তাকওয়া-পরহেযগারী, ইবাদত-বন্দেগী দান-খয়রাতের বহু ঘটনা তাঁর জীবনীকারগন বর্ণনা করেছেন, যা অসাধারণ ও বিস্ময়কর।
ইমাম বুখারী (রঃ)-কে জীবনে বহু বিপদ ও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হিংসুকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন। বুখারার গভর্নর তাঁর দুই পুত্রকে প্রাসাদে গিয়ে বিশেষভাবে হাদীস শিক্ষাদানের আদেশ করেন। এতে হাদীসের অবমাননা মনে করে ইমাম বুখারী (রঃ) তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ সুযোগে দরবারের কিছু সংখ্যক হিংসুকের চক্রান্তে তাঁকে শেষ বয়সে জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করতে হয়েছিল। এ সময় তিনি সমরকন্দবাসীর আহবানে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রোওয়ানা হন। পথিমধ্যে খরতাংগ পল্লীতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠলেন। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পহেলা শাওয়াল শনিবার ২৫৬ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। দাফনের পর তাঁর কবর থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। লোকে দলে দলে তাঁর কবরের মাটি নিতে থাকে। কোনভাবে তা নিবৃত করতে না পেরে কাটা দিয়ে ঘিরে তাঁর কবর রক্ষা করা হয়। পরে জনৈক ওলিআল্লাহ আকিদা নষ্ট হওয়ার আশংকায় সে সুঘ্রান বন্ধ হওয়ার জন্য দু’আ করেন এবং তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১০৫২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন