অবুঝ শিশুর কান্না::অত:পর উপলব্ধি!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নিল আকাশ ৩০ জুন, ২০১৫, ০২:৪৫:০৬ রাত
সাদিয়া মা এদিকে এস।
টেবিলে খাবার রেডি।এসো তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে।সকাল সকাল উঠতে হবে তো!
ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন সাদিয়ার শ্রদ্ধেয় দাদিমা।
তিনি ও পরম মমতা মাখা সুরে সাদিয়াকে ডাকলেন,
-“দিদিমণি আম্মু ডাকে তো!এদিকে এসো।”
বুকের মধ্যে এক অসহ্য যন্ত্রণাকে চেপে রেখে
সবাই যেন প্রাণখোলা আচরণের চেষ্টা করছে।
সাদিয়ার মনে গত দুই মাস ধরে যে যন্ত্রণার ঝড় বয়ে চলছে তাকে প্রশমিত করতে চাইছে সবাই।
যে অনুভূতি তাকে গত দুই মাসেরও অধিক সময় কাঁদিয়ে চলেছে।
হঠাৎই আজ সেই অনুভূতিগুলো উপলব্ধিতে পরিণত হতে চলেছে।বাস্তবের রূপ পেতে চাইছে।
কিন্তু এই সাদিয়ায় তো...................
মাসখানেক আগে সবাইকে কৌতুহলী মনে জিজ্ঞাসা(!) করত অনবরত।
-আমার আব্বু কখন আসবে।
আমি আব্বুর সাথে কথা বলবো।
দুইমাস আগের কথা।
সাদিয়ার আব্বু একটি বেসরকারী হাসপাতালে চাকরি করত।সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন সাদিয়ার আব্বু শহিদুল ইসলাম।
একজন ইসলাম প্রিয় ঈমানদার মানুষ হিসেবেই
বাতিল ও জালিম শক্তির ধ্বজ্বাধারীদের সাথে তৈরী হয়েছিল শত্রুতা।যা ছিল ঈমানের স্বাভাবিক দাবি।
অনেকদিন ধরেই নিজ বাড়িতে থাকতে মানে ঘুমাতে পারতেন না শহিদুল ইসলাম।
ঘরে প্রেয়সী সহধর্মিনী আর প্রাণপ্রিয় আদরের মেয়ের সাথে অনেকদিন দেখা হয় নাই।
জালিমের উৎপীড়ন তাদেরকে পিতা-মেয়ের আদুরে ভালবাসা ও মমতার পরশ থেকে রেখেছে বঞ্চিত।
রাত্রি দশটা।
--ঘরে ফোন বেজে চলেছে।
পাশের ঘরে সুমধুর কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করছেন
ফাওজিয়া খানম।
শহিদুল ইসলামের প্রিয় সহধর্মিনী।
--সাদিয়া মা!
দেখোতো মামণি!এত রাতে কে ফোন করেছে।
ফোন রিসিভ করেই আনন্দে আটখানা সাদিয়া।
দৌড়াতে দৌড়াতে এসে আম্মুকে বলল-
আব্বু ফোন করেছে।
বিস্ময়াভিভূত হয়ে ফোন হাতে নিলেন ফাওজিয়া খানম।
-আসসালামুআলাইকুম।
(অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে,জানতে চাচ্ছে যেন অনেক কিছু...........আবেগ্লাপুত হয়ে কন্ঠ রোধ হয়ে আসছে তার)।
-অলাইকুমুসসালাম।
-কেমন আছ তোমরা?
-সাদিয়া কেমন আছে?
(আচ্ছা দাড়াও আমি সাদিয়াকে দিচ্ছি।)
-আম্মু আজ আমি তোমার কাছে আসছি।
আজ রাতে তোমার সাথে অনেক মজার গল্প করব।
তোমার কি কিছু লাগবে।
-না।আমার কিছু লাগবে না।
শুধু তুমি এসো।আমি তোমার কোলে মাথা
রেখে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমাতে চাই বাবা
কতদিন তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমায় না!
(একটু অভিমানের সুর সাদিয়ার কন্ঠে!)
শহিদুল ইসলাম বের হয়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু বাড়ি যেতে পারেননি তিনি।
পথিমধ্যেই ঘাতকদের হাতে বন্দি হন।
দুই দিন খোঁজ মেলেনি শহিদুল ইসলামের।
অত:পর.....................
পরদিন সকালে খোঁজ পাওয়া যায় শহিদুলের।
চিরহাসিমাখা সেই নিথর দেহটি পড়ে ছিল
বাড়ির পাশের মাদ্রাসা রোডের পাশে।
জনদরদি এই মানুষটিকে এইভাবে ফিরে পেতে
প্রস্তুত ছিলনা কেউই।
গ্রামের কৌতুহলী মানুষের এক কান-দু কান হতে হতে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে চারপাশ।
মমতাময়ী মায়ের কানেও খবরটি পৌছে যায়।
রুখতে পারেননি নিজেকে!
বারবারমূর্ছা যেতে থাকেন।
বাড়িতে কোলাহল!
ঘুম ভেঙে যায় সাদিয়ার।
বাবার অপেক্ষায় জেগে ছিল সারারাত।
জিদ করে মাকে বলেছে।
-মা। বাবা ঠিক ঠিক আসবে।তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন।
কিন্তু জেগে থাকতে পারেনি।
ফজরের কিছু আগে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
উঠোনে বের হয়ে আসে সাদিয়া।
দেখে সবাই কান্নাকাটি করছে।
ভিড় ঠেলে সামনে যায় সে।
দেখে তার বাবা হাসিমাখা মুখ নিয়ে
শুয়ে আছে।
-মা দেখ।
আমি তোমাকে বলেছিলাম না বাবা আসবেই।
দেখ!বাবা ঠিক চলে এসেছে।
বাবা আমার কথা রেখেছে।
বাবাকে জড়িয়ে ধরে সাদিয়া।
বাবাকে অভিমান করে বলে,
তোমার আসতে এতক্ষণ লাগলো?
জানো বাবা!তোমার কোলে মাথা রেখে
ঘুমাবো বলে সারারাত জেগে ছিলাম।
কিন্তু পারিনি।ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-বাবা তুমি আমাকে এখন
একটু আদর করনা!
-বাবা উঠ না!
-বাবা আমি কিন্তু রাগ করবো!
দেখ!মা তোমার জন্য কাঁদছে।
-উহ।আমি বুঝেছি।সারারাত তোমার অনেক
কষ্ট হয়েছো।
আর সহ্য করতে পারেননি ফাওজিয়া খানম।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।
কি করে মেয়েকে বলবেন তার বাবা আর তাকে
আদর করবেন না।
ঐ নরপিশাচরা যে তার বাবাকে হত্যা করেছে।
তিনি এখন চলে গেছেন অনেক দূরে।
এ জগত ছেড়ে অন্য একখানে।
চারপাশের সবাই নির্বাক।
হু-হু করে কাঁদতে থাকে সবাই।
কিছু বুঝে উঠতে পারছে না সাদিয়া।
এক সময় মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে
শুরু করে সাদিয়া।
দুপুরের পর নিজের ভাইকে শেষবারের মত
দেখতে আসেন জসিম উদ্দিন।
চাচ্চুকে দেখেই সাদিয়া জড়িয়ে ধরে জসিম উদ্দিনকে।
জিজ্ঞাসা করে, চাচ্চু আব্বু ঘুম থেকে উঠছে না কেন?
আব্বু কি আমাকে আর আদর করবে না।
আব্বু কি আমার উপর রাগ করেছে?
তুমি একটু বলনা চাচ্চু যেন আব্বু আমার উপর
রাগ না করে।
অজোরে চোখের পানি পড়ছে জসিম উদ্দিনের।
কি বলে সান্তনা দিবেন নিজেকে?
ভাতিজির প্রশ্নের কি উত্তর দিবেন?
নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন,
মা মণি।তোমার আব্বু তো আল্লাহর কাছে
চলে গেছেন।
তুমি বলে দাও আমি আব্বুর জন্য বসে আছি।
আব্বু যেন তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছ থেকে
চলে আসে।
আমাকে আদর করে খাইয়ে না দিলে আমি কিন্তু
কিছুই খাব না।
আর নিজেকে সামলাতে পারেন নি জসিম উদ্দিন।
ডুকরে কেঁদে উঠেন।
কয়েক দিন পর।
সাদিয়া শুধু বায়না ধরে আমি আব্বুর সাথে
দেখা করতে যাব।
একদিন সকালে ফজরের নামায আদায় করে
দাদিমার সাথে বাবার কবরের পাশে যায় সাদিয়া।
দাদির সাথে সাথে বাবার কবরের পাশে হাত তুলে।
বাবার জন্য দোয়া করে।
একসময় দাদি চলে আসতে চান ।
সাদিয়া নাছোড়বান্দা!
সে বাবার সাথে দেখা না করে যাবে না।
-বাবা তুমি কি খুব ব্যস্ত?
-নাকি আল্লাহর সাথে সবসময়
মিটিংয়ে থাক।
-আমার কথা তোমার একটুও মনে পড়ে না?
-জানো বাবা।তোমাকে ছাড়া আমি একটুও
ঘুমাতে পারি না।
-আসো না বাবা।
-আল্লাহর কাছ থেকে মিটিংয়ে ছুটি
নিয়ে আমার সাথে দেখা করে যাও।
অনেক ক্ষণ অতিবাহিত হয়েছে।
সন্তান হারানোর বেদনা আর
(নাতনির এমন আহাজারিতে অঝোরে
কেঁদে চলেছেন সাদিয়ার দাদিমা)
-ঠিক আছে বাবা।
-আমি বুঝেছি আজ তুমি প্রচন্ড ব্যস্ত।
আমি আজকে চলে গেলাম।
অন্যদিন তোমার সাথে কথা বলবো।
সময় পেলেই তুমি আমাকে ফোন করবে।
প্রায় সপ্তাহ খানেক পর।
নিজের ভাই হারানোর কষ্টে ভেঙে না পড়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন জসিম উদ্দিন।
বাড়ির সবার একটু খোঁজ নেওয়ার জন্য
ফোন দিয়েছেন বাসায়।
-হ্যালো
-আব্বু!আব্বু তুমি এত দেরিতে ফোন করলে?
তোমার সাথে কথা বলতে না পেরে আমার খুব
কষ্ট হচ্ছিল আব্বু।
তোমার সাথে দেখা করতে গেলাম তুমি
আসলে না।এত ব্যস্ত থাক তুমি।
আব্বু তোমার মিটিং এখন শেষ তো!
একনাগাড়ে অনেক গুলো কথা বলে চললো
সাদিয়া।
অপার থেকে নির্বাক ও নিস্তব্ধ জসিম উদ্দিন।
নির্বাক উপস্থিত সবাই।
রাজ্যের জড়তা ভর করেছে সবার উপর।
কেউ কিছু বলতে পারছে না।
অপার থেকে জসিম উদ্দিন শুধু বলেন,
আমি ভাল আছি।মামণি তুমি ভালো আছো তো?
ফোনের লাইনটা কেটে দেয় জসিম উদ্দিন।
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে সাদিয়া বলে,
দেখলে আম্মু ।অামার আব্বু কতটা ভালোবাসে
আমাকে।
আল্লাহর কাছ থেকেই ছুটি পেয়ে ফোন করলো আমাকে।
তোমরা শুধু মিছামিছি বলো আব্বু আর আসবে না।
মায়ের কোলে মাথা গুঁজে সাদিয়া।
ডুকরে কেঁদে উঠেন ফাওজিয়া খানম।
...................................................
কাঁদতে থাকে উপস্থিত সকল আত্মীয়।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন