ট্র্যাজেডিক মুর্হূত:পলাশীর প্রান্তর ও আজকের বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নিল আকাশ ২৪ জুন, ২০১৫, ১১:২২:৩২ রাত
গতকাল মঙ্গলবার ছিল ২৩ জুন ।ঐতিহাসিক পলাশী ট্রাজেডি দিবস। উপমহাদেশের ইতিহাসে বাঁক ঘোরানো নির্মম ট্রাজেডি পলাশী ট্রাজেডি। পলাশী ট্রাজেডি শুধু পরাজয়ের দিন নয় বরং প্রেরণার উৎসও। দুইশ ছাপ্পান্ন বছর আগে ১৭৫৭ সালের এই দিনে এক সফল প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে যুদ্ধের প্রহসন হয়েছিল ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে।পলাশী যুদ্ধের মাধ্যমেই বিশ্বাসঘাতকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। সেদিন তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।সাথে সাথে এদেশের আকাশে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা; বাংলার জমিনে নেমে আসে দুর্ভেদ্য অমানিশা; এদেশের মানুষের উপর চেপে বসে পরাধীনতার জগদ্দল পাথর।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শুরু থেকেই ভারতবর্ষের মুসলমানদের হেয় করার লক্ষ্যে এবং বাঙালি মুসলমান নেতাদের নামে কালিমা লেপনের উদ্দেশ্যে সুস্থ মস্তিষ্কে পলাশীর প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে সে চাপাপড়া ইতিহাস অনেকাংশে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে ও এ সর্ম্পকে সচেতন হতে হবে।
পলাশীর সেই প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার করুণ পরিণতির কথা ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেল। এমন বেদনাবহ স্মৃতিকে স্মরণ করে মীরজাফর, ঘষেটি বেগমের প্রেতাত্মাদের রোখার দৃপ্ত শপথ নেয় জাতি।
এবার এমন এক সময়ে পলাশী ট্রাজেডি দিবস পালন হচ্ছে যখন মীরজাফর-ঘষেটি বেগমের প্রেতাত্মারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দিয়ে হলেও রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছে। বহু আন্দোলন, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাও আজ বিপন্ন। তারা এদেশকে ‘কলোনি’ বানানোর স্বপ্নে বিভোর। অদ্ভূত এক সরকার ব্যবস্থা শান্তিপ্রিয়, গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। জাতীয়তাবাদী, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের ওপর সরকারের উন্মুক্ত খড়গ উদ্ধত। এই কঠিন সময় থেকে মুক্তি পেতেই আজ সবাই মহান প্রভুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীন নবাব ছিলেন আলীবর্দী খাঁ (১৭৪০-১৭৫৬)। তাদের পিতামহ ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত, আর মাতা ছিলেন আফগান-তুর্কি বংশোদ্ভূত। সেই সুবাদে তারা ছিলেন সুজাউদ্দীন খাঁর আত্মীয়। সুজাউদ্দীন ছিলেন বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর জামাতা। সুজাউদ্দীন খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সরফরাজ খাঁ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন মারাঠা ও বর্গীদের লুণ্ঠন দমনের জন্য গভর্ণর আলীবর্দী খাঁ নবাবের অনুমতি প্রার্থনা করলে নবাব সেক্ষেত্র গুরুত্ব না দেয়ায় বীর আলীবর্দী খাঁ নবাব সরফরাজ খাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নবাবকে পরাজিত ও নিহত করে আপন বুদ্ধিমত্তা ও রণকৌশলের বলে বাংলার নবাবী লাভ করেন।
এদিকে নবাব আলীবর্দী খাঁ কর্তৃক পদচ্যুত সমসের খাঁ ও সরদার খাঁ নামে দুই আফগান বীর বিদ্রোহ করলে তাদেরকে বশ্যতা স্বীকার করার জন্য রাজ দরবারে ডেকে পাঠানো হয়। তারা বশ্যতা স্বীকারের ছলে ১৭৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য সমাদরে জৈনুদ্দীনের নিকটে উপস্থিত হয়ে অতর্কিতে তার উপর আক্রমণ চালায়। জৈনুদ্দীন নিজ তরবারী কোষমুক্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মুহূর্তের মধ্যে তার ছিন্নমুণ্ডু মসনদের উপর লুটিয়ে পড়ে।সিরাজউদ্দৌলার মাতা ও নবাব আলীবর্দী খাঁর ছোট মেয়ে আমেনা বেগম সন্তান-সন্ততিসহ আফগান শিবিরে বন্দী হলেন।
এই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক সংবাদ পাওয়া মাত্রই নবাব আলীবর্দী খাঁ আফগান বিদ্রোহ দমন এবং তাদের হাত থেকে দুহিতার বন্ধন মোচন করতে বিহারের উদ্দেশ্যে সসৈন্যে যাত্রা । সিরাজউদ্দৌলা তখন বয়সে বালক হলেও এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় অতিমাত্রায় ব্যাকুল হয়ে উঠেন। কারণ তার পিতা ও পিতামহ শত্রু হাতে নিহত এবং মাতা বন্দিনী। এমত পরিস্থিতিতে তিনিও তরবারি হাতে মাতামহের সাথে যুদ্ধে যাত্রা করলেন। অতঃপর ১৭৪৮ সালের ১৬ই এপ্রিল গঙ্গার তীরবর্তী কালাদিয়ারা নামক স্থানে উভয় পরে মধ্যে তুমুল লড়াইয়ে বিদ্রোহী সমসের খাঁ নিহত হয় এবং তার সহযোগী বাহিনীকে বিধ্বস্ত করে আলীবর্দী খাঁ বন্দী কন্যা ও তার সন্তানদের মুক্ত করার মাধ্যমে বিহার পুনরুদ্ধার করেন। নবাব আলীবর্দী খাঁ তখন নিজ স্ত্রী শরফুন্নেসার সাথে পরামর্শ করে নিহত জামাতা জৈনুদ্দীনের সুযোগ্য উত্তরসূরি ও নবাবের প্রিয় দৌহিত্র সিরাজুদ্দৌলাকে বিহারের পরবর্তী নায়েবে-নাযিম নিযুক্ত করেন। এটা ছিল তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার একটা অংশ। যেহেতু সিরাজুদ্দৌলা তখন বয়সে বালক, তাই রাজা জানকীরামকে বিহারে সিরাজের নায়েব নিয়োগ করা হল।
যেহেতু নবাব আলীবর্দী খাঁর কোন পুত্র সন্তান ছিল না, তাই তিনি মৃত্যুর পূর্বেই তার কনিষ্ঠ কন্যার পুত্র প্রিয় দৌহিত্র সিরাজুদ্দৌলাকে বাংলার পরবর্তী নবাব মনোনীত করে যান। ।বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দী খাঁ মৃত্যুর আগে দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলাকে নবাবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারি করে যান। নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ সালের এপ্রিল মাসে তারই মনোনীত প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে বসেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র তেইশ বছর। তার নিকট আত্মীয়ের মধ্যে অনেকেই নবাব আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর সিংহাসন লাভের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। তাই তিনি যখন সিরাজুদ্দৌলাকে পরবর্তী নবাব মনোনীত করেন, তখন স্বভাবতই অন্যদের অন্তরে চাপা অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। যার ফলে তারা মনে-প্রাণে সিরাজকে নবাব হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। তাই নবাব আলীবর্দী খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা মেহেরুন্নেসা ওরফে ঘসেটি বেগম ও পূর্ণিয়ার ভূতপূর্ব শাসনকর্তার পুত্র শওকত জঙ্গ সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই সুযোগে ধূর্ত ব্রিটিশ কোম্পানি নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের নিমিত্তে গোপনে শওকত জঙ্গ ও ঘসেটি বেগমের পক্ষাবলম্বন করে। এমনকি নতুন নবাব হিসেবে ইংরেজগণ সিরাজকে উপঢৌকন প্রেরণের চিরাচরিত রীতিও অমান্য করে।প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী অন্যাণ্য ইউরোপিয় বনিকরা সিরাজকে উপহার স্বরুপ উপঢৌকন প্রদান সহ তাকে অভিবাদন জানান। কিন্তু ইংরেজরা তা করেনি। এছাড়াও ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কৃষ্ণবল্বভ সহ নবাবের অবাধ্য সকল কে আশ্রয় দেন। এসময় কোম্পানী ব্যাক্তিগত ব্যবসা শুরু করে।এর ফলে সিরাজের রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেয়।
নবাবের বিরুদ্ধে ঘসেটি বেগম, রাজা রাজবল্লভ প্রভৃতির ষড়যন্ত্রে যে ইংরেজরাও জড়িত, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ ছিল না।
ইত্যবসরে বুদ্ধিমান সিরাজ বিনা রক্তপাতে সুকৌশলে বড় খালা অর্থাৎ ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে আনতে সমর্থ হন। নবাব বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রধান হোতা এভাবে সিরাজের হাতে বন্দী হয়েছে, জানতে পেরে ব্রিটিশ বণিকরা ঘসেটি বেগমের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার বিপদ আঁচ করতে পারে। এতে তড়িঘড়ি করে পূর্বের আচরণের জন্য সিরাজের নিকট অনুতাপ প্রকাশ করে।
ইতোমধ্যে শওকত জঙ্গ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মসনদ থেকে অপসারণের লক্ষে যুদ্ধযাত্রা শুরু করেন। এদিকে নবাবও কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ ফিরে এসে শওকত জঙ্গকে দমনের জন্য ১৭৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে সসৈন্যে পূর্ণিয়া অভিমুখে অগ্রসর হন। ১৭৫৬ সালের ১৬ই অক্টোবর নবাবগঞ্জের মনিহারী গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে শওকত জঙ্গ পরাজিত ও নিহত হন। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগম, ইংরেজ ও শওকত জঙ্গের মত তিনটি প্রধান ষড়যন্ত্রকারীকে কঠোর হস্তে মোকাবিলা করতে সমর্থ হন।
এদিকে নবাব কর্তৃক কলকাতা অধিকারের সংবাদ মাদ্রাজে পৌঁছলে ব্রিটিশ সেনাপতি রবার্ট কাইভ সঙ্গে সঙ্গে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে কলকাতা পুনরুদ্ধারে বেরিয়ে পড়েন। একই সাথে এডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে এক নৌবহরও কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। প্রথমে তারা ফুলতায় এসে বিনা বাধায় উদ্বাস্তু ইংরেজদের সাথে মিলিত হয়। অতঃপর সম্মিলিতভাবে কলকাতার দিকে যাত্রা করে। মানিক চাঁদের নেতৃত্বে কিছু সৈন্য অতর্কিতে তাদের উপর হামলা চালালে ইংরেজদের বেশ কিছু সৈন্য নিহত হয়। কিন্তু অর্থের প্রলোভনে শেষ পর্যন্ত মানিক চাঁদ ইংরেজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে পালিয়ে যান। এই সুযোগে ইংরেজরা নবাবের বজবজ দুর্গ ধ্বংস করে এবং ১৭৫৭ সালের ২রা জানুয়ারি কলকাতা অধিকার করে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সুরতি করে। এক্ষেত্রে মানিক চাঁদ গোপনে ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করে চরম বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দেয়। অথচ কলকাতা পতনের পর যদি উমিচাঁদ, নবকিষেণ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, মানিক চাঁদের মত হিন্দু-প্রধানরা রজার ড্রেক, হলওয়েল, কাইভ, ওয়াটসনদের সাহায্য না করত, তাহলে ইংজেদের আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোন গত্যন্তর ছিল না।
কলকাতা অধিকার করেই ইংরেজরা পরের দিন ৩ জানুয়ারি নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অপর দিকে নবাবও এ সংবাদ জানতে পেরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। ইতোমধ্যে কাইভ ১০ই জানুয়ারি হুগলী অধিকার করে শহর লুণ্ঠন করে এবং পার্শ্ববর্তী বহু গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। ১৯শে জানুয়ারি নবাব হুগলী পৌঁছলে ইংরেজরা পিছু হটে কলকাতায় প্রস্থান করে। ৩ ফেব্রুয়ারি নবাব কলকাতার শহরতলীতে উমিচাঁদের বাগানে শিবির স্থাপন করলে ৫ই ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে কাইভ ও ওয়াটসন অকস্মাৎ নবাব শিবিরে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে নবাবের পরে প্রায় ১৩০০ সৈন্য হত্যা করে। কিন্তু সকালেই নবাবের সৈন্য সুসজ্জিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালালে কাইভ প্রস্থান করে। সেদিন কলকাতা জয়ের মত নবাবের যথেষ্ট সৈন্য ও শক্তি থাকার পরও ৯ই ফেব্রুয়ারি ’৫৭ সেনাপতির পরামর্শে ও ষড়যন্ত্রে নবাব ইংরেজদের সাথে এক অপমানজনক সন্ধি স্থাপনে সম্মত হন। যে সন্ধি ‘আলিনগর সন্ধি’ নামে অভিহিত হয়। এই সন্ধির ফলে নবাবের প্রতিপত্তি অনেকাংশে হ্রাস পায় এবং ইংরেজের শক্তি, প্রতিপত্তি ও ঔদ্ধত্য বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে ইংরেজদের পক্ষে কাজ করেন বঙ্গের বিখ্যাত ধনী জগৎশেঠ, কলকাতার বড় ব্যবসায়ী উমিচাঁদ ও রাজা রাজবল্লভ, মানিক চাঁদ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ
এ ঘটনায় ইংরেজদের মনোবলও বৃদ্ধি পায়। ফলে ২৩ এপ্রিল ’৫৭ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলকাতা কাউন্সিল নবাব সিরাউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষে
মে ’৫৭-র প্রথম সপ্তাহে মুর্শিদাবাদে জগৎশেঠের বাড়িতেই উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাজা রাজবল্লভ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখ প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠকে কলকাতা থেকে কোম্পানির দূত হিসেবে ওয়াটসনকে স্ত্রীলোকের ছদ্মবেশে পালকিতে করে আনা হয়।
বৈঠকে বসে ওয়াটসন প্রথমে সকলকে প্রলোভনের জালে আঁটকে ফেলে। অতঃপর সিরাউদ্দৌলার সিংহাসনচ্যুত করার কথা সুকৌশলে ব্যক্ত করে। ওয়াটসন আরো বলে, নবাব ক্ষমতাচ্যুত হলে সারা ভারতের মুসলমানদের উত্তেজনা প্রশমণের লক্ষে তারই আত্মীয় মীরজাফরকে সিংহাসনে বসাতে হবে। মীরজাফর প্রথমে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ তিনি ছিলেন পরলোকগত নবাব আলীবর্দী খাঁর ভগ্নীপতি এবং বাংলার সিপাহসালার। তিনি সিরাউদ্দৌলা কর্তৃক ক্রমাগত অপমানিত ও পদচ্যুত হলেও নিজে কখনো সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার কল্পনাও করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি নবাব আলীবর্দী খাঁর আত্মীয়, অতএব সিরাজও আমার আত্মীয়, এটা কি করে সম্ভব?’ তখন উমিচাঁদ বললেন, ‘আমরা তো আর সিরাজকে মেরে ফেলছি না অথবা আমরা নিজেরাও নবাব হচ্ছি না, শুধু তাকে সিংহাসনচ্যুত করে আপনাকে বসাতে চাচ্ছি। কারণ শুধু আমি নই, ইংরেজ এবং মুসলমানদের অনেকেই, এক কথায় অমুসলমানদের প্রায় প্রত্যেকেই আপনাকে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখে’। এরপরও যখন দেখলেন, তিনি রাজি না হলে তারা নবাবকে হটিয়ে সেখানে ইয়ার লতিফকে বসানোর ষড়যন্ত্র করছে; তখন তিনি আর উদাসীন না থেকে তাদের প্রস্তাবে সম্মত হলেন। তখন ওয়াটসন বলেন, এই মুহূর্তে সিরাজের সাথে লড়তে গেলে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা আমাদের নেই। তখন জগৎশেঠ বলেন, ‘টাকা যা দিয়েছি আরও যত দরকার আমি আপনাদের দিয়ে যাব, কোন চিন্তা নেই, আপনারা প্রস্তুতি নিন’। তখন উপস্থিত দেশিয় ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে শুধু নবাব বিরোধী নয়, সাথে সাথে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী একটি সন্ধিপত্র রচিত হয়। উক্ত সন্ধিপত্রে ওয়াটসন ১৯ মে স্বাক্ষর করলেও মীরজাফর স্বাক্ষর করেন ৪ জুন।
যুদ্ধ:
এবার রবার্ট ক্লাইভ সামান্য অজুহাতে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নবাবও ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে সসৈন্যে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন প্রাতঃকালে ভাগীরথীর তীরে পলাশীর প্রান্তরে উভয় পরে মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। নবাবের সৈন্য সংখ্যা ৫০ হাজার, অপর দিকে ইংরেজ সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার। মীরজাফর ও রায়দুর্লভদের চক্রান্ত্রে নবাবের সৈন্যের একটা বড় অংশ যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। কেবল মীর মদন, মোহনলাল ও সিনফ্রের অধীনে মুষ্টিমেয় কিছু সৈন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মীরমদন ও মোহনলালের সমরকুশলতার সম্মুখে ইংরেজ বাহিনী টিকতে না পেরে ক্লাইভের সৈন্য বাহিনী পার্শ্ববর্তী আম্রকাননে আশ্রয় নেয়।ক্লাইভ যুদ্ধে ধারণার চেয়ে বেশি প্রতিরোধের সন্মুখীন হন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বৃষ্টিতে নবাব এবং ফরাসীদের কামানের গোলায় ব্যবহৃত গানপাউডার ভিজে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু ইংরেজরা তাদের গান পাউডার সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়। জানা যায়, ক্লাইভ দিনে যুদ্ধ চালিয়ে রাতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে কামানের গোলার আঘাতে মীর মর্দান নিহত হলে নবাব ভেঙে পড়েন ।তিনি আলীবর্দী খাঁর আমলের আনুগত্যপূর্ণ ব্যবহারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নিজ উষ্ণী মীরজাফরের সম্মুখে নিবেদন করে বললেন, ‘জাফর খাঁ, এই উষ্ণীষের সম্মান রক্ষা করুন’।
তখন মীরজাফর মুখে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও তলে তলে সবচেয়ে বড় সর্বনাশটাই করলেন। তিনি সিরাজকে যুদ্ধ বিরতির আত্মঘাতী পরামর্শ দিলেন। অথচ মীর মদনের মৃত্যুর পর মোহনলালের প্রচেষ্টায় যুদ্ধের গতি নবাবের অনুকূলেই ছিল। কিন্তু নিজ অদূরদর্শিতা ও মীরজাফরের সর্বনাশা পরামর্শে তিনি মোহনলালকে যুদ্ধ বন্ধের আদেশ দেন। প্রথমে মোহনলাল তার আদেশ মানেননি। কিন্তু নবাবের নিকট থেকে পুনঃ পুনঃ আদেশের ফলে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করেন। এই সুযোগে রবার্ট ক্লাইভ পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে নবাব বাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নবাব পালিয়ে গিয়ে কোনোক্রমে প্রাণে রক্ষা পান।
যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ:
যুদ্ধক্ষেত্রেই রবার্ট ক্লাইভ মীরজাফরকে নতুন নবাব বলে অভিনন্দন ও কুর্নিশ করে। ২৬শে জুন তার অভিষেক হয় এবং ২৯ জুন সিংহাসনে আরোহণ করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজধানীতে ফিরে এসে প্রচুর অর্থ বিতরণ করে সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তিনি স্বীয় পত্নী ও কন্যাসহ পালিয়ে যান। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস পথিমধ্যে রাজমহলে রাত কাটাতে গিয়ে ৩০ জুন তিনি ধরা পড়েন।
২ জুলাই রাতে সাধারণ বন্দীর মত শৃঙ্খলিত অবস্থায় সিরাজউদ্দৌলাকে নতুন নবাব মীরজাফরের সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। ঐ রাতেই মীরজাফরের পুত্র মীরণের আদেশে মুহাম্মাদী বেগ তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
নবাবকে হত্যা করতে মুহাম্মাদী বেগ রাজি না হলে তারা তার ও তার স্ত্রী-পুত্রের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অনন্যোপায় হয়ে অশ্রু সম্বরণ করে নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিকল্পনামাফিক সংকেত পাওয়া মাত্র সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করতে সম্মত হন। মুহাম্মাদী বেগ যখন উলঙ্গ তরবারি নিয়ে রাতে তার কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন নবাবের আর বুঝতে বাকি ছিল না, তার মৃত্যুর সময় সমাগত। তখন তিনি কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘মুহাম্মাদী বেগ, আমাকে কি তোমরা সামান্য একটা অসহায় গরিবের মত বেঁচে থাকতেও দেবে না?’ তখন মুহাম্মাদী বেগও দৃঢ়ভাবে বললেন, ‘না তারা তা দেবে না’। তখন নবাব মুহাম্মাদী বেগকে বলে দু’রাকআত ছালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইতোমধ্যে ছালাত শেষ হওয়ার আগেই দূর থেকে বাঁশি বাজিয়ে সংকেত দেয়া মাত্র তাঁর উপরে তরবারি চালানো হয়। নবাব সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটে পড়ে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ শব্দ করতে করতে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলেন। এটাই হল পলাশীর প্রান্তরের নির্মম ট্র্যাজেডি। বাহ্যিকভাবে নবাব সিরাজুদ্দৌলার চরম পরিণতির জন্য শেষ দিকের কিছু ঘটনাবলীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত কয়েকজন বিশ্বাসঘাতককে দায়ী করা হলেও মূলত পলাশীর বিয়োগান্ত ঘটনা কোন কাকতালীয় বিষয় ছিল না। এটি ছিল ব্রিটিশ বেনিয়াদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি। প্রথম থেকেই যদি জগৎশেঠের মত এদেশের নামি-দামি ধনাঢ্য এবং পরবর্তীতে মতালোভী কিছু মীরজাফররা ইংরেজদের সহযোগিতা না করত, তাহলে কোন দিনই ইংরেজরা এদেশের মানুষদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে সমর্থ হত না। বাংলার এসব বিশ্বাসঘাতকরা কখনই উপলব্ধি করতে পারেনি যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় শুধু তাঁর একার পরাজয় নয়, শুধু বাংলার পরাজয় নয়, বরং সমগ্র ভারতবাসীর পরাজয়। তবে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানেই, অতি সহজেই তারা এই চরম সত্য বিষয়টি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
পরাজয়ের কারণ:
পলাশীযুদ্ধে বিপর্যয়ের পেছনে বহু কারণের মধ্যে উল্যেখযোগ্য ক’টি হলো:
১.ইংরেজ বেনিয়াদের ভারতবর্ষ দখল।
২.নবাব সিরাজের বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরজাফরের আলীর চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
৩.কাইভের নেতৃত্বে গঠিত বণিক ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির’ কুটবুদ্ধি ও গাদ্দারী ব্যক্তিদের স্বার্থপরতা ৪.হিন্দুদের গভীর চক্রান্ত, যার নেপথ্যে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বহুদিনের পাঁতানে ষড়যন্ত্রের জাল।
৫. মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোন্দল এবং পারস্পরিক অনৈক্য।
৬. মুসলমান শাসকদের মধ্যে (ক্ষমতার লোভ) শাসনক্ষমতা বজায় রাখার প্রতিযোগিতায়
তারা ছিলেন বিভোর।
এসব কারণেই পলাশীযুদ্ধে বিপর্যয় নেমে আসে।
ফলাফল:
১.পলাশী যুদ্ধের মধ্য দিয়েই ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসকদের পরাজ ঘটে।
২. গোটা ভারত উপমহাদেশে স্বাধীনতার সূর্য প্রায় দুশ বৎসরের জন্য অস্তমিত হয়।
৩. পলাশী যুদ্ধেই স্বাধীন বাংলার নবাব সিরাজের পরাজয় হয় এবং ইংরেজ তাঁবেদার বেঈমান-বিশ্বাস ঘাতক মীরজাফররা বাংলার মসনদ দখল করে।
৪. এ যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই বাংলায় লূটতরাজ ও ত্রাসের শাসন কায়েম হয়।
৫. নতুন নবাব কোম্পানিকে নগদ এককোটি টাকা ও ২৪পরগনা এলাকা দান করে ।
৬. এযুদ্ধের ফলে মীরজাফর এবং তার পরবর্তী নবাবগণ ইংরেজ শাসকদের হাতের পুতুলে পরিণত হন। ৭. পলাশীযুদ্ধের পরই বাংলায় ব্রিটিশ প্রভুত্বের আত্মপ্রকাশ হয়।
৮. এ যুদ্ধের পর থেকেই শুরু হল ভারতবর্ষে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার।
৯. তাঁরা প্রায় দু’শ বৎসর দাসত্বের জিঞ্জিরে আবদ্ধ হন।
স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যাবার পরও স্বাধীনতার সূর্য আবার ফিরিয়ে আনার জন্য হাজারো ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা তাজা-প্রাণ বিলিয়ে দিলেন। ফাঁসির দড়িতে ঝুললেন হাজারো ওলামায়ে কেরাম। কারাবরণ করলেন অগণিত ওলামায়ে কেরাম। কিন্তু আজও আমাদের স্বাধীনতার সূর্যকে অস্তমিত করে দেয়ার জন্য একশ্রেণীর মীরজাফররা সুগভীরভাবে দেশে চক্রান্তের জাল বুনছে। স্বাধীন দেশে আজ বিপন্ন মানবতা। ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবিক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে চলা-ফেরার স্বাধীনতা আজ হুমকীর সম্মূখীন। ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুন, ঈমান-আকাইদ নস্যাৎ করার লক্ষ্যে মীরজাফরা ঐক্যবদ্ধভাবে চক্রান্ত শুরু করেছে। দেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার সুগভীর চক্রান্ত চলছে। ইসলামের দুশমন ও মীরজাফরা বিভিন্ন কলা-কৌশলে ইসলামের ওপর আঘাত হানছে। দেশ-জাতি ও ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আরো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। পলাশী দিবসে আমাদের দৃপ্ত অঙ্গিকার হোক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার।
এককালের প্রাচ্যের স্বর্গ সোনার বাংলা পরিণত হয় শ্মশান বাংলায়, স্থান পায় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশে। এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। এ যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাংলা ব্রিটিশদের অধিকারে চলে আসে। বাংলা অধিকারের পর ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশরা পুরো ভারতবর্ষ এমনকি এশিয়ার অন্যান্য অংশও নিজেদের দখলে নিয়ে আসে। পলাশীর রক্তাক্ত ইতিহাস, পরাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিসংগ্রামীদের পরাজয়ের ইতিহাস, ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, ট্রাজেডি ও বেদনাময় এক শোক স্মৃতির ইতিহাস।
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ:
ঐতিহাসিক মেলসন পলাশীর প্রান্তরে সংঘর্ষকে ‘যুদ্ধ’বলতে নারাজ। তার মতে, ‘নবাবের পক্ষে ছিলো ৫০ হাজার সৈন্য আর ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ৩ হাজার সৈন্য কিন্তুপ্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রী মীরজাফর, রায় দুর্লভ ও খাদেম হোসেনের অধীনে নবাব বাহিনীর একটি বিরাট অংশ পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যত কোনো অংশগ্রহণই করেনি। এই কুচক্রীদের চক্রান্তে যুদ্ধের প্রহসনহয়েছিলো।
’ ইতিহাসবিদ নিখিল নাথ রায়ের লেখা ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনী’ থেকে জানা যায়, ‘নবাবের সেনা বাহিনীর তুলনায় ইংরেজদের সেনা সংখ্যা ছিলো অনেক কম। সেখানে বিশ্বাসঘাতকতা না হলে নবাবের বিজয় ছিলো সুনিশ্চিত।
আরেকঐতিহাসিক ড. রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘নবাব ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন ষড়যন্ত্রের কথাজানার পর যদি মীর জাফরকে বন্দি করতেন, তবে অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারী ভয় পেয়েযেতো এবং ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে পলাশীর যুদ্ধ হতো না।’
ইতিহাসবিদ মোবাশ্বের আলী তার ‘বাংলাদেশের সন্ধানে’ লিখেছেন, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রায়লাখ সেনা নিয়ে ক্লাইভের স্বল্পসংখ্যক সেনার কাছে পরাজিত হন মীর জাফরেরবিশ্বাসঘাতকতায়।’অতি ঘৃণ্য মীর জাফরের কুষ্ঠরোগে মৃত্যু হয়।
পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয় কোন সামরিক বিজয় ছিল না। এটি ছিল একটি রাজনৈতিক বিজয়। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে আট ঘন্টার এই যুদ্ধকে ‘যুদ্ধ’ না বলে ছোট দাঙ্গার সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু এ যুদ্ধই ভারতে ইংরেজ উপনিবেশের সূচনা করে এবং বাংলা প্রায় ২০০ বছর ইংরেজদের অধীনে থাকে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন পলাশীর যুদ্ধের ফল বিপরীতটি হলে ইংল্যান্ড নয় বাংলাই বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিতে পারত।
কিন্তু বাংলাদেশের ট্রাজেডি এই যে, মীর জাফরেরা গোর থেকে বার বার উঠে আসে।
পলাশী দিবস প্রতি বছরই আসে। কখনো সরবে কখনো নীরবে। জাতীয় বীর সিরাজউদ্দৌলাকে স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হই, ব্যথিত হয় হৃদয়। একথা সত্য, নবাব সিরাজ ইতিহাসের এক ভাগ্যাহত বীর, দেশপ্রেমিক। চতুর্মুখি ষড়যন্ত্র তার উত্থানকে ব্যাহত করেছিল।
শেষকথা
২৩ জুন এক শিক্ষণীয় ট্র্যাজেডির দিন। ইতিহাসের এই দিনটিকে স্মরণ করলে কোন দেশপ্রেমিক ক্ষমতার লোভে বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলানোর কথা চিন্তা করতে পারেন না। ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে ঐদিন যারা পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ যুদ্ধ নাটক মঞ্চস্থ করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজের জন্মভূমিকে বিদেশী শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। এ ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পাওয়া যায় দেশ উম্মাহর সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করলে শুধু আদালতে আখিরাতে নয় এই দুনিয়াতেও শাস্তি পেতে হয়।এ যুগের বিশ্বাসঘাতকরা তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক সঙ্কটই কেটে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
২৭৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন