ইসলাম পন্থীদের বিয়েতে এত অ্যালার্জি কেনো..??
লিখেছেন লিখেছেন সফেদক্যানভাস ২৯ জুন, ২০১৫, ০১:০৩:৪৩ দুপুর
এদের কাছে যুবক-যুবতীদের আবেগ-অনুভূতি, প্রয়োজন-বাস্তবতার কোনো মূল্য নেই। তথাকথিত ক্যারিয়ার আর স্ট্যাব্লিশমেন্টই এদের কাছে সব চেয়ে বড় বিষয়। অল্প বয়সে বা ছাত্র জীবনে বিয়ে তাদের কাছে এখন ট্যাবু বা নিষিদ্ধের মত মনে করে নিয়েছে.....................
বাংলাদেশে যারা ইসলামী আন্দলোন করছে বা আদর্শিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে দাবি করে তাদের পরিবার গঠনের পরিকল্পনা দেখলে বড় অবাক হই। ছাত্র জীবনে দায়িত্বশীলদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে করতে বয়সের কোঠা ৩০-৩২ এমন কি কারও কারও ৩৫ শে গিয়েও ঠেকছে। কিন্তু একটি বাস্তব ও শারিয়ীই প্রয়োজনকে স্বীকার করে বিয়ের ব্যাপারটাকে সহজ করার কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। অথচ রাসুল (সঃ) এর যুগে ইসলামী আন্দলোনের কর্মীদের ক্ষেত্রে বিয়েটাকে কত সহজভাবে দেখা হতো তা আমরা অনেকেই কম বেশি জানি। তাছাড়া আমরা যদি রাসুল(সঃ) এর জীবন অনুসরণ করে ইসলামী আন্দোলন করে থাকি তাহলে রাসুলের বিয়ের বয়সকে কেনো অনুসরণ করা হচ্ছে না.?? আমরা এও জানি যে রাসুল(সঃ) এর বিয়ের আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে নব্যুয়্যাত দান করেননি। এতে কি প্রমান হয় না যে বিয়ে করা ছাড়া ঈমানের পূর্ণতা আসা সম্ভব নয়। অথচ আন্দোলনের সফলতার পেছনে মূল যে বাধা তা হলো ঈমানী দূর্বলতা। আর এই দূর্বলতার আসল কারণ কেউ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে না। কেউ কেউ জানলেও তা স্বীকার করতে চান না অথবা জাহেলী সিস্টেমের কাছে নিজের আদর্শকে বিকিয়ে দিচ্ছেন সচেতন ভাবে।
অপরদিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হল যৌবন, ছাত্রজীবন। এই সময়েই মানুষ বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখে, আবার এই সময়েই সবচেয়ে বড় বড় দুর্ঘটনা গুলি ঘটে। সুতরাং বয়সের এই উদ্দামতাকে কাজে লাগাতে পারলে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলি করা সম্ভব।
অথচ এই বয়সের ছেলেরা মেয়ে কেন্দ্রীক চিন্তা করে, আর মেয়েরা চিন্তা করে একজন স্বপ্নপূরুষের। তাই পুরোপুরি মিশনারী হতে হলে ছাত্র অবস্থায়ই আরেকজন স্টুডেন্ট এর সাথে বিয়ে করা উচিত। বাংলাদেশের ইসলামপন্থীরা ছাড়া অন্য সবদেশেই এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়। বিশেষভাবে দূরপ্রাচ্যে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এ ১৭/১৮ বছর বয়সেই সমবয়সী ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়া হয়। নৈতিক দিক নিয়ে কখনোই তাদের চিন্তা করা লাগেনা। বরং তারা প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাংলাদেশেও এমন হওয়া উচিত। ছেলে-মেয়ে পাশাপাশি কাজ করে মুভমেন্টকে এগিয়ে নিয়ে যাক। হিযবুত তাহরির বিশ্বব্যাপি যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে তাতে নারী এবং পুরুষের সহাবস্থান লক্ষ্যনীয়। ওদের ছাত্র সংগঠনে বেশিরভাগই বিবাহিত ছাত্র-ছাত্রী।
অথচ সমাজে বিয়ে নিয়ে এমন একধরণের ভীতি ছড়ানো হয়েছে যে, বিয়ে মানেই হলো অনেক অনেক টাকার দরকার। ফলেও একটা ছেলেকে বিয়ের কথা ভাবতে গেলে চোখে-মুখে দুঃস্বপ্নের মত আতঙ্ক ভেসে ওঠে। তরুনদেরকে স্ট্যাব্লিশমেন্টের নামে বসে বসে বুড়ো হয়ে জীবনী শক্তি হারাতে হচ্ছে। দেখার যেন কেও নেই। আমি মনে করি ছাত্র জীবনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন কালে অর্জন করা এতসব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা মূল প্রয়োগিক ক্ষেত্রে গিয়ে যাতে স্থবির হয়ে না পড়ে; বিকলঙ্গ হয়ে না পড়ে- এ জন্য সর্বপ্রথম যেটি দরকার তা হলো- একজন আদর্শীক স্ত্রী। অথচ অবস্থা এতোই ভয়ানক সাংগঠনিক কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনাই অন্তর্ভূক্ত নেই..!! কি এক অদ্ভুৎ পদ্ধতি।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর সংগঠনের দুর্বলতা আরও বেশি বলে আমি মনে করি। তাদের এ ব্যাপারে কোনো কনসার্ন আছে বলে আমার মনে হয় না। জাহেলী লোকদের মত পুঁজিবাদের দাস বা গোলাম হয়ে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়েছে। আল্লাহর প্রতি আস্থা হারিয়ে রিজিকের সমস্ত চিন্তা নিজেদের উপর চাপিয়ে নিচ্ছে। এদের কাছে যুবক-যুবতীদের আবেগ-অনুভূতি, প্রয়োজন-বাস্তবতার কোনো মূল্য নেই। তথাকথিত ক্যারিয়ার আর স্ট্যাব্লিশমেন্টই এদের কাছে সব চেয়ে বড় বিষয়। অল্প বয়সে বা ছাত্র জীবনে বিয়ে তাদের কাছে এখন ট্যাবু বা নিষিদ্ধের মত মনে করে নিয়েছে। অথচ এদেশে তথাকথিত স্ট্যাব্লিশমেন্ট বলতে যা বোঝায় তা হতে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের বয়স হবে কমপক্ষে ৩২-৩৫ বছর। অথচ যেখানে আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু ৬৭ বছর। তাহলে এটি তেমন নিয়ম। অন্তত ইসলামী আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত তাদেরতো এন অদূরদর্শী হলে মেনে নেয়া যায় না। আমার জানা অনেক যুবককে দেখেছি যারা তাদের যৌক্তিক প্রোজন পুরণ করতে গিয়ে পর্দা লঙ্ঘনের কারণে সংগঠনে বেশি দিন অবস্থান করতে পারেনি। আবার অনেক যুবক মুখ খুলে বলতে না পেরে ধুকে ধুকে সহ্য করেছে আর চোখের পানি ফেলছে।
একইসাথে আমাদের দ্বীনি অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে সেই জাহেলি সব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে চলেছে। জাহেলি পদ্ধতিকে উচ্ছেদ করে সুন্নতী পদ্ধতিতে বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান পালন করার মত উল্লেখ করার মত কোনো দৃষ্টান্ত আমার চোখে পড়ে নি। নিজেদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে সমাজে সাধারণভাবে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত সব বাতিলপন্থী নিয়ম-কানুনই তারা অনুসরণ করে চলেছে। ইসলামী বিয়ে আসলে কি..? কেমন..? তার কোনো সুনির্দিষ্ট রীতি-নীতি প্রতিষ্ঠা করা আজ এত বছরেও সম্ভব হয় নি। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতি আমরা ব্যতিক্রম কোনো মেসেজও পৌছাতে পারিনি।
ফলে যা হবার তাই হচ্ছে- ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে তারুন্য; দীর্ঘ দিনের ছাত্র জীবনে গিয়ে সমমনা স্ত্রী খুঁজে না পেয়ে অনেকেই হতাস হয়ে পড়ছে বা ইনএকটিভ হয়ে পড়ছে। কালের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে ছাত্র জীবনে তীল তীল করে গড়া সেই বিপ্লবী চেতনা। পিছিয়ে পড়ছে বিপ্লব; আন্দোলন হারাচ্ছে গতি। তৈরি হচ্ছে এক প্যারালাইস্ট পজন্ম..!!! যাদের কাছে বিল্পব আশা করা হাস্যকর..!!
বিষয়: বিবিধ
১০৪৭ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন