ঔষুধে ফুলেফেপে উঠা কোরবানির পশুঃদেহের ক্ষতিকারক প্রভাব ও চিন্হিত করণ
লিখেছেন লিখেছেন শুভ কবি ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৪০:০৮ দুপুর
আসছে কুরবানির ঈদ আর তাকে ঘিরে চলছে সবার পশু কেনার প্রস্তুতি। কিন্তু পবিত্র একটা কাজ করতে এসে সেখানেও ক্রেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ। হালাল টাকায় কেনা তরতাজা গরু কিংবা মহিষ ওষুধ দিয়ে মোটা তাজা করা হয়নিতো?
ভেজাল এই সোনার বাংলাদেশকে এমনভাবে আটকে রেখেছে যে কোন কিছুই আজ ভেজাল মুক্ত নয়। তা না হলে কি আর কুরবানির মত পবিত্র একটা বিষয়ে পশু কিনতে এসেও এত ভাবনার প্রয়োজন??? কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, মসজিদে যেমন নামাজী মুসল্লি যায় ঠিক তেমনি অসাধু জুতা চোরও নিতান্ত কম থাকেনা। এক্ষেত্রে এটাই মনে রাখা শ্রেয় যে, “চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী”
যাক,সে কথা। এবার মূল আলোচনায় আসি। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কুরবানির পশুতে চলছে অসাধু উপায়ে মোটাতাজা করন পদ্ধতি। আর এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে স্টেরয়েড- ডেক্সামেথাসন।
ডেক্সামেথাসন কি?
ডেএক্সামেথাসন একটি স্টেরয়েডজাত ওষুধ। এটি করটিসলের চেয়ে ২৫ গুন অধিক শক্তিশালি। এটা সাধারণত এন্ট্রিইনফ্লামেটরি,স্কিনের রোগ,ক্যান্সার,শ্বসনতন্ত্রের রোগ ও এন্ড্রক্রাইনের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যাবহার করা হয়।
মানব দেহে ডেক্সামেথাসনের অশুভ প্রভাব সমূহঃ
১।ব্রন
২।নিদ্রাহীনতা
৩।মাথাঘোরা
৪।ওজন বৃদ্ধি
৫।কেটে যাওয়া ক্ষত দেড়িতে প্রশমন
৬।ডিপ্রেশন
৭।সাময়িক উত্তেজনা
৮।উচ্চ রক্তচাপ
৯।ইনফেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া
১০।অক্ষিগোলকের চাপ বেড়ে যাওয়া
১১।বমন
১২।স্মৃতিভ্রষ্ট
১৩।অস্থিরতা
১৪।মাথা ব্যাথা
১৫।পেপ্টিক আলসার
পরিতাপের বিষয় হল এই যে, সেই ডেক্সামেথাসন এখন ব্যাবহার করা হচ্ছে পশু মোটাতাজা করনে।কৃত্রিম উপায়ে ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ করে অল্পদিনে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তাজা করা এসব গরুর মাংস খেলে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।গরুকে নিয়মমাফিক স্বীকৃত ফর্মুলা অনুসারে খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করলে তার মাংস ক্ষতির কারণ হয় না। কিন্তু স্টেরয়েড দিয়ে মোটা করা গরুর মাংস ক্ষতিকর। এ জাতীয় ওষুধ অতিরিক্ত মাত্রায় দিলে গরুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হওয়ায় শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। এ কারণে শোষিত হয়ে পানি সরাসরি গরুর মাংসে চলে যায়। ফলে গরুকে মোটা দেখায়। সেগুলোর মাংস খেলেও মানবদেহে ওই সব রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।স্টেরয়েড তথা ডেক্সামেথাসন দিয়ে মোটা করা গরুগুলোর দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এগুলো প্রাকৃতিকভাবে নয়, কৃত্রিমভাবে মোটা করে বাজারে তোলা হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে শক্তি-সামথ্যের কোনো গরু যেমন তেজি ও গোয়ার প্রকৃতির হয়, এই গরুগুলো ঠিক উল্টোভাবে ধীর ও শান্ত হয়ে থাকে। শরীরে ও আচরণে কোনো তেজি ভাবই দেখা যায় না।ডেক্সামেথাসন জাতীয় ওষুধ পশু বা মানুষকে খাওয়ালে এক সপ্তাহের মধ্যে মোটাতাজা হবে। তবে এই মোটাতাজা বেশি দিন স্থায়ী হয় না, বড়জোর দুই থেকে তিন মাস। আর এই ডেক্সামেথাসন গরুকে খাওয়ালে আর সেই গরুর মাংস মানুষ খেলে লিভার, কিডনি, ক্যান্সার, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থসহ ভয়ঙ্কর কিছু হতে পারে।
স্টেরয়েডে মোটাতাজা করা গরু চেনার সহজ উপায়ঃ
১।গরু হবে অত্যাধিক শান্ত।স্টেরয়েড দেয়া গরু চলাফেরা করতে পারবে না ঠিকমতো।সবসময় থাকবে ধির স্থির। অথচ প্রাকৃতিকভাবে বলিষ্ঠ গরু হবে চঞ্চল ও তেজি।
২।পশুর ঊরু অনেক মাংসল মনে হবে।
৩।পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে ।
৪।গরুর শরীরে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে কিছুক্ষনের জন্যে।যেটাকে মেডিক্যাল সাইন্সে ইডেমা বলে।
তাই উপরোক্ত বিষয় সমূহে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সকলের সুস্থ দেহ ও সুস্থ মন কামনা করে আগাম ঈদ মুবারক।
বিষয়: বিবিধ
২২৪৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন