গল্পে গল্পে শিক্ষা-খ

লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ০১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:০৯:৫৪ সন্ধ্যা



খালেদ বসে বসে টেবিলে বই পড়ছে। কয়েক দিন পরেই ওর পরীক্ষা নামক মুহুর্তটি জীবনের গতি বাড়িয়ে দিতে আসছে।

খালেদ পড়ছে আর মনে মনে স্বপ্ন বুনছে। পরীক্ষা শেষে কি করবে। খালার বাসায় যাবে নাকি মামার বাসায় যাবে।

হঠাৎ মনে পড়লো ওহ আগে পরীক্ষাতো শেষ হউক। তার পরে ভাবা যাবে কোথায় যাবো। এখন পড়ালেখা করিগিয়ে।

পড়তে পড়তে হঠাৎ মনে পড়লো “আচ্ছা আমার পরীক্ষা দেয়ার নতুন কলম কি আছে?”

না, একটিও নতুন কলম নেই যা দিয়ে পরীক্ষা দিবো।

খালেদ ভাবছে কি করা যায়?

আব্বুকে বলি বাজার থেকে চারটি নতুন কলম আনতে।

খালেদ: আব্বু আমার সামনে পরীক্ষা তুমি তো বাজার যাচ্ছই, আমার জন্য চারটি নতুন কলম নিয়ে আসবে।

আরিফ সাহেব খালেদের বাবা। একজন কৃষক হিসেবে সফল মানুষ। ছেলেই একমাত্র পড়ালেখা করছে। তিনি ক্লাস ফাইভ পাশ করতে না পাড়লেও ইচ্ছা তার ছেলে কে বড় কিছু বানাবেন।

আরিফ সাহেব: ঠিকআছে বাবা আমি নিয়ে আসবো।

খালেদ: ঠিক আছে আব্বু।

আরিফ সাহেব যথা সময়ে কলম নিয়ে বাসায় হাজীর।

তিনি পড়ালেখা কম করেছেন, চক আর স্লেট ব্যাবহার করেছেন, তাই কলমের দিকে একটু টান আছে। তিনি উৎসুক ভাবে দেখতে চান কলম দিয়ে ছেলে কি কি কাজ করে।

খালেদ পড়ছে আর আরিফ সাহেব বিছানায় বসে দরজার ফাঁক দিয়ে খালেদের দিকে উকি দিয়ে দেখছেন।

হঠাৎ খালেদ পিঠে চুলকানো শুরু করলো কলমটি দিয়ে। আরিফ সাহেব ভাবলো ”ওহ বেশ! কলম দিয়ে তাহলে চুলকানোও যায়?”

আরিফ সাহেবের মাথায় ব্যাপারটি এর আগে কখন আসেনি। ছেলের কাছ থেকে তিনি শিখে ফেললেন কলম দিয়ে “চুলকানো যায়” তিনি নিজে একটা লম্বা কলম কিনে আনলেন। এখন যখন তার পিঠ চুলকায় তখনি তিনি কলম দিয়ে চুলকান।

প্রশ্ন: কলম দিয়ে গা চুলকানো যায় তাই বলে কি কলম গা চুলকানোর বস্তুু?

আশাকরি আপনার উত্তর হবে: ”না”। কলম দিয়ে লিখতে হয়। জ্ঞানের কথা লিখতে হয়।

ঠিক একই রকম নিচের ঘটনা গুলো:

১. হুজুর আমার গরুটা দুধ দিচ্ছেনা একটু পানি ফুকিয়ে দেন। ফুকিয়ে দিলো আর গরুর দুধ দেয়া শুরু।

২. হুজুর বাচ্চাটি সারারত কাঁদছে আর কাঁদছে একটু ফুকিয়ে দেন। ফুকিয়ে দিলো আর কান্না থেমে গেল।

৩. হুজুর আমার মেয়েটাকে জ্বীনে আচর করছে একটু ফুকিয়ে দেন। ফুকিয়ে দিলো আর জ্বীন পলিয়ে গেল।

৪. হুজুর রাতে ঘুমে ভয় পাই একটু ফুকিয়ে দেন। ফুকিয়ে দিল আর ভয় চলে গেল।

৫. হুজুর আমার বাড়িটার উপর নজর লাগছে একটু ফুকিয়ে দেন। ফুকিয়ে দিল আর ঠিক হয়ে গেল।

৬. হুজুর আমার নারকেল বাগানে নারকেল সব পরে যাচ্ছে একটু পানি পড়েফু দেন। ফুকিয়ে দিল আর ঠিক হয়ে গেল।

উপরক্ত কাজগুলো কোরআনে আয়াত দার করা সম্ভব এবং শরিয়ত সম্মত্ব যতক্ষন না তা শির্ক বা কুফরি বাক্য হয়। কিন্তু তাই বলে কি ‍কুরআনের শুধু এগুলোই কাজ? কুরআন কি আমাদেরকে শুধু এগুলই শিক্ষা দেয়?

আমরা সত্যিই আরিফ সাহেবের মতই। তিনি অর্ধমূর্খ তাই কলম দিয়ে লেখার পরিবর্তে গা চুলকান আর আমরাও কুরআন বুঝে পড়ার পরিবর্তে রিডিং পরে সওয়াব হাসিলের দৈড়ে ব্যাস্ত।

রমজানে দেখবেন: হুজুর আমি ১০ বার খতম দিয়েছি, আমি ১৫ বার আমি ২০ বার খতম দিয়েছি। খতম দিন ভালো কথা তবে, খতম করে খতম করেছি জানি না ভিতরে কি ছিলো?

যাক সে কথা, জ্ঞানের কথায় আসি।

আরিফ সাহেবের একটু সমস্যাও আছে। তিনি একজন পাক্কা ধার্মিক মুমিন মুসলিম হিসেবে দাবীদার মানুষ।

সকাল বেলা ফজর নামাজ পড়ে তিনি কোরআন তেলাওয়াত করলেন:

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

পড়া শেষে তিনি কোরআন বন্ধকরে রেহেলে রাখা কাপড় মুড়িয়ে হাতের তালুতে কোরআন নিয়ে চুমুখেয়ে চোখে লাগিয়ে রেহেলে রেখে সেলফের উপর রেখে দিয়ে চশমাটি একটু মুছে নিলেন এর পর কি করলেন জানেন??

”সুদের খাতাটি” হাতে বের করে হিসাব শুরু করলেন কার কাছে আজকে কত সুদ পাবে!?

হায়! কোরআন! তুমি কেন নাজিল হলে!!



শেষে আপনার অন্তরের কাছে একটি প্রশ্ন: এই কি সেই কোরআন নয় যেই কোরআন আবু বক্কার, ওমর, ওসমান, আলী (রা) এর সময় ছিলো? তবে তারা পারলো আপনি কেন পারেন না?


হায় হতভাগা আমরা!! আমাদের ভাগ্য আরিফ সাহেবের ভাগ্যর চেয়েও খারাপ!!!

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৭ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348115
০১ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৬
শেখের পোলা লিখেছেন : "রেখেগেনু আমি তোমাদের মাঝে দুটি মহা উপহার, কোরানের পূত মঙ্গল বাণী মম উপদেশ আর৷"
সবই ঠিক আঝে হুজুর, ব্যবহার বদলেছে৷ আগে ছিল উসুলে সওয়া আর এখন হয়েছে ইসালে সওয়াব৷ ধন্যবাদ৷
০১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৪
289009
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : পীরসাহেব আপনি ঠিক বলেছেন। আমার পীরসাহেব আপনার মতোই।
০১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১২
289012
শেখের পোলা লিখেছেন : নাউজু বিল্লাহ৷ আমরা একই পীরের মুরীদ৷ পীর নই৷ দেওয়ান বাগীর মত হলে মন্দ হতনা, হোমরা চোমরার সাপোর্ট থাকত৷
০১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৯
289027
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : হুম ঠিক বলছেন পীরসাহেব। আমার পীর চর্মনাই নৈরাশ হইয়েন না.....। জাহাজ রেডি আছে।
348121
০১ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০১ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৫
289010
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : মুরিদ ভাই, ধন্যবাদ নেয়া হল।
348153
০২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:১৮
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

আজকের গল্পটি ভালো লাগলো। চমৎকার শিক্ষা আছে।
আসলেই কোরআন আমাদের এক সমুদ্র পানি দিতে পারে সেখানে আমরা এক বিন্দু পানি চাই! আফসোস!

শুকরিয়া!
০২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:২৬
289079
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : জ্ঞানের কথা বলি অনেকে বোঝেন অনেকে বোঝেননা। আপনি বুঝেছেন এজন্য জাজাকিল্লাহু খায়র।

কোরআন একই রয়েছে পার্থক্য হচ্ছে আমরা পরিবর্তত হয়েছি।
348195
০২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : খুবই শিক্ষনীয় চমৎকার গল্প বলেছেন। আসলে এটাই সত্য। কুরআনের আয়াত পড়ে ফু দেওয়া কথা আছে,তাতে কাজও হয় কিন্তু কুরঅঅন এ কারনে নাযিল হয়নি। আমরা কিভাবে চলব,আচরন করব সেটাই বলা হয়েছে,এটাই মূল।
০২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:২৮
289080
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : মুরিদ ভাই আপনি অনেক ভালো একজন মুরিদ। আমি মনখারাপ করি না। আপনাকে
আল্লাহর উদ্দেশ্যে মনথেকে ভালোবাসি ভাই।


আপনি ঠিক বলেছেন ভাই।
348395
০৪ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:১১
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনার পীর সাহেব কলমের ব্যবহার ঠিকমত জানেন তো! তিনি যেন মুরিদদের আরিফ সাহেবের মত ধারনা না দেন নজর রাখবেন। Happy জ্ঞানের কথা শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ ।
০৪ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৩১
289217
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : আমার পীরসাহেব হচ্ছেন কোরআনের ধারক ও বাহক। কোন সন্দেহ ছাড়াই তিনি ১০০% কোরআনের অনুসারী। তার চরিত্রই কোরআনের চরিত্র। এটি আমার আম্মা বলেছেন।

হাঁসিতে মুগ্ধ হলাম মুরীদনি সাহেবান।
348966
০৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৫
আফরা লিখেছেন : জ্ঞানের কথা ভাইয়া জ্ঞান ছড়িয়ে যান । কি সব পীর টীর বলেন এসব ভাল লাগে না । আজকের লিখটা অনেক ভাল লাগছে ধন্যবাদ ।
০৯ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:২১
289688
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : মুরীদনি সাহেবান, এসব ভেদের ব্যাপার। এসব ভেদে মারেফত হাসিল কারা সবার জন্য নয়। পীর টীর না থাকলে চলবে না।
পীর ধরুন মরার পরে দুনিয়া বাসি আপনার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকবে।
349630
১৩ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:২৯
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : জ্ঞানের কথা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
১৪ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:০০
290222
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : আমার পীর সাহেবের থেকে আপনার জন্যও শুকরান।
350369
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:২৮
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসলেই জ্ঞানের কথা তবে আলিমহীন ইলেম অর্জন করার চেষ্টা করাও সঠিকনা কারণ তাতে মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে যা এখন হচ্ছে।
২০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১২:১৭
290910
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : হাঁ কোরআন ও সুন্নার পীরদের অনুস্বরন করতে হবে। আমার মুরিদ হয়ে যেতে পারেন। পরকালে তলাফুটো জাহাজের নিশ্চয়তা দেয়া হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File