কুরআ'নের গর্ভ।

লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:১৪:৫৭ দুপুর



উম্মুল কুরআন বা কুরআনের উম্ম বা গর্ভ বা মা হচ্ছে সুরাতুল ফাতিহা। সর্বপ্রথম কুরআনুল কারীমের পূর্ণাঙ্গ সুরা হিসেবে সুরাতুল উম্মুল কুরআন নাজিল হয়েছিলো। এটিই সর্বপ্রথম পূর্নসুরা মুসলিমদের জন্য।

কুরআন কারীমের ১১৪ টি সুরার নামকরণ বিভিন্ন ঘটনা, কারণ বা প্রথম অক্ষর দারা নামকরণ করা হয়। তবে উম্মুল কুরআন বা সুরা ফাতিহার নাম রাখা হয়েছে কুরআনে এর স্থান-মর্যদা, বিষয়বস্তু-ভাবধারা, এর প্রতিপাদ্য বিষয় ইত্যাদির উপর লক্ষ্য রেখে।

১. ফাতিহাতুল কিতাব: কুরআনের চাবি-কাঠি। কেনন এই সুরা দারাই কুরাআনের সূচনা করা হয়, কুরআনের প্রথম স্থানেই একে রাখা হয়েছে। কুরাআন খুলে সর্বপ্রথম এই সুরাই পাঠ করতে হয়। কখনও কখনও এই নামের রুপান্ত হয়ে ফাতিহাতুল কুরআন হয়ে থাকে। এত অর্থের কোন পার্থক্য হয় না।

২. উম্মুল কিতাব: আরবী ভাষায় উম্ম বলাহয় সর্ব ব্যাপক ও কেন্দ্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন জিনিসকে। সৈন্য বাহিনীর ঝান্ডাকে বলা হয় উম্ম। কেননা সৈনিকবৃন্দ তারই ছায়াতলে সমবেত হয়ে থাকে। মক্কা নগরের আর এক নাম হচ্ছে "উম্মুল কুরা" বা "জনপদসমূহের মা"। কেননা হজ্জমওসুমে সমস্থ মানুষ-সকল গোত্র ও জাতী এই শহরেই একত্রিত হয়। ইমাম বুখারী কিতাবুত তাফসীর এর শুরুতে লিখেছেন: এর নাম উম্মুল কিতাব এজন্য বলা হয়েছে যে, কুরআন লিখতে ও পড়তে এটিই প্রথম এবং সালাতের কেরাতেও এটি প্রথম পাঠ করতে হয়।

৩. সুরাতুল হামদ: তারীফ ও প্রশংসার সুরা। হামদ এই সুরার প্রথম শব্দ। ইহাতে আল্লাহর হামদ তথা প্রশংসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। সেই জন্য এটি এ সুরার জন্য যথার্থ নাম।

৪. সুরাতুস-সালাত: অর্থাৎ সালাতের সুরা। যেহুতু সব সালাতের সব রাকাআতেই এটি পাখ করতে হয়। সেজন্য এই নামকরণ হয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "‏ لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ‏"‏‏ যে ব্যাক্তি নামাজে সুরা ফাতিহা পড়বে না তার সালাত হবে না। (বুখারী: ৭৫৬ মুসলিম: ৩৯৪)

কিছু কথা:

রসুল (সা) বলেছেন: "‏ لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ‏"‏‏ যে ব্যাক্তি নামাজে সুরা ফাতিহা পড়বে না তার সালাত হবে না। রসুল (সা) বলেছেন: لاَ صَلاَةَ কোন নামাজ নাই। এখানে রসুল (সা) কোন সালাত নাই বলেছেন। নিদৃষ্ট করে কোন সালাত বলেন নাই । তাই এটি একটি আম হুকুম। অর্থাৎ সকল সালাত এর আওতায় অন্তর্ভক্ত।

১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত

২. ঈদের সালাত

৩.জানাজার সালাত

৪. ইসতেসকার সালাত

৫. সালাতুল খাওফ

৬. সূর্যগ্রহনের সালাত

এরখম যত সালাত বা নামাজ রয়েছে সবগুলোই এই হুকুমের আওতায় পড়ে।

এজন্য সালাতে যে ব্যাক্তি (আম-ইমাম মুক্তাদী) সে যদি সুরা ফাতিহা না পড়ে তাহলে তার সালাত لاَ صَلاَةَ নাই

৫. আস-সাবয়ূল মাসানী: বার বার পাঠ করার সাতটি আয়াত। সুরা ফাতিহার সাতটি আয়াত রয়েছে এবং তা বার বার পাঠ করা হয় বলে এর এক নাম "সাবয়ূল মাসানী"। অথবা সালাতের প্রতি রাকাতেই তা পড়া হয় বলেই এর নাম "সাবয়ূল মাসানী"।

সুরা ফাতিহা বান্দা ও আল্লাহর মাঝে এক সেতুবন্ধন।

আমার ইমাম বলেছেন: ইকরা বি নাফসিকা ইমামের পিছনে মুক্তাদি হলেও সুরা ফাতিহা মনে মনে পড়ো ।

বিষয়: বিবিধ

১৪১০ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344349
০৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:১১
হতভাগা লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা এই সূরাকে পুনঃ পুনঃ পঠিত সাত আয়াত হিসেবে উল্লেখ করেছেন
০৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:২৯
285669
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : আস-সাবয়ূল মাসানী: বার বার পাঠ করার সাতটি আয়াত।
জাজাকাল্লাহু খায়র।
344351
০৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:২১
মুসলমান লিখেছেন : আমাদের এলাকার পীরসাপ বলেছেন, ঈমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া লাগবে না।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:২৯
285670
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : আপনার পীরসাহেব ভন্ড। আমার পীরসাহেব হক্কানী।
344357
০৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:১৯
285677
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ভালোলেগে কি লাভ! মুরীদভাই? সালাতে মুক্তাদি অবস্থায় উম্মুল কুরআন পড়েন কি?
344386
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
285705
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : সুবাহানাল্লাহ!
344406
০৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:০২
শেখের পোলা লিখেছেন : জানাজায় সুরা ফাতেহা নেই, কারণ আমরা তাকে নামাজ বললেও আসলে তা দোওয়া৷
আপনার সাথে আর একটু যোগ করতে চাই-সুরা ফাতেহা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে একটি চুক্তি, যার অর্ধেক আল্লাহর জন্য বান্দার ওয়াদা ও বাকী অর্ধেক বান্দার দাবী বা চাওয়া৷প্রথম সাড়ে তিন আয়াতে,ইইয়াকা না'বুদু পর্যন্ত আল্লাহর স্তুতি ও স্বীকারোক্তি৷ পরের সাড়ে তিন আয়াতে বান্দার ওয়াদা, আমি একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই,ইত্যাদী,ইত্যাদী৷ ভাল লাগলে আপনার লেখায় সুন্দর করে শামিল করে নিয়েন৷আমার পাতায় বিশদ ভাবে আছে৷লিংক দিতে জানিনা,নয়ত দিতাম৷ ধন্যবাদ৷
০৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৩৬
285743
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : পীরসাহেব, আপনার প্রথম অংশে আমার খটকা লাগলো।
দ্বীতিয় অংশের সাথে পুরোপুরিভাবে আছি।
০৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:০৩
285883
শেখের পোলা লিখেছেন : # নায়বুদু শব্দটি আরবী ব্যাকারণে ‘ফেলে মোজারেয়’ ,বর্তমান ও ভবিষ্যত দুটা কালকেই কভার করে। অতএব যদি বর্তমান কালে অর্থ করা হয় তবে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি।স্বীকারোক্তী করা বোঝায়। আবার যদি ভবিষ্যত কালে অর্থ করাহয় তবে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করব, অঙ্গিকার করা বোঝায়। হজরত আবু হোরায়রা রাঃ বর্নীত হাদিশে জানা যায়, আল্লাহ বলেন;- ক্বাসামতুস সালাতা বাইনী ,অবাইনা আবদী নেস ফাইনে। নেসফোহা লী, অনেসফোহা লে আবদী, অ লেআবদী মা সাআল। অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আমি সুরা ফাতেহাকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। এর অর্ধেক আমার জন্য, বাকি অর্ধেক আমার বান্দার। বান্দা যা চায় আমি তা দিয়ে থাকি। অ ইইয়াকা নাসতাঈন। নায়বুদু এর মত নাসতাঈনু শব্দটিও ‘ফেলে মোজারেয়’, যদি বর্তমান কালের অর্থ করলে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই, আবার ভবিষ্যত কলে অর্থ করলে মানে হবে,- আমরা এক মাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাইব। বান্দা যখন বলে, আল্হামদু লিল্লাহে রব্বিল আলামীন। আল্লাহ তখন বলেন,-আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আবার বান্দা যখন বলে, আররহমানির রাহীম, আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করছে।বান্দা যখন বলে, মালিকে ইয়াওমিদ্দীন, আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার শেষদিনের সর্বময় কর্তৃত্বের সস্বীকারোক্তি করছে। বান্দা যখন বলে,- ইইয়াকা নায়বুদু অ ইইয়াকা নাসতাঈনন। আল্লাহ তখন বলেন, এখানেই আমার আর আমার বান্দার মাঝে বিভক্তি ও সন্ধি। চতুর্থ আয়াতের মাঝে একটি ওয়াও অক্ষর দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এই আয়াতের প্রথমাংশ সহ প্রথমের তিন আয়াতে আল্লার প্রশস্তি ও স্বীকারোক্তি, যা আল্লার জন্য। পরের অর্ধাংশ সহ সামনের তিন আয়াত বান্দার জন্য যাতে রয়েছে প্রার্থনা ও আর্জি। বলা যেতে পারে এই সুরার মাধ্যমে আমরা প্রতি নিয়ত আল্লাহর প্রশংসার স্বীকরোক্তির পাশাপাশি ওয়াদাবদ্ধ হচ্ছি ও অজান্তে আবার তা ভঙ্গ করছি। এই প্রসঙ্গে সুরা নিসার ৪৩ নং আয়াতের প্রতি দৃষ্টি পাত করা যায়,-যেখানে মদ নিষিদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের হুকুমে আল্লা বলেন;-তোমরা নেশা অবস্থায় নামাজের কাছেও যেওনা যতক্ষন না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। অতএব বলাযেতে পারে নামাজে যাবলি তা বুঝে বলার আবশ্যিকতা রয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File