যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফাযায়েল ও আমল, পর্ব-০২
লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৫:১৭ সকাল
যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফাযায়েল ও আমল, পর্ব-০১
খ) যিলহজ্জের (প্রথম) দশ দিনের আমল
৪) বেশী বেশী তাসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল বলা :
যিলহজ্জের চাঁদ দেখা তথা প্রথম দিন থেকেই এই তাসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল বলা বিষয়ে পূর্বে প্রমাণ উল্লেখ করেছি। অবশ্য আমাদের দেশে সাধারণভাবে আরাফাহর দিনের ফজরের পর থেকে তাকবীর শুরু করা হয় এবং তের যিলহজ্জের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে তাকবীর বলা হয়। কিন্তু এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) থেকে সহীহ কোন বর্ণনা নেই। এ সম্পর্কে যে হাদীসগুলো পেশ করা হয় তা নি¤œরূপ :
ক) মারফু‘ হাদীস :
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْهَرُ فِي الْمَكْتُوبَاتِ بِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَكَانَ يَقْنُتُ فِي صَلاةِ الْفَجْرِ ، وَكَانَ يُكَبِّرُ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ صَلاةَ الْغَدَاةِ ، وَيَقْطَعُهَا صَلاةَ الْعَصْرِ آخِرَ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ
“নবী (স) ফরয সালাতগুলোতে সরবে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম পড়তেন, ফজরের সালাতে কুনুত পড়তেন। আর আরাফাহর দিনে ফজরের সালাত থেকে তাকবীর বলতেন এবং আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন (১৩ তারিখে) সালাতুল আসরে শেষ করতেন।”
[মুস্তাদরাকে হাকিম ১/২৯৯, বর্ণনাটি অগ্রহণযোগ্য বরং মাওযু‘ (তানবীরুল আয়নাইন পৃ: ৮৬, ৮৭); এর সনদে আব্দুর রহমান বিন সাঈদ আল-মুয়াযযিন আছেন। ইবনে মুঈন (রহ) তাকে যঈফ বলেছে। অপর বর্ণনাকারী সাঈদ বিন উসমান আল-খার্রাজ মাজহুল। (বদরুল মুনীর ৫/৯৩) সুনানে দারাকুতনীতে অনুরূপ অর্থে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। যার সনদে উসায়দ বিন যায়েদ আছে। ইবনে মুঈন তাকে কাযযাব বলেছেন। অন্যরা তাকে ত্যাগ (তরক) করেছেন। পরবর্তী বর্ণনাকারী জাবির ও আবূ তুফায়েল সম্পর্কেও একই কথা (মাতরুক)। (বদরুল মুনীর ৫/৯২)]
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي صَلاةِ الْفَجْرِ يَوْمَ عَرَفَةَ إِلَى صَلاةِ الْعَصْرِ مِنْ آخِرِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ حِينَ يُسَلِّمُ مِنَ الْمَكْتُوبَاتِ
“রসূলুল্লাহ (স) আরাফাহর দিনে ফজরের সালাত থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিনের আসরের ফরয সালাতগুলোর সালামের পর তাকবীর দিতেন।”
[দারা কুতনী ২/৪৯, বায়হাক্বী ‘কুবরা’ ৩/৩১৫; এর সনদে আমর বিন শামর ও জাবির জুফি আছেন। তারা দু’জনেই মাতরুক (তানবীরুল আয়নাইন পৃ: ৮৬)। শায়েখ আলবানী (রহ) হাদীসটিকে মাওযু‘ (জাল) বলেছেন। (সিলসিলাহ যঈফাহ হা/৫৫৭৮)]
খ) সাহাবীদের বর্ণনা :
প্রতি ফরয সালাতের পর তাকবীর বলার আলোচ্য বিধানটি নবী (স) থেকে প্রমাণিত না হলেও, সাহাবীদের (রা) থেকে এর সমর্থনে বর্ণনা পাওয়া যায়।
আমীরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবী তালেব (রা) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে :
أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق ويكبر بعد العصر
“তিনি (রা) আরাফাহর দিন ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন আসর পর পর্যন্ত তাকবীর দিতেন।”
[আবী শায়বাহ ২/১/২, হাকিম ১/৩০০, বায়হাক্বী ২/৩১৪। এই আসারটির সনদ সহীহ (ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫, তানবীরুল আয়নাইন পৃ: ৮০)]
ইকরামাহ (রহ) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) সম্পর্কে বর্ণনা করেন :
أنه كان يكبر من صلاة الفجر يوم عرفة إلى آخر أيام التشريق لا يكبر في المغرب ( يقول ) : الله أكبر كبيرا الله أكبر كبيرا الله أكبر وأجل ، الله أكبر ولله الحمد
“নিশ্চয় তিনি (রা) আরাফাহর দিনে ফজরের সালাতের পর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। তিনি (শেষ দিন আসরের পর) মাগরিবে তাকবীর দিতেন না। (তিনি তাকবীরে বলতেন) : আল্লাহু আকবার কাবীরা, আল্লাহু আকবার কাবীরা, আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
[বায়হাক্বী কুবরা ৩/৩১৪, হাকিম ১/২৯৯ প্রভৃতি। এর সনদ সহীহ (ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫, তানবীরুল আয়নাইন পৃ: ৮৪)]
অনুরূপ আমীরুল মু’মিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব (রা), আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা), আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা), সালমান ফারসি (রা) প্রমুখ থেকে বর্ণিত হয়েছে।
[বায়হাক্বী ৩/৩১৬, হাকিম ১/২৯৯, ইবনে আবী শায়বাহ ২/৭২/৬১৬, ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫, তানবীরুল আয়নাইন পৃ: ৮০Ñ৮৭]
ইমাম বুখারী (রহ) লিখেছেন :
باب التَّكْبِيرِ أَيَّامَ مِنًى وَإِذَا غَدَا إِلَى عَرَفَةَ وَكَانَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُكَبِّرُ فِي قُبَّتِهِ بِمِنًى فَيَسْمَعُهُ أَهْلُ الْمَسْجِدِ فَيُكَبِّرُونَ وَيُكَبِّرُ أَهْلُ الأَسْوَاقِ حَتَّى تَرْتَجَّ مِنًى تَكْبِيرًا وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُكَبِّرُ بِمِنًى تِلْكَ الأَيَّامَ وَخَلْفَ الصَّلَوَاتِ وَعَلَى فِرَاشِهِ وَفِي فُسْطَاطِهِ وَمَجْلِسِهِ وَمَمْشَاهُ تِلْكَ الأَيَّامَ جَمِيعًا وَكَانَتْ مَيْمُونَةُ تُكَبِّرُ يَوْمَ النَّحْرِ وَكُنَّ النِّسَاءُ يُكَبِّرْنَ خَلْفَ أَبَانَ بْنِ عُثْمَانَ وَعُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ لَيَالِيَ التَّشْرِيقِ مَعَ الرِّجَالِ فِي الْمَسْجِدِ
“অনুচ্ছেদ : মিনা এর দিনগুলোতে এবং সকালে আরাফায় যাওয়ার সময় তাকবীর বলা। উমার (রা) মিনায় নিজের তাবুতে তাকবীর বলতেন। মাসজিদে লোকেরা তা শুনে তারাও তাকবীর বলতেন এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলতেন। ফলে সমস্ত মিনা তাকবীরের আওয়াজে গুঞ্জরিত হয়ে উঠতো। ইবনে উমার (রা) সে দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন এবং সালাতের পরে, বিছানায়, খীমায়, মজলিসে এবং চলার সময় এ দিনগুলোর তাকবীর বলতেন। মাইমুনা (রা) কুরবানীর দিন তাকবীর বলতেন এবং মহিলারা আবান ইবনে উসমান ও উমার ইবনে আব্দুল আযীয (রহ) এর পিছনে তাশরীকের রাতগুলোতে মাসজিদে পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে তাকবীর বলতেন।”
[সহীহ বুখারী – দুই ঈদ অধ্যায়, আলোচ্য অনুচ্ছেদ; বিস্তারিত ‘ফতহুলবারী’ দ্র:।]অতঃপর ইমাম বুখারী (রহ) মহিলাদের তাকবীর বলার সমর্থনে নীচের হাদীসটি উল্লেখ করেছেন :
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ “كُنَّا نُؤْمَرُ أَنْ نَخْرُجَ يَوْمَ الْعِيدِ حَتَّى نُخْرِجَ الْبِكْرَ مِنْ خِدْرِهَا حَتَّى نُخْرِجَ الْحُيَّضَ فَيَكُنَّ خَلْفَ النَّاسِ فَيُكَبِّرْنَ بِتَكْبِيرِهِمْ وَيَدْعُونَ بِدُعَائِهِمْ يَرْجُونَ بَرَكَةَ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَطُهْرَتَهُ ”
“উম্মে আতিয়াহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ঈদের দিন আমাদের বের হওয়ার আদেশ দেয়া হতো। এমনকি কুমারী মেয়েদেরকে প্রকোষ্ঠ থেকে বের করা হতো, এবং হায়েযগ্রস্তাদেরও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দুআর সাথে দুআ করতো সে দিনের বরকত ও পবিত্রতার।”
[সহীহ বুখারী পূর্বোক্ত অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ দ্র:]তবে এ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ তাকবীর ও তাহলীলটি হল : الله أكبر الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله والله أكبر ولله الحمد (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা’ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ)।
পাকিস্তানের আলবানী খ্যাত শায়েখ যুবায়ের আলী ঝাই (রহ) বলেন : একটি হাদীসে এসেছে নবী (স) ঈদের তাকবীরে উপরোক্ত তাকবীরগুলো বলতেন। (সুনানে দারা কুতনী ২/ ৪৯ পৃ: হা/১৭২১)
এই বর্ণনাটির সনদ মাওযু‘ (জাল)। কেননা, এর সনদে আমর বিন শাহর কাযযাব বর্ণনাকারী আছেন। তা ছাড়া জাবির আল-জুফী অত্যন্ত যঈফ ও রাফেযী (শিয়া)। অপর রাবী নায়ল বিন নাজীহ যঈফ (দ্র: আসমাউর রিজালের গ্রন্থসমূহ)।
অপর একটি বর্ণনাতে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা) ঈদের তাকবীর ছিল নিম্নরূপ :
الله أكبر كبيرا الله أكبر كبيرا الله أكبر وأجل ، الله أكبر ولله الحمد
“আল্লাহু আকবার কাবীরা, আল্লাহু আকবার কাবীরা, আল্লাহু আকবার ওয়া আজাল, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
[মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ ২/১৬৭ পৃ:, হা/৫২৪৯ ’ এর সনদ সহীহ]সাহাবী সালমান (রা)’এর বাক্যগুলো ছিলো :
الله أكبر الله أكبر الله أكبر
“ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।”
[মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ১১/২৯৪-৯৫, হা/২০৫৮১. বায়হাক্বী ৩/৩১৬ ’ এর সনদ হাসান]ইবরাহীম নাখয়ী (রহ) বলতেন :
الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله والله أكبر الله أكبر ولله الحمد
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
[মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ ২/১২৭ পৃ:, হা/৫৬৪৯ ’ এর সনদ সহীহ]উপরোক্ত তাকবীরগুলো সাহাবী (রা) ও তাবেঈদের (রহ) থেকে প্রমাণিত। এ কারণে ঈদের দিন সেগুলো পড়াতে কোন দোষ নেই। বরং সালাফদের ইক্তিদার ভিত্তিতে সওয়াব আশা করা যায়। …[শায়েখ যুবায়ের আলী ঝাই, ফাতাওয়া ইলমিয়্যাহ আলমা‘রুফ তাওযিহুল আহকাম (পাকিস্তান : মাকতাবাহ ইসলামিয়াহ, অক্টোবর-২০০৯) ১ম খ- পৃ: ৪৮১]
৫) সিয়াম পালন :
ক) যিলহজ্জের প্রথম নয় দিনের সিয়াম :
عَنْ هُنَيْدَةَ بْنِ خَالِدٍ ، عَنِ امْرَأَتِهِ ، قَالَتْ : حَدَّثَتْنِي بَعْضُ نِسَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَتِسْعًا مِنْ ذِي الْحِجَّةِ ، وَثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنَ الشَّهْرِ أَوَّلَ اثْنَيْنِ مِنَ الشَّهْرِ وَخَمِيسَيْنِ “
“হুনায়দাহ বিন খালিদ তাঁর স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : আমাকে নবী (স) এর একজন স্ত্রী হাদীস বর্ণনা করেছেন : রসূলুল্লাহ (স) আশুরার দিন ও যিলহজ্জের প্রথম নয় দিন সিয়াম রাখতেন। আর তিনি প্রতি মাসে তিন দিন, মাসের প্রথম সোম ও বৃহস্পতিবার সিয়াম রাখতেন।”
[নাসাঈ -সিয়াম অধ্যায় صوم ثلاثة أيام من الشهر; শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (তাহ: সুনানে নাসায়ী হা/২৩৭১)]খ) আরাফাহর দিনের সিয়াম : এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
“ ‘ইয়াওমে আরাফার সিয়ামের বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন।”
[সহীহ মুসলিম ’ কিতাবুস সিয়াম, হা/১১৬২]৬) চুল, নখ না কাটা :
যদি কেউ কুরবানী দেয়ার নিয়ত করে, তবে যিলহজ্জের শুরু বা চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী পর্যন্ত সে তার নখ ও চুল কাটবে না। কেননা নবী (স) বলেছেন :
إِذَا دَخَلَتِ الْعَشْرُ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ ، فَلَا يَمَسَّ مِنْ شَعَرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا
“যে ব্যক্তি (যিলহজ্জের) দশ দিনে প্রবেশ করে এবং তোমাদের কেউ কুরবানীর নিয়ত করে, তাহলে সে যেন তার চুল ও নখের কিছুই না কাটে।”
[সহীহ মুসলিম কিতাবুল আযহা بَاب نَهْيِ مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِ عَشْرُ ذِي الْحِجَّةِ…]অন্য বর্ণনাতে আছে :
مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ ، فَإِذَا أُهِلَّ هِلَالُ ذِي الْحِجَّةِ ، فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ
“যার কাছে কুরবানী করার মতো পশু আছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত নিজের চুল না ছাটে এবং নখের কিছুই না কাটে।”
[সহীহ মুসলিম ঐ]৭) যদি কুরবানী করার সামর্থ্য না থাকে :
রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
أُمِرْتُ بيومِ الأضْحَى عِيدًا جعله اللهُ لهذه الأمةِ، قال له رجلٌ : يا رسولَ اللهِ ! أَرَأَيْتَ إن لم أَجِدْ إلا مَنِيحَةً أُنْثَى، أَفَأُضَحِّي بها قال : لا، ولكن خُذْ من شَعْرِكَ وأَظْفارِكَ، وتَقُصُّ من شاربِكَ، وتَحْلِقُ عانتَكَ، فذلك تمامُ أُضْحِيَّتِكَ عند اللهِ
“আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তাআলা কুরবানীর দিনকে এই উম্মাতের জন্য ঈদ হিসেবে পরিগণিত করেছেন।’ এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করলো : ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি যদি মাদী মানীহাহ ছাড়া অন্য কোন পশু না পাই। তবে কি তা দিয়েই কুরবানী করবো? তিনি (স) বললেন : না; তবে তুমি এ দিন তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ কাটবে, নাভীর নীচের লোম কাটবে। এটিই আল্লাহর নিকট তোমার পরিপূর্ণ কুরবানী।”
[আবূ দাউদ, নাসায়ী, তাহ: মিশকাত ২/১৪৭৯; শায়েখ যুবায়ের আলী ঝাই (রহ) হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন। তিনি লিখেছেন : এটি নাসাঈ (হা/৪৩৭০) বর্ণনা করেছেন। একে সহীহ বলেছেন : ইবনে হিব্বান তাঁর ‘সহীহ’ তে (হা/১০৪৩) ও হাকিম তাঁর ‘মুস্তাদরাকে’ (৪/২২৩), যাহাবী চুপ থেকেছেন। (তাহ: উর্দূ আবূ দাউদ হা/২৭৮৯)। তবে আমি (সঙ্কলক) ইমাম যাহাবী (রহ) এর পক্ষ থেকে হাদীসটির প্রতি ‘সহীহ’ মন্তব্য পেয়েছি (ইমাম যাহাবীর তা‘লিকসহ মুস্তাদরাক হাকিম হা/৭৫২৯)। হাদীসটিকে আরও যারা সহীহ বলেছেন তাঁরা হলেন : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (তাহ: মুসনাদে আহমাদ ১০/৮১), বদরুদ্দীন আয়নী (নাখবুল আফকার ১৪/৫২০) প্রমুখ। হাদীসটির প্রতি অভিযোগ : ক) সনদের অন্যতম রাবী ঈসা বিন হিলাল আস’সাদাফী (রহ) এর ‘মাজহুল’ হওয়া। অথচ ইবনে হিব্বান, হাকিম ও যাহাবী (রহ) তাঁর সনদের হাদীসকে সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহ) তাঁর সনদের হাদীসকে ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন (সুনানে তিরমিযী হা/২৫৮৮)। ইবনে হাজার (রহ) তাঁকে সত্যবাদী বলেছেন (তাহযীবুত তাহযীব ২/২৭৪)। এ থেকে সুস্পষ্ট হয়, তিনি মুহাদ্দিসগণের (রহ) নিকট মাজহুল বা অজ্ঞাত নন। (খ) অপর একটি অভিযোগ হল, ইমাম আহমাদ (রহ) তাঁকে মুনকার বলেছেন। অথচ ইমাম বুখারী (রহ) এর নিকট কোন মুনকার রাবীর হাদীস বর্ণনা করা হালাল নয়। (মীযানুল ই‘তিদাল ১/১১৯ পৃ: ) ইমাম (বুখারী) ‘আদাবুল মুফরাদে’ (২৬১) তাঁর থেকে হাদীস উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ‘তারীখুল কাবীরেও (৬/১১৪ পৃ:/২৭২২ নং) তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু কোন আপত্তি করেন নি। এমনকি তাঁর যঈফ রাবীদের সঙ্কলণেও তাঁর নাম উল্লেখ করেন নি। সুতরাং ঈসা বিন হিলাল আস সাদাফীর (রহ) প্রতি ‘মুনকারুল হাদীস’ অভিযোগটি প্রযোজ্য নয়। (গ) ইবনে হিব্বান (রহ) তাঁকে ‘সিক্বাহ’ হিসেবে উল্লেখ করাতে বলা হয়েছে : তিনি এ ব্যাপারে শিথিলতা অবলম্বনকারী হিসেবে প্রসিদ্ধ। অথচ পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায়, ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ) এ ব্যাপারে একক নন। (ঘ) ইমাম যাহাবী (রহ) কর্তৃক তাঁকে ‘সিক্বাহ’ হিসেবে উল্লেখ করাতে (কাশিফ : ৪৪০৫) বলা হয়েছে : ‘তাকে সিক্বাহ বলা হয়’ দ্বারা যাহাবী (রহ) তাঁর দুর্বল হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। অথচ আপত্তিটি কেবলই অনুমান। কেনন আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, ইমাম যাহাবী ‘মুস্তাদরাকে হাকিমের’ ঈসা বিন হিলালের আলোচ্য বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সুস্পষ্ট হলো, যিনি হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন, সেটা তাঁর একক ইজতিহাদ মাত্র। উল্লেখ্য সহীহ মুসলিমে বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে চুল ও নখ না কেটে কুরবানীর পর এ দু’টি কাটতে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে শেষোক্ত হাদীসটিতে ঐ দু’টির সাথে গোঁফ এবং নাভীর নীচের লোম কাটার কথাও বর্ণিত হয়েছে। এ হিসেবে শেষোক্ত হাদীসটি সহীহ মুসলিমের হাদীসটির সমর্থক ও ব্যাখ্যাকারী। ]
বুঝা গেল, যিনি কুরবানী করার নিয়ত করেছেন এবং যিনি এর সামর্থ্য রাখেন না সবাই আলোচ্য দিনগুলো চুল, নখ প্রভৃতি কাটা থেকে বিরত থেকে সওয়াব নিবেন।
সুতরাং আসুন, খাঁটি মনে আল্লাহর কাছে তাওবা করে নিজেদের গুনাহ, ভুল ত্রুটি ও অবহেলার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। সেই সাথে সাথে উপরোক্ত আমলগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেদের নাজাতের জন্য নেকী পাবার আশা করি। আল্লাহ তাআলা সমস্ত মুসলিমকে উক্ত আমলগুলো করার তাওফিক্ব দিন। আমীন!!
বিষয়: বিবিধ
১২৩৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে দেখুন আপনার উত্তর
মন্তব্য করতে লগইন করুন