এসো হাদীস শিখি ৬
লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ১৮ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৪৭:৫৯ রাত
আম গাছের ডাল যখন কাঁঠাল গাছে!:
উসুলে হাদীসের কায়েদা আছে। উসুল আরবি শব্দ। উসুল এর সহজ সরল অর্থ হচ্ছে “ভিত্তি” । বাড়ি বানাতে যেমন ভিত্তি দেয়া হয় ঠিক তেমনি হাদীস বোঝার জন্য উসুল বা ভিত্তি জানতে হয়।
কোন বিষয়ে হাদীসের উসুল কি হবে তা জানা জরুরী। নাহলে আম গাছের ডাল কাঁঠাল গাছে লাগানোর মতোই হবে।
চলুন একটি উদাহরণ দেখি:
জনৈক আলেম নামের একজন ফাসাদ সৃষ্টি কারী আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৬/৩৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত ‘আলা ইবনুল হাযরামী কর্তৃক লোকদেরকে নিয়ে একত্রিত মুনাজাত করার ঘটনাটিকে ফরজ সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাতের পক্ষে দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অথচ সেই ঘটনাটি হচ্ছে বৃষ্টি প্রার্থনার ঘটনা। চলুন দেখি--
প্রথমতঃ এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা সনদ বিহীনভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর ঐতিহাসিক ও সনদ বিহীন কোন বক্তব্যকে শরী‘আতের দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যায় না (সৈয়ূত্বী, আল-ইতক্বান ফী উলূমিল কুরআন ২/২২৭-২২৮ পৃঃ)। সনদ থাকার পরেও তা যঈফ হওয়ার কারণে যেখানে হাদীছ গ্রহণযোগ্য হয় না, সেখানে কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে উক্ত ঘটনা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
দ্বিতীয়তঃ এই দো‘আটি ছিল মূলতঃ ইস্তিস্কা বা পানি প্রার্থনার জন্য। আর পানি প্রার্থনার জন্য হাত তুলে সম্মিলিতভাবে দো‘আ করার বিষয়টি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/১০৯২, ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২১)।
ঘটনাটি হ’ল, বাহরাইন যুদ্ধের প্রাক্কালে মুসলিম সেনাবাহিনী এমন এক স্থানে অবতরণ করে যেখানে পানি সংকটের কারণে তাদের থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এমনকি তাদের উটগুলো তাদের খাদ্য সামগ্রী-পানীয় ও বস্ত্র সমূহ পিঠে করে নিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। ফলে তাদের সাথে তাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই বাকী ছিল না।
তখন ছাহাবী ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) লোকদের নিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন ও সূর্যোদয় পর্যন্ত দো‘আ করতে থাকেন। তিনি যখন দো‘আর তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য তাদের পাশে একটি শীতল পানির পুকুর সৃষ্টি করে দিলেন। অতঃপর তিনি সহ সকলে সেখানে গেলেন এবং পানি পান করলেন ও গোসল করলেন।
ওদিকে দিনের আলো প্রস্ফুটিত হ’তে না হ’তেই তাদের উটগুলো পিঠের বোঝা সহ বিভিন্ন দিক থেকে ফিরে আসল। অথচ তাদের আসবাবপত্রের একটিও হারায়নি। অতঃপর তারা তাদের উটগুলোকে উদর পূর্তি করে পানি পান করালেন (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৬/৩২৮)।
অতএব স্পষ্ট যে, উক্ত ঘটনাটি ছিল পানি প্রার্থনার সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রচলিত ফরজ নামাজের পরে মুনাজাতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
----
একেই বলে আম গাছের ডাল কাঁঠাল গাছে লাগয়ে দলিল ফিট করা। আসলে এই কথিত ফাসাদ সৃষ্টি কারী মুফতি নামের কলংক এরখম বিভিন্ন জালা অগ্রহনীয় দলিল দিয়ে মানুষদেরকে বোকা বানায়।
আসলে তারা নিজেরাই বোকা, কিন্তু তারা সেটি অনুধাবন করতে পারে না। চোখ কান অন্তর তালা সমৃদ্ধ। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদেরকে এহেন ফাসাদ সৃষ্টি কারী মুফতি মাওলানা আলেম থেকে বাঁচিয়ে সিরাতাল মুস্তাকিম এর পথে রাখুন আমীন। এরা ভুলে গেছে যে এখন ২০১৫, ১৯৩০ নয় যে মানুষ না জেনেই তাদের কথা গিলবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একদম সঠিক কথা বলেছেন ভাই। তার পরেও অনেকে আছে বলে ৩টি মতই ঠিক। যদি জিজ্ঞাস করেন করা যাবে দলিল কি? তাহলে উপরের ঘটনা বর্ণনা করে। ঠিক আমগাছের ডাল কাঁঠাল গাছে লাগানোর মতোই।
-সানা একটি দুআ
-সুরা ফাতিহা একটি দুআ
-তাসবিহ হচ্ছে দুআ
-দুআ নামে একটি দুআই তারা জানে নাম "দুআ মাছুরা"
-দুই সিজদার মাঝে দুআ
-রুকুতে ইচ্ছামতো দুআ
-সিজদায় ইচ্ছামতো দুআ
-সালাম ফিরানোর আগে ইচ্ছামতো দুআ
-গোটা সালাতই হচ্ছে দুআ "ইউনাজিরু রাব্বাহু"
---এর পরেও তাদের বুঝতে সমস্যা। আসলে নিম্নক্ত কারনে তারা এটা বন্ধ করেন না--
১. ব্যাবসা বন্ধ
২. বাপ দাদার কাজকে আকড়ে ধরা
৩. মাযহাবের গোড়ামী
৪. ইগো
৫. দুআ করে চাকরি বাচানো
৬. আমি কি হনুরে
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বোঝার তাওফিক দিন আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন