এসো হাদিস শিখি ৫
লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:৩৭:০৬ সন্ধ্যা
ইমাম আবু হানিফা (রহ):
জারাহ ও তাদিলের কিতাব দেখলে দেখাযায় বেশিরভাগ মুহাদ্দিস ইমাম আবু হানিফা (রহ)কে যঈফ বলেছেন। তার হাদীস নেয়া যাবেনা বলেছেন।
আমার কথা পড়ে ভাববেন না আমি ইমাম আবু হানিফা বিরোধী। আমি ইমাম আবু হানিফার জন্য দুআ করি আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যেন তাকে জান্নাত দান করেন।
যেমনটি আমি "এসা হাদীস শিখি" তে বলেছি যে, ফকিহ্ হওয়া এক জিনিস আর হাদীস বর্ণনা ভিন্ন জিনিস।
আসুন দেখি কিছু জারাহ ও তাদিল:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
نُعمان بْن ثابت، أَبو حَنِيفَة، الكُوفيُّ كَانَ مُرجِئًا، سَكَتُوا عنه، وعَنْ رَأيِهِ، وعَنْ حديثه
১. ইমাম বুখারী বলেন, তিনি মুরজিয়া ছিলেন। তারা (মুহাদ্দিছগণ) তার থেকে, তার মত থেকে এবং তার হাদীছ থেকে নীরব থেকেছেন। (তারীখুল কাবীর, ৮/৮১, রাবী নং ২২৫৩)
ومن ذلك أن البخاري إذا قال، في الرجل: " سكتوا عنه "، أو " فيه نظر "، فإنه يكون في أدنى المنازل وأردئها عنده ইমাম ইবনে কাছীর বলেন, ইমাম বুখারী যখন কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে বলেন “সাকাতু আনহু” অথবা “ফীহি নাযরুন”, তখন জানতে হবে যে, ঐ ব্যক্তি তার নিকট অত্যন্ত নীচু এবং নিম্ন মানের। (ইখতিছার উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ১০৬) “সাকাতু আনহু” – “তারা (মুহাদ্দিছগণ) নীরব থেকেছেন।” “ফীহি নাযরুন” – “তার প্রতি বিরূপ মন্তব্য রয়েছে।”
أبو حنيفة النعمان بن ثابت صاحب الرأي مضطرب الحديث ليس له كبير حديث صحيح
২. ইমাম মুসলিম বলেন, তিনি মুযতারীবুল হাদীছ। তার বেশী পরিমাণে ছহীহ হাদীছ নেই। (আল-কুনা ওয়াল আসমা, রাবী নং ৯৬৩)
أَبُو حنيفَة لَيْسَ بِالْقَوِيّ فِي الحَدِيث وَهُوَ كثير الْغَلَط وَالْخَطَأ على قلَّة رِوَايَته
৩. ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নন এবং তার বর্ণনা কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি বেশী ভুলকারী। (নাসাঈ, কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৫৮৬; তাসমীয়াহ মিন লাম ইয়ারিওয়া আনহু গাইরু রিজালু ওয়াহিদ, পৃঃ ১২৩)
كَانَ ضَعِيفًا فِي الْحَدِيثِ
৪. ইমাম ইবনে সা’দ বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন। (ইবনে সা’দ, তাবাক্বাতুল কুবরা, রাবী নং ২৬৩১)
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ: حَدِيثُ أَبِي حَنِيفَةَ ضَعِيفٌ , وَرَأْيُهُ ضَعِيفٌ
৫. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেন, আবু হানীফার হাদীছ দুর্বল এবং তার রায় (মত) ও দুর্বল। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৮৭৬, সানাদ ছহীহ)
حدثنا عبد الرحمن ثنا حجاج بن حمزة قال نا عبدان ابن عثمان قال سمعت ابن المبارك يقول: كان أبو حنيفة مسكينا في الحديث
৬. ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মুবারাক বলেন, আবু হানীফা হাদীছের ক্ষেত্রে মিসকীন। (কিতাবুল জারাহ ওয়াত তা’দীল, রাবী নং ২০৬২, সানাদ ছহীহ)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ قَالَ: سَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ مَعِينٍ، وَسُئِلَ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ قَالَ: كَانَ يُضَعَّفُ فِي الْحَدِيثِ
৭. ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন, তিনি হাদীছের ক্ষেত্রে দুর্বল ছিলেন। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৮৭৬, সানাদ ছহীহ)
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سليمان، حَدَّثَنا ابن أبي مريم، قالَ: سَألتُ يَحْيى بْنَ مَعِين، عَن أبي حنيفة؟ قَال: لاَ يكتب حديثه ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন আরো বলেন, তার হাদীছ লেখা যাবে না। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৪, সানাদ ছহীহ)
৮. ইমাম আবু যুর’আহ তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (আবু যুর’আহ, কিতাবুয যু’আফা, রাবী নং ৩৩৮)
سمعت أبا زرعة يقول: "كان أبو حنيفة جهميا এছাড়াও ইমাম আবু যুর’আহ তাকে জাহমী বলেছেন। (আবু যুর’আহ, কিতাবুয যু’আফা, ২/৫৭০)
৯. ইমাম উকাইলী তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (উকাইলী, যু’আফা আল-কাবীর, রাবী নং ১৮৭৬)
১০. ইমাম ইবনুল জাওযী তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (ইবনুল জাওযী, কিতাবুয যু’আফা ওয়াল মাতরূকীন, রাবী নং ৩৫৩৯)
১১. ইমাম দারাকুতনী তাকে দুর্বল বলেছেন। (দারাকুতনী, হা/১২৩৩)
حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى السَّاجِيُّ بِالْبَصْرَةِ قَالَ حَدَّثَنَا بُنْدَارٌ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْمُقَدَّمِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ الْعَنْبَرِيُّ قَالَ سَمِعْتُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيَّ يَقُولُ اسْتُتِيبَ أَبُو حَنِيفَةَ مِنَ الْكُفْرِ مَرَّتَيْنِ
১২. ইমাম সুফিয়ান ছাওরী বলেন, তাকে কুফরীর কারণে দুই বার তাওবাহ করানো হয়েছিল। (বুখারী, কিতাবুয যু’আফা, রাবী নং ৩৮৮; ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন, রাবী নং ১১২৭, সানাদ ছহীহ)
أخبرنا ابن الفضل، أخبرنا عثمان بن أحمد الدّقّاق، حدّثنا سهل بن أحمد الواسطيّ، حدثنا أبو حفص عمرو بن علي قال: وأَبُو حنيفة النُّعْمَان بن ثابت صاحب الرأي لَيْسَ بالحافظ مضطرب الحديث
১৩. ইমাম আমর বিন আলী বলেন, তিনি হাফিযদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না এবং তিনি মুযতারীবুল হাদীছ। (তারীখে বাগদাদ, ১৩/৪২৩, রাবী নং ৭২৯৭, বর্ণনা নং ১৪৯, সানাদ ছহীহ)
قال الشَّيْخ: وأَبُو حنيفة لَهُ أحاديث صالحة وعامة ما يرويه غلط وتصاحيف وزيادات فِي أسانيدها ومتونها وتصاحيف فِي الرجال وعامة ما يرويه كذلك ولم يصح لَهُ فِي جميع ما يوريه إلا بضعة عشر حديثا وقد روى من الحديث لعله أرجح من ثلاثمِئَة حديث من مشاهير وغرائب وكله على هَذِهِ الصورة لأنه ليس هُوَ من أهل الحديث، ولاَ يحمل على من تكون هَذِهِ صورته فِي الحديث
১৪. ইমাম ইবনে আদী বলেন, তার বর্ণিত কতিপয় ছহীহ হাদীছ রয়েছে, তবে তার অধিকাংশ বর্ণনাই ভুল। পড়তে এবং লিখতে ভুল করা হয়েছে। সেগুলোর সানাদ ও মাতানে (হাদীছের ভাষ্য) অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে পড়তে এবং লিখতে ভুল করা হয়েছে। তার অধিকাংশ বর্ণনাগুলো সেরুপই। তিনি যেসব হাদীছ বর্ণনা করেছেন তার মধ্যে ১৩টি থেকে ১৯টি হাদীছ ছাড়া বাকীগুলো ছহীহ নয়। তিনি মাশহূর ও গারীব মিলে একই রকম প্রায় ৩০০টি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি মুহাদ্দিছদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে যার অবস্থা এই, তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করা হয় না। (ইবনে আদী, আল-কামিল, রাবী নং ১৯৫৪)
كَانَ رجلا جدلا ظَاهر الْوَرع لم يكن الحَدِيث صناعته حدث بِمِائَة وَثَلَاثِينَ حَدِيثا مسانيد مَا لَهُ حَدِيث فِي الدُّنْيَا غَيره أَخطَأ مِنْهَا فِي مائَة وَعشْرين حَدِيثا إِمَّا أَن يكون أقلب إِسْنَاده أَو غير مَتنه من حَيْثُ لَا يعلم فَلَمَّا غلب خَطؤُهُ على صَوَابه اسْتحق ترك الِاحْتِجَاج بِهِ فِي الْأَخْبَار وَمن جِهَة أُخْرَى لَا يجوز الِاحْتِجَاج بِهِ لِأَنَّهُ كَانَ دَاعيا إِلَى الإرجاء والداعية إِلَى الْبدع
১৫. ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন, তিনি ছিলেন একজন তার্কিক, বাহ্যিকতায় তার পরহেজগারিতা ছিল। হাদীছ তার কাজের মধ্যে ছিল না। তিনি ১৩০টি মুসনাদ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। সেগুলো ব্যতীত তার আর কোন হাদীছ দুনিয়াতে নেই। যার মধ্যে ১২০টি হাদীছেই তিনি ভুল করেছেন। হয় সানাদ উল্টিয়ে ফেলেছেন কিংবা না জেনেই মাতান (হাদীছের ভাষ্য) পরিবর্তন করে ফেলেছেন। সুতরাং, যখন তার সঠিকের চেয়ে ভুলগুলোই বেশী, তখন হাদীছের ক্ষেত্রে তাকে গ্রহণ করার চেয়ে তাকে পরিত্যাগ করাই উপযোগী। অন্য আরেকটি কারণে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নেই। কারণ তিনি মুরজিয়া মতের দিকে দাওয়াত দিতেন এবং তিনি বিদ’আতের দিকে দাওয়াত দিতেন। (ইবনে হিব্বান, আল-মাজরূহীন, রাবী নং ১১২৭)
এটাই হচ্ছে হক। মুহাদ্দিসদের চোখে ইমাম আবু হানিফা যঈফ। তাই এই মাযহাবের বেজ ও ------কি বলবো!
অনেকে হয়তো আমার এই লেখা পড়ে আমাকে আক্রমন করা শুরু করবেন। তবে যতই আক্রমন করুন মুহাদ্দিসদের কওল তো আর মুছে ফেলতে পারবেন না।
ইমাম আবু হানিফাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন আমীন। আমি তার ফিকহের জন্য আকুল তবে তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে দুর্বল বা যঈফ। আর এটাই হক।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
-জাজাকাল্লাহু খায়র--
-জাজাকিল্লাহু খায়র।
-এর পরের পোস্টে মুআ'ল্লাক হাদীস নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন