এসো হাদীস শিখি ৩
লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ১৪ আগস্ট, ২০১৫, ০৮:৪৪:৩৬ সকাল
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে: হাদীস যে সহীহ তা কোরআন বা হাদীস দিয়ে প্রমান করুন? আসলে এরকমের প্রশ্ন হচ্ছে যাদের হাদীসের সহীহ যঈফ নির্নয় করার জ্ঞান নেই তাদের জন্য কল্পনা প্রসুত প্রশ্ন। যেহুতু তারা জানেনা যে কিভাবে হাদীস সহীহ যঈফ নির্নয় করা হয় তাই তারা নিজের অজ্ঞতাবশত এরকম প্রশ্ন করে। আজকে তাদের উত্তরটিও তারা পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
হাদীস কিভাবে সহীহ যঈফ নির্ণয় করা হয়:
ইতিপূর্বে আমরা সহীহ যঈফ জালা হাদীসের সঙ্গা জেনেছি Click this link। সেখানে আমরা দেখেছি যে হাদীসের ২টি পার্ট আছে। ১. সানাদ ২. মতন।
সানাদ: সানাদ হচ্ছে চেইন। চেইনের মধ্যে যেমন একটি অপরটির সাথে লেগে থাকে সানাদ ও তেমনি বিষয়। মুহাদ্দিস হাদীস বর্ণনা করার সময় তিনি কার কাছে শুনেছেন তিনি কার কাছে শুনেছেন তিনি কারা কাছে শুনেছেন এভাবে কথাটি রসুল (সা) পর্যন্ত পৈছানো হলে এই যে বর্ণনা পরস্পর গাথা সেটাকেই সানাদ বা চেইন বলা হয়।
মতন: সানাদ বর্ণনা করার পরে শেষে রসুল (সা) এর যে কথাটি রর্ণনা করা হয় সেটাকেই মতন বলা হয়। মতন হচ্ছে মূল ভাষ্য।
একটি উদাহরণ দিলে আশাকরি সহজে বুঝানো যাবে চলুন দেখি:
حدثنا الحميدي (عبد الله بن الزبير) قال حدثنا سفيان قال حدثنا يحيى بن سعيد الأنصاري قال أخبرني محمد بن إبراهيم التيمي أنه سمع علقمة بن وقاص الليثي يقول سمعت عمر بن الخطاب رضي الله عنه على المنبر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول * إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى فمن كانت هجرته إلى دنيا يصيبها أو إلى امرأة ينكحها فهجرته إلى ما هاجر إليه -
বর্ণিত হাদিসটির সনদে ইমাম বুখারি থেকে রাসুল সা. পর্যন্ত ৬ জন রাবী রয়েছে। যথা:
১. হুমাইদি (আবদুল্লাহ বিন জুবায়ের)
২. সুফিয়ান
৩. ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারি
৪. মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহিম আত তাইমী
৫. আলকামাহ ইবনে ওয়াক্কাস আল লাইসি
৬. সাহাবি উমর ইবনে খাত্তাব রা.
উপরোক্ত প্রত্যেক রাবি নিজ শায়খ থেকে হাদিসটি শুনেছেন যা হাদিসটির সনদে স্পষ্ট উল্লেখ রছেছে। তাই সনদটি মুত্তাসিল। প্রত্যেক রাবী আদিল ও পূর্ণরুপে জাবত ছিলেন। তাছাড়া বর্ণিত হাদিসটি শায বা মুয়াল্লাল নয়। এ হাদিসটি ইমাম বুখারি রহ. তার সহীহ বুখারিতে সর্বপ্রথম পেশ করেছেন। এতে সহিহ হাদিসের পাঁচটি শর্ত পূর্ণরুপে বিদ্যমান রয়েছে। তাই নি:সন্দেহে এটি একটি সহিহ হাদিস। এই যে حدثنا الحميدي (عبد الله بن الزبير) قال حدثنا سفيان قال حدثنا يحيى بن سعيد الأنصاري قال أخبرني محمد بن إبراهيم التيمي أنه سمع علقمة بن وقاص الليثي يقول سمعت عمر بن الخطاب رضي الله عنه على চেইন অফ নেরেশন সেটাকেই সানাদ বলে।
আর মূল যে ভাষ্যটি রয়েছে সেটিকে মতন বলে। অর্থাৎ: إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى فمن كانت هجرته إلى دنيا يصيبها أو إلى امرأة ينكحها فهجرته إلى ما هاجر إليه রসুল (সা) এর কথাটুকু মতন।
যঈফ হাদীসের উদাহরণ:
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ آدَمَ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، حَدَّثَنِي الْوَلِيدُ بْنُ عُقْبَةَ، حَدَّثَنِي حُذَيْفَةُ بْنُ أَبِي حُذَيْفَةَ الأَزْدِيُّ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ، قَالَ صَبَبْتُ عَلَى النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ الْمَاءَ فِي السَّفَرِ وَالْحَضَرِ فِي الْوُضُوءِ
এই হাদীসের সনাদ:
বিশর বিন আদম(তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে)যায়দ ইবনুল হুবাব(তিনি সত্যবাদী কিন্তু সাওরীর হাদীসে ভূল করেছেন)ওয়ালীদ বিন উকবাহ(মাজহুল বা অপরিচিত) হুযাইফাহ বিন আবু হুযাইফাহ আল-আযদীসাফ্ওয়ান বিন আসসাল (রা)
উপরক্ত সনদে আন্ডারলাইন করা রাবীর অংশগুলো পড়ুন। সেখানে লেখা আছে “তিনি সত্যবাদী কিন্তু তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে” “ওয়ালীদ বিন উকবাহ(মাজহুল বা অপরিচিত)” এই রাবী একজন মাজহুল রাবী। এখন আপনারা বলতে পারেন, কিভবে জানা গেলো যে তিনি ”ভুল করেন”/“মাজহুল বা অপরিচিত”?
এই অংশটি যারা বোঝেন তারা প্রথমে বর্ণিত প্রশ্ন কখনই করেননা। তাই ভালো করে বুঝতে হবে। উপরক্ত রাবীযে মাজহুল তা মুহাদ্দীসিন গন বলে গেছেন। আমরা জানি মুহাদ্দিসগন শুধু হাদীস লিখে গেছেন! আসলে কথাটি ঠিক নয়।
মুহাদ্দিসগণ হাদীসের কিতাবের পাশাপশি আরো অন্যান্ন কিতাবও লিখে গেছেন আর সেসকল কিতাবের মাঝে একধরনের কিতাব হচ্ছে “আসমাউর রিজাল” বা রাবীদের জীবনি বর্ণনা। এই সকল কিতাবে মুহাদ্দিসগণ রাবীদের জন্মশাল থেকে শুরু করে মৃত্যু শাল ও তিনি কেমন ছিলেন, তার হাদীস নেয়া যাবে কি না তা বর্ণনা করেছেন।
আসুন দেখি উপরক্ত রাবী সম্মন্ধ্যে কে কি বলেছেন:
রাবী-১: বিশর বিন আদম সম্পর্কে
ইমাম যাহাবী বলেন: তিনি সত্যবাদী বা সুদুক।
ইমাম আবু হাতিম আর রাযী ও ইমাম দারাকুতনী বলেন: তিনি হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়।
রাবী-২: যায়দ ইবনুল হুবাব সম্পর্কে
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন: তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদীস বর্ণনায় ভুল করেন।
ইমাম আলী ইবন মাদীনি ও উসমান বন আবু শায়বাহ বলেন: তিনি সিকাহ।
রাবী-৩: ওয়ালীদ বিন উকবাহ সম্পর্কে
ইমাম যাহাবী বলেন: তিনি মাজহুল বা অপরিচিত।
এভাবে মুহাদ্দিস গণ হাদীস বর্ণনায় রাবীদের জীবনিতে বর্ণনা করেগেছেন যে তাদের হাদীস নেয়া যাবে কি না। উৎসুক যে কেউ এই লিংকে Click this link গিয়ে আসমাউর রিজালের কিতাব ডাউনলোড করে পড়ে দেখতে পারেন। আপনার জ্ঞানের ভান্ডারকে বৃদ্ধি করুন।
এভাবে কোন রাবীর সম্মন্ধ্যে খারাপ তথ্য পাওয়া গেলে তাকে বলাহয় “জারাহ” বা দোষ আর ভালো পাওয়া গেলে তাকে বলা হয় ”তাদিল” বা গুণ।অর্থাৎ- দোষ ও গুণ র্বণনা করাই হচ্ছে জারাহ ওয়া তাদীল। (খেয়াল রাখুন)
কিছু আসমাউর রিজালের কিতাবের নাম:
১. তারিখ আল কাবির-ইমাম বুখারী
২. তারিখ আস সাগীর-ইমাম বুখারী
৩. লিসানুল মিযান-ইমাম ইবন হাজার আসক্কালানী
৪. কিতাব আস সিকাত-ইমাম ইবন হিব্বান
৫. আল মাজরুহীন মিনাল মুহাদ্দিসীন- ইমাম ইবন হিব্বান
৬. আল মুত্তাফিক ওয়া আল মুফতারিক্ক- খতিব আল বাগদাদী
৭. আল কুনা ওয়াল আসমাহ-আবু বিশর মুহাম্মাদ আল দুলাবী
৮. তাহযীব আল কামাল ফি আসমা আল রিজাল-আল হাফীজ আল মিযজি
৯. তাকরীব আত তাহযীব- ইমাম ইবন হাজার আসক্কালানী
১০. তাহযীব আত তাহযীব- ইমাম ইবন হাজার আসক্কালানী
১১. আরো অনেক কিতাবের নাম আছে, খুজে নিবেন আপনারা।----
তাই যারা অজ্ঞতাবশত প্রশ্ন করেন যে হাদীস যে সহীহ তা কোরআন ও হাদীস থেকে প্রমান করুন তারা এ সম্মন্ধ্যে জ্ঞানহীন তাই এরকম প্রশ্ন করে।
এছাড়াও অনেকে ভাবে যে, এভাবে মুহাদ্দীসদের কথাকে মানা হচ্ছে ত্বাকলীদ! আসলে সেটাও তাদের বোঝার ভুল কেননা জারাহ ও তাদিল সামনে এনেই তার পরে রাবীদের সম্মন্ধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে তার হাদীস গ্রহণ করা হবে কি হবে না? তাই সেটা ত্বাকলীদ নয়।
একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন: সত্যবাদী হওয়া একজিনিস, আর হাদীস বর্ণনা করা অন্য জিনিস। কেননা হাদীসের ক্ষেত্রে অনেক ক্রাইটেরিয়া দেখা হয়। তাই কোন কোন রাবী সুদুক বা সত্যবাদী তবে হাদীস বর্ননা করার ক্ষেত্রে তারা অগ্রহনীয়।
আল্লাহ আমার এই লেখাকে আমার জন্য সাদাকায়ে জারীয়াহ করে রাখুন আমীন। আমি বেশি আরবি ব্যবাহার করলাম না কেননা আমি চেয়েছি বাংলাতে সহজে বোঝানোর জন্য। বিস্তারিত জানতে উৎসুক, কোন হাদীসের ওস্তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। অথবা উসুলুল হাদীসের উপর কিতাব পড়ুন।
পরবর্তীতে আমরা রাবিদের আরোও ডিটেইল বর্ণনা শিখবো ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
২২৪৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা ছোট্ট পরামর্শ কি দিতে পারি? আপনি পোস্টের সিরিয়াল ঠিক করে দেন। কারণ তিনটা লেখাই একই নামে চলে এসেছে। ১ ২ ৩ এভাবে দিলে আমাদের জন্য সুবিধা হত। ধন্যবাদ।
-১ ২ ৩
-আপনার জন্য প্রশ্ন: জারাহ ও তাদীল এর অর্থ কি?
-জাজাকাল্লাহু খায়র।
আমার উদ্দেশ্যও একটিই তা হচ্ছে "ইলম" প্রদান করা।
-আল্লাহ আপনাকে জাজায়েখায়ের দিন।
-আপনার জন্য প্রশ্ন: আসমাউর রিজাল কি?
মন্তব্য করতে লগইন করুন