এসো হাদীস শিখি ১
লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ১২ আগস্ট, ২০১৫, ০৮:১৬:০২ সকাল
সহীহ হাদীস বলতে কি বুঝায় ও এর শর্ত কি ?
সাধারণত আমরা ইসলামের দাওয়াত দেয়ার সময় কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকেই দাওয়াত দিয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই সহীহ হাদীসের সংজ্ঞা ও এর শর্তগুলো জানি না। নিরীক্ষার ভিত্তিতে মুহাদ্দিসগণ হাদীসকে মূলত তিনভাগে ভাগ করেছেন : সহীহ বা বিশুদ্ধ, হাসান বা ভাল অর্থাত মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ও যয়ীফ বা দুর্বল । যয়ীফ হাদীস দুর্বলতার কারণ ও দুর্বলতার পর্যায়ের ভিত্তিতে বিভিন্নভাগে বিভক্ত। সহীহ বা বিশুদ্ধ হাদীসের সংজ্ঞা হলো :
মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে হাদীসের মধ্যে ৫টি শর্ত পূরণ হয়েছে তাকে সহীহ হাদীস বলা হয় –
১. আদালত : হাদীসের সকল রাবী পরিপূর্ণ সত ও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত ।
২. যাবত : সকল রাবীর “নির্ভুল বর্ণনার ক্ষমতা’ পূর্ণরুপে বিদ্যমান বলে প্রমাণিত
৩. ইত্তিসাল : সনদের প্রত্যেক রাবী তাঁর উর্দ্ধতন রাবী থেকে স্বকর্ণে শুনেছেন বলে প্রমাণিত ।
৪. শুযুয মুক্তি বা শায না হওয়া : হাদীসটি অন্যান্য প্রামাণ্য বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমাণিত ।
৫. ইল্লাত মুক্তি : হাদীসটির মধ্যে সূক্ষ্ণ কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি নেই বলে প্রমাণিত।
(মুখস্ত করে রাখুন কাজে লাগবে)
প্রথম তিনটি শর্ত সনদ কেন্দ্রিক ও শেষের দুইটি শর্ত মূলত অর্থ কেন্দ্রিক। এখানে এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে না।
তবে সাধারণের বুঝার জন্য যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো হলো :
সনদ : সনদ বলতে হাদীসের সূত্র বা Reference বুঝানো হয়। হাদীসের বর্ণনাকারীদের তালিকা। এটি সাধারণত হাদীসের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়।
মতন : মতন হলো হাদীসের মূল ভাষা। সনদ বাদে মূল কথা ও তার শব্দসমূহ হলো “মতন”।
রাবী: হাদীসের বর্ণনাকারীগণকে ‘রাবী’ বলে।
হাদীসের সনদ এর গুরুত্ব সম্পর্কে সহীহ মুসলিম শরীফের মুকাদ্দামায় রয়েছে তাবেয়ী
মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন বলেন : এই জ্ঞান হলো দ্বীন । সুতরাং কার নিকট থেকে তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছ তা দেখে নিবে।
দ্বিতীয় শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস সুফিয়ান ইবনু সাঈদ আস-সাওরী বলেন : “সনদ মুমিনের অস্ত্র স্বরুপ”।
প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন : “সনদ বর্ণনা ও সংরক্ষণ দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । সনদ বর্ণনার ব্যবস্থা না থাকলে যে যা চাইত তাই বলত।
হাদীসের সনদ ও মতন আরো সহজ করে বুঝানোর জন্য এই হাদীসটিকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
ইমাম মালিক ইবনু আনাস তাঁর মুয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন :
“মালিক, আবুয যিনাদ (১৩০হি) থেকে, তিনি আ’রাজ (১১৭হি) থেকে, তিনি আবু হুরাইরা (৫৯হি) থেকে, রাসূলুল্লাহ (সা) শুক্রবারের কথা উল্লেখ করে বেলেন : এই দিনের মধ্যে একটি সময় আছে কোন মুসলিম যদি সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তাকে তা প্রদান করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) হাত দিয়ে ইঙ্গিত করেন যে, এই সুযোগটি স্বল্প সময়ের জন্য”।
উপরের হাদীসের প্রথম অংশ “মালিক, আবুয যিনাদ থেকে…………..আবূ হুরাইরা থেকে” হাদীসের সনদ বা সূত্র। আর এর মাঝে “মালিক”-->আবুয যিনাদ--> হচ্ছেন “রাবী” বা বর্ণনা কারী।
শেষে উল্লেখকৃত তথা রাসূলের (সা) বাণীটুক মতন বা বক্তব্য। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় হাদীস বলতে শুধু নিচের অংশটুকুকে বুঝায় না বরং সনদ ও মতনের সম্মিলিত রুপই হাদীস।
বর্ণনাকারীর গুণ বিচার করে সহীহ হাদীসকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় :
সহীহ লিজাতিহী ( নিজের গুণে সহীহ ) : যে হাদীসের সনদ অবিচ্ছিন্ন হয়, বর্ণনাকারীরা ন্যায়পরায়ণ ও পূর্ণ আয়ত্ব শক্তির অধিকারী হন এবং সনদটি শা’য ও মু’আল্লাল না হয় সে হাদীসকে সহীহ বা সহীঞ লিযাতিহী বলে । গ্রহণযোগ্য হাদীসগুলোর মধ্যে সহীহ লিযাতিহী’র মর্যাদা সবচেয়ে বেশী।
সহীহ লিগাইরিহী ( অন্যের কারণে সহীহ ) : এটি মূলথ হাসান লিযাতিহী। যদি হাসান হাদীসের সনদ সংখ্যা অধিক হয় তাহলে এর দ্বারা হাসান বর্ণনাকারীর মধ্যে যে ঘাটতি ছিল তার পূরণ হয়ে যায়। এরুপ অধিক সনদে বর্ণিত হাসান হাদীসকে সহীহ লিগাইরিহী বলে।
গ্রহণযোগ্য হাদীসের মধ্যে অন্যতম হলো ‘হাসান’ হাদীস ।
হাসান হাদীস : হাসান হাদীসের মধ্যেও সহীহ হাদীসের মত উপরোক্ত ৫টি শর্ত বিদ্যমান । কিন্তু দ্বিতীয় শর্তের ক্ষেত্রে যদি সামান্য দুর্বলতা দেখা যায় তবে হাদীসটিকে হাসান বলা হয়। অর্থাত হাদীসের সনদের রাবীগণ ব্যক্তিগতভাবে, সৎ, প্রত্যেকে হাদীসটি উর্দ্ধতন রাবী থেকে স্বকর্ণে শুনেছেন বলে প্রমাণিত, হাদীসটির মধ্যে “শুযুয’ ও ইল্লাত নেই। তবে সনদের কোন রাবীর “নির্ভুল বর্ণনার’ ক্ষমতা বা ‘যাবত’ কিছুটা দুর্বল বলে বুঝা যায় । তাঁর বর্ণিত হাদীসের মধ্যে কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। এইরুপ রাবী’র বর্ণিত হাদীসকে ‘হাসান’ হাদীস বলা হয়।
হাসান হাদীস আবার দুই প্রকারে বিভক্ত :
হাসান লিযাতিহী ( নিজের গুণে হাসান ) : যে হাদীসে বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তিতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে কিন্তু সহীহ হাদীসের অবশিষ্ট চারটি শর্ত বহাল রয়েছে তাকে হাসান লিযাতিহী বলে।
হাসান লিগায়রিহী ( অন্যের কারণে হাসান ) : এটি মুলত দুর্বল হাদীস। কিন্তু যখন তা একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয় এবং হাদীসটির বর্ণনাকারী ফাসেক বা মিথ্যার দোষে দোষী হওয়ার কারণে দুর্বল না হয়, তখন এটি অন্যান্য সূত্রগুলোর কারণে ‘হাসান’-এর পর্যায়ভুক্ত হয়ে যায়। তবে এর স্তরটি ‘হাসান লিযাতিহী’র চেয়ে নিম্ন পর্য়ায়ের ।
আর ”হাসান” হাদীসের পরে হচ্ছে ”যঈফ” হাদীস আর জাল তো বানেরায়াট হাদীস।
আমল, আহকাম , ফাজায়েল দ্বীনের সকল ক্ষেত্রে ”সহীহ” ও “হাসান” হাদীসের উপর নির্ভর করা হয়। যঈফ হাদীস দিয়ে এগুলো নির্ভর করা হয় না। কেননা যঈফ মানে দুর্বল বা সন্দেহ যুক্ত, আর দ্বীনের ক্ষেতে সন্দেহর অবকাশ নাই।
আমরা এর পরে আস্তে আস্তে সানাদের রাবীদের জারাহ ওয়া তাদিলের দিকে নজর দিবো ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯১ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা য্ইফ হাদিস এর উপর বেশি নির্ভর করায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
-জাজাকাল্লাহু খায়র।
-সাথেই থাকুন সামনের দিকে জারাহ ও তাদিল বর্ণনা করা হবে ইনশা আল্লাহ।
এরা চোখ বন্ধ করে সাইনটিস্টের কথা বিশ্বাস করে। অথচ নিজের চোখে দেখেনি যে পৃথীবি গোলাকার। হয়তো বলবে যে, ভিডিও দেখেছি! আরে বোকা ভিডিওতো তারা করেছে তুমি নিজের চোখে না দেখে তা কিভাবে বিশ্বাস করবে!
আর আমরা রসুল (সা) এর কথাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করলেই দোষ!
আমরা তো রসুল (সা) কে অন্ধভাবে বিশ্বাস করি তারা এটা জানে তার পরেও তাদের কেন যে চুলকায়!! বুঝিনা।
-কিছু জ্ঞান অর্জণ করতে পারলেই সেটাই আমার জন্য সদকায়ে জারিয়াহ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
-ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো।
'' তোমাদের মধ্যে সে উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম ''
০ এ দুটো হাদিসের মধ্যে ইন্টারপ্রিট করুন
যারা জ্ঞান রাখেনা তাদের আর কি বলা যাবে!
যেমন ধরুন: আপনার আম্মা বলতেছে, চল! শাহজালালের মাজারে যাই! আপনি বললেন না আমি কখনই জাবো না। এখন তো তাহলে আপনি মায়ের কথা অস্বিকার করলেন!
-তো এক্ষেত্রে মায়ের কথার মূল্য = শূন্য।
ধরেন আপনার বউ বললো: তোমার মা খুব খারাপ তাকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দাও।
আপনি তার কথা শুনলেন না।
-এখানে আপনি আপনার বউয়ের কাছে খারাপ!অথচ আপনিই ঠিক।
ঠিক একই ভাবে, জদি মা ও বউ কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান রাখে তাহলে তারা কখনই এমন কথা বলেনা যা আপনার জন্য মানা কষ্টসাধ্য। যখনি তাদের জ্ঞান থাকবে যে, মায়ের পায়ের কারনে সন্তানের জন্য জান্নাত আবার বউয়ের খুশিতে স্বামী উত্তম। তখন তারা সেভাবেই আপনার কাছে আরগুমেন্ট করবে।
আর যার এসম্মন্ধ্যে জ্ঞানই নাই সে তো পুরাই পাংখা মার্কা মা ও বউ।
-সাথেই থাকবেন।
-পোস্ট থেকে কি জ্ঞান অর্জন করলেন?
পুণঃরায় স্বরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর।
-সাথেই থকুন ভাই।
-ওয়া আইয়্যাক--
মন্তব্য করতে লগইন করুন