সাহায্য প্রাপ্ত দল কে?
লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ২২ জুলাই, ২০১৫, ১২:১৮:২৫ রাত
কিয়ামত পর্যন্ত একটি দল সাহায্যপ্রাপ্ত হতেই থাকবে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার পক্ষথেকে। কোন বিরুদ্ধবাদী এই দলের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এই দলটিকে হাদীসে طَائِفَة مَنْصُورٌ ’ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ বা ‘সাহায্যপ্রাপ্ত দল’বলা হয়েছে। আমাদের মুসলিমদেরকে এই দলকে চিনতে হবে এবং এই দলের সঙ্গী হতে হবে।
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا فَسَدَ أَهْلُ الشَّامِ فَلاَ خَيْرَ فِيكُمْ لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي مَنْصُورِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ "
মুআবিয়া ইবন কুররা তার পিতা কুররা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শামবাসিরা যখন খারাপ হয়ে যাবে তখন আর তোমাদের কোন মঙ্গল নাই। আমার উম্মাতের মাঝে একদল সবসময় বিজয়ী থাকবে, তাদেরকে যারা লাঞ্চিত করার চেষ্টা করবে তারা কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।
(তিরমিযী হা/২১৯২, ইবনু মাজাহ হা/০৬)
এই হাদীছ সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনকেরাম দের অভিমত:
১. ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রহ) বলেন: আবু ঈসা (রহ) এই হাদীছটি বর্ণনা করার পরে ইমাম বুখারী (রহ) এর মাধ্যমে ইমাম বুখারী (রহ) এর উস্তাদ আলী ইবন মাদীনী (রহ) এর কওল নকল করেছেন। আলী ইবন মাদীনি (রহ) বলেন: قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ عَلِيُّ بْنُ الْمَدِينِيِّ هُمْ أَصْحَابُ الْحَدِيثِ সাহায্যপ্রাপ্ত সেই সম্প্রদায় হলো هُمْ أَصْحَابُ الْحَدِيثِ আসহাবুল হাদীছ।(সুনান তিরমিযী হা/২১৯২)
২. ইমাম বুখারী (রহ) বলেন: এর ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী (রহঃ) বলছেন, يعني أهل الحديث অর্থাৎ আছহাবুল হাদীছগণ। তার অর্থ ‘ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ দ্বারা আসহাবুল হাদীছ উদ্দেশ্য। (খত্বীব বাগদাদী, মাসআলাতুল ইহতিজাজ বিশ-শাফেঈ, পৃঃ ৪৭; সনদ ছহীহ।)
৩. ইমাম কুতায়বা বিন সাঈদ (রহ) বলেছেন: إذا رأيت الرجل يحب أهل الحديث، ... فإنه على السنة ‘যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে আসহাবুল হাদীছদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করতে দেখ, ... (তখন বুঝবে যে,) সেই ব্যক্তি সুন্নাতের উপরে (আছে)’।[খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, হা/১৪৩, পৃঃ ১৩৪; সনদ ছহীহ]
৪. ইমাম আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসিত্বী (রহ) বলেছেন: لَيْسَ فِى الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ إِلاَّ وَ هُوَ يَبْغَضُ أَهْلَ الْحَدِيْثِ- ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদআতী নেই, যে আসহাবুল হাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না’।[হাকেম, মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৪, সনদ ছহীহ।]
৫. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন: إن لم تكن هذه الطائفة المنصورة أصحاب الحديث، فلا أدري من هم. ‘সাহায্যপ্রাপ্ত এই দলটি দ্বারা যদি আছহাবুল হাদীছ উদ্দেশ্য না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা? [ হাকেম, মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ২; ইবনু হাজার আসক্বালানী ফাতহুল বারীতে (১৩/২৫০) একে ছহীহ বলেছেন।]
৬. হাফছ বিন গিয়াছ (রহ) বলেছেন: هم خير أهل الدنيا ‘তারা (আসহাবুল হাদীছ) দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ’।[মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৩, সনদ ছহীহ।]
৭. ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন: إِذَا رَأَيْتُ رَجُلاً مِّنْ أَصْحَابِ الْحَدِيْثِ فَكَأَنِّيْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ حَيًّا- ‘আমি যখন কোন আছহাবুল হাদীছ ব্যক্তিকে দেখি, তখন যেন আমি নবী কারীম (ছাঃ)-কেই জীবিত দেখি’।[শারফু আছহাবিল হাদীছ, হা/৮৫, পৃঃ ৯৪, সনদ ছহীহ]
৮. সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত মুহাদ্দিছ ইমাম ইবনু কুতায়বা আদ-দীনাওয়ারী (রহ) (মৃঃ ২৭৬ হিঃ) ‘তাবীলু মুখতালাফিল হাদীছ ফির রাদ্দি আলা আ‘দায়ি আসহাবুল হাদীছ’ (تأويل مختلف الحديث فى الرد على أعداء أهل الحديث) শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেখানে তিনি আহলেহাদীছদের দুশমনদের কঠিনভাবে জবাব প্রদান করেছেন।
আপনি কেন এই দলের অনুসারী হবেন:
আসহাবুল হাদীছ-এর দু’টি অর্থই হ’তে পারে। ১. ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন মুহাদ্দিছীনে কেরাম। ২. ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন সাধারণ জনগণ। যারা দলীলের ভিত্তিতে মুহাদ্দিছগণের পথে চলেন এবং তাদের অনুসরণ করেন।[মুক্বাদ্দামাতুল ফিরক্বাতুল জাদীদাহ, পৃঃ ১৯; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৪/৯৫]
একথা প্রমাণিত যে, ‘ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ জান্নাতে যাবে। কেননা এটি হক্বপন্থী জামাআত। তবে কি শুধু মুহাদ্দিছগণই জান্নাতে যাবেন আর তাদের অনুসারী সাধারণ জনগণ জান্নাতের বাইরে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবেন?
সুতরাং প্রতীয়মান হল যে, ত্বায়েফাহ মানছূরাহ-এর মধ্যে মুহাদ্দিছগণ এবং তাদের অনুসারী উভয়ই শামিল রয়েছেন।
ফিডব্যাক:
আমার এই লেখা পড়ার পরে অনেকে সয্য করতে নাও পারেন। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, খেয়ল করুন আমি কিন্তু আসহাবুল হাদীছ বলেছি যা মুহাদ্দিসিনেকেরাম গণএর দল এবং তাদের পথের অনুসারীগণ। এখানে আমি আহলে হাদীছ আন্দলন বা জমিয়তে আহলে হাদীছের কথা বলিনি। তাই রাগ না হয়ে আগে ভাবুন কেননা এখানে আমার কোন কথা নেই সম্পুর্ন মুহাদ্দিসদের কথা দিয়েছি।
আছহাবুল হাদীছ কোন বংশানুক্রমিক ফিরক্বা নয়। বরং এটি একটি আদর্শিক জামাআত। প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি আছহাবুল হাদীছ, যিনি কুরআন, হাদীছ ও ইজমার উপরে সালাফে ছালেহীনের বুঝের আলোকে আমল করেন এবং এর উপরেই স্বীয় বিশ্বাস পোষণ করেন। আর নিজেকে আছহাবুল হাদীছ (আহলে সুন্নাত) বলার অর্থ আদৌ এটা নয় যে, এখন এই ব্যক্তি জান্নাতী হয়ে গেছে। এখন নেক আমল সমূহ বর্জন, প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং নিজের মন মতো জীবন যাপন করা যাবে। বরং ঐ ব্যক্তিই সফলকাম, যিনি আছহাবুল হাদীছ (আহলে সুন্নাত) নামের মর্যাদা রক্ষা করে স্বীয় পূর্বসূরীদের মতো কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করবেন। প্রকাশ থাকে যে, মুক্তির জন্য কেবল নামের লেবেলই যথেষ্ট নয়। বরং হৃদয় ও মস্তিষ্কের পবিত্রতা এবং ঈমান ও আক্বীদার পরিশুদ্ধিতার সাথে সাথে সৎ কর্ম সমূহের উপরেই কেবল নাজাত নির্ভরশীল। এরূপ ব্যক্তিই আল্লাহর অনুগ্রহে চিরস্থায়ী মুক্তির হকদার হবে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Nice to know these advanced issues.
Jajak Allah Khayer.
সবচেয়ে বড় গ্রন্থ, আল্লাহ শুধু যে একটি গ্রন্থের রক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন সে কোরানে 'হাদিস' শব্দের বহু উল্লেখ আছে। সে গুলো বর্ণণা না করার কারণ কি ভাই?
অবশ্যই খয়রাল হাদিসি কিতাবুল্লাহ ওয়া খায়রাল হাদি হাদিমুহাম্মাদ।(সা)
জাজাকাল্লাহু খায়র।
মন্তব্য করতে লগইন করুন