নাভির নিচে হাত বাঁধার হাদীছের ত্বাহ্বক্কীক-০২

লিখেছেন লিখেছেন জ্ঞানের কথা ১৯ জুলাই, ২০১৫, ১০:১৬:৩৮ রাত





নাভির নিচে হাত বাঁধার হাদীছের ত্বাহ্বক্কীক-০১


নাভির নিচে হাত বাঁধাই সুন্নাহ!

عَنْ وَائِلِ ابْنِ حُجْرٍ فِىْ صِفَةِ صَلاَةِ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِىَّ يَضَعُ يَمِيْنَهُ عَلَى شِمَالِهِ تَحْتَ السُّرَّةِ আলকামা বিন ওয়াইল তার পিতা ওয়াইল বিন হুজুর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন: আমি রসুল (সা) কে ছালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভির নিচে স্থাপন করতে দেখেছি। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বার বরাতে)

তাহক্কীক্ব: অত্র হাদীছটি মুছান্নাফ ইবনে আবি শায়বার হাওয়ালাতে পেশ করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই হাদীছটির অংশ تَحْتَ السُّرَّةِ তাহতাছ ছুরারা এই অংশটি মুছান্নাফে নেই। এই অংশটি নতুন করে বর্ধিত করে লাগানো হয়েছে যা ইমাম আবি শায়বা বলেন নাই।

কিভাবে নতুন করে تَحْتَ السُّرَّةِ সংযুক্ত করা হলো:

পাকিস্তানের করাচির ইদারাতুল কুরাআন ওয়াল ইসলামিয়া নামক প্রকাশনী থেকে মুছান্নাফ ইবনু আবি শায়বা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অত্র হাদীছের শেষে تَحْتَ السُّرَّةِ তথা নভির নিচে এই অংশ যোগ করা হয়েছে। প্রকাশকদের ইলমি আমানাত হিসেবে এটা উল্লেখ করা দায়িত্ব ছিলো যে, تَحْتَ السُّرَّةِ নাভির নিচে এই শব্দদ্বয় তারা মুছান্নাফ ইবনু আবি শায়বার কোন কপিতে পেয়েছে? যেন হাদীছের ছাত্রগণ উল্লিখিত নুসখার প্রতি নজর বুলাতে পারে। কিন্তু তারা এমন কোন কপির নাম উল্লেখ করেন নি।

تَحْتَ السُّرَّةِ নাভির নিচে এই শব্দদ্বয় যে মুছান্নাফে নেই তার প্রমান নিম্নরুপ:

১. মুছান্নাফ ইবুন আবি শায়বার যে নুসখা বা কপিটি ১৯৬৬ ইং মোতাবেক ১৩৮৬ হিজরী সনে হায়দ্রাবাদ থেকে ছাপানো হয়েছিলো তাতে হাদীছে শুধু এই ইবারত টুকু ছিলো:

আমি রসুল (সা) কে দেখেছি, তিনি ছালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। সেখানে নাভির নিচে تَحْتَ السُّرَّةِ এই শব্দদ্বয়ের কোন অস্তিত্বনেই।

২. মুছান্নাফের প্রাচিন কপিগুলিতেও এ শব্দদ্বয় নেই। আওনুল মাবুদ গ্রন্থে (২/৪৬২) আল্লামা হায়াত সিন্ধি (রহ) সাক্ষ্য এখনো মওজুদ আছে যে, তিনি উক্ত শব্দদ্বয় মুছান্নাফের কোন কপিতেই পান নি।

৩. মুহতারাম সাইয়্যেদ শাহ রাশেদির আওতাধীন মাকতাবা আমেরাতে মুছান্নাফের যে পান্ডুলিপি কপি আছে তাতেও নাভির নিচে تَحْتَ السُّرَّةِ শব্দদ্বয় পাওয়া যায় না।

৪. দেওবান্দ মাদরাসার শায়খুল হাদীছ আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ) বলেছেন, অবশ্যই আমি মুছান্নাফের তিনটি পান্ডুলিপী অধ্যায়ন করেছি। তবে কোনটাতেই নাভির নিচে শব্দাবলী নেই। (ফায়যুল বারী ২/২৬৭)

৫. এই হাদীছটি ওয়াকি সূত্রে মুসনাদে আহমাদে (৪/৩১৬, হা/১৮৮৪৬) শরহে সুন্নাহ গ্রন্থে (হা/৫৬৯; ৩/৩০) এবং দারাকুতনিতে (১/২৬৮, হা/১০৮৮) রয়েছে। কিন্তু কোথাও تَحْتَ السُّرَّةِ নাভির নিচে শব্দাবলী নেই।

৬. সুনানে নাসাঈ গ্রন্থে (২/১২৫,১২৬. হা/৮৮৮) এবং দারাকুতনীতে (১/২৮৬, হা/১০৯১) ইমাম ওয়াকী এর তদস্থলে ইমাম আব্দুল্লাহ বিন মুবারাক হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেখানেও تَحْتَ السُّرَّةِ নাভির নিচে শব্দাবলী নেই।

৭. আবু নায়াঈম আল ফাযল এই হাদীছ মুসা ইবনে উমাঈর হতে বর্ণনা করেছেন تَحْتَ السُّرَّةِ নাভির নিচে অংশ ছাড়াই। (কিতাবুল মারিফাতি ওয়াত তারিখ, ইমাম ফারেসি, ৩/১২১, আল মুজামুল কাবীর, ইমাম তাবারানী, হা/২২/৯, তাহযীবুল কামাল ১৮/৪৯৯)।

৮. যদি মুছান্নাফ ইবনে আবি শায়বাতে এই হাদীছ নাভির নিচে تَحْتَ السُّرَّةِ অংশ সহ থাকতো তাহলে মুতাকাদ্দিমীনে আহনাফ তথা পূর্ববর্তী হানাফি আলেমগণ অবশ্যই সেই সম্পর্কে অবগত থাকতেন। অথচ ইমাম তাহবী, ইবনে তুরকামানী, এবং ইবনে হুমাম সহ শীর্ষ পর্যায়ের হানাফী ইমামগণ কোথাও এ হাদীছটি বর্ণনা করেন নি। এমনকি ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) ও ইমাম নাবাবী (রহ) এর মতো হাফেজে হাদীছগণও কিছুই বলেন নি।

৯. এই হাদীছের تَحْتَ السُّرَّةِ অংশটুকু সর্বপ্রথম আলেম কাসেম বিন কাতলুবুগা বৃদ্ধি করেছেন। আছারুস সুনান এর লেখক আল্লামা নিমভী (রহ) পর্যন্ত এই অংশকে অসংরক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন। (আছারুস সুনান হা/৩৩০)

১০. শায়খ মুহাম্মাদ হায়াত সিন্দী বলেন, زِيَادَةُ تَحْتَ السُّرَّةِ نَظْرٌ بَلْ هِىَ غَلَطٌ مَنْشَؤُهُ السَّهْوُ فَإِنِّىْ رَاجَعْتُ نُسْخَةً صَحِيْحَةً مِنَ الْمُصَنِّفِ فَرَأَيْتُ فِيْهَا هَذَا الْحَدِيْثَ بِهَذَا السَّنَدِ وَبِهَذِهِ الْأَلْفَاظِ إِلاَّ أَنَّهُ لَيْسَ فِيْهَا تَحْتَ السُّرَّةِ ‘নাভীর নীচে’ এই অতিরিক্ত অংশ ত্রুটিপূর্ণ। বরং তা স্পষ্ট ভুল। মূলেই ভুল রয়েছে। আমি সংকলকের মূল কপি দেখেছি। সেখানে এই সনদ ও শব্দগুলো দেখেছি। কিন্তু তার মধ্যে ‘নাভীর নীচে’ অংশটুকু নেই।(তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২১৪)

এই হাদীছের অতিরিক্ত অংশ বানোয়াট। অতএব এর দারা নাভির নিচে হাত বাঁধা প্রমানিত হয় না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330765
২০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:১১
হতভাগা লিখেছেন : আপনি ডিশে ক্বাবা শরীফের যে চ্যানেলটা দেখায় সেটা দেখতে পারেন । সেখানে নামাজে হাত বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে বাঁধে । আবার কেউ কেউ হাত বাঁধে না ।

এটা নামাজের কোন ফরজ আংশ নয় ।

অথচ এসব নিয়েই আমাদের মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন ও ফিতনা হয়ে আছে ।
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:৫৭
273115
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। দলিল হচ্ছে কোরআন ও হাদিস। আমি এই হাদিস দেখিয়েছি যা নাভির নিচে হাত বাধার জন্য ব্যাবহৃত হয় অথচ বর্ধিতাংশ বাতিল।

ফরজ নয় আমি যানি। তবে কোনটি সঠিক সেটাই দেখার বিষয়।

যারা হাদিস ত্বাহকিক করার কষ্ট বা সঠিক দলিল খুজতে ও জানতে নারাজ তাদের জন্য অবশ্য সত্য কথাও ফেতনা।

আপনি জাচাই করুন কোরআন ও সুন্নার আলোকে।
330766
২০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:১৩
নেহায়েৎ লিখেছেন : জাঝাকাল্লাহু খাইরান। সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য। কিন্তু আমাদের মাযহাবে আছে নাভীর নিচে হাত বাধার কথা। তাই আমরা নাভীর নিচেই বাধব। হাদীসে থাক বা থাক সেটা আমােদর দেখার বিষয় না।
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:৫৯
273116
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : কোরআন ও হাদিসের বিপরিতে কোন আলেম বা ইমামের কথা মানা হারাম। এখন দায়িত্ব সবার উপর কোনটি মানবে!

জাজাকাল্লাহু খায়র।
330846
২০ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
শেখের পোলা লিখেছেন : যদি এটি সঠিক না হয় তবে আমাদের মাঝে এটি এল কি ভাবে, তা একটু খুঁজে দেখার অনুরোধ রইল৷ ধন্যবাদ৷
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৭:০৫
273117
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। হাদিসটির বর্ধিতাংশ সটিক নয়। অংশটি বানোয়াট। মতকে শক্ত করার জন্য ঢোকানো।

বিস্তারিত পোস্টে দিয়েছি আবার পড়বেন ইনশা আল্লাহ।

এই বেশি করা অংশটি সঠিক নয়। কিভাবে আসলো সেটিও হাদিসের বিস্তারিত ত্বাহকিকে রয়েছে। কাসেম বিন কাতলুবুগা প্রথম এই অংশটি বৃদ্ধি করেছেন।

জাজাকাল্লাহু খায়র।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File