রমজান মাসে আমাদের করনীয়

লিখেছেন লিখেছেন ফারহানা আনজুম নাফিসা ১১ জুন, ২০১৫, ০৭:০৭:৩৪ সকাল

আর মাত্র কয়েকদিন অতিবাহিত হলে রমজানের মোবারক মাস আরেকবার আমাদের উপর ছায়া বিস্তার করবে, তার রহমতের বারিধারায় আমাদের সিক্ত করতে থাকবে। এ মাসটি হছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং মহান মাস। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন : “রমযানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে , যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য –সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয় ৷ কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য….” । (সুরা বাকারা ১৮৫)

রোজা আমাদের জন্য একটি বিরাট নিয়ামত সরূপ। রাসুল(সা Happy বলেন : যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম, তিরমিজী)

অতএব রোজার মাসকে পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগাতে হবে এর জন্য প্রয়োজন কিছু পূর্ব প্রস্তুতি। আর এর জন্য সর্ব প্রথম যেটা প্রয়োজন রোজা সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান। জ্ঞান অর্জনের পরেই আসে আমল। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে কাজে বরকত হয়. তাই রমজান আসার পূর্বেই রমজানের প্লান করা ভাল. যার যার প্লান তার তার কাছে। নিজের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী প্লান বা পরিকল্পনা করা ভাল। প্রথমত পরিকল্পনাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি -

১. ব্যক্তিগত পরিকল্পনা

২. সামাজিক পরিকল্পনা

১. ব্যক্তিগত পরিকল্পনা :-

আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা পেতে হলে আমাদের ব্যক্তিগত আমল আখলাক বাড়াতে হবে। আর এরজন্য রমজান মাস সর্ব উত্কৃস্ট মাস।

• নিয়ত বা ইচ্ছা : পবিত্র রমজান মাসকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে এর অবস্থান, এর বাণী , এর উদ্দেশ্য এবং এর মহত্ব বরকতের চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে। সেই সাথে এই নিয়ত করতে হবে যে, এ মাসে আমরা যে কর্মতত্পরতা ও ইবাদতের প্রতি গুরুত্ব দিব, সেগুলোর মাধ্যমে নিজেদের সেই তাকওয়া অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে, যা কিনা আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের চাহিদা এবং কুরআন মজিদের মিশন পূর্ণ করার যোগ্য করে গড়ে তুলবে।

• সারা মাসের রোজা মনের আনন্দ, আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে রাখতে হবে।

• কুরআন সহীভাবে পড়ার চেষ্টা করা।

• কুরআন মুখস্ত করার চেষ্টা করা। অন্তত পক্ষে ৫টি সূরা অর্থ সহ মুখস্ত করা।

• নামাজে যে সূরাগুলো পড়ি তার অর্থ বুঝে পড়তে হবে।

• বিভিন্ন রকম দোআ মুখস্ত করা যেমন - ঘুমের দোআ, ঘরের বাইরে যাওয়ার দোআ, টয়লেটে যাওয়ার দোআ ইত্যাদি। এগুলো আমরা কমবেশি সকালেই পারি কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় বাস্তবায়ন হয়না।

• সুধু নিজেই নয় পরিবারের সকলে মিলে এই দোআ গুলো প্রাকটিস করতে হবে।

• এছাড়া সকাল সন্ধার বিভিন্ন দোআ। সাইয়েদুল এইস্তেগফার, সূরা বাকারার শেষ ৩ আয়াত। এগুলো মুখস্ত করা।

• মনযোগের সাথে নামাজ সহী করে পড়া।

• সুন্নাত ও নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সুন্নাত ও নফল নামাজ, চাশতের নামাজ ।

• রমজানের প্রতি রাতে তাহাজ্জুত নামাজ পড়া।

• রমজান মাসে "সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহু-আকবর, লা হাওলা ওলা কু-ওয়াত ইল্লাহ বিল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, " ইত্যাদি জিকির বেশী বেশী করা ।

• নিজেদের চারিত্রিক দোষগুলো পরিহার করা। অন্তত পক্ষে ১ টা বা ২ টা দোষ আমরা এ মাসে বর্জন করবো , এই নিয়তে দৃঢ় থাকা। যেমন - মিথ্যাবলা, গিবত, রাগ ইত্যাদি।

• আল্লহর পথে ব্যায় : আল্লাহর পথে মনখুলে খরচ করতে হবে। এ মাসে যে ব্যক্তি ১ পয়সা দান করবে তার বিনিময় আল্লাহ সাতশত গুন বাড়িয়ে দিবেন। আল্লাহর ঘোষনা করেছেন যে - তিনি যাকে ইচ্ছা এর চেয়েও অনেক বেশী দান করবেন। তাই এই রমজান মাসে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, এতিম ও মিসকিনদের জন্য যত সম্ভব আল্লাহর পথে ব্যায় করতে হবে।

২. সামাজিক পরিকল্পনা :

নিজের ব্যক্তিগত আমল এর সাথে সাথে সামাজিক পরিকল্পনা করা দরকার এবং তা শুরু হবে আমাদের পরিবার থেকেই।

ক) রমজান শুরুর আগে পরিবারের সকলকে নিয়ে বসে রমজানের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।

খ) পরিবারের সবাইকে বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের কুরআন পড়ার ব্যপারে উত্সাহিত করতে হবে।

গ) পরিবারের সবার মধ্যে পরিবারের কাজগুলো ভাগ করে নিতে হবে। কারন দেখা যায় মহিলাদের উপর সংসারের কাজের চাপ একটু বেশী থাকে যার ফলে রমজান মাসে তারা ব্যক্তিগত আমল ঠিকমত করতে পারেনা। তাই স্বামী ও সন্তানরা যদি সংসারের কাজ ভাগ করে নেয় তবে মহিলারা তাদের ব্যক্তিগত আমল বেশী করে করার সুযোগ পায়।

ঘ) এছাড়া আমরা যাদের সাথে মেলামেশা করি তাদের মাঝেও কুরানের দাওয়াত ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

ঙ) অসুস্থ রোগীদের দেখতে যাওয়া।

চ) মানুষকে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা করা: সহযোগিতার এ মহত প্রচেষ্টার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করা এবং তা মানুষের মনে স্থায়ী করার জন্য নবী করিম (সাHappy অত্যন্ত যত্নসহকারে রোজাদারকে ইফতার করানোর জন্য উত্সাহিত করেছেন। তিনি (সাHappy বলেছেন - " যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করবে, তার গুনাহ মোচন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি অবধারিত।"বায়হাকী

তাই এ মাসে বেশী বেশী করে মানুষকে ইফতার করাতে হবে।

ছ) ইফতার হিসাবে যাই আয়োজন করিনা কেন তা প্রতিবেশীকে দেয়া যেতে পারে।

এই ভাবে রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা এই ধরনের কিছু পরিকল্পনা করতে পারি।

পবিত্র রমজান মাস প্রতিবছর আসে, একের পর এক রমজান আসে। একের পর এক কুরআন খতম করা হয়. এই মাসে রোজা রাখা, নামাজ পড়া, যিকির ও দোআ করে রাত কাটিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আমরা রমজানের পূর্বে যেমন ছিলাম সেই তিমিরেই পরে থাকি। না আমাদের ব্যক্তিগত অবস্থার কোন পরিবর্তন আসে আর না আমাদের সামষ্টিক চরিত্রে সংশোধন আসে। এর কারন আমাদের প্রচেষ্টা আর যত্নের অভাবে আমরা বঞ্চিত, অথচ এ ব্যাপারে আমরা অসেচতন।

অথচ পবিত্র মাস আবার এ আহবান নিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসছে যে, "এসো ! এবং জেনে নাও আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজীদে তোমাদের জন্য কি বলেছেন, এসো আল্লাহর নিষেধ করা সকল কাজ থেকে বিরত থাক , তোমাদের নিকট তা যত প্রিয় ও আকর্ষনীয় বস্তুই হোকনা কেন। যদি তা না কর, এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হাতে পারে যে তোমাদের নিকট রমজান মাস এলো তোমরা রোজাও রাখলে, ক্ষুত-পিপাসাও সহ্য করলে, রাতের ঘুম ত্যাগ করে তারাবিও পড়লে , এতসব কিছুর পড়েও ক্ষুধা - পিপাসা আর অস্থিরতা ছাড়া আর কিছুই তোমরা পেলেনা এবং এমনটি না হয় যে তোমাদের উপর সেই দৃষ্টান্ত সত্যে পরিনত হয়, আল্লাহ তায়ালা তাওরাতের বাহকদের ব্যাপারে যা বলেছিলেন - "যাদের উপর তাওরাতের আমানতের বোঝা অর্পিত হলো , আর তারা সেই আমানতের দাবী পুরন করল না তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধার মত যে নিজের পিঠে শুধু কিতাবের বোঝা বহন করে চলছে " - সূরা জুমুআ(৫)

অতএব, মহান আল্লাহ আমাদের রমজান মাসে কুরআন বোঝার ও সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দিন। এবং আমরা যেন এই রমজানে নিজেদের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে নিতে পারি এবং পরবর্তী সময়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File