শাহবাগীদের জন্মের আদ্যোপ্রান্ত কথা!
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৬:১৯ রাত
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত কবিতার কয়েকটি চরন আমি প্রায়শ বলে থাকি। কবিতা মনে রাখার মত সমৃদ্ধ স্মৃতিশক্তি না থাকলেও এই কবিতাটির এই কিয়দাংশ কখনোই ভুলতে পারি না। কবি বলেছেন,‘রেখেছো বাঙালী করিয়া, মানুষ করোনি’। কবিতার এই লাইনটি যে কতোটা ধ্রুব সত্য তা ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনটিতে চোখ বুলালেই তা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায়।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রয়ারী নাস্তিক ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিটসদের নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা হয়। যদিও পত্রপত্রিকার ভাষায় এই দিনটিকে শাহবাগ আন্দোলন বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এই দিনটি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আদালত অবমাননা করার দিন। আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর দিন। আদালতের প্রতি অনস্থা প্রকাশেরমত অপরাধের দিন। কেন এই কথা বলছি?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ইমরান এইচগংরা এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। যদিও এই আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ইমরান এইচের সামান্যতমও ভূমিকা ছিল না। তবুও মাঝখান থেকে সেই এখন শাহবাগ আন্দোলনের মহানায়ক। যাইহোক, মূল আলোচনায় আসি।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রয়ারী আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্টাইব্যুনাল তাদের প্রথম রায় ঘোষনা করেন। রায়নুসারে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। এই রায় শাহবাগীদের মনোপুত করতে পারেনি। তাই তারা আদালতের এই রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করলো। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য, তখন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয় নি।
কিন্তু তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ ৪ ফেব্রয়ারী জামায়াতের তিন নেতা সেলিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম খান এবং হামিদুর রহমান আযাদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বক্তব্য প্রদান করায় তাদের নামে আদালত অবমাননার মামলা হয়। এমনকি এই মামলায় উক্ত তিন নেতার বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও প্রদান করা হয়। আদালত অবমাননার অভিযোগে তিন জামায়াত নেতা অভিযুক্ত।
এই সময় মিডিয়াগুলোতে এই তিন নেতার আদালত অবমাননা নিয়ে আলোচনা থাকলেও শাহবাগের আদালত অবমাননা নিয়ে কোন কথা শোনা যায় নি। এমনকি আজ অবধি আমার দেশ পত্রিকা ছাড়া আর কোন গনমাধ্যমই শাহবাগীদের আদালত অবমাননার কথাটি লিখেন নি, কিংবা সংবাদ পরিবেশন করেন নি। বাঙালী যে আশ্চর্য এক চিজ তা তো বুঝতেই পারছেন! সে একই সময় দুই কথা বলবে কিন্তু মোটেও লজ্জা পাবে না। আর ঠিক এই বাঙালদের সৃষ্টির আশাতেই শাহবাগীরা স্লোগান দিত, ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালী বাঙালী’।
এতো গেল শাহবাগীদের ফৌজদারি অপরাধের কথা! শাহবাগীদের বিরিয়ানী ভোজের কথা তো প্রায়ই শুনে থাকেন। সকাল বিকাল ফ্রি বিরিয়ানী এবং শাহবাগ জুড়ে ওয়াই-ফাই রাউটারের মাধ্যমে ফ্রি ইন্টারনেট বিতরনের গল্পও আর কারো অজানা নয়। ঠিক সেই মুহুর্তে ইমরান এইচ সরকার যেন দেশের অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বনে গেলেন। তিনি ঘোষনা দিলেন, আজ সকল স্কুল কলেজ বন্ধ থাকবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের স্থানীয় গনজাগরন মঞ্চে হাজির হতে হবে। আশ্চর্য জনক হলেও সত্য সারাদেশে এই হুকুম তামিল করা হয়েছে। এবার আসি, এই ইমরান এইচ সরকার প্রসঙ্গে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ঢাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে জব করতে ইমরান এইচ সরকার। রংপুর মেডিকেলে পড়াকালীন, ছাত্রলীগের প্যাদানি খেয়ে হোস্টেল ছাড়তে হয় ইমরানকে। এরপর তিনি মেডিকেল কলেজের শিবিরের দায়িত্বশীলদের আশ্রয় গ্রহণ করেন। এমনকি মেডিকেল পড়াকালীণ পুরো সময় তিনি শিবিরের তত্বাবধীন ছাত্রাবাসে বসবাস করতেন। এরপর, দু’মুঠো ভাত এবং এফসিপিএস কোর্স কম্লিট করতেই ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে যোগ দিলেন শাহবাগ আন্দোলন এ। চারুকলার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বাম ঘরনার নেতাদের সঙ্গে তার আনাগোনা ছিল। শাহবাগ আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন ক্লিন ইমেজের লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ঠিক তখনিই ক্লিন ইমেজের লোক হওয়ায় কপাল খুলে যায় ইমরান এইচ সরকারের। যদিও আন্দোলনটি সৃষ্টি হয়েছিল ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টদের নিয়ে। কিন্তু ইমরান কোন ব্লগার ছিলেন না। ইমরান এইচ সরকারকে আজ অবধি কোন ব্লগ লিখতে দেখেন নি, এই কথা স্বয়ং বলেছিলেন, নাস্তিক ব্লগারদের প্রথম প্লাটফর্ম সামহোয়্যার ইন ব্লগের মালিক মিসেস জানা। কিন্তু তারপরও ইমরান এইচকেই তাদের নেতা হিসেবে বাছাই করা হয়। খুলে গেল কপাল, ইমরান এইচ মেস বাসা ছেড়ে উঠে পড়লেন পাঁচ তারকা হোটেলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘জীবনে অনেক নেতা দেখেছি। তারা আন্দোলনে যতো সক্রিয় হয়েছে, তাদের চেহারা ধুলো মলিন হয়ে গেছে। তাদের চেহারা সতেজ তরতাজা থেকে পাটখড়ির মত হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম এই ইমরান এইচ সরকারকে দেখলাম। শাহবাগীদের আন্দোলন যতো জোরদার হয়েছে ইমরান এইচ সরকারের চেহারা ততো চকচক করেছে। তার গায়ের নিত্য নতুন পাঞ্জাবী উঠেছে। এমনকি আন্দোলন চলাকালীণ সময়ে তাকে প্রাডো গাড়িতে যাতায়াত করতেও দেখা গেছে। ইমরান এইচ সাহেব ছেড়ে দিলেন ডাক্তারী। তিনি এখন বসে বসে খাচ্ছেন। আর খাবেন ই বা না কেন, চাঁদাবাজির এতোটাকা দিয়ে কি আর করবেন! সেই চাঁদার টাকা না পেয়ে আন্দোলনের মাঝপথেই শাহবাগ ত্যাগ করেছিলেন, রোকেয়া প্রাচীদের মত আলোচিত শাহবাগী অভিনেত্রীরা।
সেই শাহবাগ আজ ধুলোমলিন। এখন বিরিয়ানী পার্টিও নেই, নেই গাঁজার জোগান এবং ফ্রি ইন্টারনেট। এখন আর সেখানে মাঝরাতে উলঙ্গ হয়ে যৌনকর্মে মেতে ওঠে না শাহবাগের সেই বেজন্মারা। তাদের এই অপকর্ম দেখে হয়তো কুকুরও লজ্জা পেয়েছিল। ইমরান এইচের সেই আন্দোলন আর জমে ওঠে না। আর জমার কোন প্রয়োজনও নেই। ফুরিয়ে গেছে সেই প্রয়োজনীয়তা। জামায়াতের নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার মাধ্যমেই শাহবাগ আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এখন যা আছে তা লোক দেখানো মাত্র। হয়তো উপসংহার চলছে। এখন আর বিশেষ একটি রাষ্ট্রের হাইকমিশন অফিস থেকে মোটা অংকের মাসোহারা আসে না। মিশন সাকসে্স। শাহবাগীরা সাকসে্স। বিশেষ রাষ্ট্রটিও সাকসে্স। পথের কাটাগুলোকে দূর করা গেল। কিন্তু রাষ্ট্রের এই কলংকজনক অধ্যায়কে জাতির সামনে অহংকার হিসেবে আজ উপস্থাপন করে যাচ্ছে, গোয়েবলসের অনুসারী মিডিয়াচক্র। বাঙালী সব দেখেও যেন না দেখার ভান করে থাকে। বাঙালী সব বুঝেও যেন না বুঝার ভান করে থাকে। এসব ভান করতে করতেই কতক সাধারণ মানুষকে শাহবাগীদের দিকে ধুঁধু নিক্ষেপ করে‘ নাস্তিকের বাচ্চারা দেশটাকে দু’ভাগ করে ছাড়ল, এমন কথা বলতে শুনলাম। কিন্তু ঐ যে বাঙালী! বাঙালী দু’দিন পরেই সব ভুলে যায়। বাঙালী ইতিহাস ভুলো মনা। তাই তো বাঙালীকেই বারবার শোষনের স্বীকার হয়। আগে বাঙালীর বুকে গুলি চালাত, ইংরেজ বর্গী কিংবা পাকিস্তানী হানাদাররা। আজ তাদের বুকে গুলি চালায় তাদের জ্ঞাতি ভাই, বাঙালী জানোয়ার।
বিষয়: বিবিধ
১৫০১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেই জাতি ভোটের আগের রাতে নিজের ব্যক্তিসত্তা বিসর্জন দিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়, সেই জাতির কাছ থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ আশা করাতাও অযুক্তিক।
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন