দেশটা রসাতলে গেলরে ভারতীয় সিরিয়ালে
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২০ আগস্ট, ২০১৬, ০৬:১৮:০৯ সন্ধ্যা
ঘটনা নং: ১
সাফিন এবং সাবির। তাদের বয়স যথাক্রমে ১০ এবং ৫ বছর। তারা দু’জন সহদর ভাই। তারা আমার মামাতো ভাই। ডাক্তার মামার দুই পালোয়ান পুত্র। মামা ব্যস্ত থাকেন তার হাসপাতাল এবং চেম্বার নিয়ে আর মামি ব্যস্ত থাকেন স্কুল নিয়ে। তাদের এই ব্যস্ততার মাঝে সাফিন এবং সাবিরের সঙ্গি হয়ে উঠে টেলিভিশন। টেলিভিশনে যেমন তারা ডোরেমন দেখে তেমনি তার ষ্টার জলসার কিরনমালাও দেখে!
কিছুদিন আগে সাফিন এবং সাবির আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে। তারা তাদের আপন মনে খেলতেছিল। বারান্দায় বসে তাদের খেলা দেখছিলাম। সাফিন বলল সাবির আসো আমরা কিরনমালা খেলি। সাফিন বলল, আমি যেহেতু বড় আর আমার শক্তিও বেশি তাই আমি রাক্ষসী কটকটি। আর তুমি ছোট তোমার শক্তি কম তাই তুমি কিরনমালা! অতপর তাহারা কিরনমালা এবং কটকটির রূপক হয়ে খেলা শুরু করল। আর আমি ষ্টার জলসার প্রভাব আচ করতে গিয়ে ভাবনার অতল গহব্বরে তলিয়ে গেলাম এবং আঙ্গুল কামড়ানো শুরু করলাম। আমাদের শৈশব আর সাবির সাফিনদের শৈশবের মাঝে কি আকাশ জমিন পার্থক্য!
ঘটনা নং: ২
আমার স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে খুব একটা দেখা হয় না। বছরে একবার কিংবা ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে দু’বার দেখা হয়। গতবার দেখা হবার সময় বন্ধুদের একজন বলল, আন্না কেমন আছো? আন্না! এই শব্দ আগে কখনো শুনেছি বলে মনে পড়ে না।
আমি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলাম, এটা আবার কোন দেশীয় শব্দ? এর অর্থ কী? বন্ধুরা সব হো হো করে হেসে বলল, বলদ এটাও জানিস না! আন্না মানে ভাই! আর এটা তামিল শব্দ। আমার মাথায় ঠাটা পড়া অবস্থা! বাংলা ভাষাটাই এখনো ঠিকমত আয়ত্বে আনতে পারিনি আর ওরা চলে গেছে তামিল ভাষায়! প্রশ্ন করলাম, এই র্দুবধ্য ভাষা কোথায় শিখতেছ? দ্বিতীয়বার তারা জামাত করে হাসি দিল! আরে বোকা ভাষা শিখতে কোথাও যেতে হয় নাকি! তামিল সিনেমা গুলো দেখলেই ত শেখা যায়! আমি বললাম, তোদের অবস্থা যদি সালাম রফিক জব্বাররা দেখতো তাহলে ভাষার জন্য কোনদিনও প্রাণ দিত না। তৃতীয়বারের মত জামাত করে হাসি! হো.হো..হো...
আধুনিকতা আমাদেরকে যান্ত্রিকতা এবং পরসংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল করে দিচ্ছে! যার প্রমাণ আমরা প্রায়শ পেয়ে থাকি! যেমন কিছুদিন আগে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তারা হিন্দি ভাষায় বিবিসি হিন্দিকে সাক্ষাৎকার প্রদান করেছে। এই চিত্র স্বয়ং ভারতেও দেখা যায় না। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোন রাজ্যের মানুষ স্বপ্রনোদিত হয়ে হিন্দিতে কথা বলে না। এমনকি ভারতের চেন্নাই রাজ্যে সব হিন্দি চ্যানেল দেখানোর পারমিট নেই। হাতে গনা কয়েকটি হিন্দি চ্যানেল চেন্নাই এর মানুষরা দেখতে পারে। আর বাদ বাকি সব চ্যানেলই চেন্নাই এর স্থানীয়। কারণ কেউই চায় না পর সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল হতে। পাঞ্জাবীরা তাদের নিজেদের ভাষায় অথবা ইংরেজিতে কথা বলে! চেন্নাইতেও একই চিত্র দেখা যায়। আর এই চিত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাদ বাকি প্রায় সব রাজ্যেই দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষরাও বাঙ্গালী আমরাও বাঙ্গালী। আমরা দু’জনেই পর সংস্কৃতিতে কাতর! আর এ জন্যই কি কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি”!
বাঙ্গাল জাতির বীরত্বের খেরোপাতা না হয় অন্যকোন দিন খোলা যাবে! কুকুর বিড়ালি বৃষ্টিময় এই সন্ধ্যায় যা বলতে চাচ্ছি তা হল, গত সপ্তাহের পত্রিকায় একটি খবর পড়েছেন কিনা? স্টার জলসায় সিরিয়াল দেখা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত শতাধিক
দেশের এক প্রান্তের মানুষরা যখন বন্যার পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে তখন মাদারীপুরের এই বীর জনতা বন্ধুরাষ্টের চ্যানেল দেখা নিয়ে মাথা ফাটাফাটিতে ব্যস্ত! এটাই তো আমরা চেয়েছিলাম! বঙ্গবন্ধু ত এই দেশেরই স্বপ্ন দেখেছেন! সুন্দরবন ধব্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে! তাতে আমার কি! আমার বাপের ভিটে বাড়ি বা সম্পত্তির ক্ষয়তো আর হচ্ছে না! আমি তার চেয়ে ষ্টার জলসা দেখি এব্ং এটা নিয়ে মাথা ফাটাই! তাতেই দেশের মঙ্গল! আরে ভাই যেখানে জাফর ইকবালের মত মানুষরা রামপাল নিয়ে ম্যাও ম্যাও করলেন এবং জোকের মত দু’দিকেই নিজেকে সম্প্রসারিত করলেন! একদিকে আন্দোলনকারীদের বাহবা দিলেন ভিন্নদিকে সরকারও পিঠ চাপড়ে দিলেন সেখানে দু’বেলা ভাত খেয়ে ষ্টার জলসা নিয়ে মারামারি করাটাই শোভা পায়! রামপাল চুলোয় যাক তাতে আমার কি? ঠিক এই চিন্তাটাই আমাদের গোটা বাংলার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ করে থাকে! যা হচ্ছে হোক, তাতে আমার ক্ষতি না হলেই হোল!
পপসম্রাট আজম খানের বাংলাদেশ গানটি শুনেননি এমন লোক মনে হয় এখানে নেই। গানের শেষের দিকে তিনি বাংলাদেশকে ভাঙ্গাদেশ বলেছেন। যে দেশের মানুষ ষ্টার জলসার জন্য স্বামীকে খুন করতে পারে,নিজে আত্নহত্যা করতে পারে তাদেরকে সবশেষে বাঙ্গালী হয়তো বলা যায় কিন্তু মানুষ বলা যায় না। আমার এই মন্তব্যের স্বপক্ষে কিছু ছবি নিচে পোষ্ট করলাম। আমার মন্তব্যের যৌক্তিকতা আশা করি বুঝতে পারবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইতিমধ্যে অনেক নতুন সংবাদ জন্মলাভ করিয়াছে!
জননী কিরণমালা দর্শণে ব্যস্ত থাকাকালে সন্তানদ্বয়ের সলিলসমাধি!
অন্যত্র কন্যাদ্বয়কে গৃহে তালাবদ্ধ রাখিয়া কিরণমালা দর্শণোদ্দেশ্যে জননীর অন্যত্র গমণ এবং অগ্নিকান্ডে কন্যাসমেত গৃহ ভষ্মীভূত!
********
নখাগ্রের ক্ষুদ্র ক্ষতটিকে অবহেলা করায় কর্কটরোগ সমগ্র দেহে জাল বিস্তার করিয়াছে, রোগীর বাঁচিবার আশা অতি ক্ষীণ!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন